বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭

শারেহুল হাদীস হযরতুল আল্লাম মাওলানা রফীক আহমদ

সিনিয়র মুহাদ্দিস আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া

মাওলানা রিজওয়ান রফীক জমীরাবাদী

শারেহুল হাদীস হযরতুল আল্লাম মাওরানা রফীক আহমদ সাহেব। পিতা জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, সাবেক শায়খুল হাদীস, সদরুল মুদাররেসীন হযরত আল্লামা আল-ইমাম আহমদ (রহ.)
শারেহুল হাদীছ ও উপমহাদেশে অন্যতম দ্বীনি ইলমী ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। 
জন্মঃ
পিতাজী হযরত আল্লামা রফীক আহমদ সাহেব ১৩৬৪ হিজরী মোতাবেক ১৯৪৫ইং সনে চট্টগ্রামের চাঁন্দগাঁও থানার অন্তর্গত মোহরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম মোজাহের উলূম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হযরত মাওলানা ইসমাঈল সাহেব তাঁকে মধু পান করান এবং তাঁর কানে আযান দেন।

শিক্ষা-দীক্ষা:

৬ বছর বয়সে তিনি ইলমে নববীর পিপাসা মিটাতে ১৩৭০ হিঃ ১৯৫১ ইং সনে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ায় ভর্তি হন। কুতুবে যামান হযরত মাওলানা মুফতী আযীযুল হক রহ. তাঁকে র্কুআন মজীদের প্রথম সবক প্রদান করেন। অত্র জামিয়ার বড় বড় মনীষী গনের সান্নিধ্যে থেকে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে আরম্ভ করে ১৩ বছরের মধ্যে দরসে নিজামীর কিতাবসমূহ অত্যন্ত দক্ষতা ও পারদর্শিতার সাথে শেষ করেন। ১৩৮৪হিঃ ১৯৬৫ ইং সনে যুক্তি বিদ্যা ও হিকমত-ফলসফার কিতাবাদি-  সদ্রা, শামসে বাজেগাহ, হাম্দুল্লাহ, উকলীদস, মুল্লা হাসান, খুলাসাতুল হিসাব, খিয়ালী, উমূরে আম্মা ইত্যাদি সমাপ্ত করেন। ১৩৮৬ হি ১৯৬৭ ইং সনে দাওরায়ে হাদীছ শরীফ তথা বর্তমান সরকারী স্বীকৃতি অনুযায়ী ইসলামিক ষ্টাডিজে মাষ্টার্স শেষ করেন। “আঞ্জুমানে ইত্তিহাদুল মাদারিস বাংলাদেশে”এর অধীনে দাওরায়ে হাদীছের বার্ষিক পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। “সাওয়ানেহে আইম্মায়ে আরবাআ” তাঁকে পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হয়। দাওরায়ে হাদীছের পরীক্ষায় তাঁর এহেন কৃতিত্ব ও যোগ্যতা দেখে পাকিস্তান কাওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাসচিব তাঁকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন এবং এর জরুরী কার্যক্রমও সম্পন্ন করেন। কিন্তু তাঁর মরহুম আব্বাজান এবং অন্যান্য শিক্ষকগণের কাছে সে ব্যাপারে পরামর্শ চাইলে তাঁদের পক্ষ থেকে কোন ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় তাঁর মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া হয়নি।

শিক্ষক গণ: 

তিনি শিক্ষা জীবনে যে সকল ওলামায়ে কেরাম, পীর-মশায়েখ ও বুজুর্গানে দ্বীনের নিকট ইলমে নববী আহরণের গৌরব অর্জন করেন তাঁদের প্রায়ই ছিলেন যুগের প্রখ্যাত, শ্রেষ্ঠ, অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব। তাঁদের কৃতিত্ব ও অবদান মুসলমানদের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জল দিক হিসেবে পরিস্ফুট রয়েছে এখনও। তাঁরা হলেন নিজ পিতা হযরত আল্লামা আহমদ (ইমাম সাহেব হুযূর) রহ., খতীবে আজম হযরত আল্লামা সিদ্দীক আহমদ রহ., হযরত মাওলানা শাহ ইউনুস (হাজী সাহেব হুযূর) রহ. (দ্বিতীয় মহা পরিচালক আল-জামিয়া পটিয়া), হযরত আল্লামা আমীর হোসাইন (মীর সাহেব হুযূর) রহ. হযরত আল্লামা মাওলানা ফযলুর রহমান সাহেব বাঁশখালবী রহ. হযরত আল্লামা মুফতী ইব্রাহীম রহ. হাফেজে বুখারী আল্লামা মাওলানা আব্দুল্লাহ দরখাস্তী পাকিস্তান, হযরত  মাওলানা খালেদ মাহমূদ, চীফ জাস্টিস, পাকিস্তান, হযরত মাওলানা আলী আহমদ (বোয়ালবী সাহেব হুযূর) রহ. হযরত মাওলানা হোসাইন আহমদ রহ. সাবেক নায়েবে মুহতামিম, জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া ও সদরে মুদাররিসীন, পোকখালী মাদ্রাসা, হযরত মাওলানা ইসহাক (গাযী সাহেব হুযূর) রহ. হযরত মাওলানা মুফতী আব্দুর রহমান  সাহেব (মুঃজিঃ), প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা, প্রমুখ।

অধ্যাপনা:

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া থেকে হাদীছ, তাফসীর, যুক্তি বিদ্যা, বাংলা সাহিত্য ও অন্যান্য বিষয়ে উচ্চতর জ্ঞান অর্জনের পর তাঁকে অধ্যাপনার জন্য বিভিন্ন মাদ্রাসার পক্ষ থেকে আহবান জানানো হলে তিনি  ১৩৮৮হিজরী মোতাবেক ১৯৬৯ ইং সনে  মুরুব্বীগণের পরামর্শক্রমে “রাউজান ইমদাদুল ইসলাম মাদ্রাসায়” সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে  যোগদান করেন। এবং তাঁকে দিয়েই উক্ত মাদ্রাসায় জামাতে উলা (মিশকাত) আরম্ভ করা হয়। উক্ত মাদ্রাসায় শিক্ষকতা অবস্থায় ১৩৯১ হিজরী মোতাবেক ১৯৭২ ইং সনে এস, এস, সি পরীক্ষা দেন। ১৩৯৩ হিজরী মোতাবেক ১৯৭৪ ইং সনে “নানুপুর ওবাইদিয়া মাদ্রাসায়” দাওরায়ে হাদীছ আরম্ভ করার সময় দক্ষ ও পারদর্শী হাদীছের অধ্যাপক নিয়োগ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে, তাঁকে উক্ত মাদ্রাসার মুহাদ্দিছ হিসেবে পেয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ খুবই আনন্দিত হয়েছিলেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি ছাত্রাবাস তত্বাবধায়কের দায়িত্বও পালন করেন। এরই মধ্যে তিনি অধ্যাপনা ও মাদ্রাসার বিভিন্ন ব্যবস্থাপনার কাজে বিশেষ খ্যাতির অধিকারী হয়ে উঠেন। উক্ত মাদ্রাসায় তিনি প্রায় চার বছর কৃতিত্বের সাথে হাদীছ, তাফসীর, ফিক্হ, তর্ক শাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ কিতাবাদির দরস প্রদান করেন। ১৩৯৭ হি. মোতাবেক ১৯৭৮ ইং সনে মুরুব্বীগণ ও আসাতিযায়ে কিরামের আহব্বানে আপন মাদরে ইলমী (মাতৃ বিদ্যাপীট),এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ায়” ইল্মী খিদমতে নিয়োজিত হন। অত্র জামিয়ায় তিনি “দরসে নিজামী”এর বিভিন্ন বিষয়ের কিতাবাদিসহ হাদীছ-তাফসীরের গুরুত্ব পূর্ণ কিতাবাদি পাঠ দানের পাশাপাশি দীর্ঘ কাল ছাত্রাবাস তত্তাবধায়কের দায়িত্ব পালন করেন। এবং “তর্ক বিদ্যা” বিভাগ ও “তাফসীরুল কোরআন” বিভাগের প্রধান হিসেবে এপর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

তিনি যে সকল কিতাবাদির দরস দান করেনঃ

তাহাবী শরীফ, তিরমিযী শরীফ, শামায়েলে তিরমিযী, নাসায়ী শরীফ, মুয়াত্তা মালেক ও মুহাম্মদ, মেশকাত শরীফ (সম্পূর্ণ)  নোখ্বাতুল ফিক্র, ইবনে কাছীর, বয়জাবী শরীফ, তাফসীরে মাদারিক, শরহে আকাঈদ, হেদায়া ১ম, ৩য়ও ৪র্থ খন্ড, কাওয়ায়ে’দ ফী উলূমিল হাদীছ, মায়বুযী, সুল্লামুল উলূম, দীওয়ানে হামাসা, মাক্বামাত, মুখতাসারুল মাআ’নী, সাবয়ে’ মুআল্লাকাত, দীওয়ানে মুতানাব্বী, হুসামী ও কাফিয়া ইত্যাদি।

আধ্যাত্মিক শিক্ষাঃ 

ইলমে জাহেরী (কিতাবী ইলম) অর্জন শেষে ইলমে বাতেনী (আধ্যাত্মিক শিক্ষা) অর্জনের জন্য তিনি দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত ওলামায়েকেরাম ও পীর মশায়েখের সান্নিধ্য অর্জন করেছেন। তিনি অবশ্য ১৪০০ হি. ১৯৮১ ইং সালে তিনি দাদাজী হযরত ইমাম সাহেব হুজুর রহ. এর কাছ থেকে ইজাযত প্রাপ্ত হন। 
মক্কা শরীফে তিনি হযরত আবরারুল হক্ব সাহেব  (র্হাদূয়ী হযরত) রহ. এর কাছে বায়আত গ্রহণ করেন। এর পর থেকে হারদূয়ী হযরতের সাথে তাঁর শেষ জীবন পর্যন্ত  চিঠি পত্রের মাধ্যমে ইলমে তরীকতের বিভিন্ন শিক্ষা গ্রহণ করেন। 
হারদুয়ী হযরত একপত্রের জাবাবে লেখেন                                             ইবাদতে স্বাদ   পাওয়া মূল উদ্দেশ্য নয়। যথা সম্ভব ইবাদতেই  থাকতে হবে”। আরেক পত্রের জবাবে লিখেন জাহেরী ও বাতেনী  রোগের জন্য নিম্ন নিয়মে আমল করবেনঃ দরূদ শরীফ তিনবার, সূরায়ে ফাতেহা তিন বার, আয়াতুল কুরসী তিন বার, সূরায়ে ফলক তিন বার, সূরায়ে নাস তিন বার, এর পর দরূদ শরীফ তিন বার পড়ে পুরো শরীরে ফুঁক দিবে।  প্রত্যেক নামাযের পর এ আমল করলে দুনিয়াবী ও দ্বীনী রোগ থেকে শেফা পাওয়া যাবে। আর সকল প্রকার জাহেরী রোগের শেফার জন্য ১১বার সূরায়ে ফলক ও নাস তিন তিনবার পড়ে পানিতে ফুঁক দিয়ে পান করাতে হবে। তাছাড়াও বিভিন্ন পীর মশায়েখের সাথে বায়আত মুরীদ ও সুলূকের শিক্ষা-দীক্ষা বিষয়ে বহু চিঠি পত্র আদান প্রদান হয়েছে। নমূনা সরূপ পরের অনুচ্ছেদে একটি চিঠি সংযুক্ত করা হয়েছে।

হজ্জ ব্রত পালন:

আল্লাহ প্রেমিক মুসলমান বিশেষ করে ওলামায়ে কেরাম সর্বক্ষণ আল্লাহর ঘর পবিত্র মক্কা ও রাওজাতুন্নবী সা. মদীনা মুনাওয়্যারা ইত্যাদি পবিত্র স্থান সমূহের যিয়ারত করার জন্য ব্যাকুল থাকেন। পিতাজিও তাঁর অর্জিত অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে পবিত্র হজ্জ্ব ব্রত পালনের  জন্যে অন্তরে সর্বদা প্রত্যাশা লালন করছিলেন। সাথে সাথে সর্বক্ষণ তিনি দুআ’য়ও মশগুল থাকতেন। তাঁর এ আন্তরিক দুআ’ কবুল হয় এবং আল্লাহপাকের ঘরে গিয়ে লব্বাইক বলার সুযোগ হয়। ১৪১৩ হিজরী মোতাবেক ১৯৯৩ইং সনে তিনি পবিত্র হজ্জ্ব পালন করেন। সে সফরে মক্কা-মদীনার বিভিন্ন ঐতিহাসিক পবিত্র স্থান সমূহ যিয়ারত করেন। সৌদী আরবের কয়েকটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সেখানকার আলেম-ওলামার জিয়ারত, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের গ্রন্থাগারে নায়াব এবং কময়াব(বিরল) কিতাবাদি দেখার সুযোগ গ্রহণ করেন এ সফরে। বিশেষ করে জামিয়া উ¤মূল কুরা, জামিয়া ইসলামিয়া মদীনা মুনাওয়ারায় গিয়ে নিজ ইলমী পিপাসা অনেকটা মিটাতে সক্ষম হন। বিভিন্ন মাদ্রাসায় তাঁকে আমন্ত্রন জানানো হয়। প্রবাসীগণও তাঁকে বিভিন্ন স্থানে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যান। তিনি তাঁদের হর্ষ-বিষাদ সম্বলিত জীবনের অনেক দিক পর্যবেক্ষণ করেন এবং তাদেরকে ওয়াজ-নসীহত দ্বারা ভূষিত করেন। পবিত্র হজ্জ্ব ব্রত পালন শেষে তিনি জামিয়া পটিয়ায় পৌঁছলে ছাত্ররা তাঁকে বিশেষ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বরণ করে নেয়। তাঁর সম্মানে রচনা করা হয় আরবী-উর্দূ ভাষায় বহু কবিতা। এর দুটু সংরক্ষিত আছে। সেগুলো নমূনা স্বরূপ পরের অনুচ্ছেদে প্রকাশ করা হল।

বরেণ্য ওলামা ও পীর-মশায়েখের সান্নিধ্য লাভ :

পিতাজান হযরত আল্লামা রফীক আহমদ সাহেব দেশ-বিদেশের বিভিন্ন উচ্চ সারির আলেম-ওলামা ও পীর-মশায়েখের সান্নিধ্য লাভে ধন্য হয়েছেন। সে ব্যাপারে তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি উপস্থিত যা স্মরণে ছিল তা আমাকে বলেন। 
তিনি সর্বাধিক যে মহান ব্যক্তির দীর্ঘ সান্নিধ্য অর্জন করেছেন তিনি হলেন নিজ পিতা আমার দাদাজি হযরত আল্লামা আহমদ (ইমাম সাহেব হুযূর) রহ.। তিনি যেমন তাঁর পিতা ছিলেন তেমনি তাঁর উস্তাদ এবং মুরশিদও ছিলেন। পিতাজি ৫০ বছর যাবৎ দাদাজির যে সান্নিধ্য পেয়েছেন তা বড়ই মহোত্তম জীবন ছিল বলে তিনি উল্লেখ করে বলেন, যখনই সুন্নাত ও মুস্তাহাব পরিপন্থী কোন সামান্য কিছুও দাদাজির নজরে পড়ত সাথে সাথে তিনি কঠোরভাবে তা সংশোধনের তাগিদ দিতেন। যার ফলে তাঁর সুন্দর চরিত্র গঠনও প্রতিটি ক্ষেত্রে সুন্নাতের চর্চায় তিনি বেশির ভাগ দিকনির্দেশনা ও তত্বাবধান দাদাজির কাছেই পেয়েছেন।
জীবনের এক দীর্ঘ সময় তিনি আরেক মহান ব্যক্তির সান্নিধ্য অর্জন করতে সক্ষম হন, তিনি হলেন কুতবে যামান হযরত আল্লামা মুফতী আযীযুল হক রহ.। ছয় বছর বয়সে তিনি যখন আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ায় ভর্তি হন তখন হযরত মুফতী আযীযুল হক রহ. তাঁকে পবিত্র কোরআনের প্রথম সবক পড়িয়ে দিয়ে তাঁর শিক্ষা জীবনের বরকতময় স্তম্ভটির গোড়া পত্তন করেন। দশ বছর যাবৎ তিনি হযরত মুফতী সাহেব রহ. এর অতি নিকটে থেকেই লেখা পড়া শেষ করতে সক্ষম হন। তিনি দাদাজির রুমেই থাকতেন। দাদাজির রুম ছিল হযরত মুফতী সাহেব রহ. এর পাশা পাশি। যার ফলে তিনি হযরত মুফতী সাহেব রহ. এর ওয়াজ-নসীহত এবং হুযূরের সরাসরি তত্বাবধান পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রগামী ছিলেন।
বাংলার প্রথম মুহাদ্দিছ হযরত আল্লামা সাঈদ আহমদ সাহেব সন্দীপী খতমে বুখারী উপলক্ষ্যে  জামেয়া পটিয়ায় আগমণ করলে তাঁর সাথে বিশেষ সাক্ষাত লাভের সুযোগ হয়। দাদাজির উস্তাজ জিরি মাদ্রাসার প্রথম মুহাদ্দিছ হযরত আল্লামা আব্দুল ওয়াদূদ রহ. সন্দ্বীপীর কাছাকাছি বসার এবং হাদিয়া বিনিময় ও তা স্বানন্দে গ্রহণ করার মাধ্যমে দু’আ পাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন।   হযরত মাওলানা মুফতী ফয়জুল্লাহ সাহেব রহ. ও হাকীমূল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ. এর বিশিষ্ট খলিফা হযরত মাওলানা  আব্দুল ওয়াহ্হাব সাহেব রহ. এর সাথে বসে কথা বলা এবং ওয়াজ-নসীহত শ্রবণ করার সুযোগ হয়েছে এবং তাঁদের জানাযায় অংশ নেওয়ার সৌভাগ্যও অর্জন হয়েছে বলে জানান।
জিরি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা আহমদ হাসান রহ. ও তাঁর সহকারী হযরত মাওলানা মুফতী নূরুল হক্ব সাহেব রহ. এর সান্নিধ্যে বসে ওয়াজ-নসীহত শ্রবণ এবং হযরত আহমদ হাসান সাহেব রহ. এর ইন্তিকাল পূর্ব অসুস্থাবস্থায় তাঁর সেবা-সশ্র“ষা করা এবং তাঁদের উভয়ের জানাযায় শরীক হতে পারায় তিনি অত্যন্ত খুশি প্রকাশ করেন। তেমনি চট্টগ্রাম মিয়াখাঁন নগর মুজাহেরুল উলূম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইসমাঈল সাহেবের ওয়াজ নসীহত শ্রবনের ব্রতি অর্জন করেন কয়েক বার।
জীবনের কিছু সময় তিনি হযরত মাওলানা সুলতান আহমদ নানুপুরী রহ. এর সুহবতে ব্যয় করেন। নানুপূর মাদ্রাসায় তিনি চার বছর যাবৎ উস্তাযুলহাদীছ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসময় তিনি  হযরত নানুপূরী সাহেব রহ.এর গভীর আস্তা ও স্নেহ কুড়াতে সক্ষম হন। হযরত নানুপুরী হুযূর রহ. একদিন একটি স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, আমি এক সময় রাঙ্গুনিয়ায় গেলে এক বুজুর্গ আমাকে বললেন, আপনার মাদ্রাসায় কিছু শয়তান ঢুকতে চায়, মাওঃ রফীক আহমদ সাহেব সে শয়তানদেরকে বাঁশ দিয়ে মেরে মেরে তাড়িয়ে দিচ্ছেন। এর ভিত্তিতে নানুপূরী হযরত বলেন এ স্বপ্ন শুনার পর থেকে আমি অন্যত্র গেলে আমার কোনই চিন্তা থাকে না। কারণ আপনিতো মাদ্রাসাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। হযরত নানুপূরী সাহেব রহ. একদা পিতাজিকে বলেন,  তুমি সব সময় যিক্রে মশগুল থাক এবং সাহ্রীতে (শেষ রাত্রিতে) উঠ। তাই আমি একটা কথা বলতে চাই; কিন্তু তুমি তো আমার মুরীদ নও, তাই আমি ইমাম সাহেব হুযূরের সাথে সাক্ষাত করব। অতপর এক দিন নানূপুরী হুযূর রহ. নিজ মাথার টুপিটি তাঁকে পরিয়ে দেন।
নানুপূর মাদ্রাসায় থাকা অবস্থায় মুহাম্মদ মিয়া সূফী নামক সিলসিলায়ে গাঙ্গুহীর একজন বুজুর্গ  বলেন, তুমি তো ইমাম সাহেব হুযূরের ছেলে! আমি তোমাকে এজাযত দিলাম। কারণ আমি স্বপ্নে একটি বিশেষ মজ্লিসে যে সব ব্যক্তিকে দেখেছি তাদের সকলকে ইজাযত দিতে আগ্রহী। হযরত মাওলানা হারুন বাবু নগরী রহ. এর সাথেও তাঁর বিশেষ সম্পর্ক ছিল। তার কাছ থেকেও মা’রিফাত ও সুলূকের অনেক কিছু অর্জন করতে সক্ষম হন।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে ষ্টেশন মসজিদে বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম হযরত মাওলানা শামছুল হক্ব ফরীদপূরী (সদর সাহেব) রহ. এর সান্নিধ্যে বসে কথা বলা এবং উপদেশ গ্রহণ করার সুযোগ হয়। প্রখ্যাত বুজুর্গ হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব (পীরজীহুজুর) রহ. এর সাথেও বিশেষ ভাবে আলাপের সৌভাগ্য হয়। ফেনী ওলামা বাজার মাদ্রাসার প্রাক্তন মুহতামিম হযরত মাওলানা আব্দুল হালীম সাহেব রহ. যিনি হযরত মাওলানা নূর বখশ সাহেবের অন্যতম খলীফা ছিলেন তাঁর সাথেও দু-তিনবার বসার সুযোগ হয়েছে। হযরত মাওলানা আবদুল হালীম রহ. যে কোন সময় জামেয়া পটিয়ার দাওয়াতে আসলে, যাতায়াত বাবত দেওয়া টাকার ব্যাপারে বলতেন, আমার তো এত টাকা খরচ হয়নি।
হযরত আল্লামা আন্ওয়ার শাহ্ কাশ্মীরী রহ. এর ছাত্র এবং হযরত মাওলানা জফর আহমদ ওসমানী রহ. এর বিশিষ্ট খলীফা, হযরত আল্লামা মুফতী শফী রহ. এর সহপাঠী হযরত মওলানা ফজলুর রহমান সাহেব তাঁর বিশেষ আসাতেযার মধ্যে অন্যতম। তিনি হযরতের কাছে জালালাইন ও হিদায়া (আঊয়ালাইন) পড়েন। হযরতের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা আমাদের ঘর থেকেই হতো। তিনি পিতাজি কে বলতেন, রফীক! তুমিতো পাপমুক্ত, আর আমি পাপী। সুতরাং আমার জন্য বিশেষ ভাবে দোয়া করবে।
জামিয়া পটিয়ার দ্বিতীয় মুহতামিম হযরত মাওলানা ইউনুস সাহেব (হাজী সাহেব হুযূর) এর সান্নিধ্যেও তিনি দীর্ঘ দিন থাকার সুযোগ পান। তাঁর সাথে সাক্ষাত হলে তিনি স্বস্নেহে বলতেন রফীক নাকি? এ স্নেহময়ী আওয়াজ শ্রবনে পিতাজির অন্তর খুবই উৎফুল্ল হতো। হযরত আল্লামা আমীর হোসাইন (মীর সাহেব হুযূর) রহ., হযরত আল্লামা সিদ্দীক আহমদ (খতীবে আজম) রহ. তাঁর শফীক আসাতিযার মধ্যে ছিলেন। সে হিসেবে দীর্ঘ দিন তাঁদের সান্নিধ্যে থাকার সুযোগ হয়। খতীবে আজম রহ. তাঁকে বলেছেন, মওদূদী ফিৎনা থেকে মুসলমানদেরকে পরিত্রান দেওয়ার জন্য তাদেরকে তাবলীগ মূখী করা দরকার। 
হযরত মাওলানা আলী আহমদ বোয়ালভী রহ. এর সুহবতেও মাঝে মাঝে বসার সুযোগ হতো। বিভিন্ন লোককে তিনি বোয়ালভী সাহেব রহ. এর কাছে নিয়ে বায়’আত করাতেন। বোয়ালভী হযরত রহ. বলতেন, মুরিদান বাড়িয়ে কি লাভ? মুরিদ কি জন্য হচ্ছে সেটাই জানার বিষয়। একদা তিনি পিতাজিকে বলেন, তুমি আমাকে যে স্বপ্নের কথা বলেছ তা শুনার পর থেকে আমি তোমাকে অধিক স্নেহ করি।
১৪২৫ হিজরী সনে বি.বাড়িয়ায় এক মহাসম্মেলনে পিতাজির দাওয়াত ছিল। সেখানে এটেন্ট করতে গেলে “মুফাসসির হুযূর” নামে খ্যাত ১৩০ বছর বয়সী মাওলানা সিরাজ আহমদ সাহেবের সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়। তিনি তাঁকে মাথায় হাত রেখে দোয়া করেন।
বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ও জামিয়াতুল আবরার বাংলাদেশ রিভার ভিউ-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, জামিয়া পটিয়ার প্রাক্তন সহকারী পরিচালক হযরত মাওলানা মুফতী আব্দুর রহমান সাহেব পিতাজির শফীক আসাতিযার মধ্যে অন্যতম। জামিয়া পটিয়ায় থাকাকালীন তাঁর খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা আমাদের ঘরেই হতো। সে হিসেবে পিতাজি দ্বীনি ও দুনিয়াবী অনেক বিষয়ে তাঁর কাছে বেশ উপকৃত হয়েছেন। জামিয়া পটিয়া থেকে পিতাজি ফারিগ হওয়ার পর পাকিস্তান বেফাকুল মাদারিসের সেক্রেটারী হযরত মওলানা মতীন খতীব সাহেব তাঁকে মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। সে সময় হযরত মুফতী আব্দুর রহমান সাহেব পিতাজিকে নেতিবাচক পরামর্শ দেন। তিনি বলেন হাদীছের উপর তোমার পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতা হয়নি। যার কারণে তুমি সেখানে গেলে গায়রে মুকাল্লিদ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তুমি হয়ত মনে করছ, সেখানে চার বছর থাকলে চারবার হজ্জ পালন করতে পারবে, এবং আর্থিক ভাবে ও সাবলম্বী হতে পারবে। কিন্তু সে লাভের চেয়ে আসলাফের পথ থেকে বিচ্যুত হওয়াটা তোমার জন্য আরো ক্ষতিকর হয়ে যেতে পারে। পিতাজি নানুপূর মাদ্রাসায় মুহাদ্দিছ হিসেবে নিয়োগপ্রপ্ত হওয়ার পর একদিন হযরত মুফতী সাহেব হুজুর সেখানে গিয়ে শিক্ষা বিভাগীয় পরিচালককে তাকসীমে কিতাবের ক্ষেত্রে বিশেষ পরামর্শ প্রদান করেছিলেন। হযরত মুফতী সাহেব হুযূর ছিলেন আমাদের ঘরের যাবতীয় ব্যাপারে মান্যবর মুরব্বী।  আমাদের পরিবারের যে কোন সমস্যা সমাধানে তিনি স্বতস্ফুর্তভাবে এগিয়ে আসেন। 

পাক-ভারতের প্রখ্যাত মনীষীগণের সান্নিধ্যে পিতাজিঃ

বাংলাদেশের বরেণ্য ওলামায়েকেরাম ও পীর মশায়েখের পাশা-পাশি পাক ভারতের প্রখ্যাত মনীষীদের অনেকের সান্নিধ্য অর্জন ও স্বাক্ষাতে ধন্য হন পিতাজি হযরত আল্লমা রফীক আহমদ।  বড় মাপের এসকলার আলেমে দ্বীন ও পীর মশায়েখের অনেকের কাছ থেকে তিনি যেমন নেক দোয়া পান আবার অনেকের কাছ থেকে তাঁর লেখা-লেখীর ক্ষেত্রেও উৎসাহ-সহযোগিতা পান।
* হযরত মাওলানা আব্দুর রহীম রায়পুরী রহ. এর খলীফা হযরত মাওলানা আব্দুল কাদের রায়পুরী ও দারুল উলূম দেওবন্দের প্রধান মুফতী প্রখ্যাত হাদীছ বিশারদ হযরত মাওলানা মাহমুদ হাসান রহ. এর সান্নিধ্য অর্জনের সৌভাগ্য নসীব হয়।
* প্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রন্থ মা’আরিফুল কোরআন এর লেখক হযরত আল্লামা মুফতী শফী সাহেব রহ., দারুল উলূম দেওবন্দের প্রাক্তন মহাপরিচালক আল্লামা কারী তৈয়ব সাহেব রহ. এবং “এলাউস সুনান” গ্রন্থের লেখক হযরত মাওলানা জফর আহমদ উছমানী রহ. ও হযরত মাওলান শামশুল হক আফগানী রহ. প্রমূখের সান্নিধ্য অর্জন এবং তাঁদের সাথে কাছাকাছি বসে আলোচনা ও মতবিনিময়ের সুযোগ হয়। পিতাজি তাঁদের সম্মানে স্বরচিত আরবী কবিতা পাঠ করেছিলেন। কবিতাগুলো নমুনা স্বরূপ পরের অনুচ্ছেদে প্রকাশ কারা হয়েছে।
হাফেজে বুখারী নামে খ্যাত হযরত আল্লামা আব্দুল্লাহ (দরখাস্তী) রহ. এর কাছে বোখারী শরীফের সমাপ্তিতে হাদীছ পড়ার সুযোগ পান এবং তাঁর কাছ থেকে হাদীছের অনুমতি প্রাপ্ত হন।
ভারতের প্রসিদ্ধ দ্বীনী শিক্ষা কেন্দ্র  নদওয়াতুল উলামা লাক্ষনৌ এর পরিচালক প্রখ্যাত আরবী সহিত্য বিশারদ হযরত আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী রহ. এর সাথে দীর্ঘ সময় আলাপ আলোচনা ও মতবিনিময়ের সুযোগ লাভ করেন। হযরত নদভী রহ. এর রচিত কাসাসুন্নবিয়্যীন সিরিজটির ৪র্থ খন্ডের ব্যাখ্যা লিখেন পিতাজি। কিতাবটির ব্যাপারে লম্বা আলোচনা হয় স্বয়ং রচয়িতার সাথে। হযরত নদভী সাহেব রহ. পিতাজিকে তাঁর লেখনীর ব্যাপারে বিরল ভাবে উৎসাহ প্রদান করেন। তাঁর সাথে মত বিনিময়ের কিছু কথা কাসাসুন্নবিয়্যীন ৪র্থ খন্ডের ভূমিকায় প্রকাশ করা হয়েছে।
পবিত্র মক্কা শরীফের ইমাম আব্দুল্লাহ বিন সুবাইয়্যীল জামিয়া পটিয়ায় আগমণ করলে পিতাজী আরবী ভাষায় অত্যন্ত সাহিত্যপূর্ণ একটি কবিতা লিখেন।
একদা পাকিস্তানের নিউটাউন মাদ্রাসার পরিচালক ড. হাবিবুল্লাহ মুখতার রহ. জামিয়া পটিয়ায় আগমন করেন। কিছুক্ষন পর দেখলাম গাড়ীতে করে সরাসরি দাদাজীর নিকট চলে আসেন। এসুবাদে তাঁর সাথে পিতাজীর সাক্ষাত হলে তিনি নিজ রচিত বেশ কিছু কিতাব হাদিয়া স্বরূপ প্রদান করেন। তাঁর সাথেও পিতাজীর বেশ কিছুক্ষণ মতবিনিময় হলো এবং পিতাজিকে তাঁর লেখালেখি নিয়ে বেশ উৎসাহ যোগালেন। দূর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, এর কিছু দিন পর পাকিস্তানে তিনি শীআ’দের হাতে শাহাদত বরণ করেণ।
মোট কথা, পিতাজী জীবনের প্রারম্ভ থেকে এ পর্যন্ত দেশ বিদেশের প্রখ্যাত ও বরেণ্য ওলামায়ে কেরাম ও পীর-মশায়েখের সান্নিধ্য ও সাক্ষাতের গৌরব অর্জন করেন। তাঁর আখলাকী শুভ্রতা, অন্তরের স্বচ্ছতা, শিক্ষার যোগ্যতা, প্রাশাসনিক দক্ষতা, লেখনীর উৎকর্ষতা এবং স্বকীয়তা পরিদৃষ্টে সকল মুরুব্বী, আসাতেযা ও পীর মশায়েখ তাঁকে খুবই নেক নজরে দেখতেন। তাঁর অভিমত অনুসারে এ কথা বলাই বাহুল্য যে, এসকল বুজুর্গানে দ্বীনের সান্নিধ্য, নেক নজর ও নেক দোয়ার বরকতেই তাঁর এ পর্যন্ত পৌঁছা।

লেখা-লেখির জগতে তাঁর কৃতিত্ব :

পিতাজী শিক্ষা নিবেস অবস্থা থেকে লেখা-লেখির প্রতি ঝুঁক প্রবণ ছিলেন। তখন থেকে তিনি আরবী, উর্দূ সাহিত্য চর্চায় কবিতা, আর্টিক্যাল, নিবন্ধ ইত্যাদি লেখায় অভ্যস্ত ছিলেন। তখনকার যুগে প্রিন্ট জগত ছিল অত্যন্ত কণ্টকাকীর্ণ এবং জটিলতর। সে সময় থেকে তিনি কিতাবাদি লিখেছেন এবং তা প্রকাশও হয়েছে। ক্রমান্বয়ে তাঁর লেখা-লেখি এমন এক পর্যায়ে পৌছে গেছে যে, বর্তমানে তিনি শারেহে হাদীছ বা হাদীছের ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচানায় বাংলাদেশ এমনকি উপমহাদেশে বিশেষ স্থানের অধিকারী হয়েছেন। তাঁর কিতাবাদি উপমহাদেশে এতই জনপ্রিয়তা ও মাকবূলিয়্যাত পেয়েছে, যে কোন দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাঁর রচিত কিতাবাদি আলেম-ওলামা ও ছাত্রদের কাছে ইলমী সম্বল হিসেবে সংরক্ষণ করতে দেখা যায়। অন্য দিকে ফেরাকে বাতেলা তথা ইসলামের নামে বাতিল সম্প্রদায় সমূহের বিরুদ্ধে তাঁর রচিত গ্রন্থাবলীরও একটি সূচী তৈরী হয়েছে। যে কিতাবাদি বাতিল র্ফিকা সমূহের মুখোশ উন্মোচনে সক্ষম হয়েছে ,তাঁর ক্ষুরধার লেখনী যেমন বাতিল ফিরকাগুলোকে প্রকম্পিত করেছে তেমনি হক্পন্থীদের অন্তরে আশার আলো জ্বালিয়ে দিয়েছে। স্পষ্ট করে দিয়েছে হক ও বাতিলের মাঝে বিস্তর পার্থক্যের রেখাকে। তাঁর রচিত ও সংকলিত অনবদ্ধ কতিপয় গ্রন্থ  কিঞ্চিত বৈশিষ্টসহ নিম্নে  প্রদত্ত হল।

তাঁর লিখিত কিতাবাদী

১. ইফাদাতুল মুসলিম শরহে সহীহ মুসলিম 

বিশুদ্ধ হাদীছ সংকলন সহীহ মুসলিম শরীফেরএকটি ব্যখ্যা গ্রন্থ।
মুসলিম শরীফের বিখ্যাত জটিল মুকাদ্দিমার সহজ বিশ্লেষণ èপ্রত্যেকটি হাদীছ মূল ইবারত সহ সহজ অনুবাদ èকঠিন শব্দ ও বাক্য বিশ্লেষণ èহাদীসের বিস্তারিত ব্যখ্যাও বিশ্লেষণে  অতিরিক্ত ও বাহুল্য মুক্ত ইলমি তাহকীক ও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ èহাদীস হতে উদ্ভাবিত ফিকহি মাসয়ালা ও ইমামগণের অভিমত প্রমাণ সহ উপস্থাপন èহানাফি মাযহাবের পক্ষথেকে অন্যান্য ইমামদের প্রমাণাদির উত্তর è শাফেয়ী মাযহাবি মুসলিম শরীফের ব্যখ্যাকার আল্লামা ইমাম নব্বীর রহ. কর্তৃক হানাফি মাযহাবের প্রতি আরোপিত অভিযোগ ও প্রশ্নর সমুহের জবাবসম্বলিত শরহে হাদীছের এ এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

২. ঈযাহুল মিশকাত 

মিশকাতুল মাসাবীহ’র অসাধারণ একটি ব্যখ্যা গ্রন্থ 
এ অনবদ্য কৃতিত্বের মূল্যায়ন বরেণ্য মনীষীরা করেছেন এভাবে 
“এর বিষয় বিন্যাস ও বর্ণনাধারা দেখে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি ” 
= আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরি রহ.এর স্নেহধন্য ছাত্র ও আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার প্রথম শায়খুল হাদীছ ও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আল-ইমাম আহমদ রহ.।
“শব্দ বিশ্লেষণ, জটিল বিষয়ের ব্যখ্যা ও বিতর্কিত মাসায়েলে প্রমাণ সহ ইমামগণের অভিমত উপস্থাপন করতে লেখক যে অকৃত্রিম পরিশ্রম করেছেন তা সত্যই প্রসংশাযোগ্য” 
= আল্লামা হুসাইন আহমদ মাদানি রহ.এর বিশিষ্ট ছাত্র দারুল উলুম হাটাজারীর প্রাক্তন শায়খুল হাদীছ আল্লামা আব্দুল আজীজ রহ.। 
“এতে ফিকহুল হাদীছ, শরহুল হাদীছ ও হুকমুল হাদীছের উপর নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পেশ করা হয়েছে এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মনীষীদের সুক্ষ্ম কথাগুলো অত্যন্ত সহজ ভাবে লিখা হয়েছে” 
= আল্লামা আনযার শাহ কাশ্মীরি দা.বা. শায়খুল হাদীছ দারুল উলুম (ওয়াকফ) দেওবন্দ । 
“এ ব্যখ্যা গ্রন্থটি বিরক্তিকর দীর্ঘতা ও ক্ষতিকর সংক্ষিপ্ততা হতে মুক্ত”
= আল্লামা আব্দুল হক আ’জমী রহ. দারুল উলুম দেওবন্দ।
“এ ব্যখ্যা গ্রন্থটি অত্যন্ত সহায়ক, সহজ ও পরিপূর্ণ, এতে শিক্ষার্থীদের সামনে দীর্ঘতা পরিহার করে সারাংশ পেশ করা হয়েছে” 
= আল্লামা মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপূরী, মুফতি ও মুহাদ্দিছ, দারুল উলুম দেওবন্দ। 
“এসময়ের ছাত্র-শিক্ষক-প্রবীণ সকলের জন্যই এ কিতাব অত্যন্ত উপকারী”
= আল্লামা খালিদ মাহমুদ, পরিচালক, ইসলামিক একাডেমি, ম্যান্চেষ্টার, লন্ডন ও প্রধান বিচারপতি শরয়ীআদালত, পাকিস্তান।
“এতে বিশেষভাবে আধুনিক বিষয়গুলোর উপর প্রমাণ সহ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যারফলে সত্য-মিথ্যা পূর্ণরূপে  প্রতিভাত হয়ে উঠেছে ” 
= শায়খুল হাদীছ আল্লামা ইসহাক আলগাজী রহ. প্রাক্তন শায়খুল হাদীছ ও প্রধান মুফতি আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া। 
“এটি একটি দুর্লভ জ্ঞান ভান্ডার, যা মৌলিক ও প্রাসঙ্গিক মূল্যবান তত্ত্বে পরিপূর্ণ” 
= আল্লামা ইসহাক কানাইমাদারী রহ. সাবেক প্রবীণ মুহাদ্দিছ আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া। 

৩. আক্বরাবুল ওয়াসায়েল ইলা শরহিশ শামায়েল

মানবতার আদর্শ মহানবী স. এর উজ্জল জীবনও চরিত্রের অমর সংকলন “শামায়েলে তিরমিযির” অসাধারণ ব্যখ্যাগ্রন্থ, যাতে রয়েছে 
হাদীছের মূল ইবারতের শাব্দিক বিশ্লেষণ সহ অনুবাদ ও তাত্ত্বিক বিশদ আলোচনা èহাদীছের ব্যখ্যা পটভূমি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কিত আলোচনা èহাদীছ হতে উদ্ভাবিত ফিকহি মাসয়ালা ও ইমাম গণের অভিমত èহানাফি মাযাহাবের প্রাধান্য ও অন্যান্য ইমাম গণের  প্রমাণাদির উত্তর, গুরুত্বপূর্ণ বাক্যের তারকীব èযবতীয় বিষয়ের সহজ èসরল ও সাবলীল আলোচনা 

৪. কুররাতুল আইনাইন ফী হষয়-ই মুগ্লাকাত-ই মুআত্তাআইন

মুয়াত্তা ইমাম মালিক রহ. ও মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ রহ. এর জটিল জটিল বিষয়ের সহজ ব্যখ্যাও বিশ্লেষণ।
এতে রয়েছে-হাদীছের শাব্দিক বিশ্লেষণ, ব্যখ্যা ও তাত্ত্বিক আলোচনা, ইমামগণের  ইখতেলাফ প্রমাণ সহ উপস্থাপন, পরষ্পর বিরোধী বর্ণনার সামঞ্জস্য বিধান ও বিরোধ অবসান ।

৫. দরসে হিদায়া

হানাফি মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ফিকাহ্ সংকলন আল হিদায়ার অসাধারণ ব্যখ্যাগ্রন্থ । এর কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য-
একটি গুরুত্বপূর্ণ দীর্ঘ ভুমিকায় ফিকাহ শাস্ত্রের উৎপত্তি, ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা, চার মাযহাবের প্রধান চার ইমাম সহ আরো অন্যান্য ইমাম গণের জীবন বৃত্তান্ত বর্ণনা, হিদায়া গ্রন্থকারের উদ্ধৃত দুর্বল হাদীস গুলোকে একাধিক বিশুদ্ধ সহীহ হাদীছ দ্বারা সমর্থিত করে শক্তিশালী করণ, কঠিন বাক্যের সরল বঙ্গানুবাদ, সহীহ হাদীছ দ্বারা দলীল না দেয়া সহ হিদায়া গ্রন্থাকারের উপর আরোপিত সকল অভিযোগের জবাবে প্রত্যেকটি ইখতেলাফি মাসয়ালার প্রমাণ কুরআনের আয়াত ও বহু সংখ্যক সহীহ হাদীছ বর্ণনাকারী ও গ্রন্থপঞ্জী সহ উপস্থাপন, সমকালীন বিভিন্ন সমস্যার সমাধান।

৬. হাদীস পরিচিতিঃ ভারত-বাংলাদেশের প্রাতঃ স্মরণীয় আউলিয়া ও মুহাদ্দিছীন 

হাদীছ শাস্ত্রের উৎস, উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের ইতিহাস, হাদীছের বিস্তারিত পরিচিতি এবং উপমহাদেশে হাদীছ চর্চার ইতিহাস সহ ভারত ও বাংলাদেশের মহান বিদগ্ধ হাদীছ বিশারদ গণের জীবনী সংকলন।  

৭. ইরশাদুত্তালিবীন ফী আহওয়ালিল মুসাল্লিফীন  

দরসে নিযামির সকল কিতাব সহ গুরুত্বপূর্ণ বহু কিতাবের মুসান্নিফীন কিরামের মহিমান্বিত জীবন চরিত ও অবদান সম্বলিত গুরুত্বপূর্ণ সংকলন । 

৮.যাহরুন নূজুম ফী মা’রিফাতিল ফুনূনি ওয়াল উলূম    

তেত্রিশ টি শাস্ত্রের পরিচিতি ,আলোচ্য বিষয়,লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, নামকরণ, উদ্ভব-উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের সুবিন্যস্ত বিশ্লেষণ। বিশেষত: উলুমে কুরআনের আলোচ্যবিষয়, তাফসীর শাস্ত্রের বিকাশধারা ও পাশ্চাত্যের কুরআন বিকৃতিকারী ও তার জবাবদানকারীদের নামের তালিকা। 

৯. আল ইন্শাউল জাদীদ মা’আললুগাতি ওয়াল খিতাবাত

দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় ৩২টি বিষয়ের বিষয় ভিত্তিক আরবি-উর্দু-বাংলা-ইংরেজী শব্দ ভান্ডার সহ গুরুত্বপূর্ণ ও আধুনিক আরবি রচনাবলী, পত্র, বক্তৃতা, সম্ভাষণ পত্র ও আবেদন পত্র সম্বলিত এক চমৎকার সংকলন। 

১০. হিদায়াতুল মুস্তার শিদীন ইলা হল্লি আভীসাতি কাসাসুন্নাবিয়্যীন। 

সায়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. এর বিখ্যাত রচনা “কাসাসুন্নবিয়্যীন” এর ৩য় ও ৪র্থ খন্ডের উর্র্দু অনুবাদ, শব্দ বিশ্লেষণ ও টিকার সুন্দর সমাহার। 

১১. কাসাসুন্নাবিয়্যীন  

আবুল হাসান আলী নদভী রহ. এর বিখ্যাত রচনা “কাসাসুন্নবিয়্যীন” এর  ৪র্থ খন্ডের বাংলা অনুবাদ, শব্দ বিশ্লেষণ ও টিকার সুন্দর সমাহার। 

১২. আল কালামূল মু’তাবার ফী তাউযীহি নূরি সায়্যিদিল বাশার

বেরলভীদের নেতা মাওলানা আজিজুল হক (শেরে বাংলা) সাহেবের মাহফিলে দু’বার উপস্থিত হয়ে তার বক্তব্য শুনেন এবং তার সঙ্গে আলোচনার পর লেখক এ পুস্তকটি এবং শিরক ও বেদআ’ত, মো’মেনের মর্যাদায় আল কুরআন, কোরআন সুন্নাহর স্বরূপ পুস্তকগুলো রচনা করেন। তিনি তার ওয়াজে প্রায়শ: আহলে সুন্নাত ওয়ালজামাতের তথা দেওবন্দীদের উদ্দেশ্য করে কটুবাক্য উচ্চারণ করতে দ্বিধা বোধ করতেন না। এমন কি তার মুনাজাতে এই পঙক্তি পড়তেন, --------------------অর্থ 
= হে আল্লাহ্  আমাদের দেশ থেকে ওহাবীদের কে বিতাড়িত কর! 
= আমাদের দেশ থেকে তাদের মাদ্রাসা গুলোকে উচ্ছেদ কর! 

১৩. মহা মানব সা. এর নূর প্রসঙ্গ 

মহামানব হযরত মুহাম্মদ সা. এর সত্তা সম্পর্কিত আলোচনা। তিনি কি নুরের তৈরী? নাকি মাটির? কুরআন ও হাদীছের আলোকে তার বিস্তারিত আলোচনা ।

১৪. মওদূদী সাহেব কি তাফসীর ওয়া নাযারিয়্যাত পর ইলমি ওয়া তাহক্বীক্বী জায়েযাহ। 

১৩৮৭ হিজরীতে লেখক চট্টগ্রাম লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত মওদুদী সাহেবের এক সম্মেলনে সরাসরি উপস্থিত হয়ে তাঁর  বিভ্রান্তিকর কুরআন হাদীসের অপব্যখ্যা সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত হয়ে উর্দুতে এ গ্রন্থ টি রচনার প্রয়াস পান। 

১৫. মওদূদীর তাফসীর ও চিন্তাধারা ঃএকটি তত্ত্বমুলক পর্যালোচনা 

জামাতে ইসলামীর  প্রতিষ্ঠাতা মওদূদী সাহেবের বিবিধ ভুল ত্র“টি ও গোমরাহী সর্স্পকে কুরআন, হাদীছ ও নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থের উদ্ধৃতির আলোকে পর্যালোচনা ও সমকালীন হক্কানী উলামায়ে কেরামের অভিমত ও অবস্থান সম্পর্কিত একটি গবেষণামূলক তাত্ত্বিক আলোচনা গ্রন্থ।

১৬. মাওয়ায়েযে খতীবে আ’জম রহ.। 

খতীবে আ’জম আল্লামা সিদ্দীক আহমদ রহ. এর মূল্যবান আলোচনা ও বক্তৃতা, এবং মাওলানা ইহতিশামুল হক থানবী রহ.এর দূর্লভ নসীহত।

১৭.আত তাকার রুব ইলাল্লাহি তা’আলা। 

তাসাওঊফ সম্পর্কে কুরআন, হাদীছ ও পূর্ববর্তী আউলিয়ে কিরামের রচনা ও উপদেশ হতে সংকলিত এক অতি প্রয়োজনীয় সংকলন। 

১৮. নফস কি চন্দ বিমরিয়াঁ আওর উনকা ই’লাজ।  

মানবআত্মার আধ্যাত্মিক রোগ-ত্র“টি সম্পর্কিত বিশদ আলোচনা ও তার প্রতিকার নির্দেশনা। 

১৯. খতমে নুবুওয়্যাত ।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বশেষ নবী হওয়া সম্পর্কে প্রামাণ্য আলোচনা সহ কুরআন-হাদীছের আলেকে দাজ্জালের আবির্ভাব, ইমাম মাহদীর আগমন ও হযরত ঈসা আ. এর পুন:অবতরণের আলোচনা। 

২০. কুরআন-সুন্নাহর স্বরূপ 

ইসলামী শরীয়তে র্কআান ও সুন্নাহ্’র অবস্থান ও অকাট্যতা সম্পর্কে লিখিত এ পুস্তিকা। 

২১. মু’মিনের মর্যাদায় আল র্কুআ । 

ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব ও মু’মিনের সফলতা সম্পর্কিত আলোচনা। 

২২. আয্ যিয়াদাতু ফী যিকরে আহওয়ালিল জিন।  

জিন জাতির পরিচিতি, জীবনাচার ও প্রকৃতি সম্পর্কিত আলোচনা 

২৩. শীয়িয়্যাত আওর মুত্’আ।

ভ্রান্ত শিয়া ইমামিয়্যা  ইছনা আশারিয়্যার ভ্রান্ত আক্বীদা বিশেষত: মুত্’আ সম্পর্কিত আলোচনা।

২৪. মুজাররাবাতে আহমদী (সম্পাদিত)।

২৫. আনওয়ারে আহমদী ।

আল-জামিয়া পটিয়ার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা , শায়খুল হাদীস ও সদরুল মুর্দা রিসীন হযরত মাওলানা আহমদ রহ. (ইমাম সাহেব হুযূর) এর উর্দূ ভাষায় রচিত জীবন-চরিত।এটি তাঁর শিক্ষাজীবনে  সর্বপ্রথম রচনা। 

২৬. কামালাতে আহমদি।

২৭. মরাছিয়ে মোহাদ্দিছে আজম 

হযরত ইমাম সাহেব হুজুর রহ. এর শোকগাথা সংকলন। 

২৮. জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়া ও কতিপয় স্মরনীয় মাশায়েখ। 

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যতম ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশ্ব বিখ্যাত দ্বীনি মারকায ও মকবূল দরসগাহ্ আল-জামিয়া আল-ইসলামিয় পটিয়া, চট্টগ্রাম প্রতিষ্ঠার পটভূমি লক্ষ্য ও সাফল্য গাঁথার ইতিবৃত্ত সহ জামিয়া সংশ্লিষ্ট কতিপয় মহা মনীষীদের জীবনী সংকলন। 

২৮.আল ইমাম 

হযরত আল্লামা আল-ইমাম আহমদ রহ.এর মহান জীবন ও কর্মের বর্ণনা, সমকালীন মনীষী ও তাঁর শিষ্য, ভক্ত ও অনুরাগীদের উচ্ছাস পূর্ণ অভিব্যক্তি ।

পিতাজি হযরতুল আল্লামা মাওলানা রফীক আহদ সাহেব (দা.বা.) বর্তমানে বার্ধক্য জনিত কারণে অনেক দূর্বল হয়ে পড়েছেন। মাঝে মাঝে সবক পড়াতেও অক্ষম হয়ে পড়েন। তথাপি আল্লাহ তা’আলার হাদীসের খিদমাত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁকে হায়াতে তায়্যিবা দান করুন আমীন।

দাদাজী হযরত ইমাম সাহেব রহ. এর ছেলে সন্তান

মাওলানা রিজয়ান রফীক জমীরাবাদী

প্রথম পুত্র: হযরত আল্লামা মাওলানা রশীদ আহমদ সাহেব:

আমার বড় আব্বা হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ সাহেব আনুমানিক ১৩৬১ হিজরী মোতাবেক ১৯৪২ ইং সনে চাঁন্দগাঁও এর মোহরাগ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর জন্ম রাত্রিতে দাদাজী নূরের মত একটি জিনিস স^প্নে দেখেন। দাদাজী এর তা’বীর করেছিলেন যে, আমাদের আর্থিক অনটন কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর রহমতে তাঁর জন্মের পর থেকে ঠিকই তিনি আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়ে উঠেন।

শিক্ষা-দিক্ষা:

তিনি ১৩৭১ হিঃ-মোতাবেক ১৯৫২ ইং সনে জামিয়া পটিয়ায় ভর্তি হন। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে আরম্ভ করে ১৩৮৫ হিঃ ১৯৬৬ ইং সনে দাওরায়ে হাদীছ (টাইটেল) পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। ১৩৮৬ হিজরী ১৯৬৭ ইং সনে যুক্তি শাস্ত্রে উচ্চ ডিগ্রী অর্জন করেন।

শিক্ষকগণ:

বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ দাদাজী হযরত আল্লামা মাওলানা আহমদ (ইমাম সাহেব) রহ., তিরমিযী শরীফ হযরত মাওলানা হাফেজ আমীর হোসাইন (মীর সাহেব হুজুর) রহ., আবুদাউদ শরীফ হযরত মাওলানা ইসহাক (গাজী) সাহেব রহ., শমায়েলে তিরমিযী হযরত মাওলানা হোসাইন আমাদ সাহেব রহ. (সহাকরী মুহতামিম অত্র জামিয়া), ইবনে মাজা শরীফ হযরত মাওলানা আলী আহমদ বোয়ালভী সাহেব রহ. প্রমূখের নিকট অধ্যয়ন করেন। যুক্তি শাস্ত্রে সদরা, শমছে বাযেগাহ হযরত ইমাম সাহেব রহ. উকলিদস, খতীবে আ’জম মাওলানা সিদ্দীক আহমদ সাহেব রহ. প্রমূখের নিকট অধ্যয়ন করেন।

অধ্যাপনা:

তিনি সর্ব প্রথম ১৩৮৭ হিজরী ১৯৬৮ ইং সনে যশোর রেলওয়ে ষ্টেশন মাদ্রাসায় হাদীছের উস্তাদ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। সেখানে তিন বছর যাবত হাদীছ ও বিভিন্ন শাস্ত্রের উল্লেখযোগ্য কিতাবাদি অধ্যাপনায় নিয়োজিত ছিলেন। অতপর চট্টগ্রাম লোহাগাড়াস্থ পদুয়া হেমায়াতুল ইসলাম মাদ্রাসা ও চন্দনাইশস্থ বশরত নগর রশীদিয়া মাদ্রাসায় সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে চন্দ্রঘোণা মাদ্রাসায় শায়খুল হাদীছ ও জিরি ইসলামিয়া মাদ্রাসায় সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৪২৪ হিজরী ২০০৩ ইং সনে পোকখালী এমদাদুল উলুম মাদ্রাসায় শায়খুল হাদীছ হিসেবে নিযুক্ত হয়ে এখনও উক্ত পদে বহাল রয়েছেন।

আধ্যাত্মিক শিক্ষা:

তিনি দেশ বরেন্য বহু আলেম  ও পীর মাশায়েখের নিকট আধ্যাত্মিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। তাঁর মুরশিদ আপন পিতা দাদাজী হযরত আল্লামা মাওলানা আহমদ (ইমাম সাহেব হুযূর) রহ.। তিনি তাঁর কাছে খেলাফত প্রাপ্ত হন।

দ্বিতীয় পুত্র হযরত আল্লামা মাওলানা রফীক আহমদ সাহেব

তাঁর জীবনীটি ব্লগে স্বতন্ত্রভাবে  দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭


হযরতুল আল্লাম মাওলানা আহমদ [ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)

হযরতুল আল্লাম মাওলানা আহমদ [ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)


প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, প্রাক্তন শায়খুল হাদীস ও সদরুল মুদাররেসীন আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম।
মাওলানা রিজওয়ান রফীক জমীরাবাদী

বংশপরিক্রমা :

শায়খুল হাদীস হযরত আল্লামা মাওলানা আহমদ (রহ.) ইবনে কারী শমসের আলী মিয়াজী (রহ.) ইবনে জিন্নাত আলী দরবেশ (রহ.) ইবনে হারুন মিয়া (রহ.) ইবনে শহর আলী (রহ.)। এভাবে শেখ মুহাম্মদ আমীন বেপারী (রহ.)-এর সাথে মিলিত হন। যিনি অপর তিন ব্যক্তি  মুহাম্মদ জামাল, মুহাম্মদ বতিল, মুহাম্মদ ছফীরসহ চট্টগ্রাম সদর হতে চার মাইল দূরে মোহরা গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। তাঁদের আদি বাস ছিল প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁ। তাঁর পূর্বপুরুষদের মধ্যে অনেক ওলী, বুজুর্গ এবং বীর ব্যক্তিবর্গ ছিলেন।

জন্ম ও শৈশব :

হযরত মাওলানা আহমদ (রহ.) (প্রকাশ ইমাম সাহেব হুজুর) ১২৬৯ মগী মোতাবেক ১৩২৪ হিজরী, ১৯০৫ ইং সালে চট্টগ্রাম জেলার পাঁচলাইশ বর্তমান চান্দগাঁও থানাধীন মোহরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। 

শিক্ষা :

১৩৩৫ হিজরীতে তিনি ১১ বছরের কিশোর থাকাকালে একদিন হাটহাজারী মঈনুল ইসলাম মাদরাসার বার্ষিক সভায় যাওয়ার জন্য আগ্রহী হন। সেকালে কোনো গাড়ি-ঘোড়া বা যানবাহন ছিল না। তাঁকে অবশ্যই ১২ মাইল পথ হেঁটে যেতে হবে। তাই তাঁর আম্মাজান তাঁকে যেতে বারণ করলেন। কিন্তু তাঁর গভীর আগ্রহ দেখে অগত্যা তাঁকে অনুমতি দিলেন। তিনি যথাসময় মাদরাসায় উপস্থিত হয়ে মাদরাসার ছাত্রদের চাল-চলন, সুমধুর কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াত, চতুর্দিকে খোদায়ী ইলমের বহমান প্র¯্রবন দেখে মুগ্ধ-বিমোহিত হয়ে পড়েন। বাড়িতে এসে মাদরাসায় লেখাপড়া করার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। কিন্তু এতে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অনুকূল সাড়া পেলেন না। একসময় পরিবারের সদস্যগণ তাঁর গভীর আগ্রহ দেখে তাঁকে মাদরাসায় পড়ার অনুমতি দেন। তখন তিনি হাটহাজারী মাদরাসায় দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন।  ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ভর্তির ছয় মাস অতিবাহিত হতেই তিনি কঠিন রোগে আক্রান্ত অবস্থায় অপারগ হয়ে মাদরাসা থেকে বাড়িতে ফিরে আসেন।
একদা এ দেশের অন্যতম শীর্ষ আলিয়ে কামেল আল-জামিআতুল ইসলামিয়া আরবিয়া জিরির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক হযরত মাওলানা আহমদ হাসান সাহেব (রহ.) ওয়াজ উপলক্ষে মোহরা গ্রামে গমন করেন। তিনি হযরত ইমাম সাহেব (রহ.)-এর আচার-আচরণ ও চরিত্র মাধুর্য দেখে তাঁকে জিরি মাদরাসায় অধ্যয়ন করার পরামর্শ দেন। হযরত ইমাম সাহেব হুজুর এ আহ্বান পেয়ে ১৩৩৭ হিজরী সনে জিরি মাদরাসায় ভর্তি হয়ে অধ্যয়ন আরম্ভ করেন। তিনি ছিলেন তীক্ষè মেধাসম্পন্ন ও ধীশক্তির অধিকারী। তাই তাঁর পাঠ্যাবস্থায় মাদরাসার ছাত্ররা বিভিন্ন জটিল ও কঠিন কিতাবাদী বোঝার জন্য তাঁর শরণাপন্ন হতো।
জিরি মাদরাসায় তিনি সিহাহ সিত্তার কিতাবসমূহ যুগশ্রেষ্ঠ শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াদুদ (রহ.) এবং ইলমে কিরাতের সনদ হযরত কারী আব্দুল মজীদ (রহ.) হতে লাভ করেন। হযরত ইমাম সাহেব (রহ.) ১৩৪৭ হিজরী সনে দাওরায়ে হাদীসের সমাপনী পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন।

ছাত্র জমানায় বন্ধুত্বের চিরঞ্জীব নিদর্শন :

হযরত ইমাম সাহেব হুজুর যখন জিরি মাদরাসায় দাওরায়ে হাদীসের ছাত্র সেই বছরই জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হযরত আল্লামা মুফতী আযীযুল হক (রহ.) দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে জিরি মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তাঁরা দুজন যেমন হামআসর তথা সমসাময়িক ছিলেন, তেমনি ছাত্র জমানা থেকেই পরস্পর বন্ধু ছিলেন। তাঁদের এই আন্তরিক বন্ধুত্বের চিরঞ্জীব ফসল ছিল আল-জামিয়া পটিয়াসহ এ দেশে বহুবিদ দ্বীনি খিদমাত। ছাত্রাবস্থা থেকেই তাঁরা উভয়ই যেমন সুতীক্ষè মেধার অধিকারী, পরিশ্রমী, কর্মঠ, চৌকস এবং বিচক্ষণ ছিলেন, তেমনি আধ্যাত্মিকতার প্রতি তাঁদের অতি মাত্রায় ঝোঁক ছিল। পরস্পর থেকে ইলমী ও দ্বীনি বিষয়ে ইস্তিফাদা করতেন। বিশেষ করে হযরত মুফতী আজীজুল হক (রহ.) যেহেতু সিনিয়র ছিলেন হযরত ইমাম সাহেব হুজুর তাঁকে উস্তাদের মর্যাদা দিতেন। আবার বন্ধুসুলভ সব পরামর্শ পরস্পর ভাগাভাগি করতেন।  হযরত মুফতী আজীজুল হক (রহ.)-এর স্পষ্ট বক্তব্যে এ কথার প্রমাণ মিলে যে আল-জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠা, অস্তিত্ব এবং বেড়ে ওঠার মাঝে যেমন ছিল বড়দের পরামর্শ এবং দু’আর বরকত, তেমনি তাঁরা দুজনের আন্তরিক বন্ধুত্ব, মিল-মোবাহ্বত, পরস্পর শ্রদ্ধাবোধ এবং পরামর্শই ছিল এর মূল উৎস। হযরত মুফতী আজীজুল হক (রহ.)-এর বক্তব্যের সামান্য বর্ণনা সামনে আসছে। এটিকে তাঁদের বন্ধুত্বের চিরঞ্জীব নিদর্শনও বলা যেতে পারে। ছাত্র জমানা থেকে তাঁদের শেষ অন্তিম শয্যা পর্যন্ত পরস্পর আন্তরিক মিল-মোহাব্বত, স্নেহ-শ্রদ্ধাবোধ, মায়া-মমতা, সহযোগিতা, অন্তরের টান একটি নজিরবিহীন বাস্তবতা। তাঁদের জীবনালেখ্যের পরতে পরতে এর বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায়। যা সকলের, বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্মের জন্য একটি শিক্ষণীয় ও আমলযোগ্য অধ্যায়।

উচ্চশিক্ষা ও ভারত সফর :

হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.) সুদীর্ঘ ১০ বছর কাল জিরি মাদরাসায় কৃতিত্বের সাথে অধ্যয়ন করার পর আত্মীয়স্বজন ও নিজ সম্মানিত উস্তাদগণের দু’আ নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত বিদ্যাপীঠ ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দে গমন করেন। ১৩৪৭ হিজরী সনে শাওয়াল মাসে দেওবন্দের সাহিত্য বিশারদ স্বনামধন্য উস্তাদ হযরত মাওলানা এজাজ আলী (রহ.)-এর নিকট জামাআতে উলা (মিশকাত) শ্রেণীর কিতাবাদীর ভর্তি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। সেখানকার নিয়মানুসারে ভর্তি এবং থাকা-খাওয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা হয়ে যায়।  এখানে তিনি আল্লামা ইবরাহীম বলিয়াবী (রহ.), মাওলানা রাসূল খান (রহ.), মুফতী মুহাম্মদ শফী (রহ.), মাওলানা নবী হাসান (রহ.) প্রমুখ হতে উসূলে ফিকহ, তর্ক বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান, দর্শন ইত্যাদি শাস্ত্রের উচ্চতর কিতাবাদী পড়েন  এবং হযরত মাওলানা সৈয়দ হুসাইন আহমদ (রহ.) হতে যদিও যথারীতি হাদীসের কিতাব পাঠ করা সুযোগ হয়নি, তথাপি মাঝেমধ্যে এসে তাঁর হাদীসের দরসে বসতেন। এখানে এক বছর শিক্ষা গ্রহণ করে পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাস করেন। এরপর জিরি মাদরাসার মুহাদ্দিস সাহেব (রহ.)-এর পরামর্শ এবং নিজ আকাক্সক্ষায় তিনি মনস্থ করলেন যে দাওরায়ে হাদীসের কিতাবগুলো উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস হযরত আল্লামা মাওলানা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি (রহ.)-এর নিকট অধ্যয়ন করবেন। এতদুদ্দেশ্যে ১৩৪৮ হিজরী সনে তিনি ডাবিলের উদ্দেশে রওনা হন। সেখানে তিনি যথারীতি ভর্তি হয়ে হাদীসের বিখ্যাত গ্রন্থ বোখারী শরীফ হযরত আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি (রহ.) হতে এবং মুসলিম শরীফ ও তিরমীযী শরীফ বিখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা শিব্বীর আহমদ উসমানী (রহ.) হতে এবং মাওলানা সিরাজ আহমদ সাহেব (রহ.) হতে  আবু দাউদ ও নাসাঈ শরীফ অধ্যয়ন করার সৌভাগ্য অর্জন করেন।

দ্বিতীয়বার ভারত সফর ও হযরত থানভী (রহ.)-এর সাথে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক :

বাড়ি ফিরে এসে তিনি কোরআন মজীদ হিফজের পুনরাবৃত্তি ও ভারতের শ্রেষ্ঠ সাধক হাকীমুল উম্মত হযরত আল্লামা আশরাফ আলী থানভী (রহ.)-এর দীক্ষা গ্রহণ এবং দেওবন্দ ও ডাবিলে তাঁর শিক্ষকদের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে পুনরায় ভারত সফরের মনস্থ করেন। এর ভেতর তিনি মাতার পক্ষ থেকে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য আদিষ্ট হন এবং বিয়ে করেন। দুই মাস পর ১৩৪৯ হিজরী সনে পুনরায় ভারত সফর করেন। দেওবন্দে গিয়ে হিফজের পুনরাবৃত্তি করেন এবং সেখান থেকে হযরত থানভী (রহ.)-এর সাথে পত্রযোগাযোগ বজায় রাখেন। একবার হযরত থানভী (রহ.) তাঁর পত্রের উত্তর লিখেন যে যখনই তোমার ইচ্ছা হয়, চলে এসো। কিন্তু অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব যেন বিচ্যুত না হয়। এরপর তিনি থানাবন গিয়ে হযরত থানভী (রহ.)-এর সুহবতে থেকে আধ্যাত্মিক দীক্ষা নেন। তিন মাস সেখানে অবস্থান করে আধ্যাত্মিক জগতের বহু উচ্চস্তর পার করেন। একপর্যায়ে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে হযরত থানভী (রহ.)-এর নির্দেশে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। রোগ সামান্য উপশম হওয়ার পর তিনি মহল্লার মসজিদে খতমে তারাবীহ পড়ান।

অধ্যাপনা :

১৩৪৯ হিজরী সনের শাওয়াল মাসে তিনি জিরি মাদরাসায় শিক্ষকতার কাজে নিয়োজিত হন। এখানে পাঁচ বছর যাবৎ দক্ষতার সাথে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কিতাবাদীর দরস দেন এবং গ্রন্থাগারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর তিন বাছর রাঙ্গুনিয়া থানাস্থ শরফভাটা মাদরাসায় অধ্যাপনা কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এখানে তিনি পটিয়ায় একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার সুসংবাদ পান স্বপ্নে নিজ শায়খ হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন (রহ.)-এর পক্ষ থেকে। এরপর হযরত মুফতী আজীজুল হক (রহ.)-এর প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনা পান এ ব্যাপারে।

আল-জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাকাজে যাঁর নাম সর্বপ্রথম :

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া প্রতিষ্ঠায় হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)-এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। এটি তাঁর জীবনে দ্বীনি খিদমাতের একটি বিশাল অধ্যায়। যেকোনো প্রতিষ্ঠান আপন স্বকীয়তা নিয়ে বড় হয়ে উঠলে তার প্রতি বিভিন্ন প্রকার কুদৃষ্টি পতিত হওয়া স্বাভাবিক একটি বিষয়। যার কারণে সেরূপ প্রতিষ্ঠানকে অপ্রীতিকর পরিস্থিতিরও স্বীকার হতে হয় অনেক সময়। অবদান নিয়েও বিভিন্ন কথা ওঠে। আবার অনেকের মাঝে দখল প্রবণতাও দেখা দেয়। জামিয়া পটিয়াও এরূপ বিভিন্ন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির স্বীকার হয় শুরু থেকেই। এই প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রতিপক্ষের আঘাত তো সব সময় ছিলই, নিজেদের পরস্পর বিভ্রান্তিরও স্বীকার হতে হয় এই জামিয়াকে। এসব কারণে জামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক কুতবে আলম হযরত আল্লামা মুফতী আজীজুল হক (রহ.) স্পষ্ট ভাষায় জামিয়া পটিয়ার দীর্ঘ ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে যান। এর গোড়াপত্তন কিভাবে হয়, কিভাবে বেড়ে ওঠে, মুরব্বিদের মধ্যে কার কার পরামর্শ ছিল, কার প্রত্যক্ষ মেহনত ও কর্মসম্পাদনে জামিয়ার অস্তিত্ব, স্বয়ং নিজের ভূমিকা কী ছিলÑসব বিষয়ই তাঁর লেখাতে উঠে আসে। হযরত মুফতী আজীজুল হক (রহ.)-এর এই দস্তাবেজ থেকেও তাঁর মহান ব্যক্তিত্ব, অকল্পনীয় আধ্যাত্মিকতা, যুগশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকতা, শায়খের প্রতি অনুরাগ, পরম ইখলাস এবং তাকওয়ার সর্বোচ্চ শিখরে অবস্থান করার বিষয়টি ফুটে ওঠে। তিনি দস্তাবেজটি এমনভাবে তৈরি করেছেন যে কিয়ামত পর্যন্ত এ বিষয় নিয়ে না কারো বিভ্রান্তি, সংশয় ও সন্দেহ পোষণের সুযোগ থাকতে পারে, না কারো ব্যাখ্যার অবকাশ থাকে। তাঁর দীর্ঘ দস্তাবেজ পাঠে এ কথা সহজে অনুমান করা যায় যে হযরত মুফতী আজীজুল হক সাহেব (রহ.)-এর সরাসরি দিকনির্দেশনা এবং হযরত মাওলানা আহমদ ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)-এর প্রত্যক্ষ মেহনত ও কর্মসম্পাদনে জামিয়া পটিয়ার মূল অস্তিত্ব এবং বেড়ে ওঠা। এর যাবতীয় রাজ তাঁদের দুজনের মধ্যেই সন্নিহিত ছিল। মাদরাসা গড়ার সরাসরি পরামর্শ ও নির্দেশদাতা ছিলেন উভয়ের পীর শায়খুল মাশায়েখ হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন সাহেব (রহ.)। তাঁর কাছ থেকে নির্দেশপ্রাপ্ত ছিলেন তিন ব্যক্তিÑহযরত মাওলানা ইস্কান্দর (রহ.), হযরত মাওলানা মুফতী আজীজুল হক (রহ.) এবং হযরত মাওলানা আহমদ ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)। (হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.)-এর ভাষ্য মতে, হযরত ইমাম সাহেব এই নির্দেশ পেয়েছেন স্বপ্নযোগে।)  হযরত মাওলানা ইস্কান্দর সাহেব (রহ.) বার্ধক্যজনিত কারণে জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাকাজে অংশ নিতে পারেননি। পটিয়ায় এরূপ একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জন্য সব সময় ফিকিরমন্দ ছিলেন উভয়ের সর্বাধিক মুহাসিন ও উস্তাদ জিরি মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হযরত মাওলানা আহমদ হাসান (রহ.)। জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হযরত মুফতী আজীজুল হক (রহ.) তাঁর জীবদ্দশায় জামিয়া পটিয়া নিয়ে বিভিন্নজনের বিভিন্ন দাবি ও ভ্রান্ত প্রচারের জবাব এবং আগামীতে যেন এ বিষয়ে নিয়ে কোনো প্রকার ভ্রান্তির স্বীকার হতে না হয়, সে জন্যই মূলত নিজ তত্ত্বাবধানে জামিয়া পটিয়ার দীর্ঘ ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে যান। জামিয়ার প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে হযরত ইমাম সাহেব হুজুর সম্পর্কে মুফতী সাহেব (রহ.) যে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন, তা এখানে ব্যক্ত করা হলো।
অতঃপর হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) লেখেন :
لیکن قصبہ پٹیہ کے ماحول کی ہدایت اور وہاں دینی درسگاہ قائم کرنیکی خدمت ان حضرات کے برگزیدہ ہاتھو سے انجام نہ پا کر انکے غلاموں کے ہاتھوں سے انجام پانا مقدر الہی تھا لہذا انکا نخل تمنا انکی عملی زندگی میں بارآور نہ ہو ا جب ان حضرات میں سے اکثر واصل الی اللہ ہوچکے تو حضرت مولانا ضمیر الدین نے جو ان نفوس قدسیہ میں شیخ المشائخ مانے جاتے تھے اپنی زندگی کے دور اخیر میں مولانا اسکندر صاحب اور بندہ عزیز الحق کو پٹیہ میں مدرسہ قائم کرنیکی طرف متوجہ کیا، چنانچہ اس مبارک ارشارہ کی برکت سے کام کا سلسلہ اسطرح شروع ہوا کہ مولانا اسکندر صاحب بلا شرکت عملی اس خدمت کیطرف اپنی روحانی توجہ مبذول فرماتے رہے اور احقرعزیز الحق مدرسہ جیری میں مدرس تھا اور وہاں کی تدریس پر قائم رہتے ہوئے قصبہ پٹیہ میں مدرسہ قائم کرنیکی تدابیر میں مصروف رہا، اس خدمت میں عملی قدم اٹھانے والا اول شخص مولانا احمد صاحب مہروی ہیں جو فی الحال مدرسہ پٹیہ میں امام صاحب کے نام سے مشہور ہیں اور درس حدیث کا کام انجام دیتے ہیں۔ [یاد عزیز ۱۷۰ انوار احمدی ۱۰۳ ،تذکریہ عزیز وغیرہ)
কিন্তু পটিয়া এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাবাসীদের হেদায়েত ও সেখানে দ্বীনি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার খিদমাত ওই সকল বুজুর্গানে দ্বীনের মাধ্যমে না হয়ে তাদের শিষ্যদের দ্বারা সম্পাদন করাই আল্লাহর ইচ্ছা ছিল। তাই তাঁদের আকাক্সক্ষা তাঁদের জীবিত অবস্থায় পূর্ণ হয়নি। ইত্যবসরে উক্ত বুজুর্গানে দ্বীনের মধ্যে অনেকে ইন্তেকাল করেছেন। অতঃপর একদা চট্টগ্রামের ক্ষণজন্মা কৃতি সন্তান, ওলীকুল শিরোমণি হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন সাহেব (১২৯৬-১৩৫৯) জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হযরত মাওলানা ইস্কান্দর সাহেব (রহ.) ও আমাকে [মুফতী আজীজুল হক (রহ.)] এই মহান গুরুদায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সুতরাং হযরতের মুবারক ইঙ্গিতে উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাবর্ষ এভাবে সূচিত হয়। মাওলানা ইস্কান্দর সাহেব প্রত্যক্ষভাবে এ কাজে অংশগ্রহণ না করলেও রূহানী তাওয়াজ্জুহ নিবেদন করতে থাকেন। আমি অধম আজীজুল হক তখন জিরি মাদরাসার শিক্ষক ছিলাম। তাতে দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে পটিয়ায় মাদরাসা স্থাপনের প্রচেষ্টায় ছিলাম। এ কাজ সম্পাদনে সর্বপ্রথম প্রত্যক্ষ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণকারী ব্যক্তি হলেন মাওলানা আহমদ সাহেব মোহরবী। যিনি বর্তমানে ইমাম সাহেব নামে খ্যাত এবং পটিয়া মাদরাসায় হাদীসের শিক্ষাদানে নিয়োজিত আছেন। (ইয়াদে আযীয ১৭০, আনোয়ারে আহমদী, ১০২ পৃ.)
اور احقر عزیز الحق نے متعدد علماء کرام سے پٹیہ میں مدرسہ قائم کرنےکا تذکرہ اور اس خدمت میں مصروف ہونیکی درخواست کی لیکن کسی نے بھی ہمت نہیں کی، خود مدرسہ جیری میں مدرس تھا اور اپنے اساتذہ کے زیر سایہ مدرسہ جیری سے علیحدگی کی کوشش کی ان سے اجازت نہ ملنے کی وجہ سے خود اس خدمت کو انجام دینے میں مصروف ہونے سے معذور رہا حسن اتفاق سے مولانا احمد صاحب سے بندہ کی ملاقات ہوئی ان سے کہا کہ آپ پٹیہ میں ایک مدرسہ قائم کیجئے ، بندہ بھی معین کار رہیگا باوجودیکہ وہ پٹیہ کا باشندہ نہیں، نہ باشندگان پٹیہ سے انکی ادنی شناسائی ہے اور نہ مناسبت تھی، نہ انکووعظ ونصیحت کی عادت تھی نہ چندہ وغیرہ فراہم کرنیکی بظاہر کوئی معقول صورت تھی ان وجوہ سے میری گذارش بیجوڑ تھی، تاہم جبکہ میں نے درخواست پیش کی انہونے بلا تردد کہا کہ اگر آپ کہتے ہیں تو انشاء اللہ تعالی میں اس خدمت کیلئے تیار ہوں۔ ۔ [یاد عزیز ۱۷۰ انوار احمدی ۱۰۳ ،تذکریہ عزیز وغیرہ)
আমি [মুফতী আজীজুল হক (রহ.)] বিভিন্ন উলামায়ে কেরামের সাথে পটিয়ায় মাদরাসা স্থাপনের বিষয়টি আলোচনা করেছি এবং এ কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু কেউ এ কাজের জন্য সাহস করলেন না। আমি জিরি মাদরাসার শিক্ষক ছিলাম এবং তা থেকে অব্যাহতি নেওয়ার জন্য চেষ্টা করেও অব্যাহতি নিতে পারিনি। তাই এ খিদমাত আঞ্জাম দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। ঘটনাক্রমে মাওলানা আহমদ সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ হয়। তাঁকে বললাম, আপনি পটিয়ায় একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করুন ,আমিও সহযোগিতা করব। মূলত তিনি (মাওলানা আহমদ) পটিয়ার অধিবাসী নন। পটিয়ার উক্ত এলাকার লোকদের সাথেও তিনি পরিচিত নন। তিনি ওয়াজ-নসীহত বা বক্তৃতায়ও অভ্যস্ত নন, চাঁদা ইত্যাদি সংগ্রহ করার মতো কোনো পরিবেশও ছিল না। এমতাবস্থায় আমার আহ্বান ছিল একেবারেই অসামঞ্জস্য। তথাপি তাঁকে (ইমাম সাহেবকে) আমি এই অনুরোধ জানালে তিনি নির্দ্বিধায় বলে দিলেন, আপনি যখন বলছেন, ইনশাআল্লাহ আমি ওই খিদমাতের জন্য প্রস্তুত আছি।
জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর সাথে হযরত ইমাম সাহেব হুজুরের প্রথম কথা :
হযরত মুফতী আজীজুল হক (রহ.) লেখেন :
اسکے بعد پھر شروع رمضان میں حضرت شیخ اور مولانا اسکندر صاحبؒ اور میں ہم تینوں شہر چاٹگام میں جمع ہوئے، پٹیہ میں مدرسہ کرنے کی تذکرہ کے سلسلے میں حضرت شیخ نے فرمایا کہ تم دونوں مل کر پٹیہ میں مدرسہ کا کام شروع کرو، عزیز الحق جوان آدمی ہے، سعی وکوشش اسکے ذمہ رہے گی اور مولانا اسکندر صاحب معذور شخص ہیں وہ مدرسہ میں اقامت گزیں رہینگے چونکہ اس نشست میں بات پوری نہو سکی اسلئے آغاز کار کی تشکیل یونہی رہ گئی۔
پھر سترہ رمضان کو ہم تینوں شہر چاٹگام میں دوبارہ جمع ہونے کی تجویز قرار پائی حسب تجویز میں تو تاریخ مقررہ پر حاضر ہوگیا لیکن مسلسل بارش کی وجہ سے دونوں حضرات تشریف نہ لا سکے میں دو دن تک شہر چاٹگام میں انتظار کرکے مکان لوٹ گیا، عید کے بعد مدرسہ جیری کے مہتمم صاحب نے میرے مکان پر تشریف لائے اور مجھ کو جیری جانے پر مجبور کیا اور یہ بھی فرمایا کہ میں ہاٹہزاری گیا تھا حضرت شیخ نے بھی مدرسہ جیری میں رہنے کا حکم فرمایا اور مجھے کچھ کہنے سننے نہیں دیا ، مجبورا جیری لے گیا جیری جانے کے بعد میں نے حضرت شیخ سے ملاقات کی حضرت شیخ نے فرمایا کہ مولانا احمد حسن صاحب مہتمم جیری بالکل بیقرار ہوگئے تو میں کیا کروں؟ خیر اسوقت جیری میں رہو، دیکھو پردۂ غیب سے کیا فیصلہ ہوتاہے، میں مدرسہ جیری میں مصروف درس و تدریس ہوگیا، ایک دن جمعرات مولانا احمد صاحب مہروی مدرسہ شرف بھاٹہ سے جیری آئے وہ اپنے مدرسہ کسی قدر دل برداشتہ ہوکر اپنے اساتذہ سے مشورہ کیلئے یہاں پر حاضر ہوئے تھے۔ اتفاق کی بات ہے کہ مدرسہ میں میرے سوا اور کوئی مدرس حاضر نہیں تھا میں بھی گھر جانیکی تیاری میں تھا میں نے ان سے کہا کہ آپ یہاں ٹھہر کرکیا کرینگے؟ یہاں تو کوئی موجود نہیں اور میں بھی گھر جارہا ہوں میرے ساتھ چلئے، وہاں مشورہ کرینگے۔ ہم دونوں ساتھ چلے اور ایک طالبعلم مولوی طاہر ہولوی (مرحوم) ساتھ تھا چلتے چلتے راستہ میں علی عباس سوداگر کے مکان کے سامنے پہونچا، تو یکایک میں نے مولانا احمد صاحب سے کہا کہ کیا آپ پٹیہ میں مدرسہ قائم کرسکتے ہیں؟ انہوں نے بلاتردد جواب دیا کہ اگر آپ کا حکم ہوتو میں تیار ہوں، انکے جواب سے مجھے حیرت ہوئی اور دل میں یقین ساہو گیا کہ پٹیہ میں مدرسہ قائم ہونیکا وقت قریب آگیا، کیونکہ تردد کے سارے اسباب موجود ، پھر بھی مولانا احمد بلا تردد جواب کیوں دے رہے ہیں؟ حالانکہ نہ مولانا احمد صاحب پٹیہ کے باشندہ ہیں نہ ان کی آمدورفت وہاں ہے نہ کسی سے تعارف ہے اور نہ ہی اس وقت مولانا احمد صاحب کا لوگوں میں کچھ ایسا اثر ہے، پٹیہ میں کوئی مدرسہ بھی قائم نہیں، نہ مدرسہ کیلئے جگہ موجود اور نہ پٹیہ کے عوام اور علماء ہمارے ہمخیال ہیں بلکہ سب کے سب مخالف ہیں، انگریزی تعلیم کا نہایت زور ہے ان تمام وجوہات کے باوجود مولوی احمد صاحب نے جواب میں ہاں فرمایا واقعی یہ حیرت کی بات ہے اور ایسا معلوم ہوتاہے کہ حق تعالی نے ان موانع کیطرف ان کو نظر اٹھانے نہیں دیا اور بے اختیاری طور پر ان کی زبان سے نکلوایا کہ میں تیار ہوں’’
অতঃপর রমাজানের শুরুতে আমি, হযরত শায়খ এবং মাওলানা ইস্কান্দর সাহেবসহ আমরা তিনজন চট্টগ্রাম শহরে একত্রিত হলাম। পটিয়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে হযরত শায়খ বলেন, তোমরা দুজন মিলে পটিয়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠার কাজ আরম্ভ করো। আজীজুল হক উঠতি যুবক, কর্মসম্পাদনে চেষ্টা-মেহনত তাঁর দায়িত্বে থাকবে। মাওলানা ইস্কান্দর সাহেব মা’জুুর মানুষ, তিনি মাদরাসায় থাকবেন। এই বৈঠকে কথা পূর্ণ হয়নি। যার কারণে কাজ আরম্ভ করার বিষয়টি এমনিতেই রয়ে যায়।
অতঃপর ১৭ রমাজান আমরা তিনজন পুনরায় একত্রিত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত মতে নির্দিষ্ট তারিখে চট্টগ্রাম শহরে উপস্থিত হই। কিন্তু মুষলধারে বৃষ্টির কারণে তাঁরা দুজন তাশরীফ আনতে পারেননি। দুই দিন পর্যন্ত আমি চট্টগ্রাম শহরে অপেক্ষা করার পর বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করি। ঈদের পর জিরি মাদরাসার মুহতামিম সাহেব আমাদের ঘরে তাশরীফ আনেন এবং আমাকে জিরি যাওয়ার জন্য বাধ্য করেন। তিনি বলেন, আমি হাটহাজারী গিয়েছিলাম, হযরত শায়খও আপনাকে জিরি মাদরাসায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আমাকে কিছু বলার সুযোগ দেননি। আমাকে জিরি নিয়ে গেছেন। জিরি যাওয়ার পর একসময় আমি শায়খের সাথে সাক্ষাৎ করি। শায়খ বলেন, জিরি মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আহমদ হাসান সাহেব খুব অস্থির হয়ে পড়েছেন। সুতরাং আমি কী করব? খায়র, এ অবস্থায় জিরিতে থাকো। দেখো, গায়েব থেকে আল্লাহ তা’আলার ফয়সালা কী হয়। এভাবে আমি জিরিতে দরস-তাদরীসে লেগে গেলাম। এক বৃহস্পতিবার মাওলানা আহমদ সাহেব মোহরবী শরফভাটা মাদরাসা থেকে জিরি আসেন। তিনি নিজ মাদরাসা থেকে আক্রান্ত মন নিয়ে উস্তাদদের কাছে কিছু পরামর্শের জন্যই এখানে এসেছেন। এমতাবস্থায় মাদরাসায় আমি ছাড়া কেউ উপস্থিত ছিল না। আমিও বাড়িতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। তাঁকে বললাম, আপনি এখানে অবস্থান করে কী করবেন? এখানে তো কেউ নেই। আমিও বাড়ি চলে যাচ্ছি। আমার সাথে চলেন, সেখানে পরামর্শ করব। আমরা দুজন চললাম। সাথে একজন ছাত্র ছিল। তার নাম মৌলভী আবু তাহের। চলতে চলতে আমরা আলী আব্বাস সওদাগরের দোকানের সামনে পৌঁছলাম। হঠাৎ আমি মাওলানা আহমদ সাহেবকে বললাম, আপনি কি পটিয়ায় একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন? তিনি কোনো চিন্তা করা ছাড়াই বলে দিলেন, আপনার যদি হুকুম হয় আমি প্রস্তুত আছি। তাঁর জবাবে আমি আশ্চর্য হলাম। অন্তরে প্রায় একীন হয়ে গেল যে পটিয়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠার সময় এখন অত্যাসন্ন। কেননা সংশয় ও ইতস্ততার সব ধরনের কারণ বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও মাওলানা আহমদ সাহেব কোনো চিন্তা করা ছাড়াই কেন এবং কিভাবে বলে দিলেন ‘আমি রাজি’! অথচ মাওলানা আহমদ সাহেব পটিয়ার বাসিন্দা নন। সেখানে তাঁর যাওয়া-আসাও নেই। কারো সাথে পরিচয়ও নেই। এখানকার জনসাধারণের মধ্যে মাওলানা আহমাদ সাহেবের তেমন প্রভাবও নেই। পটিয়ায় কোনো মাদরাসাও প্রতিষ্ঠিত নেই। না মাদরাসা স্থাপনের জন্য কোনো জায়গা আছে। পটিয়ার জনসাধারণ এবং আলেমগণও এক চিন্তাধারার নয়; বরং সবাই প্রতিপক্ষ। সাধারণ শিক্ষার প্রভাবই এখানে বেশি। এত সব অপ্রীতিকর কারণ বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও মাওলানা আহমদ সাহেব ‘হ্যাঁ’ বলেছেন। নিশ্চয়ই এটি আশ্চর্যের বিষয়। মনে হয়, আল্লাহ তা’আলা এত সব প্রতিবন্ধকতার প্রতি তাঁকে নজর দেওয়ার সুযোগ দেননি এবং অগত্যা তাঁর মুখ দিয়ে বের করে দিয়েছেন, ‘আমি প্রস্তুত আছি’। [তাযকেরায়ে জমীর (রহ.)]
অতঃপর লিখেন, পটিয়া থেকে আড়াই মাইল পশ্চিমে এক ভদ্র পরিবারের সুসন্তান আলেমে দ্বীন মৌলভী ঈসা সাহেব (রহ.)-কে এ খিদমাতের জন্য আহ্বান জানানো হলো। তিনি উৎফুল্লচিত্তে বললেন, ইনশাআল্লাহ আমি প্রস্তুত আছি এবং এক বছরকাল বিনা বেতনে কাজ করব। অধিকন্তু মাওলানা আহমদ সাহেব (রহ.)-এর পানাহারের ব্যবস্থাও আমার বাড়িতে করব। এতদশ্রবণে মাওলানা আহমদ সাহেব (রহ.) বললেন, আমার যখন খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে গেল, আমিও বেতনের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত।
اسکے بعد لکھتے ہیں: ہم تینوں ملکر قصبہ پٹیہ پہنچ کر مرحوم مرلانا حمید الرحمن صاحب نامی ایک سال خوردہ متبع سنت عالم سے مشورہ کیلئے ملاقات کی مرحوم نے امجومنشی نامی ایک محب عالم وعلماء اور زندہ دل شخص کو مشورہ میں شریک کیا، منشی صاحب مذکورنے کوشش کرکے موجودہ مدرسہ کی دکھن جانب میں پری دیگی پار جہاں طوفاب علی منشی صاحب  کا بااثر خاندان آباد ہے اس خاندان کے تعاون سے مدرسہ قائم کرنا طی کیا اور اگلے جمعہ کو طوفان علی منشی صاحب کی مسجد میں علماء وصلحاء کا ایک اجتماع ہونا اور بعد نماز جمعہ مدرسہ کی ابتدائی کارروائی عمل میں آنا قرار پایا۔
আমরা তিনজন [লেখক মুফতী আজীজুল হক (রহ.), মাওলানা আহমদ (রহ.), মাওলানা ঈসা সাহেব (রহ)] পটিয়া এসে মাওলানা হামীদুর রহমান নামক জনৈক বয়স্ক ও সুন্নাতের অনুসারী আলেমের সাথে পরামর্শ করার জন্য একত্রিত হলাম। তিনি উক্ত এলাকায় আমজু মুনশী নামক একজন যিন্দাদিল ও উলামাভক্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিকে পরামর্শে শরীক করলেন। মুনশী সাহেবের প্রচেষ্টায় স্থির করা হলো যে বর্তমানে মাদরাসাটি যে স্থানে অবস্থিত তার দক্ষিণে পরীদীঘির পাড়ে যেখানে তুফান আলী মুনশীর খান্দান রয়েছে ওই খান্দানের সহযোগিতায় মাদরাসা স্থাপন করা হবে। আগামী জুমু’আতে তুফান আলী মুনশীর মসজিদে উলামায়ে কেরামের একটি সভা অনুষ্ঠিত হওয়া এবং বাদ জুমু’আ মাদরাসার প্রাথমিক কার্যাদির সূচনা করার প্রস্তাব করা হলো।
পরিকল্পনা অনুযায়ী পরবর্তী শুক্রবার চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় আলেমগণ, বিশেষ করে জিরি মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও মহাপরিচালক মরহুম মাওলানা আহমদ হাসান সাহেব (রহ.) [মৃত ১৩৮৮ হি.] ও হাটহাজারী মাদরাসার স্বনামধন্য তৃতীয় প্রধান শিক্ষক মাওলানা ইয়াকুব সাহেব (রহ.)ও [১৩১৫-১৩৭৭] ছিলেন। তুফান আলী মুনশীর বাড়ির সম্মুখস্থ মসজিদে তাঁরা উপস্থিত হন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ভূমির স্বত্বাধিকারীগণ লোকভয়ে মাদরাসার জন্য জায়গা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে সক্ষম হলেন না। অগত্যা উক্ত মসজিদে মাদরাসার কাজ আরম্ভ করা হলো। বর্তমান জামিয়ার অনতিদূরে পূর্ব দিকে গোবিন্দরখীল গ্রামে মনুমিয়া দফাদার নামে একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন। জিরি মাদরাসা হতে উত্তীর্ণ নোয়াখালী নিবাসী কারী মুসলিম নামক একজন আলেম উক্ত দফাদার সাহেবের পরিচালনাধীন মক্তবের শিক্ষক ছিলেন। পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁরা ওই দিন মক্তবের ছাত্রদের তুফান আলী মুনশীর মসজিদে নিয়ে গিয়েছিলেন। জিরি মাদরাসার মুহতামিম সাহেবের নির্দেশে মাওলানা ইয়াকুব সাহেব ছাত্রদের যথারীতি খুতবা ইত্যাদি পাঠ করে সূরা ফাতিহার সবক দিলেন। অতঃপর সর্বসম্মতভাবে মাদরাসাটির নাম “কাসেমুল উলূম” রাখা হলো। রাতে সকলে বিষণœচিত্তে মাওলানা হামীদুর রহমান সাহেব (রহ.)-এর বাড়িতে সমবেত হলেন। সারা রাত শোকাভিভূত হয়ে সকলেই নির্ঘুম রাত যাপন করলেন। শেষ রাতে কারী মুসলিম সাহেব (রহ.) প্রস্তাব করলেন যে আমাদের সমস্যার বিষয়গুলো দফাদার সাহেবকে অবহিত করলে হয়তো তিনি এর কোনো সমাধান দিতে পারেন। এ কথা শুনে দফাদার সাহেবকে ডাকা হলো। তিনি এসে বললেন, আপাতত আমার বাড়ির সম্মুখস্থ মসজিদে মাদরাসার কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। তাবে শর্ত হলো, কোনো অবস্থাতেই মাদরাসা আমার এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া যাবে না। এতে উপস্থিত সকলে যেন হারানো প্রাণ ফিরে পেলেন। সকলের মুখে হাসি ফুটল এবং বিপদসংকুল রজনী যেন উৎসবমুখর দিনে পরিণত হলো। মাওলানা আহমদ (ইমাম সাহেব) ও কারী মুসলিম সাহেবকে ওই কাজে নিয়োজিত করে সকলে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে চলে গেলেন। কিছুদিন পর মৌলভী ঈসা সাহেব (রহ.) ও জিরি নিবাসী মৌলভী আমজাদ সাহেবকে মাদরাসার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হলো। কিছুদিন পর্যন্ত দফাদারের বাড়ির মসজিদেই মাদরাসার কাজ চলল। বর্তমানে মাদরাসার উত্তর পাশে যে সকল দোকানঘর রয়েছে সেগুলোর একটি খালি কক্ষেও কিছুদিন মাদরাসার কাজ চলেছিল।  অতঃপর মনু মিয়া দফাদার সাহেবের শ্বশুরের নিকট হতে আড়াই গ-া জমি খরিদ করে উক্ত স্থানে প্রথমে একটি কুঁড়েঘর; অতঃপর ২৭ হাত লম্বা একটি মাটির ঘর নির্মাণ করা হয়। এ কাজে যে টাকা ঋণ করা হয়েছিল তা আমি পটিয়া আসার পর পরিশোধ করেছি।
এ পর্যন্ত মাদরাসার অধিকাংশ কাজকর্ম আমার অনুপস্থিতিতেই প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। সে সময় আমি জিরি মাদরাসায় অবস্থান করেছি এবং ছোট-বড় সকল কর্মকা-ে কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ প্রদান করেছি।
ইতিমধ্যে স্থানীয় কিছু আলেম, যাঁরা আমাদেরই মতাবলম্বী। দুঃখের বিষয় তারাই মাদরাসার ওপর নিজেদের প্রভাব ও আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টা চালান। এ কারণে জনাব মাওলানা আহমদ সাহেব (ইমাম সাহেব) মাদরাসার দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন। মাদরাসার ব্যাপারে তিনি যখন সম্পর্ক ছিন্ন করে দূরে অবস্থান করছিলেন, তখন আমিও দূরে অবস্থান করা সমীচীন মনে করলাম। ওই সময় ইমাম সাহেব আমাকে বলেছেন, আপনি পরামর্শ দান করলে আমি তাঁদের সব পরিকল্পনা প্রতিহত করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। উত্তরে আমি বলেছিলাম, কিছুদিন ধৈর্য ধরুন এবং নীরব ভূমিকা পালন করুন। দেখব, আমাদেরকে বাদ দিয়ে তাঁরা উক্ত কাজে কতটা সফলতা অর্জন করতে পারেন? বিনা পরিশ্রমেই যদি আমাদের চাহিদা ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয় এবং মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে অত্যন্ত আনন্দেরই বিষয় হবে। তাঁরা ব্যর্থ হলে এবং মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় সমর্থ না হলে চিরদিনের জন্য তাঁরা পর্যুদস্ত হয়ে থাকবেন এবং ভবিষ্যতেও আমাদের কোনো কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার দুঃসাহস পাবেন না। সে সময় জিরি নিবাসী মাওলানা আব্দুল জলীল সাহেবকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত করা হলো।
১৩৫৭ হিজরী সনে আমি [লেখক মুফতী আজীজুল হক (রহ.)] যখন জিরি মাদরাসা হতে অত্যন্ত বিষণœ হৃদয়ে পটিয়ার খিদমাতে সক্রিয় অংশ নিলাম তখন মাওলানা আব্দুল জলীল সাহেব, মৌলভী আমজাদ সাহেব, কারী মুসলিম সাহেব প্রমুখ অত্র মাদরাসার শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন। এ সময় আমি মাদরাসার প্রাক্তন নামের সাথে “জমীরিয়া” শব্দ যোগ করলাম। এর কিছুদিন পর মাদরাসা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। কিন্তু আল্লাহর অপার রহমতে সেসব বাধা-বিপত্তির বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে যেতে বেশি বেগ পেতে হয়নি।
ইতিমধ্যে মাদরাসা পর পর চারজন শিক্ষকের পদ শূন্য হয়ে পড়ে। তাঁদের এ শূন্যতা পূরণার্থে আমি মহান রাব্বুল আলামীনের অশেষ রহমতের প্রত্যাশায় অধীর আগ্রহে দিন গুনছিলাম। এমতাবস্থায় কোনো চেষ্টা-তদবির ছাড়াই আল্লাহ পাকের বিশেষ মেহেরবানির নিদর্শনস্বরূপ শায়খুল মাশায়েখ মাওলানা জমীরুদ্দীন সাহেব (রহ.)-এর সুযোগ্য খলীফা মাওলানা হাফেজুর রহমান সাহেব এবং মাওলানা উবাউদুর রহমান সাহেব (রহ.) [মৃত ১৪০৪ হি.] মাদরাসার শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হলেন। প্রথমত, আর্থিক অবস্থা সচ্ছল ছিল না; কিন্তু পরে সে অভাব পূরণ হয়ে  গেল। সে হিসেবে এটি মাদরাসার বিকাশের দ্বিতীয় যুগ। [এর বিস্তারিত বর্ণনা এয়াদে আযীয (২য় সংস্করণ) ১২৮-১৬৮ পৃষ্ঠা এবং আনোয়ারে আহমদী ১০০- ১০৮ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।]
হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) আরো লিখেন, ১৩৫৮ হিজরী সনে জিরি মাদরাসা হতে প্রত্যাবর্তনের জন্য আমি আদিষ্ট হই। বছর পূর্ণ করে রমাজানের বন্ধের ১৮ দিন পূর্বে আমি ইস্তেফানামা দিই। এতদপূর্বে জিরি মাদরাসা থেকে বিদায় এবং পটিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠাসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এস্তেখারা করলে তাতে দেখলাম কেউ যেন আমার সামনে নি¤œ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন। এ বর্ণনার শেষ পর্যায়ে লিখেন, পটিয়া মাদারাসার মূল স্তম্ভ হলেন হযরত শায়খুল মাশায়েখ জমীরুদ্দীন (রহ.) এবং তার শাখা-প্রশাখা ও প্রতিষ্ঠাকার্য সব কিছুই তাঁর ফয়জ বরকতের দ্বারা হয়েছে। ১৩৫৭ হিজরী সনে হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন সাহেব (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী (রহ.)-কে অত্র মাদরাসার পৃষ্ঠপোষক বানানো হয়।
হযরত শায়খুল মাশায়েখ আমাকে জাগ্রত অবস্থায় এবং মাওলানা আহমদ সাহেবকে (ইমাম সাহেব হুজুর) স্বপ্নাবস্থায় পটিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠার প্রতি ধাবিত করেন। মাওলানা আহমদ সাহেব স্বপ্নে দেখেন, হযরত শায়খ একদা তীব্র স্বরে বলেন, তুমি পটিয়ায় গিয়ে মাদরাসার কাজ করো এবং শরফভাটা হতে চলে আসো।
একবার পটিয়ার কিছু লোক তাদের পক্ষ থেকে জনৈক ব্যক্তিকে মাদরাসার পরিচালক নিযুক্ত করে কিছু বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে বিলি করেন। বিজ্ঞাপন সম্পর্কে অবগত হলে হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন সাহেব (রহ.) বললেন, আমার জানা মতে পটিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠায় যাঁদের অবদান রয়েছে তাঁরা হচ্ছেন মাওলানা ইস্কান্দর সাহেব, মাওলানা আহমদ সাহেব মোহরবী (ইমাম সাহেব) ও মুফতী আজীজুল হক সাহেব (রহ.)। উক্ত ব্যক্তিবর্গ ব্যতীত আর কউকে আমি চিনি না। (তাযকারায়ে জমীর, ১৩৯, জামেয়া পটিয়া ১৪)

দাওরায়ে হাদীসের উদ্বোধন :

হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) কর্তৃক লিখিত বর্ণনার অনুবাদ :
নিজ অযোগ্যতা ও অন্যান্য কারণবশত কয়েক বছর যাবৎ সম্ভবত ১৩৬১ হিজরী সন হতে ১৩৬৫ হিজরী সন পর্যন্ত মাদরাসায় মিশকাত শরীফের শ্রেণী (জামাতে উলা) পর্যন্ত লেখাপড়া হতো। অনেক বন্ধু-বান্ধব বারবার আবেদন নিবেদন করতে লাগলেন যে দাওরায়ে হাদীসের ক্লাস চালু করলে ভালো হবে।  কারণ প্রতিবছর বেশ কিছুসংখ্যক ছাত্রকে মিশকাত শরীফ শেষ করে দাওরায়ে হাদীস পড়ার জন্য বিভিন্ন মাদরাসার দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। আমি মাদরাসার নানাবিধ অসুবিধার প্রতি লক্ষ করে অপেক্ষা করতে লাগলাম। ইত্যবসরে শোভনদ-ী নিবাসী হাজী আমজু সাহেব মাদরাসায় সর্বপ্রথম বোখারী শরীফ দান করলেন। আমি বললাম, আমার মাদরাসায় হাদীস শরীফের শ্রেণী নেই। আপনি অন্য মাদরাসায় দান করুন। উত্তরে তিনি বললেন, আমার একান্ত ইচ্ছা এখানেই দেব। পর পর সিহাহ সিত্তার কয়েকটি কিতাব সংগৃহীত হলো। এরই মধ্যে একদিন আমি উপস্থিত শিক্ষকম-লীর উদ্দেশ্যে প্রস্তাব পেশ করলাম যে হাদীস শরীফের কিতাবগুলো এমনি পড়ে আছে, যদি আসরের নামাযের পর আমাদের মধ্যকার একজন কয়েকটি হাদীস পড়েন আর আমরা শ্রবণ করি তাহলে দাতাগণ এবং আমরা উভয়েই পুণ্যের অধিকারী হব। আমার এ প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এভাবে কিছুদিন চলার পর আবার বন্ধ হয়ে গেল।
মাদরাসা প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পর এক ব্যক্তি স্বপ্নে দেখলেন যে চরচাক্তাই মোজাহের উলূম মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা ইসমাঈল সাহেব (রহ.) পটিয়া মাদরাসায় এসে বলতে লাগলেন, এখানে হযরত মুহাম্মদ (সা.) হাদীসের পাঠদান করেছেন। আমরাও এখানে হাদীস পড়াব। এর মধ্যে এক রাতে আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম, আমার ওজু করতে বেশিক্ষণ সময় ব্যয় হয়ে যাচ্ছে এবং নামায পড়তে বিলম্ব হচ্ছে। উক্ত স্বপ্নের ব্যাখ্যা অন্তরে এরূপ উদিত হলো, নাহভ, সরফ ইত্যাদির জন্য বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। হাদীসের জামাআত আরম্ভ হতে বিলম্ব হচ্ছে। অতঃপর একদিন আল্লামা ইবরাহীম বলিয়াভী (রহ.)-এর নিকট গিয়ে উক্ত স্বপ্ন বর্ণনা করলাম। শুনে তিনি বললেন, মাদরাসায় দাওরায়ে হাদীস আরম্ভ করো। আর বিলম্ব করো না। কিন্তু এ মহান দায়িত্ব গ্রহণে আমার আপারগতা লক্ষ করে তিনি বললেন, ভয়ের কিছু নেই, আমি গিয়ে দাওরায়ে হাদীসের উদ্বোধনী সবক পড়াব। অতঃপর এক শুভ দিনে-শুভক্ষণে তিনি পটিয়ায় তাশরীফ এনে ১০-১২ জন উপস্থিত ছাত্রকে ‘বোখারী শরীফের’ প্রথম সবক পড়ালেন এবং হযরত মাওলানা আহমদ সাহেব মোহরবী (ইমাম সাহেব) ও হযরত মাওলানা আমীর হোসাইন সাহেব (রহ.) (মীর সাহেব)-এর ওপর এ গুরুদায়িত্ব ন্যস্ত করলেন। আলহামদু লিল্লাহ আজ সুদীর্ঘ কাল যাবৎ তাঁরা উক্ত গুরুদায়িত্ব সুচারুরূপে আঞ্জাম দিয়ে নবী করীম (সা.)-এর অমূল্য হাদীস শাস্ত্রের জ্ঞান দ্বারা হাজার হাজার জ্ঞানপিপাসুর পিপাসা নিবারণ করে আসছেন।
হযরত মুফতী আজীজুল হক (রহ.) লিখিত মুনাজাতের একটি শ্লোক হলো নিম্নরূপ :
ہو نظام مدرسہ زیرلوائے احمدی         حق تعالی کی ہدایت پیشوائے کارہو
এই চন্দের ব্যাখ্যা হযরত মাওলানা সুলতান যওক নদভী (দা.বা.) তাঁর লিখিত তাযকারয়ে আজীজে লিখেন :
لوائے احمدی: استاذنا مولانا احمد صاحب مہروی خلیفۂ اجل شیخ المشائخ ہیں، حضرت (مفتی صاحبؒ) جن دنوں جیری رہ کر پٹیہ میں مدرسہ قائم کرنیکی کوشش فرمارہے تھے ان دنوں حضرت امام صاحب حضرت سے پہلے پہنچ کر کام شروع کردیا تھا ، نصف صدی سے زائد مدت تک ناظم تعلیمات ، صدر المدرسین، شیخ الحدیث کے عہدہ پر فائز رہے اور صحیح بخاری شریف کا درس دیتے رہے (تذکرہ عزیز ۲۶۳)
অর্থাৎ ‘লেওয়ায়ে আহমদী’ থেকে আমার উস্তাদ মাওলানা আহমদ মোহরবী সাহেব (রহ.) উদ্দেশ্য। যিনি শায়খুল মাশায়েখ (রহ.)-এর স্বনামধন্য খলীফা। যে সময় হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) জিরি মাদরাসায় অবস্থান করে পটিয়ায় মাদরাসা স্থাপনের চেষ্টায় রত ছিলেন, সে সময় হযরত ইমাম সাহেব হুজুর মুফতী সাহেব (রহ.)-এর পূর্বে এসে পটিয়াতে মাদাসা প্রতিষ্ঠার কাজ আরম্ভ করেন। তিনি অর্ধ শতাব্দী থেকে বেশি শিক্ষা পরিচালক, সদরুল মুদাররেসীন এবং শায়খুল হাদীসের পদ অলংকৃত করেন। সহীহ বোখারী শরীফের দরস দিতে থাকেন। (তাযকিরায়ে আজীজ ২৬৩)
মোটকথা, আমাদের মুরব্বি যুগশ্রেষ্ঠ পীর-মাশায়েখ উলামায়ে কেরামের চোখের পানি, আন্তরিক দু’আ, ইখলাসপূর্ণ মেহনত, ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং অভাবিত তাকওয়ার মাধ্যমে পটিয়ায় এই প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তাঁদের কেমন ইখলাস, অনুরাগ এবং মেহনত ছিল তা আমাদের বুঝে আসা দূরের কথা, কল্পনা করাও আমাদের পক্ষে অসম্ভব। তবে এর প্রতিষ্ঠাকার্যের প্রারম্ভ থেকে শুরু করে সব কিছুর রাজ এবং দায়িত্ববোধ কুতবে আলম হযরত মাওলানা মুফতী আজীজুল হক (রহ.) এবং হযরতুল আল্লাম মাওলানা আহমদ ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁদের এই ইখলাসপূর্ণ অক্লান্ত মেহনতের সামান্য উপঢৌকন দুনিয়াতেও দিয়েছেন এবং আখিরাতে সুউচ্চ মর্যাদায় ভূষিত করবেন। তাঁদের এসব মেহনত সদকায়ে জারিয়া হিসেবে তা-কিয়ামত জারি থাকবে ইনশাআল্লাহ। দুনিয়াতে আল্লাহর দেওয়া নিয়ামতগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ নিয়ামত হলো, এই দুই মুরব্বির পরিবারে বর্তমানে সর্বশেষ প্রজন্ম পর্যন্ত সকলে আলেমে দ্বীন। এর মধ্যে অনেকে হাফেজে কোরআনও আছেন। আল্লাহ তা’আলা যেন এই ধারাবাহিকতা চিরস্থায়ী করেন। আমীন।

দ্বীনের জন্য হিজরত :

আল-জামিয়া পটিয়ার সেই প্রতিষ্ঠার দিন থেকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি অত্র জামিয়াতেই দ্বীনি খিদমাতে জীবন উৎসর্গ করেন। দ্বীনি খিদমাতের এই ধারাবাহিকতায় তিনি সপরিবারে পটিয়াতেই মুহাজির হন। এখানে স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন। আল্লাহ তা’আলার কারিশমা, জামিয়ার পটিয়ার জন্য নিজেদের জন্মস্থান ত্যাগ করে মুহাজির হয়েছেন দুই মহান ব্যক্তি। জামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক কুতবে আলম হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী আজীজুল হক (রহ.) এবং জামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হযরত আল্লামা মাওলানা আহমদ ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)। এরা দুটি পরিবার জন্মস্থানের মায়া এবং আত্মীয়স্বজনের ¯েœহ-মমতা ত্যাগ করে দ্বীনের জন্য জামিয়া পটিয়ার পাশে স্থায়ী নিবাস গড়ে তুলেছেন। তাঁদের উভয়েরই জন্মস্থানে ঘরবাড়ি, সম্পদাদি এখনো বিদ্যমান রয়েছে। তাঁরা পটিয়ায় মুহাজির হলেও আজীবন নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত নিজেদের গ্রামে যাতায়ত করতেন। সেখানকার লোকজনের দ্বীনি অবস্থা বিবেচনায় তাঁদের হেদায়েতের জন্য ওয়াজ-নসীহত করতেন। আত্মীয়স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী প্রত্যেকের খবরাখবর নিতেন। সমাজে কোনো প্রকার ফেতনা ছড়ালে নিজেরা উপস্থিত হয়ে সেসবের প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতেন। অর্থাৎ দ্বীনি কাজ আঞ্জাম দেওয়ার জন্য সপরিবারে মুহাজির হলেও আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের হক আদায়ের ব্যাপারে তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত সচেতন। 

জামিয়া পটিয়ায় তাঁর খিদমাত :

হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.) জামিয়া পটিয়ায় নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত প্রায় সব কিতাবেরই দরস দিয়েছেন।  তিনি জামিয়ার শায়খুল হাদীস, সদরুল মুদাররেসীন, ফতওয়া বিভাগের বিশেষ উপদেষ্টা, শিক্ষা বিভাগী পরিচালক, দারুল ইকামা পরিচালক, মসজিদের ইমামতি ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করেছেন।

তাঁর ছাত্রগণ :

জিরি মাদরাসা ও জামিয়া পটিয়ায় মিলে তাঁর ছাত্রসংখ্যা হাজার হাজার। যার পরিসংখ্যান এই ছোট পরিসরে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। তাই এখানে কয়েকজন বিশিষ্ট ছাত্রের নাম উল্লেখ করা হলো। যাঁরা ফারেগ হওয়ার পর বড় বড় দ্বীনি খিদমাতে আত্মনিয়োজিত ছিলেন।

জিরি মাদরাসায় তাঁর বিশিষ্ট ছাত্রগণ :

১. হযরত আল্লামা মাওলানা আমীর হোসাইন [মীর সাহেব হুজুর (রহ.)]। (১৯১১-১৯৮৪ ইং) প্রাক্তন মুহাদ্দিস আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।
২. হযরত মাওলানা মুফতী নূরুল হক সাহেব (রহ.) (১৯১৮-১৯৮৭ ইং) । প্রাক্তন মুহতামিম জিরি মাদরাসা, চট্টগ্রাম।
৩. হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ ইবরাহীম সাহেব (রহ.)  (ওফাত-১৪০০ হি.) প্রাক্তন মুহাদ্দিস ও মুফতী আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।
৪. হযরত মাওলানা ইসহাক গাজী সাহেব (রহ.)  (১৩৩৬-...হি.) প্রাক্তন শায়খুল হাদীস আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম।
৫. হযরত মাওলানা আলী আহমদ বোয়ালভী সাহেব (রহ.) (১৯১১-...) প্রাক্তন মুহাদ্দিস ও নায়েবে মুহতামিম আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া, চট্টগ্রাম।
৬. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আলী সাহেব (রহ.) (ইন্তেকাল ১৪০৪ হি.) প্রাক্তন মুহাদ্দিস দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী।
৭. হযরত মাওলানা সাঈদ আহমদ সাহেব (রহ.)। প্রাক্তন শায়খুল হাদীস নাজিরহাট বড় মাদরাসা ও দারুল মাআরিফ, চট্টগ্রাম।
৮. হযরত মাওলানা বদীউর রহমান সাহেব (রহ.)। প্রাক্তন সিনিয়র শিক্ষা আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম।
৯. হযরত মাওলানা সালেহ আহমদ সাহেব (রহ.) মুহাজেরে মক্কী।

জামিয়া পটিয়ায় দাওরায়ে হাদীস আরম্ভ করার পূর্বের ছাত্রগণ :

১০. হযরত মাওলানা আইয়ূব সাহেব মাদার্শাহী, সাবেক শিক্ষক, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।
১১. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ জামাল সুপারিনটেনডেন্ট, মাদরাসা বাশিরিয়া, আলিয়া, সন্দ্বীপ।
১২. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইসলাম সাহেব (রহ.) বিশিষ্ট মুবাল্লিগে ইসলাম, ভারত।

তাঁর নিকট বোখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ ইত্যাদি হাদীসের কিতাব পড়ে যাঁরা হাদীসের খিদমাত আঞ্জাম দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন :

১৩. হযরত মাওলানা হারুন ইসলামবাদী (রহ.), সাহেব মুহতামিম, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।
১৪. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভী সাহেব (দা.বা.), মুহতামিম, জামিয়া দারুল মাআরিফ, চট্টগ্রাম।
১৫. হযরত মাওলানা আনোয়ারুল আজীম সাহেব (রহ.) সাবেক মুহাদ্দিস, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।
১৬. হযরত মাওরানা লোকমান সাহেব (রহ.) সাবেক শিক্ষক, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।
১৭. হযরত মাওলানা সিদ্দিক আহমদ সাহেব (রহ.) সাবেক মুবাল্লিগ, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।
১৮. হযরত মাওলানা আখতার কামাল সাহেব, নায়েবে মুহতামিম, জামিয়া দারুসসুন্নাহ, হ্ণিলা।
১৯. হযরত মাওলানা শফীক আহমদ সাহেব (রহ.) সাবেক মুহতামিম, জামিয়া ইসলামিয়া টেকনাফ, কক্সবাজার।
২০. হযরত মাওলানা সিদ্দীকুল্লাহ সাহেব (রহ.) সাবেক মুহাদ্দিস, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।
২১. হযরত মাওলানা তৈয়ব সাহেব, শায়খুল হাদীস ও মুহতামিম, জমীরিয়া কাসেমুল উলূম মাদরাসা, মলমাইন।
২২. হযরত মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান সাহেব, মুহাদ্দিস, জামিয়া উবাইদিয়া নানুপুর, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।
২৩. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ সাঈদ আহমদ, মুহতামিম, ঝাপুয়া মাদরাসা।
২৪. হযরত মাওলানা নযীরুল ইসলাম সাহেব (রহ.) সাবেক সিনিয়র শিক্ষক, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।
২৫. ড. মাওলানা মুহাম্মদ রশীদ আহমদ সাহেব, অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
২৬. হযরত মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস সাহেব, সাবেক মুহাদ্দিস, চারিয়া ও বোয়ালিয়া মাদরাসা।
২৭. হযরত মাওলানা কামালুদ্দীন সাহেব, মুহাজেরে, সৌদি আরব।
২৮. হযরত মাওলানা আব্দুল হক সাহেব, সাবেক মুহতামিম, চন্দ্রঘোনা মাদরাসা রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম।
২৯. হযরত মাওলানা আব্দুল বাকী সাহেব, প্রতিষ্ঠাতা, ভাঙ্গা মাদরাসা, ফরিদপুর।
৩০.  হযরত মাওলানা খায়রুল আমীন সাহেব, মোহাজেরে মক্কী।
৩১. হযরত মাওলানা মাহবুবুর রহমান সাহেব (রহ.) প্রতিষ্ঠাতা, পরিচালক দোহাজারী মাদরাসা।
৩২. হযরত মাওলানা আবুল কাসেম সাহেব সিনিয়র শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া জিরি, পটিয়া, চট্টগ্রাম।
৩৩. হযরত মাওলানা হাবীবুল্লাহ সাহেব (রহ.) সাবেক উস্তাদ জামিয়া পটিয়া, সাবেক প্রধান শিক্ষক, ইসাপুর মাদরাসা।
৩৪. হযরত মাওলানা মুজাফফর আহমদ সাহেব (রহ.) সাবেক সিনিয়ার মুহাদ্দিস, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।
৩৫. হযরত মাওলানা আব্দুল্লাহ আনসারী সাহেব (রহ.) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক,  এশাআতুল উলূম মাদরাসা, মোহরা।
৩৬. হযরত মাওলানা আব্দুল মন্নান সাহেব, শোয়াবিলী, সাবেক শিক্ষক, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।
৩৭. হযরত মাওলানা ইদ্রিস সাহেব শোয়াবিলী, সাবেক মুহাদ্দিস জামিয়া দারুল মাআরিফ, চট্টগ্রাম।
৩৮. হযরত মাওলানা নুরুসসমদ সাহেব (রহ.), সাবেক পরিচালক, ঘরোকঘাটা মাদরাসা, মহেশখালী, কক্সবাজার।
৩৯. হযরত মাওলানা আইয়ূব সাহেব (রহ.), সাবেক শায়খুল হাদীস ও নাজেমে তালিমাত, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।
৪০. হযরত মাওলানা আব্দুল হালীম বোখারী সাহেব (দা.বা.) মুহতামিম, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।

আধ্যাত্মিক দীক্ষা :

১৯৪৯ ইং সালে দ্বিতীয়বার ভারত সফরকালীন হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.) থানাভনে হাকীমুল উম্মত হযরত আশরাফ আলী থানভী (রহ.)-এর সুহবতে তিন মাস অতিবাহিত করেন। আল্লাহ তা’আলার হেকমত সেখানে তিনি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে হযরত থানভী (রহ.)-এর আদেশক্রমে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরে এলেও তাঁর অন্তর থাকত থানাভনের দিকে। তিনি সব সময় হযরত থানভী (রহ.)-এর সাথে পত্রবিনিময় করতেন। হযরত থানভী (রহ.)-এর শেষ বয়স পর্যন্ত পত্রযোগাযোগের এই ধারা অব্যাহত ছিল। এর ভেতর বিভিন্ন অলৌকিক স্বপ্ন দেখে তিনি শায়খুল মাশায়েখ হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন সাহেবের হাতে বায়আত গ্রহণে মনন্থ করেন। তাঁর অবস্থাগুলো জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হযরত মুফতী আজীজুল হক (রহ.)-কে বলেন। হযরত মুফতী আজীজুল হক (রহ.) তাঁকে আপন শায়খ হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন (রহ.)-এর কাছে নিয়ে গিয়ে বায়আত গ্রহণ করান।
বায়আত গ্রহণার্থে হাটহাজারী যাওয়ার সময় হযরত মুফতী আজীজুল হক (রহ.) এবং রাউজান নিবাসী মাওলানা বদিউর রহমান সাহেব তাঁর সঙ্গী ছিলেন। নির্দিষ্ট সময়ে তথায় পৌঁছে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) ইমাম সাহেবের উদ্দেশ্য সম্পর্কে হযরত শায়খকে অবহিত করেন। তিনি আসরের নামাযের পর সাক্ষাতের সময় দেন। তাঁর নির্দেশিত সময়ে উপস্থিত হলে হযরত শায়খ তাঁকে বায়আত করান এবং করণীয়-বর্জনীয় বিষয়ের ওপর অঙ্গীকার নেন। সাথে কিছু দিকনির্দেশনা দেন। যেমনÑতিনি বলেন, হে আহমদ! তুমি কখনো শপথ করো না। নামাযে মাঝে মাঝে ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে।
হযরত শায়খের দরবার থেকে বাড়ি ফেরার পথে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) হযরত ইমাম সাহেব হুজুরকে বলেন, আজ আপনাকে হযরত নতুন কিছু কথা বলেছেন। যা কখনো বলতে শুনিনি। হযরত ইমাম সাহেব বলেন, আমি একবার কোনো কাজ না করার জন্য শপথ করে ছিলাম। কিন্তু শপথ ভঙ্গ হযে যায়। এরূপ দীর্ঘদিন যাবৎ মনে আসত যে এতগুলো সহীহ হাদীসে ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পড়ার কথা রয়েছে অথচ হানাফী মাযহাব মতে তা পড়া নিষেধ। যদিও হানাফীগণ ওই সব হাদীসগুলোর তাবীল করেছেন। হযরত শায়খ নিশ্চয়ই আমার অবস্থা বুঝে ফেলেছেন।

খিলাফত লাভ :

শায়খুল মাশায়েখ হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন সাহেব (রহ.) হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)-কে বায়আতের ১৮ মাসের মাথায় খিলাফত দানে ভূষিত করেন, যা বাস্তব ঘটনা নিম্নরূপ :
একদা হযরত মুফতী আজীজুল হক (রহ.) হাটহাজারী গিয়ে আপন শায়খের সাথে সাক্ষাৎ করলে হযরত বলেন, আমি তোমাকে এবং মাওলানা আহমদকে এজাযত প্রদান করলাম। অবশ্য তা এখন প্রকাশ করছি না। তোমরা আরো উন্নতির দিকে ধাবিত হও। তিনি পটিয়ায় এসে উক্ত সংবাদ হযরত ইমাম সাহেবকে শোনালেন। কিছুদিন পর হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) হজব্রত পালনার্থে সৌদি আরব গমন করবেন। এর জন্য প্রস্তুতি চলছিল। তাঁকে বিদায় জানাতে উলামায়ে কেরাম একত্রিত হয়েছেন গ্রামের বাড়ি পটিয়ার চরকানাইয়ে। বিদায়পূর্ব অনুষ্ঠানে হযরত ইমাম সাহেব (রহ.) তাঁর বক্তব্যে বলেন, শায়খুল মাশায়েখ হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন সাহেব হযরত মুফতী সাহেবকে এজাযত (খিলাফত) দিয়েছেন। অতঃপর হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) তাঁর বক্তব্যে বলেন, ইমাম সাহেব আপনাদের নিকট একটি কথা গোপন করেছেন। হযরত শায়খ আমার সঙ্গে তাঁকেও এজাযত দিয়েছেন। এমনকি হযরত (রহ.) কোনো কোনো মুরিদানকে হযরত ইমাম সাহেবের হাতে বায়আত গ্রহণের জন্যও বলেছেন।
১৩৫৭ হিজরী সনে শায়খুল মাশায়েখ (রহ.) হজের সফরে ছিলেন। তাঁর সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন হযরত মুফতী আজীজুল হক (রহ.) এবং হযরত মাওলানা হাজী ইউনু সাহেব (রহ.)ও। পথিমধ্যে কলকাতা মুসাফিরখানা এবং মুম্বাই আবু সিদ্দীক মুসাফিরখানায় ৮ দিন অবস্থান করেন। একদিন হযরত শায়খুল মাশায়েখ ফজর নামাযের পর উপস্থিত উলামায়ে কেরাম ও জনসাধারণের মজমায় বলেন, আমি মাওলানা আহমদ (ইমাম সাহেব)-কে এজাযত দিলাম। হযরত তাঁকে চার খান্দানের খিলাফত প্রদান করেন। তবে হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.) অধিকাংশ চিশতিয়া খান্দানে বায়আত করতেন।

খলীফাগণ :

১. মাওলানা হাফেজ রহমতুল্লাহ সাহেব গরদুয়ারী, সাবেক সিনিয়র শিক্ষক, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।
২. মাওলানা হেফাজতুর রহমান (রহ.), প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, হোসাইনিয়া মাদরাসা, রাজঘাটা, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম।
৩. মাওলানা শফীকুর রহমান সাহেব (রহ.) প্রতিষ্ঠাতা, কাসেমুল উলুম মাদরাসা শিলখালী, চকরিয়া, কক্সবাজার।
৪. মাওলানা আব্দুল আজিজ সাহেব (রহ.) সিনিয়ার শিক্ষক, এশাআতুল উলূম আজিজিয়া মাদরাসা, মোহরা, চান্দগাঁও, চট্টগ্রাম।
৫. মাওলানা তাহের সাহেব (রহ.) (মৃত ১৪১৫ হি.) প্রতিষ্ঠাতা, দারিয়া আলিয়া খুলনা ও আহমদিয়া বড়ঘাট মাদরাসা।
৬. মাওলানা আজিজুর রহমান সাহেব (রহ.) (মৃত ১৯৮৮ ইং) শিক্ষক, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।
৭. মাওলানা ইয়াকুব সাহেব (রহ.) (মৃত ১৪১৬ হি.) কোষাধ্যক্ষ, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।
৮. মাওলানা সুলতান আহমদ সাহেব, প্রতিষ্ঠাতা, আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া, মিয়াজানপুর ও রিদা মাদরাসা, বার্মা।
৯. মাওলানা নুরুল হক সাহেব, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা।
১০. মাওলানা নজীর আহমদ সাহেব, সদরুল মুদাররেসীন ও মুফতী, মিয়াজানপুর মাদরাসা, বার্মা।
১১. মাওলানা আব্দুস সমদ ফরীদি সাহেব (রহ.) প্রতিষ্ঠাতা, জামেয়া হাফিজিয়া, ফরিদপুর। সাবেক খতীব, অ্যারোপ্লেন মসজিদ, এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা।
১২. মাওলানা আব্দুস সাদেক সাহেব, মুফতী ও সদরে মুদাররেসীন শাহী মসজিদ মাদরাসা, বংশীপুর, সাতক্ষীরা।
১৩. মাওলানা খায়রুল আমীন সাহেব, মক্কা মিসফালার একটি মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক।
১৪. মাওলানা আব্দুল ওয়াহহাব সাহেব, প্রতিষ্ঠাতা, চন্দ্রদিঘীলিয়া মাদরাসা, গোপালগঞ্জ।
১৫. মাওরানা নূরুল হুদা সাহেব, প্রধান শিক্ষক, মিরসরাই হাবিলদারবাসা মদারাসা।
১৬. মাওলানা আলী আকবর সাহেব, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, মহিউস সুন্নাহ মাদরাসা ছোট মহিশখালী, কক্সবাজার।
১৭. মাওলানা সিদ্দীক আহমদ সাহেব (রহ.) সাবেক মুবাল্লিগ, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।
১৮. মাওলানা নূর হাসান সাহেব, প্রতিষ্ঠাতা মাদরাসা ইউনুসিয়া, ইসাখালী ও পরিচালক আশরাফিয়া কাসেমুল উলূম মাদরাসা, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম।
১৯. কারী জালালুদ্দীন সাহেব, সাবেক শিক্ষক, ঝাপোয়া মাদরাসা, মহেশখালী।
২০. মাওলানা আবু ওমর সাহেব কুতুবী।
২১. মাওলানা তৈয়ব সাহেব, পরিচালক আল-জামেয়াতুল আরবিয়া ইসলামিয়া, জিরি, পটিয়া, চট্টগ্রাম।


মানবসেবা :

হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.) দ্বীনি খিদমাত আঞ্জাম দেওয়ার পাশাপাশি মানবসেবা, বিশেষ করে রূহানী রোগের কোরআনী চিকিৎসা দিতেন। তাঁর চিকিৎসায় ব্যাপক প্রভাব থাকায় প্রতিদিন তাঁর বাসস্থলে দূর-দূরান্তের লোকদের এক মজমায় পরিণত হত। পবিত্র কোরআনের কয়েকটি আয়াত দিয়েই তিনি যাবতীয় চিকিৎসা করতেন। জটিল-শক্ত জিন ও জাদুটোনায় আক্রান্ত রোগীরা তাঁর কাছে এসে ভিড় জমাত। তাই তিনি হালকা চিকিৎসা দিয়ে তাদের সেবা করতেন। এটি তাঁর পেশা ছিল না। যার কারণে অতিরিক্ত টাকা-পয়সা নিতেন না রোগীদের কাছ থেকে। তাঁর সামান্য পানিপড়া ও তেলপড়ায় অসংখ্য রোগী ভালো হয়েছেন। তাঁর আমলে ছিল ৩৩ আয়াত এবং আয়াতে সেহের ইত্যাদি। এই কয়টি কোরআনী আয়াতই ছিল তাঁর সারা জীবন কোরআনী চিকিৎসার মূলমন্ত্র। কিন্তু আল্লাহর ওলীদের মুখের প্রভাব কল্পনাতীত। হযরত ইমাম সাহেব (রহ.)-এর সামান্য পানিপড়ার আসরও ছিল দুনিয়াখ্যাত। দেশ-বিদেশের অসংখ্য লোক তাঁর এই আধ্যাত্মিক প্রভাব থেকে উপকৃত হয়েছেন। এসব মুজররাব (পরীক্ষিত) আমল একত্রিত করে তাঁর সুযোগ্য সন্তান জামিয়া পটিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস ও তাফসীর বিভাগীয় প্রধান শারেহুল হাদীস হযরত আল্লামা মাওলানা রফীক আহমদ সাহেব (দা.বা.) ‘মুজাররাবাতে আহমদী’ নামে একটি কিতাব সংকলন করেন, যা থেকে দেশ-বিদেশের অসংখ্য উলামায়ে কেরাম উপকৃত হচ্ছেন।

নিয়মানুবর্তিতা :

হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.) ছিলেন নিয়মপরায়ণের ক্ষেত্রে অদ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব। সারা জীবন একই নিয়মেই অতিবাহিত হয়েছে তাঁর সব কিছু। এটি তাঁর জীবনে সকলের জন্য একটি পরম শিক্ষণীয় ভূষণ। উলামায়ে কেরামের মধ্যে বিশ্রুত আছে তিনি জীবিত থাকাকালীন জামিয়া পটিয়ায় নামাযের সময়ের জন্য ঘড়ির দিকে তাকাতে হতো না। বরং হযরত ইমাম সাহেব হুজুরকে মসজিদের সামনে দেখেই সবাই বুঝে ফেলত নামাযের সময় হয়েছে। তিনি মসজিদের ফটকে উপস্থিত হতেই দেখা যেত হয়তো মুয়াযযিন আযান দিচ্ছেন বা এখনই দেবেন। প্রতিটি ইবাদতে নিয়মতান্ত্রিকতা এবং সময়ের যে গুরুত্ব তিনি দিতেন তা উলামায়ে কেরামের কাছে একটি উপমা হয়ে আছে এবং থাকবে ইনশাআল্লাহ। সর্বক্ষণ তাঁর মুখের আহারীয় ছিল যিকরুল্লাহ। সব সময় তাঁর ঠোঁট দুটি হরকতে থাকত। হয়তো কোরআন তিলাওয়াত করতেন বা অন্য কোনো যিকির করতে থাকতেন। সারা দিনের আহার-বিহারেও তাঁর নিয়মানুবর্তিতা মানুষকে আশ্চার্যন্বিত করত। প্রতিদিন একই সময় খানাপিনা, একই সময় ঘুমানো, একই সময় ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া, নফল ইবাদত পালন, সকালে কিছুক্ষণ হাঁটা, পাশাপাশি কিছু ঘরের কাজ করা ইত্যাদি বিষয় একই সময়ে একই নিয়মেই তিনি আঞ্জাম দিতেন। তাঁর এই নিয়মানুবর্তিতার কারণে আল্লাহ তা’আলার অশেষ কৃপায় অন্তিম শয্যা পর্যন্ত তাঁর শরীরে বড় ধরনের কোনো রোগ ছিল না।  প্রায় শত বছরের এই দীর্ঘ হায়াতে তায়্যিবায় তাঁকে বড় কোনো ডাক্তারের দ্বারস্থ হতে হয়নি। একেবারে বৃদ্ধ বয়সেও তিনি সব কিছু নিজে করতেন। মসজিদে নিজেই হেঁটে যেতেন। পায়ে হেঁটেই মাদরাসার দুই তলা-তিন তলায় গিয়ে সবক পড়াতেন। ইন্তেকালের বেশ কয়েক বছর পূর্বে মসজিদ থেকে যাওয়ার সময় গরুর রশিতে আটকে হঠাৎ ছিটকে পড়েছিলেন। এর মাধ্যমে তাঁর কোমরের হাড় ব্যাপকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এর পর থেকে তিনি পায়ে হেঁটে কিছু করতে পারেননি। বরং হুইল চেয়ারে চড়েই মসজিদ এবং সবকে যেতে হয়েছে।

স্পষ্টভাষী :

একজন ন্যায়-নীতি এবং নিয়মপরায়ণ লোকের কাছে অনিয়ম, অন্যায় বড়ই কষ্টের বিষয় হয়ে থাকে। হযরত ইমাম সাহেব হুজুরও কোনো প্রকার অনিয়ম এবং অন্যায় পছন্দ করতেন না। তিনি ছোট থেকে ছোট অনিয়মও যদি দেখতেন সে যত বড় লোকই হোক না কেন, শুধরে দিতেন। তৎক্ষণাৎ বলে ফেলতেন। যাকে যে ভাষায় বলার প্রয়োজন মনে করতেন বলতেন। কাউকে শাসনের ভাষায়, কাউকে ¯েœহের ভাষায়, কাউকে পরামর্শের ভাষায় বলতেন। সে কারণে জামিয়া পটিয়ায় সবার মাঝে তাঁর প্রতি যেমন বিশেষ ভক্তি কাজ করত, তেমনি ভয়ও সক্রিয় ছিল। বিশেষ করে নামাযে কোনো ইমাম সাহেব কোরআন তিলাওয়াতে সামান্য বেশকম করলেই তিনি নামাযের পর তা শুধরে দিতেন। ছাত্রদের জাগতিক ও আধ্যাত্মিক সর্ব বিষয়ে তিনি খোঁজখবর রাখতেন এবং কোনো ব্যক্তিগত অনিয়ম দেখলে তৎক্ষণাৎ আর সমষ্টিগত অনিয়ম দেখলে মসজিদে সকলকে উদ্দেশ করে তা বলে দিতেন। এককথায় বর্তমান জমানায় এরূপ স্পষ্টভাষী চৌকস ব্যক্তিত্বের খুবই বিরল।

ইন্তেকাল :

এই মহান ব্যক্তিত্ব ১০ জানুয়ারি ১৯৯৬ ইং মোতাবেক ১৮ই শা’বান ১৪১৬ হি. বুধবার বাদ মাগরিব ৬টা ১৪ মিনিটে পটিয়াস্থ নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। জীবনের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি জামিয়া পটিয়ার সদরুল মুদাররেসী এবং শায়খুল হাদীসের দায়িত্বে বহাল ছিলেন। পরদিন বৃহস্পতিবার হাজার হাজার ছাত্র ও ভক্ত-অনুরক্তের উপস্থিতিতে জামিয়া পটিয়ায় বাদ জোহর দুপুর ২টায় তাঁর নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর নামাযে জানাযায় ইমামতি করেন ওলীকুল শিরোমণি হযরত মাওলানা আলী আহমদ বোয়ালভী সাহেব (রহ.)। মাকবারয়ে আজীজিতে হযরত মুফতী আজীজুল হক (রহ.)-এর পাশে হযরত মাওলানা হাজী ইউনুস সাহেব (রহ.) ও তাঁর পাশে হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)-কে দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য, এর দুই বছর পূর্বে তথা ১৪১৪ হিজরী সনে একই তারিখ, অর্থাৎ ১৮ই শা’বান তাঁর সহধর্মিণী জানাবা মুস্তফা খাতুন ইন্তেকাল করেন। দুই বছরের ব্যবধানে চান্দ্রমাসের একই তারিখে তাঁরা দুজন স্বামী-স্ত্রীর ইন্তেকালকে কল্যাণ ও খোদায়ী রহমতের নজরেও দেখেছেন অনেক রূহানী ব্যক্তিত্ব। মূলত তাঁর সহধর্মিণী জানাবা মুস্তফা খাতুনও ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ, মুত্তাকী-পরহেজগার, কৃতজ্ঞ ও অত্যন্ত ধৈর্যশীলা মহিয়সী নারী। তাঁর এহেন তাকওয়া-পরহেজগারী এবং সবর-শোকর হযরত ইমাম সাহেব (রহ.)-এর আধ্যাত্মিক ও পার্থিব জীবনে অনেক সহযোগী ছিল। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁদেরকে জান্নাতুল ফিরদাউসের সুউচ্চ আসনে সমাসীন করুন। আমীন।

পরিবার :

ইন্তেকালের সময় তিনি তিন ছেলে রেখে যান। যাঁরা প্রত্যেকে নামকরা আলেমে দ্বীন এবং সুপ্রসিদ্ধ খিদমাত আঞ্জাম দেন।
১। হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ (রহ.)। তিনি দেশের বিভিন্ন মাদরাসায় ইলমী খিদমাত আঞ্জাম দিয়ে সর্বশেষ পোকখালী মাদরাসায় শায়খুল হাদীসের পদে নিয়োজিত অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
২। হযরত মাওলানা রফীক আহমদ (দা.বা.)। তিনি আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস এবং তাফসীর বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে তাঁর ইলমী খিদমাত একটি বিশাল অধ্যায়ে পরিণত। উপমহাদেশে তিনি এখন ‘শারেহুল হাদীস’ নামে বিখ্যাত। বিভিন্ন ভাষায় সর্বাধিক কিতাবের রচয়িতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তাঁর হাদীসের ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলো সারা দুনিয়াতেই এখন সমাদৃত। এ ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে লিখিত তাঁর কিতাবাদী বিভিন্ন দরসেগাহে উক্ত বিষয়ের মূল সূত্র হিসেবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। আল্লাহ তা’আলা তাঁকে হায়াতে তায়্যিবা দান করুন। আমীন।
৩। মাওলানা হাফেজ উবাইদুল্লাহ। দ্বীনি কিতাবাদী প্রকাশনা জগতে তিনি এক নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত আশরাফিয়া লাইব্রেরি বর্তমানেও একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য।
হযরত ইমাম সাহেব হুজুরের তিন মেয়ে ছিলেন। ১. সকীনা খাতুন। ১৩৯৬ হিজরীতে হযরতের জীবদ্দশায় ইন্তেকাল করেন। গহিরা নিবাসী মৌলভী নরুল উসলামের সাথে তাঁর বিবাহ হয়। ২. ছালমা খাতুন। মরহুম মাওলানা মুহাম্মদ আলীর সাথে তাঁর বিবাহ হয়। ৩. ফরীদা খাতুন। হযরতের জীবদ্দশায় ইন্তেকাল করেন।
এর পরের প্রজন্মের মধ্যেও সকলে আলেমে দ্বীন হিসেবে গড়ে উঠেছেন। তাঁরা বিভিন্ন দ্বীনি খিদমাতে নিয়োজিত রয়েছেন।


ইন্তিকালের কিছুকাল পূর্বে লিখিত হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.) এর মোনাজাত মুলক ফার্সি কসীদা :
مناجات قبل از موت
از صاحب سوانح الامام علامہ احمد قدس اللہ سرہ

احمد تو بکن حمد خدا شکر الہی
 پس صل علی ختم رسل سید عالی
گرنور خدا جلوہ گرت کور نباشی
 یک چشم زدن غافل ازاں نور نباشی
ہم حب خدا خشیت او حبل نجاست
از ذکر خدا نفس کشی اصل حیاست
برسنت محبوب خدا سید کونین
دائم توعمل کن کہ شوی فائز دارین
قرآن مجید ست پُراز وحی الہی
ہر حرف ازاں نور فشاں نور خدائی
ہر کس کہ تلاوت کندش بادل صادق 
محبوب شود نزد خدا رب خلائق
دروقت نمازت نظرت سوئے خدا داد 
مقبول شود آں بدر خالق وغفار
ایں عمر گرانمایۂ من رفت بغفلت 
پس رحم کن اے خالق من مالک رحمت
کن خاتمہ بالخیر بداں وقت مماتم 
دہ کلمۂ توحید بلب حال وفاتم
بس رحمت حق مایۂ من بہر نجاتم 
ہر ہر عملم در نظرم قابل ماتم
گلزار جناں کن قبرم را بعنایت 
در ذکر مرا دار بدہ نور ہدایت
ایں نامۂ اعمال من از جرم و معاصی 
تو پاک کن اے خالق من بخش خلاصی
تو عفو بکن مادر بندہ پدرم را 
از فضل دراں جنت فردوس بکن جا
ہم رحم بکن مرشد و استاد کرامم 
کن مسکن او شاں ہمہ فردوس معظم
جزہستیٔ کس نشود قاضی حاجات 
اہلم را نگہدار تواز فتنہ و آفات
جملہ را بدہ راحت دارین بہ ایماں 
کس نیست بجز تو کہ بود رازق اوشاں
تو سلسلۂ علم دریں نسل رواں دار 
ہر فرد را از خوف توماند دل بیدار
ختم ست سخن ہدیۂ تسلیم و درودم 
از بہر نبی سید کونین شفیعم

তাঁর লিখিত আরেকটি মোনাজাত
مناجات احمد ببارگاہ رب صمد
الہی تیرے درکی جسہہ سائی کا میں عادی ہوں
گناہوں میں ہوں ڈوبا رات ودن رحمت کا راجی ہوں
سہارا کچھ نہیں میرا بجز تیری عنایت کے
الہی رحم کر مجھ پر گنہگاری کا شاکی ہوں
ہوئی ہے عمر ضائع بس کسالت اور حماقت میں
عبادت ہے نہ طاعت بلکہ خواہش کا پجاری ہوں
سمندر میں چلی کشتی یہ موجوں کا تلاطم ہے
نہ ساحل رونما ہے توشۂ رہ سے بھی عاری ہوں
تڑپتا ہوں ہلاکت سے نہ ساحل ہے نہ یاراں ہے
خدایا میرے رہبر ہو ہدایت کا بھکاری ہوں
خدا توفیق دے مجھکو عبادت با حلاوت کی
زبان و قلب پر ہر دم ترے اذکار جاری ہو
جھلک ہے نور کی تیرے جدھر دیکھوں جہاں دیکھوں
تہی دستان قسمت میں نہ گن مجھکو کہ ساعی ہوں
بزرگی کی نہیں خواہش یہی ہے آرزو دل کی
نہ کمترجانوں میں مجھ سے کسی کو سب سے خاکی ہوں
تری رحمت سے لاہوتی عجائب مجھکو دکھلا دے
مٹوں ان میں خودی نہ رہے فنائیت میں باقی ہوں
لطائف کو منور کر جلاکر نور عرفاں یو
جلا دل کو محبت میں کہ میں تو اس سے عاری ہوں
دو گیتی میں رضا تیری ہی مقصود و امانی ہے
ہے جنت اسلئے مطلب کہ واں تجھ سے ملاقی ہوں
تو خالق ہے تو مالک ہے تورب العالمیں بھی ہے
سدا مجھکو تمنا ہے ہے ترے در کا مناجی ہوں
بزرگی کی سجاوٹ تو بزرگوں کوہی زیبا ہے
مجھے ڈر ہے مخاوف سے کہ کیوں کران سے ناجی ہوں
خدا یا بخش دے میری غباوت کے قصوروں کو
منزہ  کرلے مجھکو سب گناہوں سے کہ عاصی ہوں
مرے ماں باپ و استاذو مشائخ پر کرم فرما
مرے یاروں کو تو بخشے طلبگار معافی ہوں
بہت امید ہے سالار امت کی شفاعت کی
عنایات خصوصی کا ہوں سائل گرچہ عامی ہوں
درود بے عدد ان پر سلام بیکراں میرا
ہوراضی آل او ر اصحاب سے وہ تجھ سے راضی ہوں
(مطبوعۂ انوار احمدی)

হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)-এর জীবনী গ্রন্থের উপর অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার বর্তমান মহাপরিচালক হযরতুল আল্লাম মুফতী আব্দুল হালীম বোখারী সাহেব (দা.বা.) এর লিখিত নুকতা বিহীন উর্দু কসীদা।
کلام معری در سلسلۂ رسالۂ محلّٰی
مسطورہ در رحلۂ ہادی کامل، سرور اکامل، علامۂ دہر،
ہمہام عصر امام احمد رحمہ اللہ الصمد، واوصلہ دار السلام مع الصلحاء الکرام

(از علامہ، مولانا محمد عبد الحلیم عبد الغنی البخاری دامت برکاتہم)

کمال احمدی کا ہے رسالہ 
لکھائی اسکی کار لامحالہ
ہوا درد و الم کا اس سے درماں 
سرور روح کا ہے عمدہ ساماں
امام کاملاں علامہ احمد 
ہواہے راہیٔ درگاہ سرمد
ملے اس دم کہاں ممدوح اکرم 
رسالہ ہے مداوا دل کا ہردم
مساعی عمر کی آدھی صدی کی 
کہ لوگوں کو ملے علم سماوی
ہٹاہے دار والا سے مکرم 
ہوا معمار معہد کا وہ ہمدم
ہوا معمورۂ گمراہ معمور 
ہوئے اعداد لا محدود مسحور
مسلم اک ولی ہردم رہاہے 
گروہ واصلاں سے وہ سواہے
علوم وحی کا اعلی محاور 
رہا علم مسائل  کا وہ ماہر
وہ اسرار کلام اللہ کا حاوی 
علوم احمدیؑ کا وہ طحاوی
حِکم کا وہ ولی اللہ دوراں
وہ عطار دلوک راہ رحماں
اسی کی سادگی کس سے ادا ہو
کلام محکم اس کا کس سے واہو
رسالہ ہے اسی کے سارے احوال 
لکھائی اسکی ہے مدرار و سلسال
ولد مرحوم کا اس کا محرر 
وہ  والد کی محامد کا مصور
اسی کے دوسرے سارے رسائل 
علوم لوح اطہر کے وسائل
ہو سہم کل ملاحد اس کا مرسام 
لکھائی رد کل اعدائے اسلام
دعا مملوک مولی الحلم کی ہے 
محرر کو الہی حوصلہ دے
عطا کر اس کو اک عمر مطول 
ادا اس سے ہو کردار اور اکمل





(বি·দ্র· লেখাটি সম্পাদনার দাবি রাখে ৷ তাই প্রিন্ট উপযোগী নয় ৷ লেখক ৷)