সোমবার, ১২ মে, ২০১৪

মাওলানা রিজওয়ান রফীক জমীরাবাদ

-মুহাম্মদ সালমান ইবনে রিজওয়ান

আমার পিতাজি মাওলানা রিজওয়ান রফীক জমীরাবাদী ফেব্রুয়ারী ১৯৭১ ইং মোতাবেক ১৩৯০ হিজরীতে পটিয়ার এক সম্ভ্রান্ত আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হলেন শারেহুল হাদীস অধিক গ্রন্থ প্রণেতা হযরতুল আল্লাম মাওলানা রফীক আহমদ সাহেব (দামাত বারাকাতুহুম) সিনিয়র মুহাদ্দিস ও তাফসীর বিভাগীয় প্রধান আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া। তাঁর দাদা ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদীস ও ফতওয়া বিশারদ আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, প্রাক্তন সদরুল মুদাররিসীন ও শায়খুল হাদীস আরেফ বিল্লাহ হযতুল আল্লাম মাওলানা আহমদ (ইমাম সাহেব হুজুর) (রহ.)
শিক্ষা : তিনি ছোট বেলায় নূরানী কায়দা ইত্যাদি শেষ করা পর ৭ বছর বয়সে তাঁকে তাঁর দাদাজি এবং তৎকালিন জামিয়া পটিয়ার মহাপরিচালক হযরত হাজী ইউনুস সাহেব, জামিয়ার মুঈনে মুহতামিম ফকীহুল মিল্লাত হযরত মুফতী আব্দুর রহমান সাহেব (দা.বা.)সহ আরো বড় বড় আলেমের উপস্থিতিতে সর্ব প্রথম পবিত্র কুরআনের সবক দেওয়া হয়। সে সময় থেকে আলজামিয়া পটিয়ায় ভর্তি হয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। ১৯৮১ ইংরজিতে চন্দনাইবৈলতলি বশরতনগর রশীদিয়া মাদরাসায় জামাআতে নাহুমে ভর্তি হয়ে হেদায়াতুন্নাহু জামাত পর্যন্ত শিক্ষা অর্জন করেন। ১৯৮৫ থেকে পুনরায় আলজামিয় আল-ইসলামিয়া পটিয়ায় ভর্তি হয়ে ১৯৯০-৯১ শিক্ষা বর্ষে দাওরায়ে হাদীস পাশ করেন। ১৯৯২-৯৩ শিক্ষা বর্ষে অত্র জামিয়াতেই বাংলা সাহিত্য ও ইসলামী গবেষণা বিভাগে এক বছর শিক্ষা অর্জন করেন।
এর পর তাঁর পিতাজির বিভিন্ন প্রকাশনা ও লাইব্রেরী তথা আশরাফিয়া লাইব্রেরীর পরিচালক হিসেবে বিভিন্ন দ্বীনি খেদমাত আঞ্জাম। ১৯৯৬ সালে নিজেদের প্রকাশনায় সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তিনি চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লায় ‘আহমদিয়া কম্পিউটার এন্ড প্রিন্টাস’ নামে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান করেন। ২০০৪ সালে তৎকালীন জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার মহাপরিচালক আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী সাহেব (রহ.) এর ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি জামিয়া পটিয়ায় খিদমত গ্রহণ করেন। সে সুবাদে ২০০৪ ও ২০০৫ ইংরেজীতে মাসিক আততাওহীদের সহসম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ সালে তিনি কুয়েত প্রবাসি হন। ২০০৬ সালে পুনরায় দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফেরার পর তাঁদের মুরুব্বী ও উস্তাদ এদেশের শীর্ষ  মুরুব্বী হযরত ফকীহুল মিল্লাত মুফতী আব্দুর রহমান সাহেবের ডাকে সাড়াদিয়ে মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী বাংলাদেশ বসুন্ধরায় বিভিন্ন খেদমাতে অংশগ্রহণ করেন। তথায় তিনি মদীনাতুল উলুম মাদরাসা বসুন্ধরায় কিছু দিন শিক্ষকতা করেন। বর্তমানে তিনি মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী বাংলাদেশ বসুন্ধরা হতে প্রকাশিত মাসিক আল-আবরারের নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি আধ্যাত্মিক শিক্ষা অর্জনের নিমিত্ব প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, শায়খে তরীকত হযরত মওলানা সুলতান আহমদ নানুপূরী (রহ.) এর হাতে বাইআত গ্রহণ করেন। তাঁর ইন্তিকালের পর হযরত মাদানী (রহ.) এর বিশিষ্ট খলীফা হযরত মাওলানা আব্দুস সত্তার শাহসাহেবের হাতে বাইআত গ্রহণ করেন। তবে তিনি দাদা ও পিতার কাছ থেকে কিছু বিশেষ বিশেষ বিষয়ে  ইজাযতপ্রপ্ত  বলে জানা যায়।  
রাজনৈতিক জীবনে তিনি বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাত্র জমিয়তের সভাপতি এবং ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের দায়ত্ব পালন করেন। পরে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ছাত্র বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।  
লেখালেখির প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল সে ছোট বেলা থেকেই। মাদরাসা থেকে ফারিগ হওয়ার পর তিনি যে বই লেখে পরিচিত হন তা হলো একটি উপন্যাস ‘সর্বনাশা প্রেম’। বইটি বিভিন্ন মহলে খুবই সমাদৃত হয়। এছাড়ও তৎকালিন তাঁর বিভিন্ন পত্রিকার লেখালেখি সংরক্ষিত দস্তাবেজ থেকে আমরা সংগ্রহ করি। তিনি তৎকালীন প্রায় ইসলামী পত্রিকায় লেখা লেখি করেছেন। জাতীয় দৈনিকসমূহেও তাঁর অনেক লেখা পাওয়া যায়। যেমন দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক মিল্লাত, দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক নয়াদিগন্ত, চট্টগ্রামের দেনিক ঈশান, দেনিক কর্ণ ফুলী, দৈনিক নয়া বাংলা ইত্যাদিতে তাঁর বহু লেখা ছাপা হয়। যার কিছু কিছু আমাদের সংরক্ষণে রয়েছে। মাসিক মদীনা, মাসিক আততাওহীদ, মাসিক পায়গামে হক, মাসিক আররশীদ, মাসিক দাওয়াতুল হক, মাসিক মুঈনুল ইসলাম, মাসিক আল হাসান, মাসিক পটিয়া, সাপ্তাহিক মুসলিম জাহান, সাপ্তাহিক জামিয়ত এবং সাময়িক চেতনা ইত্যাদিতে তাঁর লিখিত অনেক লেখা আমাদের সংগ্রহে রয়েছে। এতে বোঝা যায় তাঁর লেখালেখির ঝোঁক ছোট বেলা থেকেই। 
তাঁর সংকলিত ও অনুদিত কিতাবাদির মধ্যে রয়েছে, হায়াতুল হায়ওয়ান, যাদু ত্তালেবীন বাংলা, আল ফিকহুল মুয়াসসার, ফারসীকি পহেলী কিতাব, তালীমুল মুতাআল্লিম, খেলাফতে রাশেদা ইত্যাদি। সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে তাঁর অনুদিত ঈযাহুল মিশকাত পঞ্চম ও ষষ্ঠ খণ্ড। প্রকাশিত হয়েছে পবিত্র কুরআন সুন্নাহর আলোকে সহীহ শুদ্ধ নামায। আরো বিভিন্ন কিতাবাদী যন্ত্রস্ত রয়েছে।
তাঁর পিতার লিখিত বড় বড় গ্রান্থাদির মধ্যে ঈজাহুল মিশকাত (মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ), এখন বাংলায় অনুদিত হয়েছে। উক্ত কিতাবের ব্যাপারে তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে  জানা গেছে, কিতাবটিতে হাদীস এবং হাদীসের উর্দূই অর্থফা সংযোজন করে একটি পরিপূর্ণদা শরাহের মানে উন্নীত করা। এব্যাপারে কাজ চলছে বলে জানা গেছে।  ইফাদাতুল মুসলিম (মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ)। গ্রন্থটির বাংলা অনুবাদের কাজও নাকি হাতে নিয়েছেন তিনি।   
তাঁর জীবনের স্মরণীয় মুহুর্ত  সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, সে ছোট বেলা, যখন তিনি তাঁর দাদাকে হুইল চেয়ারে করে মসজিদে নিয়ে যেতেন। তখন বুঝতে না পারলেও এখন তাঁর কাছে সে সময়গুলোই খুবই মূল্যবান মনে হয়।  
আল্লাহ তাঁকে হায়াতে তাইয়িবা দান করুন আমীন।