সোমবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১২

Forge greater unity of Muslims to foil conspiracy, SAY SPEAKERS

Forge greater unity of Muslims to foil conspiracy, SAY SPEAKERS
Speakers at the Islamic conference organised by Organisation of Islamic Conference Bangladesh at Chittagong Jamiatul Falah maidan observed that there is no alternative to greater unity of Muslims to face anti-Islamic conspiracies worldwide. They said, “A vested quarter is hatching conspiracy to undermine Islam and its followers as we are derailing from the path shown by the great Prophet.”
Presided over by Moulana Mufti Abdul Halim Bokhari, the conference was addressed, among others, by Syed Abdul Mazid Nadeem, Allama Abdul Halim Bokhari, Moulana Khurshid Alam Kashemi and Mufti Habibur Rahman.
They stressed on forging unity of Muslims and upholding the very norms of Islam for combating any sort of anti-Islamic conspiracy.
Besides, at the conference, Allama Syed Shah Abdul Mazid unveiled the cover of ‘International Islamic Conference-History, Tradition and Contribution’, edited by Moulana Rizwan Jamirabadi.
The function was attended, among others, by Allama Abdul Halim Bokhari, Allama Mufti Habibur Rahman and Allama Abdul Baset.

 Independent News

রবিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১২

দাওয়াতে তাবলিগের গুরুত্ব


রিজওয়ান জমীরাবাদী

ইসলাম সমগ্র বিশ্বের সব যুগের সব মানুষের জন্য আল্লাহপ্রদত্ত ধর্ম। তাই দুনিয়াবাসীর জন্য ইসলামই হলো একমাত্র অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় আদর্শ। পথভ্রষ্ট মানবজাতিকে পথের দিশা দিতে যুগে যুগে আল্লাহর মনোনীত এক লাখ মতান্তরে দুই লাখ ২৪ হাজার নবী ও রাসূল দাওয়াত ও তাবলিগের জন্য প্রেরিত হয়েছেন। তাঁরা সবাই নিজ দায়িত্ব পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে পালন করে গেছেন। হজরত আদম আ: থেকে শুরু করে সর্বশেষ নবী ও রাসূল হজরত মুহাম্মদ সা:-এর আগমন ও ওফাতের মাধ্যমে এ ধারার সমাপ্তি ঘটে। হুজুর সা:-এর পর থেকে এ দায়িত্ব খোলাফায়ে রাশেদিন, সাহাবায়েকেরাম, তাবেইন, তাবেতাবেইন, সলফে সালেহিন এবং আলেম-ওলামা ও পীর মাশায়েখরা পালন করে এসেছেন। ১৯৪১ সালে দিল্লির মেওয়াতে মাওলানা ইলিয়াস রহ: দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ শুরু করেন, যার সম্প্রসারিত রূপ আজকের টঙ্গির তুরাগ তীরের বিশ্ব ইজতেমা। মানুষের মুক্তি ও কামিয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আমলে সালেহ (সৎ কাজ বা ভালো কাজ) করাই এ দাওয়াতের মুখ্য বিষয়।
আল্লাহতায়ালা এ দাওয়াতি কাজটি ব্যক্তিগত, সমষ্টিগত- সবার ওপর সমানভাবে দিয়ে দিয়েছেন। তাই প্রত্যেক মানুষের ওপরই তার স্বীয় ক্ষমতা অনুযায়ী সত্যের প্রচার-প্রসার ঘটানো অত্যাবশ্যক। বিদায় হজের ভাষণে রাসূল সা: বলেছেন, ‘আমার পর আর কোনো নবী আসবেন না। অতএব আমার একটি বাণী হলেও অন্যের কাছে পৌঁছে দাও।
পৃথিবীর প্রায় সব ধর্মের নামকরণ হয়েছে কোনো বিশেষ ব্যক্তির নামে। খ্রিষ্টধর্মের নাম হয়েছে এর প্রচারক যিশুখ্রিষ্টের নামে। বৌদ্ধ ধর্মের নাম হয়েছে মহাত্মা বুদ্ধের নামে। তবে ইসলাম এমন একটি ধর্ম, যা কোনো ব্যক্তি বা জাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ইসলামের নামকরণ করেছেন মহান আল্লাহপাক। একমাত্র আল্লাহর ওপর দৃঢ়বিশ্বাস রেখে তাঁর দেয়া বিধিবিধান যথাযথভাবে পালন করা ব্যতীত কোনো লোক প্রকৃত মুসলমান হতে পারে না। ইসলাম অর্থ আল্লাহর কাছে আনুগত্য প্রকাশ করা, আত্মসমর্পণ করা, শান্তির পথে চলা। মূলত যিনি ইসলামের বিধান মেনে চলেন, তিনিই মুসলমান। ইসলাম আল্লাহতায়ালার মনোনীত একমাত্র দ্বীন। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন মুসলমানকে আল্লাহর মনোনীত ব্যবস'ার আলোকেই জীবন যাপন করতে হয়।
আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন : নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন হচ্ছে ইসলাম।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১৯)তাই আল্লাহর নির্র্দেশ, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্র্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-২০৮)পরিপূর্র্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করতে হলে নিজের ঈমান ও আমল ঠিক করতে হবে এবং মানুষকে ভালোবেসে মানুষের মঙ্গলের জন্য আল্লাহর রাস্তায় সময় ও সম্পদ ব্যয় করতে হবে। মানবজীবনের একমাত্র কামিয়াবি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের হুকুম পালন করার মধ্যেই নিহিত।
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘আমি চাই তোমাদের মধ্যে এমন একদল লোক, যারা মানুষকে সত্যের পথে আহ্বান করবে, ভালো কাজের আহ্বান করবে, আর মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে। ওই দলটাই হলো সফলকাম।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১০৪)
পথভোলা মানুষকে পথের সন্ধান দেয়া, বিপথগামী মানুষকে সঠিক পথে আনা, মানুষকে সুপরামর্র্শ দেয়া, চরিত্রবান ও সৎ সাহসী করা, অভাবগ্রস্ত, বিপদগ্রস্ত, দুস', এতিম, অসহায়ের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া, মহৎ কর্র্মের উপমা সৃষ্টি করা, ভালো কাজে উৎসাহিত করা, মন্দ থেকে বিরত থাকার আবেগ সৃষ্টি করা, কর্র্মসংস'ানের ব্যবস'া করে দেয়া, এক কথায় ইহকাল ও পরকালের শান্তির জন্য মানুষকে সত্য ও সরল পথে চলার আহ্বানই হচ্ছে দাওয়াত বা তাবলিগ।
মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হলে, ভালো দিয়ে মন্দের মোকাবেলা করতে হলে বিনয়ী ও ধৈর্র্যশীল হতে হবে। মানুষকে ভালোবাসতে হবে। মানুষের মার্যাদা বুঝতে হবে। হৃদয়ে মানুষের প্রতি ভালোবাসা পয়দা না হলে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ করা সম্ভব নয়। হজরত আনাস রা: থেকে বর্র্ণিত, রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘তোমরা দ্বীনের দাওয়াত সহজ করো, কঠিন কোরো না। সুসংবাদ দাও, বীতশ্রদ্ধ কোরো না।’ (বুখারি ও মুসলিম)আল্লাহপাক ঘোষণা করেন, ‘তুমি তোমার প্রতিপালকের দিকে ডাকো হিকমত বা কৌশল সহকারে উত্তম নসিহতের মাধ্যমে এবং বিতর্র্ক করো উত্তম পন'ায়।’ (সূরা নাহল, আয়াত-১২৫)
দাওয়াত ও তাবলিগে সময়, জান ও মাল উৎসর্র্গ করে আল্লাহর প্রকৃত প্রেমিক হতে হবে। সাধনা করে নিজের কথা ও কাজে রূহানি প্রভাব সৃষ্টি করতে হবে। তবেই মানুষ আহ্বানে সাড়া দেবে। আল্লাহর রাস্তায় একটা সকাল বা একটা বিকেল ব্যয় করা সারা দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।’ ‘হে মুমিনগণ, তোমাদেরকে কি এমন একটি ব্যবসায়ের সন্ধান দান করব, যা তোমাদেরকে কঠোর আজাব থেকে রক্ষা করবে? তা হলো, তোমরা আল্লাহর ওপর ও আল্লাহর রাসূলের ওপর ঈমান আনবে, মেহনত করবে আল্লাহর রাস্তায় মাল ও জান দিয়ে।’ (সূরা আস-সাফ, আয়াত-১০)আল্লাহর রাস্তায় জান ও মাল দিয়ে মেহনত করার অর্র্থই হচ্ছে সৃষ্টিকে ভালোবেসে স্রষ্টাতে বিলীন হওয়া। এই পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের মাধ্যমে মানুষের স'ায়ী (পরকালীন) মুক্তির ব্যবস'া করে দেয়া এবং পার্থিব কল্যাণ করা। তার কথার চেয়ে উত্তম কথা কার হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নেক আমল করে এবং সে বলে, আমি মুসলমানদের অন্তর্র্ভুক্ত।’ (সূরা হা-মীম আস-সাজদা, আয়াত-৩৩)
কুরআন-হাদিসের দাবি পূরণ এবং নবী রাসূল সা:, পীর মাশায়েখ, ইমাম, মুহাদ্দিছ ও ফকীহগণের এই আদর্শ বাস্তবায়নে হজরত মাওলানা ইলিয়াস রহ: প্রায় ছয় দশক আগে ১৯১০ সালে ভারতের এক জনবিরল অঞ্চল মেওয়াত থেকে হাতেগোনা কজন মানুষ নিয়ে তাবলিগের দাওয়াতে মেহনত শুরু করেন। তাবলিগের এ মেহনত এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। হজরত ইলিয়াছ রহ: ১৩৫১ হিজরি সালে হজ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর কিছু সাধারণ মুসলমানকে দুনিয়া ও সংসারের ঝামেলা থেকে মুক্ত করে ছোট ছোট দলবদ্ধ করে মসজিদের ধর্মীয় পরিবেশে অল্প সময়ের জন্য দ্বীনি শিক্ষা দিতে থাকেন।
হজরত মাওলানা আবদুল আজিজ রহ:-এর মাধ্যমে ১৯৪৪ সালে বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের কাজ শুরু হয়। তারপর ১৯৪৬ সালে বিশ্ব ইজতেমা সর্বপ্রথম অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের তাবলিগের মারকাজ কাকরাইল মসজিদে। পরে ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রাম হাজী ক্যাম্পে ইজতেমা শুরু হয়। এরপর ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে, তারপর ১৯৬৫ সালে টঙ্গির পাগারে এবং সর্বশেষ ১৯৬৬ সালে টঙ্গির ভবেরপাড়া তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়। সেই থেকে এ পর্যন্ত সেখানেই ১৬০ একর জায়গায় তাবলিগের সর্ববৃহৎ ইজতেমা বা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
লেখক : প্রবন্ধকার
দৈনিক নয়াদিগন্তে প্রকাশিত-১৩/০১/২০১২