বৃহস্পতিবার, ২৬ মে, ২০২২

আল্লামা আহমদ ( ইমাম সাহেব হুজুর ) রহ·

হযরতুল আল্লাম মাওলানা আহমদ [ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)]


প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, প্রথম শায়খুল হাদীস ও সদরুল মুদাররেসীন আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম।


-মাওলানা রিজওয়ান রফীক জমীরাবাদী


বংশপরিক্রমা :


শায়খুল হাদীস হযরত আল্লামা মাওলানা আহমদ (রহ.) ইবনে কারী শমসের আলী মিয়াজী (রহ.) ইবনে জিন্নাত আলী দরবেশ (রহ.) ইবনে হারুন মিয়া (রহ.) ইবনে শহর আলী (রহ.)। এভাবে শেখ মুহাম্মদ আমীন বেপারী (রহ.)-এর সাথে মিলিত হন। যিনি অন্য তিন ব্যক্তি মুহাম্মদ জামাল, মুহাম্মদ বতিল, মুহাম্মদ ছফীরসহ চট্টগ্রাম সদর হতে চার মাইল দূরে মোহরা গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। তাঁদের আদি বাস ছিল প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁ। তাঁর পূর্বপুরুষদের মধ্যে অনেক ওলী, বুজুর্গ এবং বীর ব্যক্তিবর্গ ছিলেন।


জন্ম ও শৈশব :

হযরত মাওলানা আহমদ (রহ.) (প্রকাশ ইমাম সাহেব হুজুর) ১২৬৯ মগী মোতাবেক ১৩২৪ হিজরী, ১৯০৫ ইং সালে চট্টগ্রাম জেলার পাঁচলাইশ বর্তমান চান্দগাঁও থানাধীন মোহরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।


শিক্ষা :

১৩৩৫ হিজরীতে তিনি ১১ বছরের কিশোর থাকাকালে একদিন হাটহাজারী মঈনুল ইসলাম মাদরাসার বার্ষিক সভায় যাওয়ার জন্য আগ্রহী হন। সেকালে কোনো গাড়ি-ঘোড়া বা যানবাহন ছিল না। তাঁকে অবশ্যই ১২ মাইল পথ হেঁটে যেতে হবে। তাই তাঁর আম্মাজান তাঁকে যেতে বারণ করলেন। কিন্তু তাঁর গভীর আগ্রহ দেখে অগত্যা তাঁকে অনুমতি দিলেন। তিনি যথাসময় মাদরাসায় উপস্থিত হয়ে মাদরাসার ছাত্রদের চালচলন, সুমধুর কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াত, চতুর্দিকে খোদায়ী ইলমের বহমান প্র¯্রবন দেখে মুগ্ধ-বিমোহিত হয়ে পড়েন। বাড়িতে এসে মাদরাসায় লেখাপড়া করার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অনুকূল সাড়া পেলেন না। একসময় পরিবারের সদস্যগণ তাঁর গভীর আগ্রহ দেখে তাঁকে মাদরাসায় পড়ার অনুমতি দেন। তখন তিনি হাটহাজারী মাদরাসায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ভর্তির ছয় মাস অতিবাহিত হতেই তিনি কঠিন রোগে আক্রান্ত অবস্থায় অপারগ হয়ে মাদরাসা থেকে বাড়িতে ফিরে আসেন।

একদা এ দেশের অন্যতম শীর্ষ ওলিয়ে কামেল আল-জামিআতুল ইসলামিয়া আরবিয়া জিরির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক হযরত মাওলানা আহমদ হাসান সাহেব (রহ.) ওয়াজ উপলক্ষে মোহরা গ্রামে গমন করেন। তিনি হযরত ইমাম সাহেব (রহ.)-এর আচার-আচরণ ও চরিত্র মাধুর্য দেখে তাঁকে জিরি মাদরাসায় অধ্যয়ন করার পরামর্শ দেন। হযরত ইমাম সাহেব হুজুর এই আহŸান পেয়ে ১৩৩৭ হিজরী সনে জিরি মাদরাসায় ভর্তি হয়ে অধ্যয়ন আরম্ভ করেন। তিনি ছিলেন তীক্ষè মেধাসম্পন্ন ও ধীশক্তির অধিকারী। তাই তাঁর পাঠ্যাবস্থায় মাদরাসার ছাত্ররা বিভিন্ন জটিল ও কঠিন কিতাবাদি বোঝার জন্য তাঁর শরণাপন্ন হতো।

জিরি মাদরাসায় তিনি সিহাহ সিত্তার কিতাবসমূহ যুগশ্রেষ্ঠ শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াদুদ (রহ.) এবং ইলমে কিরাতের সনদ হযরত কারী আব্দুল মজীদ (রহ.) হতে লাভ করেন। হযরত ইমাম সাহেব (রহ.) ১৩৪৭ হিজরী সনে দাওরায়ে হাদীসের সমাপনী পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন।


ছাত্র জমানায় বন্ধুত্বের চিরঞ্জীব নিদর্শন :

হযরত ইমাম সাহেব হুজুর যখন জিরি মাদরাসায় দাওরায়ে হাদীসের ছাত্র সেই বছরই জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হযরত আল্লামা মুফতী আজিজুল হক (রহ.) দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে জিরি মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তাঁরা দুজন যেমন হামআসর তথা সমসাময়িক ছিলেন, তেমনি ছাত্র জমানা থেকেই পরস্পর বন্ধু ছিলেন। তাঁদের এই আন্তরিক বন্ধুত্বের চিরঞ্জীব ফসল ছিল আল-জামিয়া পটিয়াসহ এ দেশে বহুবিদ দ্বীনি খিদমাত। ছাত্রাবস্থা থেকেই তাঁরা উভয়ই যেমন সুতীক্ষè মেধার অধিকারী, পরিশ্রমী, কর্মঠ, চৌকস এবং বিচক্ষণ ছিলেন, তেমনি আধ্যাত্মিকতার প্রতি তাঁদের অতি মাত্রায় ঝোঁক ছিল। পরস্পর থেকে ইলমী ও দ্বীনি বিষয়ে ইস্তিফাদা করতেন। বিশেষ করে হযরত মুফতী আজিজুল হক (রহ.) যেহেতু সিনিয়র ছিলেন হযরত ইমাম সাহেব হুজুর তাঁকে উস্তাদের মর্যাদা দিতেন। আবার বন্ধুসুলভ সব পরামর্শ পরস্পর ভাগাভাগি করতেন। হযরত মুফতী আজিজুল হক (রহ.)-এর স্পষ্ট বক্তব্যে এ কথার প্রমাণ মিলে যে আল-জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠা, অস্তিত্ব এবং বেড়ে ওঠার মাঝে যেমন ছিল বড়দের পরামর্শ এবং দু’আর বরকত, তেমনি তাঁরা দুজনের আন্তরিক বন্ধুত্ব, মিল-মোবাহŸত, পরস্পর শ্রদ্ধাবোধ এবং পরামর্শই ছিল এর মূল উৎস। হযরত মুফতী আজিজুল হক (রহ.)-এর বক্তব্যের সামান্য বর্ণনা সামনে আসছে। এটিকে তাঁদের বন্ধুত্বের চিরঞ্জীব নিদর্শনও বলা যেতে পারে। ছাত্র জমানা থেকে তাঁদের শেষ অন্তিম শয্যা পর্যন্ত পরস্পর আন্তরিক মিল-মোহাব্বত, স্নেহ-শ্রদ্ধাবোধ, মায়া-মমতা, সহযোগিতা, অন্তরের টান একটি নজিরবিহীন বাস্তবতা। তাঁদের জীবনালেখ্যের পরতে পরতে এর বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায়। যা সকলের, বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্মের জন্য একটি শিক্ষণীয় ও আমলযোগ্য অধ্যায়।


উচ্চশিক্ষা ও ভারত সফর :

হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.) সুদীর্ঘ ১০ বছর কাল জিরি মাদরাসায় কৃতিত্বের সাথে অধ্যয়ন করার পর আত্মীয়-স্বজন ও নিজ সম্মানিত উস্তাদগণের দু’আ নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত বিদ্যাপীঠ ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দে গমন করেন। ১৩৪৭ হিজরী সনে শাওয়াল মাসে দেওবন্দের সাহিত্য বিশারদ স্বনামধন্য উস্তাদ হযরত মাওলানা এজাজ আলী (রহ.)-এর নিকট জামাআতে উলা (মিশকাত) শ্রেণির কিতাবাদির ভর্তি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। সেখানকার নিয়মানুসারে ভর্তি এবং থাকা-খাওয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা হয়ে যায়। এখানে তিনি আল্লামা ইবরাহীম বলিয়াবী (রহ.), মাওলানা রাসূল খান (রহ.), মুফতী মুহাম্মদ শফী (রহ.), মাওলানা নবী হাসান (রহ.) প্রমুখ হতে উসূলে ফিকহ, তর্ক বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান, দর্শন ইত্যাদি শাস্ত্রের উচ্চতর কিতাবাদি পড়েন এবং হযরত মাওলানা সৈয়দ হুসাইন আহমদ (রহ.) হতে যদিও যথারীতি হাদীসের কিতাব পাঠ করা সুযোগ হয়নি, তথাপি মাঝেমধ্যে এসে তাঁর হাদীসের দরসে বসতেন। এখানে এক বছর শিক্ষা গ্রহণ করে পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাস করেন। এরপর জিরি মাদরাসার মুহাদ্দিস সাহেব (রহ.)-এর পরামর্শ এবং নিজ আকাক্সক্ষায় তিনি মনস্থ করলেন যে দাওরায়ে হাদীসের কিতাবগুলো উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস হযরত আল্লামা মাওলানা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি (রহ.)-এর নিকট অধ্যয়ন করবেন। এতদুদ্দেশ্যে ১৩৪৮ হিজরী সনে তিনি ডাবিলের উদ্দেশে রওনা হন। সেখানে তিনি যথারীতি ভর্তি হয়ে হাদীসের বিখ্যাত গ্রন্থ বোখারী শরীফ হযরত আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি (রহ.) হতে এবং মুসলিম শরীফ ও তিরমিযী শরীফ বিখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা শিব্বীর আহমদ উসমানী (রহ.) হতে এবং মাওলানা সিরাজ আহমদ সাহেব (রহ.) হতে আবু দাউদ ও নাসাঈ শরীফ অধ্যয়ন করার সৌভাগ্য অর্জন করেন।


দ্বিতীয়বার ভারত সফর ও হযরত থানভী (রহ.)-এর সাথে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক :

বাড়ি ফিরে এসে তিনি কোরআন মজীদ হিফজের পুনরাবৃত্তি ও ভারতের শ্রেষ্ঠ সাধক হাকীমূল উম্মত হযরত আল্লামা আশরাফ আলী থানভী (রহ.)-এর দীক্ষা গ্রহণ এবং দেওবন্দ ও ডাবিলে তাঁর শিক্ষকদের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে পুনরায় ভারত সফরের মনস্থ করেন। এর ভেতর তিনি মাতার পক্ষ থেকে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য আদিষ্ট হন এবং বিয়ে করেন। দুই মাস পর ১৩৪৯ হিজরী সনে পুনরায় ভারত সফর করেন। দেওবন্দে গিয়ে হিফজের পুনরাবৃত্তি করেন এবং সেখান থেকে হযরত থানভী (রহ.)-এর সাথে পত্রযোগাযোগ বজায় রাখেন। একবার হযরত থানভী (রহ.) তাঁর পত্রের উত্তর লেখেন যে যখনই তোমার ইচ্ছা হয়, চলে এসো। কিন্তু অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব যেন বিচ্যুত না হয়। এরপর তিনি থানাভন গিয়ে হযরত থানভী (রহ.)-এর সুহবতে থেকে আধ্যাত্মিক দীক্ষা নেন। তিন মাস সেখানে অবস্থান করে আধ্যাত্মিক জগতের বহু উচ্চস্তর পার করেন। একপর্যায়ে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে হযরত থানভী (রহ.)-এর নির্দেশে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। রোগ সামান্য উপশম হওয়ার পর তিনি মহল্লার মসজিদে খতমে তারাবীহ পড়ান।


অধ্যাপনা :

১৩৪৭ হিজরী সনের শাওয়াল মাসে তিনি জিরি মাদরাসায় শিক্ষকতার কাজে নিয়োজিত হন। এখানে পাঁচ বছর যাবৎ দক্ষতার সাথে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কিতাবের দরস দেন এবং গ্রন্থাগারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর তিন বছর রাঙ্গুনিয়া থানাস্থ শরফভাটা মাদরাসায় অধ্যাপনা কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এখানে তিনি পটিয়ায় একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার সুসংবাদ পান স্বপ্নে নিজ শায়খ হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন (রহ.)-এর পক্ষ থেকে। এরপর হযরত মুফতী আজিজুল হক (রহ.)-এর প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনা পান এ ব্যাপারে।


আল-জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাকাজে যাঁর নাম সর্বপ্রথম :

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া প্রতিষ্ঠায় হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)-এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। এটি তাঁর জীবনে দ্বীনি খিদমাতের একটি বিশাল অধ্যায়। যেকোনো প্রতিষ্ঠান আপন স্বকীয়তা নিয়ে বড় হয়ে উঠলে তাঁর প্রতি বিভিন্ন প্রকার কুদৃষ্টি পতিত হওয়া স্বাভাবিক একটি বিষয়। যার কারণে সেরূপ প্রতিষ্ঠানকে অপ্রীতিকর পরিস্থিতিরও শিকার হতে হয় অনেক সময়। অবদান নিয়েও বিভিন্ন কথা ওঠে। আবার অনেকের মাঝে দখল প্রবণতাও দেখা দেয়। জামিয়া পটিয়াও এরূপ বিভিন্ন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শিকার হয় শুরু থেকেই। এই প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রতিপক্ষের আঘাত তো সব সময় ছিলই, নিজেদের পরস্পর বিভ্রান্তিরও শিকার হতে হয় এই জামিয়াকে। এসব কারণে জামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক কুতুবে আলম হযরত আল্লামা মুফতী আজিজুল হক (রহ.) স্পষ্ট ভাষায় জামিয়া পটিয়ার দীর্ঘ ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে যান। এর গোড়াপত্তন কিভাবে হয়, কিভাবে বেড়ে ওঠে, মুরব্বিদের মধ্যে কার কার পরামর্শ ছিল, কার প্রত্যক্ষ মেহনত ও কর্মসম্পাদনে জামিয়ার অস্তিত্ব, স্বয়ং নিজের ভূমিকা কী ছিলÑসব বিষয়ই তাঁর লেখাতে উঠে আসে। হযরত মুফতী আজিজুল হক (রহ.)-এর এই দস্তাবেজ থেকেও তাঁর মহান ব্যক্তিত্ব, অকল্পনীয় আধ্যাত্মিকতা, যুগশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকতা, শায়খের প্রতি অনুরাগ, পরম ইখলাস এবং তাকওয়ার সর্বোচ্চ শিখরে অবস্থান করার বিষয়টি ফুটে ওঠে। তিনি দস্তাবেজটি এমনভাবে তৈরি করেছেন যে কিয়ামত পর্যন্ত এ বিষয় নিয়ে না কারো বিভ্রান্তি, সংশয় ও সন্দেহ পোষণের সুযোগ থাকতে পারে, না কারো ব্যাখ্যার অবকাশ থাকে। তাঁর দীর্ঘ দস্তাবেজ পাঠে এ কথা সহজে অনুমান করা যায় যে হযরত মুফতী আজিজুল হক সাহেব (রহ.)-এর সরাসরি দিকনির্দেশনা এবং হযরত মাওলানা আহমদ ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)-এর প্রত্যক্ষ মেহনত ও কর্মসম্পাদনে জামিয়া পটিয়ার মূল অস্তিত্ব এবং বেড়ে ওঠা। এর যাবতীয় রাজ তাঁদের দুজনের মধ্যেই সন্নিহিত ছিল। মাদরাসা গড়ার সরাসরি পরামর্শ ও নির্দেশদাতা ছিলেন উভয়ের পীর শায়খুল মাশায়েখ হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন সাহেব (রহ.)। তাঁর কাছ থেকে নির্দেশপ্রাপ্ত ছিলেন তিন ব্যক্তিÑহযরত মাওলানা ইস্কান্দার (রহ.), হযরত মাওলানা মুফতী আজিজুল হক (রহ.) এবং হযরত মাওলানা আহমদ ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)। (হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.)-এর ভাষ্য মতে, হযরত ইমাম সাহেব এই নির্দেশ পেয়েছেন স্বপ্নযোগে।) হযরত মাওলানা ইস্কান্দার সাহেব (রহ.) বার্ধক্যজনিত কারণে জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাকাজে অংশ নিতে পারেননি। পটিয়ায় এরূপ একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জন্য সব সময় ফিকিরমন্দ ছিলেন উভয়ের সর্বাধিক মুহাসিন ও উস্তাদ জিরি মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হযরত মাওলানা আহমদ হাসান (রহ.)। জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হযরত মুফতী আজিজুল হক (রহ.) তাঁর জীবদ্দশায় জামিয়া পটিয়া নিয়ে বিভিন্নজনের বিভিন্ন দাবি ও ভ্রান্ত প্রচারের জবাব এবং আগামীতে যেন এ বিষয়ে নিয়ে কোনো প্রকার ভ্রান্তির স্বীকার হতে না হয়, সেজন্যই মূলত নিজ তত্ত¡াবধানে জামিয়া পটিয়ার দীর্ঘ ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে যান। জামিয়ার প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে হযরত ইমাম সাহেব হুজুর সম্পর্কে মুফতী সাহেব (রহ.) যে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন, তা এখানে ব্যক্ত করা হলো।

অতঃপর হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) লেখেন :

لیکن قصبہ پٹیہ کے ماحول کی ہدایت اور وہاں دینی درسگاہ قائم کرنیکی خدمت ان حضرات کے برگزیدہ ہاتھو سے انجام نہ پا کر انکے غلاموں کے ہاتھوں سے انجام پانا مقدر الہی تھا لہذا انکا نخل تمنا انکی عملی زندگی میں بارآور نہ ہو ا جب ان حضرات میں سے اکثر واصل الی اللہ ہوچکے تو حضرت مولانا ضمیر الدین نے جو ان نفوس قدسیہ میں شیخ المشائخ مانے جاتے تھے اپنی زندگی کے دور اخیر میں مولانا اسکندر صاحب اور بندہ عزیز الحق کو پٹیہ میں مدرسہ قائم کرنیکی طرف متوجہ کیا، چنانچہ اس مبارک ارشارہ کی برکت سے کام کا سلسلہ اسطرح شروع ہوا کہ مولانا اسکندر صاحب بلا شرکت عملی اس خدمت کیطرف اپنی روحانی توجہ مبذول فرماتے رہے اور احقرعزیز الحق مدرسہ جیری میں مدرس تھا اور وہاں کی تدریس پر قائم رہتے ہوئے قصبہ پٹیہ میں مدرسہ قائم کرنیکی تدابیر میں مصروف رہا، اس خدمت میں عملی قدم اٹھانے والا اول شخص مولانا احمد صاحب مہروی ہیں جو فی الحال مدرسہ پٹیہ میں امام صاحب کے نام سے مشہور ہیں اور درس حدیث کا کام انجام دیتے ہیں۔ [یاد عزیز۱۷۰ انوار احمدی۱۰۳ ،تذکریہ عزیز وغیرہ)

কিন্তু পটিয়া এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাবাসীর হেদায়েত ও সেখানে দ্বীনি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার খিদমাত ওই সকল বুজুর্গানে দ্বীনের মাধ্যমে না হয়ে তাঁদের শিষ্যদের দ্বারা সম্পাদন করাই আল্লাহর ইচ্ছা ছিল। তাই তাঁদের আকাক্সক্ষা তাঁদের জীবিত অবস্থায় পূর্ণ হয়নি। ইত্যবসরে উক্ত বুজুর্গানে দ্বীনের মধ্যে অনেকে ইন্তেকাল করেছেন। অতঃপর একদা চট্টগ্রামের ক্ষণজন্মা কৃতি সন্তান, ওলীকুল শিরোমণি হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন সাহেব (১২৯৬-১৩৫৯) জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হযরত মাওলানা ইস্কান্দার সাহেব (রহ.) ও আমাকে [মুফতী আজিজুল হক (রহ.)] এই মহান গুরুদায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসার আহŸান জানান। সুতরাং হযরতের মুবারক ইঙ্গিতে উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাবর্ষ এভাবে সূচিত হয়। মাওলানা ইস্কান্দার সাহেব প্রত্যক্ষভাবে এ কাজে অংশগ্রহণ না করলেও রূহানী তাওয়াজ্জুহ নিবেদন করতে থাকেন। আমি অধম আজিজুল হক তখন জিরি মাদরাসার শিক্ষক ছিলাম। তাতে দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে পটিয়ায় মাদরাসা স্থাপনের প্রচেষ্টায় ছিলাম। এ কাজ সম্পাদনে সর্বপ্রথম প্রত্যক্ষ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণকারী ব্যক্তি হলেন মাওলানা আহমদ সাহেব মোহরবী। যিনি বর্তমানে ইমাম সাহেব নামে খ্যাত এবং পটিয়া মাদরাসায় হাদীসের শিক্ষাদানে নিয়োজিত আছেন। (ইয়াদে আযীয ১৭০, আনোয়ারে আহমদী, ১০২ পৃ.)

اور احقر عزیز الحق نے متعدد علماء کرام سے پٹیہ میں مدرسہ قائم کرنےکا تذکرہ اور اس خدمت میں مصروف ہونیکی درخواست کی لیکن کسی نے بھی ہمت نہیں کی، خود مدرسہ جیری میں مدرس تھا اور اپنے اساتذہ کے زیر سایہ مدرسہ جیری سے علیحدگی کی کوشش کی ان سے اجازت نہ ملنے کیوجہ سے خود اس خدمت کو انجام دینے میں مصروف ہونے سے معذور رہا حسن اتفاق سے مولانا احمد صاحب سے بندہ کی ملاقات ہوئی ان سے کہا کہ آپ پٹیہ میں ایک مدرسہ قائم کیجئے ، بندہ بھی معین کار رہیگا باوجودیکہ وہ پٹیہ کا باشندہ نہیں، نہ باشندگان پٹیہ سے انکی ادنی شناسائی ہے اور نہ مناسبت تھی، نہ انکووعظ ونصیحت کی عادت تھی نہ چندہ وغیرہ فراہم کرنیکی بظاہر کوئی معقول صورت تھی ان وجوہ سے میری گذارش بیجوڑ تھی، تاہم جبکہ میں نے درخواست پیش کی انہونے بلا تردد کہا کہ اگر آپ کہتے ہیں تو انشاء اللہ تعالی میں اس خدمت کیلئے تیار ہوں۔ ۔ [یاد عزیز۱۷۰ انوار احمدی۱۰۳ ،تذکریہ عزیز وغیرہ)

আমি [মুফতী আজিজুল হক (রহ.)] বিভিন্ন উলামায়ে কেরামের সাথে পটিয়ায় মাদরাসা স্থাপনের বিষয়টি আলোচনা করেছি এবং এ কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু কেউ এ কাজের জন্য সাহস করলেন না। আমি জিরি মাদরাসার শিক্ষক ছিলাম এবং তা থেকে অব্যাহতি নেওয়ার জন্য চেষ্টা করেও অব্যাহতি নিতে পারিনি। তাই এ খিদমাত আঞ্জাম দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। ঘটনাক্রমে মাওলানা আহমদ সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ হয়। তাঁকে বললাম, আপনি পটিয়ায় একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করুন, আমিও সহযোগিতা করব। মূলত তিনি (মাওলানা আহমদ) পটিয়ার অধিবাসী নন। পটিয়ার উক্ত এলাকার লোকদের সাথেও তিনি পরিচিত নন। তিনি ওয়াজ-নসীহত বা বক্তৃতায়ও অভ্যস্ত নন, চাঁদা ইত্যাদি সংগ্রহ করার মতো কোনো পরিবেশও ছিল না। এমতাবস্থায় আমার আহŸান ছিল একেবারেই অসামঞ্জস্য। তথাপি তাঁকে (ইমাম সাহেবকে) আমি এই অনুরোধ জানালে তিনি নির্দ্বিধায় বলে দিলেন, আপনি যখন বলছেন, ইনশাআল্লাহ আমি ওই খিদমাতের জন্য প্রস্তুত আছি।

জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর সাথে হযরত ইমাম সাহেব হুজুরের প্রথম কথা : 

হযরত মুফতী আজিজুল হক (রহ.) লেখেন :

اسکے بعد پھر شروع رمضان میں حضرت شیخ اور مولانا اسکندر صاحبؒ اور میں ہم تینوں شہر چاٹگام میں جمع ہوئے، پٹیہ میں مدرسہ کرنے کی تذکرہ کے سلسلے میں حضرت شیخ نے فرمایا کہ تم دونوں مل کر پٹیہ میں مدرسہ کا کام شروع کرو، عزیز الحق جوان آدمی ہے، سعی وکوشش اسکے ذمہ رہے گی اور مولانا اسکندر صاحب معذور شخص ہیں وہ مدرسہ میں اقامت گزیں رہینگے چونکہ اس نشست میں بات پوری نہو سکی اسلئے آغاز کار کی تشکیلیونہی رہ گئی۔

پھر سترہ رمضان کو ہم تینوں شہر چاٹگام میں دوبارہ جمع ہونے کی تجویز قرار پائی حسب تجویز میں تو تاریخ مقررہ پر حاضر ہوگیا لیکن مسلسل بارش کی وجہ سے دونوں حضرات تشریف نہ لا سکے میں دو دن تک شہر چاٹگام میں انتظار کرکے مکان لوٹ گیا، عید کے بعد مدرسہ جیری کے مہتمم صاحب نے میرے مکان پر تشریف لائے اور مجھ کو جیری جانے پر مجبور کیا اور یہ بھی فرمایا کہ میں ہاٹہزاری گیا تھا حضرت شیخ نے بھی مدرسہ جیری میں رہنے کا حکم فرمایا اور مجھے کچھ کہنے سننے نہیں دیا ، مجبورا جیری لے گیا جیری جانے کے بعد میں نے حضرت شیخ سے ملاقات کی حضرت شیخ نے فرمایا کہ مولانا احمد حسن صاحب مہتمم جیری بالکل بیقرار ہوگئے تو میں کیا کروں؟ خیر اسوقت جیری میں رہو، دیکھو پردۂ غیب سے کیا فیصلہ ہوتاہے، میں مدرسہ جیری میں مصروف درس و تدریس ہوگیا، ایک دن جمعرات مولانا احمد صاحب مہروی مدرسہ شرف بھاٹہ سے جیری آئے وہ اپنے مدرسہ کسی قدر دل برداشتہ ہوکر اپنے اساتذہ سے مشورہ کیلئےیہاں پر حاضر ہوئے تھے۔ اتفاق کی بات ہے کہ مدرسہ میں میرے سوا اور کوئی مدرس حاضر نہیں تھا میں بھی گھر جانیکی تیاری میں تھا میں نے ان سے کہا کہ آپ یہاں ٹھہر کرکیا کرینگے؟یہاں تو کوئی موجود نہیں اور میں بھی گھر جارہا ہوں میرے ساتھ چلئے، وہاں مشورہ کرینگے۔ ہم دونوں ساتھ چلے اور ایک طالبعلم مولوی طاہر ہولوی (مرحوم) ساتھ تھا چلتے چلتے راستہ میں علی عباس سوداگر کے مکان کے سامنے پہونچا، تو یکایک میں نے مولانا احمد صاحب سے کہا کہ کیا آپ پٹیہ میں مدرسہ قائم کرسکتے ہیں؟ انہوں نے بلاتردد جواب دیا کہ اگر آپ کا حکم ہوتو میں تیار ہوں، انکے جواب سے مجھے حیرت ہوئی اور دل میںیقین ساہو گیا کہ پٹیہ میں مدرسہ قائم ہونیکا وقت قریب آگیا، کیونکہ تردد کے سارے اسباب موجود ، پھر بھی مولانا احمد بلا تردد جواب کیوں دے رہے ہیں؟ حالانکہ نہ مولانا احمد صاحب پٹیہ کے باشندہ ہیں نہ ان کی آمدورفت وہاں ہے نہ کسی سے تعارف ہے اور نہ ہی اس وقت مولانا احمد صاحب کا لوگوں میں کچھ ایسا اثر ہے، پٹیہ میں کوئی مدرسہ بھی قائم نہیں، نہ مدرسہ کیلئے جگہ موجود اور نہ پٹیہ کے عوام اور علماء ہمارے ہمخیال ہیں بلکہ سب کے سب مخالف ہیں، انگریزی تعلیم کا نہایت زور ہے ان تمام وجوہات کے باوجود مولوی احمد صاحب نے جواب میں ہاں فرمایا واقعییہ حیرت کی بات ہے اور ایسا معلوم ہوتاہے کہ حق تعالی نے ان موانع کیطرف ان کو نظر اٹھانے نہیں دیا اور بے اختیاری طور پر ان کی زبان سے نکلوایا کہ میں تیار ہوں’’

অতঃপর রমজানের শুরুতে আমি, হযরত শায়খ এবং মাওলানা ইস্কান্দার সাহেবসহ আমরা তিনজন চট্টগ্রাম শহরে একত্রিত হলাম। পটিয়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে হযরত শায়খ বলেন, তোমরা দুজন মিলে পটিয়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠার কাজ আরম্ভ করো। আজিজুল হক উঠতি যুবক, কর্মসম্পাদনে চেষ্টা-মেহনত তাঁর দায়িত্বে থাকবে। মাওলানা ইস্কান্দার সাহেব মা’জুুর মানুষ, তিনি মাদরাসায় থাকবেন। এই বৈঠকে কথা পূর্ণ হয়নি। যার কারণে কাজ আরম্ভ করার বিষয়টি এমনিতেই রয়ে যায়।

অতঃপর ১৭ রমজান আমরা তিনজন পুনরায় একত্রিত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত মতে নির্দিষ্ট তারিখে চট্টগ্রাম শহরে উপস্থিত হই। কিন্তু মুষলধারে বৃষ্টির কারণে তাঁরা দুজন তাশরীফ আনতে পারেননি। দুই দিন পর্যন্ত আমি চট্টগ্রাম শহরে অপেক্ষা করার পর বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করি। ঈদের পর জিরি মাদরাসার মুহতামিম সাহেব আমাদের ঘরে তাশরীফ আনেন এবং আমাকে জিরি যাওয়ার জন্য বাধ্য করেন। তিনি বলেন, আমি হাটহাজারী গিয়েছিলাম, হযরত শায়খও আপনাকে জিরি মাদরাসায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আমাকে কিছু বলার সুযোগ দেননি। আমাকে জিরি নিয়ে গেছেন। জিরি যাওয়ার পর একসময় আমি শায়খের সাথে সাক্ষাৎ করি। শায়খ বলেন, জিরি মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আহমদ হাসান সাহেব খুব অস্থির হয়ে পড়েছেন। সুতরাং আমি কী করব? খায়র, এ অবস্থায় জিরিতে থাকো। দেখো, গায়েব থেকে আল্লাহ তা’আলার ফয়সালা কী হয়। এভাবে আমি জিরিতে দরস-তাদরীসে লেগে গেলাম। এক বৃহস্পতিবার মাওলানা আহমদ সাহেব মোহরবী শরফভাটা মাদরাসা থেকে জিরি আসেন। তিনি নিজ মাদরাসা থেকে আক্রান্ত মন নিয়ে উস্তাদদের কাছে কিছু পরামর্শের জন্যই এখানে এসেছেন। এমতাবস্থায় মাদরাসায় আমি ছাড়া কেউ উপস্থিত ছিল না। আমিও বাড়িতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। তাঁকে বললাম, আপনি এখানে অবস্থান করে কী করবেন? এখানে তো কেউ নেই। আমিও বাড়ি চলে যাচ্ছি। আমার সাথে চলেন, সেখানে পরামর্শ করব। আমরা দুজন চললাম। সাথে একজন ছাত্র ছিল। তার নাম মৌলভী আবু তাহের। চলতে চলতে আমরা আলী আব্বাস সওদাগরের দোকানের সামনে পৌঁছলাম। হঠাৎ আমি মাওলানা আহমদ সাহেবকে বললাম, আপনি কি পটিয়ায় একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন? তিনি কোনো চিন্তা করা ছাড়াই বলে দিলেন, আপনার যদি হুকুম হয় আমি প্রস্তুত আছি। তাঁর জবাবে আমি আশ্চর্য হলাম। অন্তরে প্রায় একীন হয়ে গেল যে পটিয়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠার সময় এখন অত্যাসন্ন। কেননা সংশয় ও ইতস্ততার সব ধরনের কারণ বিদ্যমান থাকা সত্তে¡ও মাওলানা আহমদ সাহেব কোনো চিন্তা করা ছাড়াই কেন এবং কিভাবে বলে দিলেন ‘আমি রাজি’! অথচ মাওলানা আহমদ সাহেব পটিয়ার বাসিন্দা নন। সেখানে তাঁর যাওয়া-আসাও নেই। কারো সাথে পরিচয়ও নেই। এখানকার জনসাধারণের মধ্যে মাওলানা আহমাদ সাহেবের তেমন প্রভাবও নেই। পটিয়ায় কোনো মাদরাসাও প্রতিষ্ঠিত নেই। না মাদরাসা স্থাপনের জন্য কোনো জায়গা আছে। পটিয়ার জনসাধারণ এবং আলেমগণও এক চিন্তাধারার নয়; বরং সবাই প্রতিপক্ষ। সাধারণ শিক্ষার প্রভাবই এখানে বেশি। এত সব অপ্রীতিকর কারণ বিদ্যমান থাকা সত্তে¡ও মাওলানা আহমদ সাহেব ‘হ্যাঁ’ বলেছেন। নিশ্চয়ই এটি আশ্চর্যের বিষয়। মনে হয়, আল্লাহ তা’আলা এত সব প্রতিবন্ধকতার প্রতি তাঁকে নজর দেওয়ার সুযোগ দেননি এবং অগত্যা তাঁর মুখ দিয়ে বের করে দিয়েছেন, ‘আমি প্রস্তুত আছি’। [তাযকেরায়ে জমীর (রহ.)]

অতঃপর লেখেন, পটিয়া থেকে আড়াই মাইল পশ্চিমে এক ভদ্র পরিবারের সুসন্তান আলেমে দ্বীন মৌলভী ঈসা সাহেব (রহ.)-কে এই খিদমাতের জন্য আহŸান জানানো হলো। তিনি উৎফুল্লচিত্তে বললেন, ইনশাআল্লাহ আমি প্রস্তুত আছি এবং এক বছরকাল বিনা বেতনে কাজ করব। অধিকন্তু মাওলানা আহমদ সাহেব (রহ.)-এর পানাহারের ব্যবস্থাও আমার বাড়িতে করব। এতদশ্রবণে মাওলানা আহমদ সাহেব (রহ.) বললেন, আমার যখন খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে গেল, আমিও বেতনের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত।

اسکے بعد لکھتے ہیں: ہم تینوں ملکر قصبہ پٹیہ پہنچ کر مرحوم مرلانا حمید الرحمن صاحب نامی ایک سال خوردہ متبع سنت عالم سے مشورہ کیلئے ملاقات کی مرحوم نے امجومنشی نامی ایک محب عالم وعلماء اور زندہ دل شخص کو مشورہ میں شریک کیا، منشی صاحب مذکورنے کوشش کرکے موجودہ مدرسہ کی دکھن جانب میں پری دیگی پار جہاں طوفاب علی منشی صاحب کا بااثر خاندان آباد ہے اس خاندان کے تعاون سے مدرسہ قائم کرنا طی کیا اور اگلے جمعہ کو طوفان علی منشی صاحب کی مسجد میں علماء وصلحاء کا ایک اجتماع ہونا اور بعد نماز جمعہ مدرسہ کی ابتدائی کارروائی عمل میں آنا قرار پایا۔

আমরা তিনজন [লেখক মুফতী আজিজুল হক (রহ.), মাওলানা আহমদ (রহ.), মাওলানা ঈসা সাহেব (রহ)] পটিয়া এসে মাওলানা হামিদুর রহমান নামক জনৈক বয়স্ক ও সুন্নাতের অনুসারী আলেমের সাথে পরামর্শ করার জন্য একত্রিত হলাম। তিনি উক্ত এলাকায় আমজু মুনশী নামক একজন যিন্দাদিল ও উলামাভক্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিকে পরামর্শে শরিক করলেন। মুনশী সাহেবের প্রচেষ্টায় স্থির করা হলো যে বর্তমানে মাদরাসাটি যে স্থানে অবস্থিত তার দক্ষিণে পরীদীঘির পাড়ে যেখানে তুফান আলী মুনশীর খান্দান রয়েছে ওই খান্দানের সহযোগিতায় মাদরাসা স্থাপন করা হবে। আগামী জুমু’আতে তুফান আলী মুনশীর মসজিদে উলামায়ে কেরামের একটি সভা অনুষ্ঠিত হওয়া এবং বাদ জুমু’আ মাদরাসার প্রাথমিক কার্যাদির সূচনা করার প্রস্তাব করা হলো।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, পরবর্তী শুক্রবার চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় আলেমগণ, বিশেষ করে জিরি মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও মহাপরিচালক মরহুম মাওলানা আহমদ হাসান সাহেব (রহ.) [মৃত ১৩৮৮ হি.] ও হাটহাজারী মাদরাসার স্বনামধন্য তৃতীয় প্রধান শিক্ষক মাওলানা ইয়াকুব সাহেব (রহ.)ও [১৩১৫-১৩৭৭] ছিলেন। তুফান আলী মুনশীর বাড়ির সম্মুখস্থ মসজিদে তাঁরা উপস্থিত হন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ভূমির স্বত্বাধিকারীগণ লোকভয়ে মাদরাসার জন্য জায়গা দেওয়ার প্রতিশ্রæতি রক্ষা করতে সক্ষম হলেন না। অগত্যা উক্ত মসজিদে মাদরাসার কাজ আরম্ভ করা হলো। বর্তমান জামিয়ার অনতিদূরে পূর্ব দিকে গোবিন্দরখিল গ্রামে মনু মিয়া দফাদার নামের একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন। জিরি মাদরাসা হতে উত্তীর্ণ নোয়াখালী নিবাসী কারী মুসলিম নামক একজন আলেম উক্ত দফাদার সাহেবের পরিচালনাধীন মক্তবের শিক্ষক ছিলেন। পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁরা ওই দিন মক্তবের ছাত্রদের তুফান আলী মুনশীর মসজিদে নিয়ে গিয়েছিলেন। জিরি মাদরাসার মুহতামিম সাহেবের নির্দেশে মাওলানা ইয়াকুব সাহেব ছাত্রদের যথারীতি খুতবা ইত্যাদি পাঠ করে সূরা ফাতিহার সবক দিলেন। অতঃপর সর্বসম্মতভাবে মাদরাসাটির নাম ‘কাসেমুল উলূম’ রাখা হলো। রাতে সকলেই বিষণœচিত্তে মাওলানা হামিদুর রহমান সাহেব (রহ.)-এর বাড়িতে সমবেত হলেন। সারা রাত শোকাভিভূত হয়ে সকলেই নির্ঘুম রাত যাপন করলেন। শেষ রাতে কারী মুসলিম সাহেব (রহ.) প্রস্তাব করলেন যে আমাদের সমস্যার বিষয়গুলো দফাদার সাহেবকে অবহিত করলে হয়তো তিনি এর কোনো সমাধান দিতে পারেন। এ কথা শুনে দফাদার সাহেবকে ডাকা হলো। তিনি এসে বললেন, আপাতত আমার বাড়ির সম্মুখস্থ মসজিদে মাদরাসার কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। তবে শর্ত হলো, কোনো অবস্থাতেই মাদরাসা আমার এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া যাবে না। এতে উপস্থিত সকলে যেন হারানো প্রাণ ফিরে পেলেন। সকলের মুখে হাসি ফুটল এবং বিপদসংকুল রজনী যেন উৎসবমুখর দিনে পরিণত হলো। মাওলানা আহমদ (ইমাম সাহেব) ও কারী মুসলিম সাহেবকে ওই কাজে নিয়োজিত করে সকলে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে চলে গেলেন। কিছুদিন পর মৌলভী ঈসা সাহেব (রহ.) ও জিরি নিবাসী মৌলভী আমজাদ সাহেবকে মাদরাসার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হলো। কিছুদিন পর্যন্ত দফাদারের বাড়ির মসজিদেই মাদরাসার কাজ চলল। বর্তমানে মাদরাসার উত্তর পাশে যে সকল দোকানঘর রয়েছে সেগুলোর একটি খালি কক্ষেও কিছুদিন মাদরাসার কাজ চলছিল। অতঃপর মনু মিয়া দফাদার সাহেবের শ্বশুরের নিকট হতে আড়াই গÐা জমি খরিদ করে উক্ত স্থানে প্রথমে একটি কুঁড়েঘর; অতঃপর ২৭ হাত লম্বা একটি মাটির ঘর নির্মাণ করা হয়। এ কাজে যে টাকা ঋণ করা হয়েছিল তা আমি পটিয়া আসার পর পরিশোধ করেছি।

এ পর্যন্ত মাদরাসার অধিকাংশ কাজকর্ম আমার অনুপস্থিতিতেই প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। সে সময় আমি জিরি মাদরাসায় অবস্থান করেছি এবং ছোট-বড় সকল কর্মকাÐে কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ প্রদান করেছি।

ইতিমধ্যে স্থানীয় কিছু আলেম, যাঁরা আমাদেরই মতাবলম্বী। দুঃখের বিষয়, তাঁরাই মাদরাসার ওপর নিজেদের প্রভাব ও আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টা চালান। এ কারণে জনাব মাওলানা আহমদ সাহেব (ইমাম সাহেব) মাদরাসার দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন। মাদরাসার ব্যাপারে তিনি যখন সম্পর্ক ছিন্ন করে দূরে অবস্থান করছিলেন, তখন আমিও দূরে অবস্থান করা সমীচীন মনে করলাম। ওই সময় ইমাম সাহেব আমাকে বলেছেন, আপনি পরামর্শ দান করলে আমি তাঁদের সব পরিকল্পনা প্রতিহত করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। উত্তরে আমি বলেছিলাম, কিছুদিন ধৈর্য ধরুন এবং নীরব ভূমিকা পালন করুন। দেখব, আমাদের বাদ দিয়ে তাঁরা উক্ত কাজে কতটা সফলতা অর্জন করতে পারেন? বিনা পরিশ্রমেই যদি আমাদের চাহিদা ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয় এবং মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে অত্যন্ত আনন্দেরই বিষয় হবে। তাঁরা ব্যর্থ হলে এবং মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় সমর্থ না হলে চিরদিনের জন্য তাঁরা পর্যুদস্ত হয়ে থাকবেন এবং ভবিষ্যতেও আমাদের কোনো কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার দুঃসাহস পাবেন না। সে সময় জিরি নিবাসী মাওলানা আব্দুল জলীল সাহেবকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত করা হলো।।

১৩৫৭ হিজরি সনে আমি [লেখক মুফতী আজিজুল হক (রহ.)] যখন জিরি মাদরাসা হতে অত্যন্ত বিষণœ হৃদয়ে পটিয়ার খিদমাতে সক্রিয় অংশ নিলাম তখন মাওলানা আব্দুল জলীল সাহেব, মৌলভী আমজাদ সাহেব, কারী মুসলিম সাহেব প্রমুখ অত্র মাদরাসার শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন। এ সময় আমি মাদরাসার প্রাক্তন নামের সাথে ‘জমীরিয়া’ শব্দ যোগ করলাম। এর কিছুদিন পর মাদরাসা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। কিন্তু আল্লাহর অপার রহমতে সেসব বাধা-বিপত্তির বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে যেতে বেশি বেগ পেতে হয়নি।

ইতিমধ্যে মাদরাসা পর পর চারজন শিক্ষকের পদ শূন্য হয়ে পড়ে। তাঁদের এ শূন্যতা পূরণার্থে আমি মহান রাব্বুল আলামীনের অশেষ রহমতের প্রত্যাশায় অধীর আগ্রহে দিন গুনছিলাম। এমতাবস্থায় কোনো চেষ্টা-তদবির ছাড়াই আল্লাহ পাকের বিশেষ মেহেরবানির নিদর্শনস্বরূপ শায়খুল মাশায়েখ মাওলানা জমীরুদ্দীন সাহেব (রহ.)-এর সুযোগ্য খলীফা মাওলানা হাফেজুর রহমান সাহেব এবং মাওলানা উবাউদুর রহমান সাহেব (রহ.) [মৃত ১৪০৪ হি.] মাদরাসার শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হলেন। প্রথমত, আর্থিক অবস্থা সচ্ছল ছিল না; কিন্তু পরে সে অভাব পূরণ হয়ে গেল। সে হিসেবে এটি মাদরাসার বিকাশের দ্বিতীয় যুগ। [এর বিস্তারিত বর্ণনা এয়াদে আযীয (দ্বিতীয় সংস্করণ) ১২৮-১৬৮ পৃষ্ঠা এবং আনোয়ারে আহমদী ১০০-১০৮ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য]।

হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) আরো লেখেন, ১৩৫৮ হিজরী সনে জিরি মাদরাসা হতে প্রত্যাবর্তনের জন্য আমি আদিষ্ট হই। বছর পূর্ণ করে রমজানের বন্ধের ১৮ দিন পূর্বে আমি ইস্তেফানামা দিই। এতদপূর্বে জিরি মাদরাসা থেকে বিদায় এবং পটিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠাসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এস্তেখারা করলে তাতে দেখলাম কেউ যেন আমার সামনে নি¤œ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন। এ বর্ণনার শেষ পর্যায়ে লেখেন, পটিয়া মাদরাসার মূল স্তম্ভ হলেন হযরত শায়খুল মাশায়েখ জমীরুদ্দীন (রহ.) এবং তার শাখা-প্রশাখা ও প্রতিষ্ঠাকার্য সব কিছুই তাঁর ফয়জ বরকতের দ্বারা হয়েছে। ১৩৫৭ হিজরী সনে হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন সাহেব (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী (রহ.)-কে অত্র মাদরাসার পৃষ্ঠপোষক বানানো হয়।

হযরত শায়খুল মাশায়েখ আমাকে জাগ্রত অবস্থায় এবং মাওলানা আহমদ সাহেবকে (ইমাম সাহেব হুজুর) স্বপ্নাবস্থায় পটিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠার প্রতি ধাবিত করেন। মাওলানা আহমদ সাহেব স্বপ্নে দেখেন, হযরত শায়খ একদা তীব্র স্বরে বলেন, তুমি পটিয়ায় গিয়ে মাদরাসার কাজ করো এবং শরফভাটা হতে চলে আসো।

একবার পটিয়ার কিছু লোক তাদের পক্ষ থেকে জনৈক ব্যক্তিকে মাদরাসার পরিচালক নিযুক্ত করে কিছু বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে বিলি করেন। বিজ্ঞাপন সম্পর্কে অবগত হলে হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন সাহেব (রহ.) বললেন, আমার জানা মতে পটিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠায় যাঁদের অবদান রয়েছে তাঁরা হচ্ছেন মাওলানা ইস্কান্দার সাহেব, মাওলানা আহমদ সাহেব মোহরবী (ইমাম সাহেব) ও মুফতী আজিজুল হক সাহেব (রহ.)। উক্ত ব্যক্তিবর্গ ব্যতীত আর কউকে আমি চিনি না। (তাযকারায়ে জমীর, ১৩৯, জামেয়া পটিয়া ১৪)


দাওরায়ে হাদীসের উদ্বোধন :

হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) কর্তৃক লিখিত বর্ণনার অনুবাদ :

নিজ অযোগ্যতা ও অন্যান্য কারণবশত কয়েক বছর যাবৎ সম্ভবত ১৩৬১ হিজরী সন হতে ১৩৬৫ হিজরী সন পর্যন্ত মাদরাসায় মিশকাত শরীফের শ্রেণি (জামাতে উলা) পর্যন্ত লেখাপড়া হতো। অনেক বন্ধু-বান্ধব বারবার আবেদন-নিবেদন করতে লাগলেন যে দাওরায়ে হাদীসের ক্লাস চালু করলে ভালো হবে। কারণ প্রতিবছর বেশ কিছুসংখ্যক ছাত্রকে মিশকাত শরীফ শেষ করে দাওরায়ে হাদীস পড়ার জন্য বিভিন্ন মাদরাসার দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। আমি মাদরাসার নানা অসুবিধার প্রতি লক্ষ করে অপেক্ষা করতে লাগলাম। ইত্যবসরে শোভনদÐী নিবাসী হাজী আমজু সাহেব মাদরাসায় সর্বপ্রথম বোখারী শরীফ দান করলেন। আমি বললাম, আমার মাদরাসায় হাদীস শরীফের শ্রেণি নেই। আপনি অন্য মাদরাসায় দান করুন। উত্তরে তিনি বললেন, আমার একান্ত ইচ্ছা এখানেই দেব। পর পর সিহাহ সিত্তার কয়েকটি কিতাব সংগৃহীত হলো। এরই মধ্যে একদিন আমি উপস্থিত শিক্ষকমÐলীর উদ্দেশে প্রস্তাব পেশ করলাম যে হাদীস শরীফের কিতাবগুলো এমনি পড়ে আছে, যদি আসরের নামাযের পর আমাদের মধ্যকার একজন কয়েকটি হাদীস পড়েন আর আমরা শ্রবণ করি তাহলে দাতাগণ এবং আমরা উভয়েই পুণ্যের অধিকারী হব। আমার এ প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এভাবে কিছুদিন চলার পর আবার বন্ধ হয়ে গেল।

মাদরাসা প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পর এক ব্যক্তি স্বপ্নে দেখলেন যে চরচাক্তাই মোজাহের উলূম মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা ইসমাঈল সাহেব (রহ.) পটিয়া মাদরাসায় এসে বলতে লাগলেন, এখানে হযরত মুহাম্মদ (সা.) হাদীসের পাঠদান করেছেন। আমরাও এখানে হাদীস পড়াব। এর মধ্যে এক রাতে আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম, আমার ওজু করতে বেশিক্ষণ সময় ব্যয় হয়ে যাচ্ছে এবং নামায পড়তে বিলম্ব হচ্ছে। উক্ত স্বপ্নের ব্যাখ্যা অন্তরে এরূপ উদিত হলো, নাহভ, সরফ ইত্যাদির জন্য বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। হাদীসের জামা’আত আরম্ভ হতে বিলম্ব হচ্ছে। অতঃপর একদিন আল্লামা ইবরাহীম বলিয়াভী (রহ.)-এর নিকট গিয়ে উক্ত স্বপ্ন বর্ণনা করলাম। শুনে তিনি বললেন, মাদরাসায় দাওরায়ে হাদীস আরম্ভ করো। আর বিলম্ব করো না। কিন্তু এ মহান দায়িত্ব গ্রহণে আমার আপারগতা লক্ষ করে তিনি বললেন, ভয়ের কিছু নেই, আমি গিয়ে দাওরায়ে হাদীসের উদ্বোধনী সবক পড়াব। অতঃপর এক শুভ দিনে-শুভক্ষণে তিনি পটিয়ায় তাশরীফ এনে ১০-১২ জন উপস্থিত ছাত্রকে ‘বোখারী শরীফের’ প্রথম সবক পড়ালেন এবং হযরত মাওলানা আহমদ সাহেব মোহরবী (ইমাম সাহেব) ও হযরত মাওলানা আমীর হোসাইন সাহেব (রহ.) (মীর সাহেব)-এর ওপর এই গুরুদায়িত্ব ন্যস্ত করলেন। আলহামদুলিল্লাহ আজ সুদীর্ঘ কাল যাবৎ তাঁরা উক্ত গুরুদায়িত্ব সুচারুরূপে আঞ্জাম দিয়ে নবী করীম (সা.)-এর অমূল্য হাদীস শাস্ত্রের জ্ঞান দ্বারা হাজার হাজার জ্ঞানপিপাসুর পিপাসা নিবারণ করে আসছেন।

হযরত মুফতী আজিজুল হক (রহ.) লিখিত মুনাজাতের একটি শ্লোক হলো নিম্নরূপ  :

ہو نظام مدرسہ زیرلوائے احمدی  حق تعالی کی ہدایت پیشوائے کارہو

এই চন্দের ব্যাখ্যা হযরত মাওলানা সুলতান যওক নদভী (দা.বা.) তাঁর লিখিত তাযকারয়ে আজীজে লেখেন :

لوائے احمدی: استاذنا مولانا احمد صاحب مہروی خلیفۂ اجل شیخ المشائخ ہیں، حضرت (مفتی صاحبؒ) جن دنوں جیری رہ کر پٹیہ میں مدرسہ قائم کرنیکی کوشش فرمارہے تھے ان دنوں حضرت امام صاحب حضرت سے پہلے پہنچ کر کام شروع کردیا تھا ، نصف صدی سے زائد مدت تک ناظم تعلیمات ، صدر المدرسین، شیخ الحدیث کے عہدہ پر فائز رہے اور صحیح بخاری شریف کا درس دیتے رہے (تذکرہ عزیز۲۶۳)

অর্থাৎ ‘লেওয়ায়ে আহমদী’ থেকে আমার উস্তাদ মাওলানা আহমদ মোহরবী সাহেব (রহ.) উদ্দেশ্য। যিনি শায়খুল মাশায়েখ (রহ.)-এর স্বনামধন্য খলীফা। যে সময় হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) জিরি মাদরাসায় অবস্থান করে পটিয়ায় মাদরাসা স্থাপনের চেষ্টায় রত ছিলেন, সে সময় হযরত ইমাম সাহেব হুজুর মুফতী সাহেব (রহ.)-এর পূর্বে এসে পটিয়াতে মাদাসা প্রতিষ্ঠার কাজ আরম্ভ করেন। তিনি অর্ধশতাব্দী থেকে বেশি শিক্ষা পরিচালক, সদরুল মুদাররেসীন এবং শায়খুল হাদীসের পদ অলংকৃত করেন। সহীহ বোখারী শরীফের দরস দিতে থাকেন। (তাযকিরায়ে আজীজ ২৬৩)

মোটকথা, আমাদের মুরব্বি যুগশ্রেষ্ঠ পীর-মাশায়েখ উলামায়ে কেরামের চোখের পানি, আন্তরিক দু’আ, ইখলাসপূর্ণ মেহনত, ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং অভাবিত তাকওয়ার মাধ্যমে পটিয়ায় এই প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তাঁদের কেমন ইখলাস, অনুরাগ এবং মেহনত ছিল তা আমাদের বুঝে আসা দূরের কথা, কল্পনা করাও আমাদের পক্ষে অসম্ভব। তবে এর প্রতিষ্ঠাকার্যের প্রারম্ভ থেকে শুরু করে সব কিছুর রাজ এবং দায়িত্ববোধ কুতুবে আলম হযরত মাওলানা মুফতী আজিজুল হক (রহ.) এবং হযরতুল আল্লাম মাওলানা আহমদ ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁদের এই ইখলাসপূর্ণ অক্লান্ত মেহনতের সামান্য উপঢৌকন দুনিয়াতেও দিয়েছেন এবং আখিরাতে সুউচ্চ মর্যাদায় ভূষিত করবেন। তাঁদের এসব মেহনত সদকায়ে জারিয়া হিসেবে তা কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে ইনশাআল্লাহ। দুনিয়াতে আল্লাহর দেওয়া নিয়ামতগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ নিয়ামত হলো, এই দুই মুরব্বির পরিবারে বর্তমানে সর্বশেষ প্রজন্ম পর্যন্ত সকলে আলেমে দ্বীন। এর মধ্যে অনেকে হাফেজে কোরআনও আছেন। আল্লাহ তা’আলা যেন এই ধারাবাহিকতা চিরস্থায়ী করেন। আমীন।


দ্বীনের জন্য হিজরত :

আল-জামিয়া পটিয়ার সেই প্রতিষ্ঠার দিন থেকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি অত্র জামিয়াতেই দ্বীনি খিদমাতে জীবন উৎসর্গ করেন। দ্বীনি খিদমাতের এই ধারাবাহিকতায় তিনি সপরিবারে পটিয়াতেই মুহাজির হন। এখানে স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন। আল্লাহ তা’আলার কারিশমা, জামিয়ার পটিয়ার জন্য নিজেদের জন্মস্থান ত্যাগ করে মুহাজির হয়েছেন দুই মহান ব্যক্তি। জামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক কুতুবে আলম হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী আজিজুল হক (রহ.) এবং জামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হযরত আল্লামা মাওলানা আহমদ ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)। তাঁরা দুটি পরিবার জন্মস্থানের মায়া এবং আত্মীয়-স্বজনের ¯েœহ-মমতা ত্যাগ করে দ্বীনের জন্য জামিয়া পটিয়ার পাশে স্থায়ী নিবাস গড়ে তুলেছেন। তাঁদের উভয়েরই জন্মস্থানে ঘরবাড়ি, সম্পদাদি এখনো বিদ্যমান। তাঁরা পটিয়ায় মুহাজির হলেও আজীবন নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত নিজেদের গ্রামে যাতায়াত করতেন। সেখানকার লোকজনের দ্বীনি অবস্থা বিবেচনায় তাঁদের হেদায়েতের জন্য ওয়াজ-নসীহত করতেন। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী প্রত্যেকের খবরাখবর নিতেন। সমাজে কোনো প্রকার ফেতনা ছড়ালে নিজেরা উপস্থিত হয়ে সেসবের প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতেন। অর্থাৎ দ্বীনি কাজ আঞ্জাম দেওয়ার জন্য সপরিবারে মুহাজির হলেও আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের হক আদায়ের ব্যাপারে তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত সচেতন।


জামিয়া পটিয়ায় তাঁর খিদমাত :

হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.) জামিয়া পটিয়ায় নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত প্রায় সব কিতাবেরই দরস দিয়েছেন। তিনি জামিয়ার শায়খুল হাদীস, সদরুল মুদাররেসীন, ফাতাওয়া বিভাগের বিশেষ উপদেষ্টা, শিক্ষা বিভাগী পরিচালক, দারুল ইকামা পরিচালক, মসজিদের ইমামতি ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৩৬৬ হিজরী সন জামিয়া পটিয়ায় দাওরায়ে হাদীস আরম্ভ করার দিন থেকে শুরু করে ১৪১৬ হিজরী তাঁর ইন্তিকাল পর্যন্ত একাধারে তিনি ৫০ বছর জামিয়ার শায়খুল হাদীস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং বোখারী শরীফের দরস প্রদান করেন। এই সময় কালে তিনি স্বইচ্ছায় বোখারী শরীফ প্রথম খন্ডের দরস দেওয়ার জন্য আরো কয়েকজন প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও কালজয়ী ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিয়েছেন। তাঁর বোখারী শরীফ প্রথম খন্ডের দরস দিয়েছেন। কিন্তু শায়খুল হাদীস একটি প্রাতিষ্ঠানিক পদ হওয়ায় জামিয়া পটিয়া তাঁকেই সবসময় শায়খুল হাদীস হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।


ইখলাসের অনন্য নিদর্শন:

সময়ের বিশ্বসেরা ইলমী ব্যক্তি ছিলেন খতীবে আজম হযরত আল্লামা মাওলানা সিদ্দিক আহমদ রহ.। তিনি জামিয়া পটিয়ায় বোখারী সানীর দরস দিতেন। একদা হযরত ইমাম সাহেব রহ. এর কাছে গিয়ে তিনি বলেন, ইমাম সাহেব হুজুর ! আপনি তো দীর্ঘদিন থেকে বোখারী আওয়ালের দরস দিচ্ছেন। আমার মন চাচ্ছে বোখারী আওয়াল পড়াব। হযরত ইমাম সাহেব হুজুর বললেন, মাশাআল্লাহ, কাল থেকে আপনি বোখারী আওয়াল পড়ান। আমি সানী পড়াব। আহ! কত সরল, কত মুখলিস এবং পদপদবীর প্রতি কতই না নির্লিপ্ত ছিলেন আমাদের আকাবির আসলাফগণ। তাদের পরস্পরের মধ্যে  কেমন অকল্পনীয় হৃদ্যতা ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধাবোধ ছিল। হযরত খতীবে আজম রহ. সরাসরি বলছেন, ইমাম সাহেব হুজুর তৎক্ষণাত বোখারী আওয়াল ছেড়ে দিলেন। বর্তমান পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব তাদের কারামাত ছাড়া কিছুই মন্তব্য করা যায় না। 


উপরেও বলা হয়েছে জামিয়া পটিয়ার শুরু শেষ সব রাজ হযরত মুফতী সাহেব রহ. ও হযরত ইমাম সাহেব রহ. এই দুই জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তাদের পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত হল জামিয়ার দ্বিতীয় মুহতামিম হবেন হযরত হাজি ইউনুস রহ.। হযরত মুফতী সাহেব রহ. যখন হযরত হাজি  ইউনুস রহ.কে জামিয়া পটিয়ার পরবর্তি মুহতামিম ঘোষণা করলেন, হযরত হাজি সাহেব অত্যন্ত পেরেশান অবস্থান হযরত ইমাম সাহেব হুজুর রহ. এর কাছে এলেন। তিনি হযরত ইমাম সাহেব রহ.কে নিজের কিছু ওজর পেশ করতে চাচ্ছিলেন। হযরত  ইমাম সাহেব হুজুর তাঁকে তৎক্ষণাত বললেন, হাজি সাব! আপনি এতই পেরেশান হওয়ার কি আছে। মাদরাসা তো চালাব আমরা আপনি শুধু মুহতামিমী করবেন। আপনার কোনো সমস্যা হবে না ইনশাআল্লাহ। তাঁদের জন্য কোরবান হোক আমাদের জান, আমাদের আকাবিররা  এমনই ছিলেন।


আমি অধমের সাথে একদিন জামিয়া পটিয়ার মুফতী প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মুফতী ইবরাহীম রহ. এর সাহেবজাদা মাওলানা মুহাম্মদ এর সাথে দেখা হয়। তিনি আমাকে দেখে আবেগে বললেন কি না জানি না, বললেন পটিয়া মাদরাসায় আল্লামা যওক সাহেবকে রেখেছিলেন আপনার দাদা। আপনার দাদা ইমাম সাহেব হুজুর নিজ ছাত্রদের প্রতি কত শফীক ছিলেন! হযরত আল্লামা যওক সাহেবকে রাখার সিদ্ধান্ত হলে আপনার দাদা ওই দিনই আমাকে পাঠান তাঁকে নিয়ে আসতে। 


ছাত্রদের তাঁর শফকত এবং স্নেহের কথাতো প্রসিদ্ধই আছে। জামিয়া পটিয়ার সাবেক মহাপরিচালক বিখ্যাত আলেমে দ্বীন হযরত আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী রহ. হযরত ইমাম সাহেব রহ. এর এক স্মরণ সভায় ছাত্রদের প্রতি হযরত ইমাম সাহেব রহ. এর স্নেহের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, হুজুর একদিন আমার খানা বন্ধ করে দেন। আমি একথা জেনে হযরত ইমাম সাহেব হুজুর যখন সবকে আসলেন আমি তাঁর বাসায় চলে যাই। তাঁর আহলিয়াকে বললাম আমি হারুন। হুজুর আমাকে আজকে এখানে খানা খেতে বলেছেন। আমাদের মাতুল্য এই মহিয়সী আর কিছু জিজ্ঞেস করলেন না, ঘরে যা ছিল তা দিয়ে মেহমানদারী করলেন।  একদিন পর হযরত ইমাম সাহেব হুজুর জামিয়ার মসজিদে আমার এই কথাটা সবার সামনে বললেন। হাসলেন। রাগলেন না। আল্লামা হারুন ইসলামীবাদী বললেন, সেই দিনের তাঁর শফকত এবং স্নেহ দেখে আমি রীতিমত কেঁদে ফেললাম। স্মরণ সভায় তিনি এই বক্তব্য দেওয়ার সময়ও তাঁর নয়নযুগল অশ্রুসিক্ত হয়ে যায়।

হযরত ইমাম সাহেব রহ. এর ইখলাস, সরলতা, শফকত, স্নেহ, সহকর্মীদের প্রতি নিস্বার্থ মুহাব্বত সংক্রান্ত কয়েকটি ঘটনা আমাদের শিক্ষনীয় হিসেবে  উল্লেখ করলাম।


তাঁর ছাত্রগণ :

জিরি মাদরাসা ও জামিয়া পটিয়ায় মিলে তাঁর ছাত্রসংখ্যা হাজার হাজার। যার পরিসংখ্যান এই ছোট পরিসরে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। তাই এখানে কয়েকজন বিশিষ্ট ছাত্রের নাম উল্লেখ করা হলো। যাঁরা ফারেগ হওয়ার পর বড় বড় দ্বীনি খিদমাতে আত্মনিয়োজিত ছিলেন।


জিরি মাদরাসায় তাঁর বিশিষ্ট ছাত্রগণ :

১. হযরত আল্লামা মাওলানা আমীর হোসাইন [মীর সাহেব হুজুর (রহ.)]। (১৯১১-১৯৮৪ ইং) প্রাক্তন মুহাদ্দিস আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।

২. হযরত মাওলানা মুফতী নূরুল হক সাহেব (রহ.) (১৯১৮-১৯৮৭ ইং)। প্রাক্তন মুহতামিম জিরি মাদরাসা, চট্টগ্রাম।

৩. হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ ইবরাহীম সাহেব (রহ.) (ওফাত-১৪০০ হি.) প্রাক্তন মুহাদ্দিস ও মুফতী আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।

৪. হযরত মাওলানা ইসহাক গাজী সাহেব (রহ.) (১৩৩৬-...হি.) প্রাক্তন শায়খুল হাদীস আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম।

৫. হযরত মাওলানা আলী আহমদ বোয়ালভী সাহেব (রহ.) (১৯১১-...) প্রাক্তন মুহাদ্দিস ও নায়েবে মুহতামিম আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া, চট্টগ্রাম।

৬. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আলী সাহেব (রহ.) (ইন্তেকাল ১৪০৪ হি.) প্রাক্তন মুহাদ্দিস দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী।

৭. হযরত মাওলানা সাঈদ আহমদ সাহেব (রহ.)। প্রাক্তন শায়খুল হাদীস নাজিরহাট বড় মাদরাসা ও দারুল মাআরিফ, চট্টগ্রাম।

৮. হযরত মাওলানা বদীউর রহমান সাহেব (রহ.)। প্রাক্তন সিনিয়র শিক্ষা আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম।

৯. হযরত মাওলানা সালেহ আহমদ সাহেব (রহ.) মুহাজেরে মক্কী।


জামিয়া পটিয়ায় দাওরায়ে হাদীস আরম্ভ করার পূর্বের ছাত্রগণ :

১০. হযরত মাওলানা আইয়ূব সাহেব মাদার্শাহী, সাবেক শিক্ষক, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।

১১. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ জামাল সুপারিনটেনডেন্ট, মাদরাসা বাশিরিয়া, আলিয়া, স›দ্বীপ।

১২. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইসলাম সাহেব (রহ.) বিশিষ্ট মুবাল্লিগে ইসলাম, ভারত।


তাঁর নিকট বোখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ ইত্যাদি হাদীসের কিতাব পড়ে যাঁরা হাদীসের খিদমাত আঞ্জাম দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন :

১৩. হযরত মাওলানা হারুন ইসলামবাদী (রহ.), সাহেব মুহতামিম, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।

১৪. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভী সাহেব (দা.বা.), মুহতামিম, জামিয়া দারুল মাআরিফ, চট্টগ্রাম।

১৫. হযরত মাওলানা আনোয়ারুল আজীম সাহেব (রহ.) সাবেক মুহাদ্দিস, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।

১৬. হযরত মাওলানা লোকমান সাহেব (রহ.) সাবেক শিক্ষক, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।

১৭. হযরত মাওলানা সিদ্দিক আহমদ সাহেব (রহ.) সাবেক মুবাল্লিগ, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।

১৮. হযরত মাওলানা আখতার কামাল সাহেব, নায়েবে মুহতামিম, জামিয়া দারুসসুন্নাহ, হ্নিলা।

১৯. হযরত মাওলানা শফীক আহমদ সাহেব (রহ.) সাবেক মুহতামিম, জামিয়া ইসলামিয়া টেকনাফ, কক্সবাজার।

২০. হযরত মাওলানা সিদ্দীকুল্লাহ সাহেব (রহ.) সাবেক মুহাদ্দিস, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।

২১. হযরত মাওলানা তৈয়ব সাহেব, শায়খুল হাদীস ও মুহতামিম, জমীরিয়া কাসেমুল উলূম মাদরাসা, মলমাইন।

২২. হযরত মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান সাহেব, মুহাদ্দিস, জামিয়া উবাইদিয়া নানুপুর, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।

২৩. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ সাঈদ আহমদ, মুহতামিম, ঝাপুয়া মাদরাসা।

২৪. হযরত মাওলানা নযীরুল ইসলাম সাহেব (রহ.) সাবেক সিনিয়র শিক্ষক, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।

২৫. ড. মাওলানা মুহাম্মদ রশীদ আহমদ সাহেব, অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

২৬. হযরত মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস সাহেব, সাবেক মুহাদ্দিস, চারিয়া ও বোয়ালিয়া মাদরাসা।

২৭. হযরত মাওলানা কামালুদ্দীন সাহেব, মুহাজেরে, সৌদি আরব।

২৮. হযরত মাওলানা আব্দুল হক সাহেব, সাবেক মুহতামিম, চন্দ্রঘোনা মাদরাসা, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম।

২৯. হযরত মাওলানা আব্দুল বাকী সাহেব, প্রতিষ্ঠাতা, ভাঙ্গা মাদরাসা, ফরিদপুর।

৩০. হযরত মাওলানা খায়রুল আমীন সাহেব, মোহাজেরে মক্কী।

৩১. হযরত মাওলানা মাহবুবুর রহমান সাহেব (রহ.) প্রতিষ্ঠাতা, পরিচালক দোহাজারী মাদরাসা।

৩২. হযরত মাওলানা আবুল কাসেম সাহেব সিনিয়র শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া জিরি, পটিয়া, চট্টগ্রাম।

৩৩. হযরত মাওলানা হাবীবুল্লাহ সাহেব (রহ.) সাবেক উস্তাদ জামিয়া পটিয়া, সাবেক প্রধান শিক্ষক, ইসাপুর মাদরাসা।

৩৪. হযরত মাওলানা মুজাফফর আহমদ সাহেব (রহ.) সাবেক সিনিয়ার মুহাদ্দিস, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।

৩৫. হযরত মাওলানা আব্দুল্লাহ আনসারী সাহেব (রহ.) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, এশাআতুল উলূম মাদরাসা, মোহরা।

৩৬. হযরত মাওলানা আব্দুল মন্নান সাহেব, শোয়াবিলী, সাবেক শিক্ষক, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।

৩৭. হযরত মাওলানা ইদ্রিস সাহেব শোয়াবিলী, সাবেক মুহাদ্দিস জামিয়া দারুল মাআরিফ, চট্টগ্রাম।

৩৮. হযরত মাওলানা নুরুসসমদ সাহেব (রহ.), সাবেক পরিচালক, ঘরোকঘাটা মাদরাসা, মহেশখালী, কক্সবাজার।

৩৯. হযরত মাওলানা আইয়ুব সাহেব (রহ.), সাবেক শায়খুল হাদীস ও নাজেমে তালিমাত, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।

৪০. হযরত মাওলানা আব্দুল হালীম বোখারী সাহেব (দা.বা.) মুহতামিম, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।


আধ্যাত্মিক দীক্ষা :

১৯৪৯ ইং সালে দ্বিতীয়বার ভারত সফরকালীন হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.) থানাভনে হাকীমুল উম্মত হযরত আশরাফ আলী থানভী (রহ.)-এর সুহবতে তিন মাস অতিবাহিত করেন। আল্লাহ তা’আলার হেকমত সেখানে তিনি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে হযরত থানভী (রহ.)-এর আদেশক্রমে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরে এলেও তাঁর অন্তর থাকত থানাভনের দিকে। তিনি সব সময় হযরত থানভী (রহ.)-এর সাথে পত্র বিনিময় করতেন। হযরত থানভী (রহ.)-এর শেষ বয়স পর্যন্ত পত্রযোগাযোগের এই ধারা অব্যাহত ছিল। এর ভেতর বিভিন্ন অলৌকিক স্বপ্ন দেখে তিনি শায়খুল মাশায়েখ হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন সাহেবের হাতে বায়আত গ্রহণে মনন্থ করেন। তাঁর অবস্থাগুলো জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হযরত মুফতী আজিজুল হক (রহ.)-কে বলেন। হযরত মুফতী আজিজুল হক (রহ.) তাঁকে আপন শায়খ হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন (রহ.)-এর কাছে নিয়ে গিয়ে বায়আত গ্রহণ করান।

বায়আত গ্রহণার্থে হাটহাজারী যাওয়ার সময় হযরত মুফতী আজিজুল হক (রহ.) এবং রাউজান নিবাসী মাওলানা বদিউর রহমান সাহেব তাঁর সঙ্গী ছিলেন। নির্দিষ্ট সময়ে তথায় পৌঁছে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) ইমাম সাহেবের উদ্দেশ্য সম্পর্কে হযরত শায়খকে অবহিত করেন। তিনি আসরের নামাযের পর সাক্ষাতের সময় দেন। তাঁর নির্দেশিত সময়ে উপস্থিত হলে হযরত শায়খ তাঁকে বায়আত করান এবং করণীয়-বর্জনীয় বিষয়ের ওপর অঙ্গীকার নেন। সাথে কিছু দিকনির্দেশনা দেন। যেমনÑতিনি বলেন, হে আহমদ! তুমি কখনো শপথ করো না। নামাযে মাঝে মাঝে ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে।

হযরত শায়খের দরবার থেকে বাড়ি ফেরার পথে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) হযরত ইমাম সাহেব হুজুরকে বলেন, আজ আপনাকে হযরত নতুন কিছু কথা বলেছেন। যা কখনো বলতে শুনিনি। হযরত ইমাম সাহেব বলেন, আমি একবার কোনো কাজ না করার জন্য শপথ করেছিলাম; কিন্তু শপথ ভঙ্গ হয়ে যায়। এরূপ দীর্ঘদিন যাবৎ মনে আসত যে এতগুলো সহীহ হাদীসে ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পড়ার কথা রয়েছে অথচ হানাফী মাযহাব মতে তা পড়া নিষেধ। যদিও হানাফীগণ ওই সব হাদীসের তাবীল করেছেন। হযরত শায়খ নিশ্চয়ই আমার অবস্থা বুঝে ফেলেছেন।


খিলাফত লাভ : 

শায়খুল মাশায়েখ হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন সাহেব (রহ.) হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)-কে বায়আতের ১৮ মাসের মাথায় খিলাফত দানে ভূষিত করেন, যা বাস্তব ঘটনা নিম্নরূপ :

একদা হযরত মুফতী আজিজুল হক (রহ.) হাটহাজারী গিয়ে আপন শায়খের সাথে সাক্ষাৎ করলে হযরত বলেন, আমি তোমাকে এবং মাওলানা আহমদকে এজাজত প্রদান করলাম। অবশ্য তা এখন প্রকাশ করছি না। তোমরা আরো উন্নতির দিকে ধাবিত হও। তিনি পটিয়ায় এসে উক্ত সংবাদ হযরত ইমাম সাহেবকে শোনালেন। কিছুদিন পর হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) হজব্রত পালনার্থে সৌদি আরব গমন করবেন। এর জন্য প্রস্তুতি চলছিল। তাঁকে বিদায় জানাতে উলামায়ে কেরাম একত্রিত হয়েছেন গ্রামের বাড়ি পটিয়ার চরকানাইয়ে। বিদায়পূর্ব অনুষ্ঠানে হযরত ইমাম সাহেব (রহ.) তাঁর বক্তব্যে বলেন, শায়খুল মাশায়েখ হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন সাহেব হযরত মুফতী সাহেবকে এজাজত (খিলাফত) দিয়েছেন। অতঃপর হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) তাঁর বক্তব্যে বলেন, ইমাম সাহেব আপনাদের নিকট একটি কথা গোপন করেছেন। হযরত শায়খ আমার সঙ্গে তাঁকেও এজাজত দিয়েছেন। এমনকি হযরত (রহ.) কোনো কোনো মুরিদানকে হযরত ইমাম সাহেবের হাতে বায়আত গ্রহণের জন্যও বলেছেন।

১৩৫৭ হিজরী সনে শায়খুল মাশায়েখ (রহ.) হজের সফরে ছিলেন। তাঁর সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন হযরত মুফতী আজিজুল হক (রহ.) এবং হযরত মাওলানা হাজী ইউনুস সাহেব (রহ.)ও। পথিমধ্যে কলকাতা মুসাফিরখানা এবং মুম্বাই আবু সিদ্দীক মুসাফিরখানায় ৮ দিন অবস্থান করেন। একদিন হযরত শায়খুল মাশায়েখ ফজরের নামাযের পর উপস্থিত উলামায়ে কেরাম ও জনসাধারণের মজমায় বলেন, আমি মাওলানা আহমদ (ইমাম সাহেব)-কে এজাজত দিলাম। হযরত তাঁকে চার খান্দানের খিলাফত প্রদান করেন। তবে হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.) অধিকাংশ চিশতিয়া খান্দানে বায়আত করতেন।


খলীফাগণ :

১. মাওলানা হাফেজ রহমতুল্লাহ সাহেব গরদুয়ারী, সাবেক সিনিয়র শিক্ষক, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।

২. মাওলানা হেফাজতুর রহমান (রহ.), প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, হোসাইনিয়া মাদরাসা, রাজঘাটা, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম।

৩. মাওলানা শফীকুর রহমান সাহেব (রহ.) প্রতিষ্ঠাতা, কাসেমুল উলুম মাদরাসা শিলখালী, চকরিয়া, কক্সবাজার।

৪. মাওলানা আব্দুল আজিজ সাহেব (রহ.) সিনিয়র শিক্ষক, এশাআতুল উলুম আজিজিয়া মাদরাসা, মোহরা, চান্দগাঁও, চট্টগ্রাম।

৫. মাওলানা তাহের সাহেব (রহ.) (মৃত ১৪১৫ হি.) প্রতিষ্ঠাতা, দারিয়া আলিয়া খুলনা ও আহমদিয়া বড়ঘাট মাদরাসা।

৬. মাওলানা আজিজুর রহমান সাহেব (রহ.) (মৃত ১৯৮৮ ইং) শিক্ষক, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।

৭. মাওলানা ইয়াকুব সাহেব (রহ.) (মৃত ১৪১৬ হি.) কোষাধ্যক্ষ, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।

৮. মাওলানা সুলতান আহমদ সাহেব, প্রতিষ্ঠাতা, আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া, মিয়াজানপুর ও রিদা মাদরাসা, বার্মা।

৯. মাওলানা নুরুল হক সাহেব, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা।

১০. মাওলানা নজীর আহমদ সাহেব, সদরুল মুদাররেসীন ও মুফতী, মিয়াজানপুর মাদরাসা, বার্মা।

১১. মাওলানা আব্দুস সমদ ফরীদি সাহেব (রহ.) প্রতিষ্ঠাতা, জামেয়া হাফিজিয়া, ফরিদপুর। সাবেক খতীব, অ্যারোপ্লেন মসজিদ, এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা।

১২. মাওলানা আব্দুস সাদেক সাহেব, মুফতী ও সদরে মুদাররেসীন শাহী মসজিদ মাদরাসা, বংশীপুর, সাতক্ষীরা।

১৩. মাওলানা খায়রুল আমীন সাহেব, মক্কা মিসফালার একটি মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক।

১৪. মাওলানা আব্দুল ওয়াহহাব সাহেব, প্রতিষ্ঠাতা, চন্দ্রদিঘীলিয়া মাদরাসা, গোপালগঞ্জ।

১৫. মাওলানা নূরুল হুদা সাহেব, প্রধান শিক্ষক, মিরসরাই হাবিলদারবাসা মাদরাসা, চট্টগ্রাম।

১৬. মাওলানা আলী আকবর সাহেব, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, মহিউস সুন্নাহ মাদরাসা ছোট মহিশখালী, কক্সবাজার।

১৭. মাওলানা সিদ্দীক আহমদ সাহেব (রহ.) সাবেক মুবাল্লিগ, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া।

১৮. মাওলানা নূর হাসান সাহেব, প্রতিষ্ঠাতা মাদরাসা ইউনুসিয়া, ইসাখালী ও পরিচালক আশরাফিয়া কাসেমুল উলূম মাদরাসা, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম।

১৯. কারী জালালুদ্দীন সাহেব, সাবেক শিক্ষক, ঝাপোয়া মাদরাসা, মহেশখালী।

২০. মাওলানা আবু ওমর সাহেব কুতুবী।

২১. মাওলানা তৈয়ব সাহেব, পরিচালক আল-জামেয়াতুল আরবিয়া ইসলামিয়া, জিরি, পটিয়া, চট্টগ্রাম।


মানবসেবা :

হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.) দ্বীনি খিদমাত আঞ্জাম দেওয়ার পাশাপাশি মানবসেবা, বিশেষ করে রূহানী রোগের কোরআনী চিকিৎসা দিতেন। তাঁর চিকিৎসায় ব্যাপক প্রভাব থাকায় প্রতিদিন তাঁর বাসস্থলে দূর-দূরান্তের লোকদের এক মজমায় পরিণত হতো। পবিত্র কোরআনের কয়েকটি আয়াত দিয়েই তিনি যাবতীয় চিকিৎসা করতেন। জটিল-শক্ত জিন ও জাদুটোনায় আক্রান্ত রোগীরা তাঁর কাছে এসে ভিড় জমাত। তাই তিনি হালকা চিকিৎসা দিয়ে তাদের সেবা করতেন। এটি তাঁর পেশা ছিল না। যার কারণে অতিরিক্ত টাকা-পয়সা নিতেন না রোগীদের কাছ থেকে। তাঁর সামান্য পানিপড়া ও তেলপড়ায় অসংখ্য রোগী ভালো হয়েছেন। তাঁর আমলে ছিল ৩৩ আয়াত, আয়াতে সেহের ইত্যাদি। এই কয়টি কোরআনী আয়াতই ছিল তাঁর সারা জীবন কোরআনী চিকিৎসার মূলমন্ত্র। কিন্তু আল্লাহর ওলীদের মুখের প্রভাব কল্পনাতীত। হযরত ইমাম সাহেব (রহ.)-এর সামান্য পানিপড়ার আসরও ছিল দুনিয়াখ্যাত। দেশ-বিদেশের অসংখ্য লোক তাঁর এই আধ্যাত্মিক প্রভাব থেকে উপকৃত হয়েছে। এসব মুজররাব (পরীক্ষিত) আমল একত্রিত করে তাঁর সুযোগ্য সন্তান জামিয়া পটিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস ও তাফসীর বিভাগীয় প্রধান শারেহুল হাদীস হযরত আল্লামা মাওলানা রফীক আহমদ সাহেব (দা.বা.) ‘মুজাররাবাতে আহমদী’ নামে একটি কিতাব সংকলন করেন, যা থেকে দেশ-বিদেশের অসংখ্য উলামায়ে কেরাম উপকৃত হচ্ছেন।


নিয়মানুবর্তিতা : 

হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.) ছিলেন নিয়মপরায়ণের ক্ষেত্রে অদ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব। সারা জীবন একই নিয়মেই অতিবাহিত হয়েছে তাঁর সব কিছু। এটি তাঁর জীবনে সকলের জন্য একটি পরম শিক্ষণীয় ভূষণ। উলামায়ে কেরামের মধ্যে বিশ্রুত আছে তিনি জীবিত থাকাকালীন জামিয়া পটিয়ায় নামাযের সময়ের জন্য ঘড়ির দিকে তাকাতে হতো না। বরং হযরত ইমাম সাহেব হুজুরকে মসজিদের সামনে দেখেই সবাই বুঝে ফেলতেন নামাযের সময় হয়েছে। তিনি মসজিদের ফটকে উপস্থিত হতেই দেখা যেত হয়তো মুয়াজ্জিন আজান দিচ্ছেন বা এখনই দেবেন। প্রতিটি ইবাদতে নিয়মতান্ত্রিকতা এবং সময়ের যে গুরুত্ব তিনি দিতেন তা উলামায়ে কেরামের কাছে একটি উপমা হয়ে আছে এবং থাকবে ইনশাআল্লাহ। সর্বক্ষণ তাঁর মুখের আহারীয় ছিল জিকরুল্লাহ। সব সময় তাঁর ঠোঁট দুটি হরকতে থাকত। হয়তো কোরআন তিলাওয়াত করতেন বা অন্য কোনো জিকির করতে থাকতেন। সারা দিনের আহার-বিহারেও তাঁর নিয়মানুবর্তিতা মানুষকে আশ্চার্যন্বিত করত। প্রতিদিন একই সময় খানাপিনা, একই সময় ঘুমানো, একই সময় ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া, নফল ইবাদত পালন, সকালে কিছুক্ষণ হাঁটা, পাশাপাশি কিছু ঘরের কাজ করা ইত্যাদি বিষয় একই সময়ে একই নিয়মেই তিনি আঞ্জাম দিতেন। তাঁর এই নিয়মানুবর্তিতার কারণে আল্লাহ তা’আলার অশেষ কৃপায় অন্তিম শয্যা পর্যন্ত তাঁর শরীরে বড় ধরনের কোনো রোগ ছিল না। প্রায় শত বছরের এই দীর্ঘ হায়াতে তায়্যিবায় তাঁকে বড় কোনো ডাক্তারের দ্বারস্থ হতে হয়নি। একেবারে বৃদ্ধ বয়সেও তিনি সব কিছু নিজে করতেন। মসজিদে নিজেই হেঁটে যেতেন। পায়ে হেঁটেই মাদরাসার দুই-তিনতলায় গিয়ে সবক পড়াতেন। ইন্তেকালের বেশ কয়েক বছর পূর্বে মসজিদ থেকে যাওয়ার সময় গরুর রশিতে আটকে হঠাৎ ছিটকে পড়েছিলেন। এর মাধ্যমে তাঁর কোমরের হাড় ব্যাপকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এর পর থেকে তিনি পায়ে হেঁটে কিছু করতে পারেননি। বরং হুইল চেয়ারে চড়েই মসজিদ এবং সবকে যেতে হয়েছে।


স্পষ্টভাষী :

একজন ন্যায়-নীতি এবং নিয়মপরায়ণ লোকের কাছে অনিয়ম, অন্যায় বড়ই কষ্টের বিষয় হয়ে থাকে। হযরত ইমাম সাহেব হুজুরও কোনো প্রকার অনিয়ম এবং অন্যায় পছন্দ করতেন না। তিনি ছোট থেকে ছোট অনিয়মও যদি দেখতেন সে যত বড় লোকই হোক না কেন, শুধরে দিতেন। তৎক্ষণাৎ বলে ফেলতেন। যাকে যে ভাষায় বলার প্রয়োজন মনে করতেন, বলতেন। কাউকে শাসনের ভাষায়, কাউকে ¯েœহের ভাষায়, কাউকে পরামর্শের ভাষায় বলতেন। সে কারণে জামিয়া পটিয়ায় সবার মাঝে তাঁর প্রতি যেমন বিশেষ ভক্তি কাজ করত, তেমনি ভয়ও সক্রিয় ছিল। বিশেষ করে নামাযে কোনো ইমাম সাহেব কোরআন তিলাওয়াতে সামান্য বেশকম করলেই তিনি নামাযের পর তা শুধরে দিতেন। ছাত্রদের জাগতিক ও আধ্যাত্মিকÑসর্ব বিষয়ে তিনি খোঁজখবর রাখতেন এবং কোনো ব্যক্তিগত অনিয়ম দেখলে তৎক্ষণাৎ আর সমষ্টিগত অনিয়ম দেখলে মসজিদে সকলকে উদ্দেশ করে তা বলে দিতেন। এককথায় বর্তমান জমানায় এরূপ স্পষ্টভাষী চৌকস ব্যক্তিত্বের খুবই বিরল।


ইন্তেকাল :

এই মহান ব্যক্তিত্ব ১০ জানুয়ারি ১৯৯৬ ইং মোতাবেক ১৮ই শা’বান ১৪১৬ হি. বুধবার বাদ মাগরিব ৬টা ১৪ মিনিটে পটিয়াস্থ নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। জীবনের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি জামিয়া পটিয়ার সদরুল মুদাররেসী এবং শায়খুল হাদীসের দায়িত্বে বহাল ছিলেন। পরদিন বৃহস্পতিবার হাজার হাজার ছাত্র ও ভক্ত-অনুরক্তের উপস্থিতিতে জামিয়া পটিয়ায় বাদ জোহর দুপুর ২টায় তাঁর নামাযে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর নামাযে জানাজায় ইমামতি করেন ওলীকুল শিরোমণি হযরত মাওলানা আলী আহমদ বোয়ালভী সাহেব (রহ.)। মাকবারয়ে আজীজিতে হযরত মুফতী আজিজুল হক (রহ.)-এর পাশে হযরত মাওলানা হাজী ইউনুস সাহেব (রহ.) ও তাঁর পাশে হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)-কে দাফন করা হয়।

উল্লেখ্য, এর দুই বছর পূর্বে তথা ১৪১৪ হিজরী সনে একই তারিখ, অর্থাৎ ১৮ই শা’বান তাঁর সহধর্মিণী জানাবা মুস্তফা খাতুন ইন্তেকাল করেন। দুই বছরের ব্যবধানে চান্দ্রমাসের একই তারিখে তাঁরা দুজন স্বামী-স্ত্রীর ইন্তেকালকে কল্যাণ ও খোদায়ী রহমতের নজরেও দেখেছেন অনেক রূহানী ব্যক্তিত্ব। মূলত তাঁর সহধর্মিণী জানাবা মুস্তফা খাতুনও ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ, মুত্তাকী-পরহেজগার, কৃতজ্ঞ ও অত্যন্ত ধৈর্যশীলা মহীয়সী নারী। তাঁর এহেন তাকওয়া-পরহেজগারী এবং সবর-শোকর হযরত ইমাম সাহেব (রহ.)-এর আধ্যাত্মিক ও পার্থিব জীবনে অনেক সহযোগী ছিল। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁদেরকে জান্নাতুল ফেরদাউসের সুউচ্চ আসনে সমাসীন করুন। আমিন।


পরিবার :

ইন্তেকালের সময় তিনি তিন ছেলে রেখে যান। যাঁরা প্রত্যেকে নামকরা আলেমে দ্বীন এবং সুপ্রসিদ্ধ খিদমাত আঞ্জাম দেন।

১. হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ (রহ.)। তিনি দেশের বিভিন্ন মাদরাসায় ইলমী খিদমাত আঞ্জাম দিয়ে সর্বশেষ পোকখালী মাদরাসায় শায়খুল হাদীসের পদে নিয়োজিত অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।

২. হযরত মাওলানা রফীক আহমদ (দা.বা.)। তিনি আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস এবং তাফসীর বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে তাঁর ইলমী খিদমাত একটি বিশাল অধ্যায়ে পরিণত। উপমহাদেশে তিনি এখন ‘শারেহুল হাদীস’ নামে বিখ্যাত। বিভিন্ন ভাষায় সর্বাধিক কিতাবের রচয়িতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তাঁর হাদীসের ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলো সারা দুনিয়াতেই এখন সমাদৃত। এ ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে লিখিত তাঁর কিতাবাদি বিভিন্ন দরসেগাহে উক্ত বিষয়ের মূলসূত্র হিসেবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। আল্লাহ তা’আলা তাঁকে হায়াতে তায়্যিবা দান করুন। আমিন।

৩. মাওলানা হাফেজ উবাইদুল্লাহ। দ্বীনি কিতাবাদি প্রকাশনা জগতে তিনি একনামে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত আশরাফিয়া লাইব্রেরি বর্তমানেও একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সকলের কাছে গ্রহণযোগ।

হযরত ইমাম সাহেব হুজুরের তিন মেয়ে ছিলেন। ১. সকিনা খাতুন। ১৩৯৬ হিজরীতে হযরতের জীবদ্দশায় তিনি ইন্তেকাল করেন। গহিরা নিবাসী মৌলভী নুরুল ইসলামের সাথে তাঁর বিবাহ হয়। ২. ছালমা খাতুন। মরহুম মাওলানা মুহাম্মদ আলীর সাথে তাঁর বিবাহ হয়। ৩. ফরিদা খাতুন। হযরতের জীবদ্দশায় তিনি ইন্তেকাল করেন।

এর পরের প্রজন্মের মধ্যেও সকলে আলেমে দ্বীন হিসেবে গড়ে উঠেছেন। তাঁরা বিভিন্ন দ্বীনি খিদমাতে নিয়োজিত রয়েছেন।


জামিয়া পটিয়া প্রতিষ্ঠার ইতিহাস :
এক বিজ্ঞ আলেম পাঠকের মতামত

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠায় সর্বপ্রথম যাঁর বাস্তব অবদান তিনি হলেন মাওলানা আহমদ মোহরবী [ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)]। এই স্পষ্ট বাণী কুতুবে আলম হযরতুল আল্লাম মুফতী আযীযুল হক (রহ.)-এর। পরবর্তীতে এ বিষয়ে বিভিন্ন লেখক নিজেদের কিছু এমন মন্তব্য প্রকাশ করেন, যা স্বয়ং মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.)-এর স্পষ্ট বাণীর সাথেই সাংঘর্ষিক। তাই উক্ত বিষয় সম্পর্কে একজন বিজ্ঞ পাঠকের কিছু মতামত এখানে সংযুক্ত করা হলো।
বন্ধুবর মাওলানা নিজামুদ্দীন একজন চিন্তাশীল পাঠক এবং সৃজনশীল লেখকও। তিনিসহ বিভিন্নজন দীর্ঘদিন থেকে জামিয়া পটিয়ার ইতিহাস ও এর মধ্যে কতিপয় লেখকের অহেতুক তাসাররুফ সম্পর্কে অধমের সাথে তাঁদের গবেষণামূলক কিছু বক্তব্য শেয়ার করতে থাকে। আমি তাদের বলতাম, আলেম-উলামার মাঝে এসব বিষয় নিয়ে বিতর্ক করা শান পরিপন্থী। বরং তোমরা আমাদের উস্কে দেওয়ার যে পন্থা অবলম্বন করেছ, তা পরিহার করে চলো। এরূপ বিষয়ে চুপ থাকাই উত্তম।
সম্প্রতি কী কারণে জানি না, একে একে সব মুরব্বির ইন্তেকালের ধারাবাহিকতার কারণেই হবে হয়তো চিন্তাধারায় কিছু পরিবর্তন আসছে। চিন্তা এলো এই বিষয়ে যে যা-ই বলুক না কেন, অন্তত নিজেদের জানা থাকা প্রয়োজন। নিজেদের দ্বীনি ঐতিহ্য ও অবদানকে তো বিস্মৃতির আবরণে ঢেকে রাখা যায় না। তাই অনেক চিন্তা-গবেষণা করে মাওলানা নিজামুদ্দীনের একটি লেখা, যা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, আমার ব্যক্তিগত বøগে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন মনে করলাম।
মাওলানা নিজামুদ্দীন জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠার ইতিহাস সম্পর্কে প্রকাশিত বিভিন্ন কিতাব ও বইপুস্তক পাঠে তাঁর ভাবগুলো এভাবেই প্রকাশ করেছেন।
نحمدہ ونصلی علی رسولہ الکریم، اما بعد:اعوذ باللہ من الشیطان الرجیم، [أَلا إِنَّ أَوْلِياءَ اللّٰهِ لا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلا هُمْ يَحْزَنُونَ۔ الَّذِينَ آمَنُوا وَكانُوا يَتَّقُونَ ۔ لَهُمُ الْبُشْرى فِي الْحَياةِ الدُّنْيا وَفِي الْآخِرَةِ] 
 [مَنْ لَمْ يَشْكُرِ النَّاسَ، لَمْ يَشْكُرِ اللّٰهَ عَزَّ وَجَلَّ (ترمذي) [ 
[عِنْدَ ذِكْرِ الصَّالِحِينَ تَنْزِلُ الرَّحْمَةُ (حلیۃ الاولیاء)]
জামিয়া পটিয়ার ইতিহাস নিয়ে আমি ডজনখানেক বই পাঠ করে বুঝতে পারলাম, এ সম্পর্কে জামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক কুতুবে আলম হযরত আল্লামা মুফতী আযীযুল হক (রহ.) সরাসরি নিজের তত্ত¡াবধানে কোনো দস্তাবেজ লিপিবদ্ধ করে গেছেন। তা অনুসরণেই পরবর্তী লেখকগণ এর ইতিহাস রচনা করেছেন। তবে ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে লেখকগণ ভিন্ন ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছেন। অনেকে জামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকের লিখিত ইতিহাসে তাশরীহ ও ব্যাখ্যার সংযোজন করে ইতিহাসের অনেক মৌলিক বিষয়কেও খাটো করার চেষ্টা করেছেন।
পক্ষান্তরে ইতিহাসের ক্ষেত্রে যদি মৌলিক কোনো সূত্র থাকে তবে সরাসরি তা-ই অনুসরণ করা আবশ্যক। জামিয়া পটিয়া প্রতিষ্ঠার ইতিহাসেও যেহেতু মূলসূত্র পাওয়া যায় স্বয়ং কুতুবে আলম হযরত মুফতী আযীযুুল হক (রহ.)-এর সরাসরি তত্ত¡াবধানে লিখিত দস্তাবেজে। সুতরাং সে সূত্রমূলকেই অটুট এবং সংরক্ষণ করা জরুরি। এবং ইতিহাস রচনা ও প্রচারে এর হুবহু অনুকরণ আবশ্যক। কারণ পরবর্তীতে সূত্রমূলকে বিভিন্নরূপে উপস্থাপন করে বিকৃতির লেবাস পরানোর সম্ভাবনা থেকে যায়। যার যার স্বার্থ মতে সূত্রমূলের ব্যাখ্যা/অপব্যাখ্যা করে ইতিহাসের মূল মগজসহ উপড়ে ফেলার নজির বিশ^ইতিহাসে কম নয়। তাই আমি মনে করি, জামিয়া পটিয়ার ইতিহাস সম্পর্কে প্রতিষ্ঠাতাদের যে লিখিত দস্তাবেজ আছে তার হুবহু অনুসরণই সবার জন্য জরুরি।
এই ইতিহাস চর্চা করতে গিয়ে আমি ১। ইয়াদে আজীজ, ২। তাজকারায়ে আজীজ উর্দু, ৩। তাজকারায়ে আজীজ বাংলা, ৪। তাজকেরায়ে জমীর, ৫। আনওয়ারে আহমদী, ৬। আরমগানে আজীজ, ৭। হযরত মাওলানা আহমদ ইমাম সাহেব হুজুর স্মারকগ্রন্থ, ৮। বানী কৌন হে?, ৯। জামিয়া ইসলামিয়া, পটিয়া, ১০। হযরত হাজী সাহেব হুজুর স্মারকগ্রন্থ, ১১। হাদীস পরিচিতি ও প্রখ্যাত উলামা মাশায়েখ, ১২। মাশায়েখে চাটগ্রাম, ১৩। জামিয়া পটিয়ার দশ মনীষী, ১৪। জামিয়া পটিয়ার বিভিন্ন স্মারক ১৫। সংরক্ষিত দস্তাবেজ ইত্যাদি পাঠ করেছি।
যেসব কিতাবে জামিয়া পটিয়ার ইতিহাসকে গুরুত্ব সহকারে বর্ণনা করা হয়েছে প্রতিটিতে হযরত মুফতী আযীযুুল হক সাহেব (রহ.)-এর দস্তাবেজ থেকে বিভিন্ন বিষয় সংকলন করা হয়েছে। কিছু কিছু কিতাবে কিঞ্চিৎ ভাষার তারতম্য দৃষ্টিগোচর হয়েছে। কেউ কেউ হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.)-এর ইবারতকে নিজ ভাষায় ব্যক্ত করতে গিয়ে মূল লেখায় বিকৃতি ঘটিয়েছেন। তাঁরা আবার ওই দস্তাবেজের বিভিন্ন অংশ উল্লেখ করে তার ব্যাখ্যাও করেছেন। যাঁরা ব্যাখ্যার পথ বেছে নিয়েছেন তাঁরা চিহ্নিত কয়েকটি অংশেই ব্যাখ্যা করতে দেখা গেছে। বাকি স্থানে না কোনো ব্যাখ্যা করেছেন, না এসব বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করেছেন।
তাঁদের ব্যাখ্যাগুলো একত্র করা হলে দেখা যায়, বিশেষত একজন ব্যক্তির ব্যাপারে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) যেসব মন্তব্য করেছেন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেসব অংশই বিভিন্ন ব্যাখ্যার ঘাত-প্রতিঘাতের শিকার হয়েছে। ওই ব্যক্তি হলেন হযরত মাওলানা আহমদ (ইমাম সাহেব) (রহ.)। মনে হয়েছে, জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে মাওলানা আহমদ (রহ.) সম্পর্কে হযরত মুফতী আযীযুুল হক (রহ.) খোলা মনে এবং স্পষ্ট ভাষায় যা লিখেছেন তাকে খাটো করারই চেষ্টা ছিল এসব ব্যাখ্যাতে। বিষয়টি যেভাবে ঘাত-প্রতিঘাতের শিকার হয়েছে, অন্তত ইতিহাস লেখকগণের পক্ষে তা করা উচিত বলে মনে হয়নি।
কারণ ইতিহাস হলো পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দর্পণস্বরূপ। যেকোনো বিষয়ের ইতিহাস পাঠে সেই বিষয়ের ইতিহাস যেমন জানা যায়, তেমনি ওই ইতিহাসের লেখক ইতিহাসকে কোন দিক থেকে কোন দিকে প্রবাহিত করতে চাচ্ছেন, তা-ও ওই দর্পণে প্রতিবিম্বিত হয়। তখন ওই লেখকের মূল উদ্দেশ্য ও রুচিবোধও পাঠকদের সামনে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।
এসব কিতাবে সংকলিত জামিয়া পটিয়ার ইতিহাস পড়ে আমি যা বুঝতে পারলাম, তা হলো জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কি একক হযরত মুফতী আযীযুল হক (রহ.) নাকি কয়েকজন তা নিয়েই মূল বিতর্কটি। হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর লেখা থেকে বোঝা যায়, তিনি জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাকাজে একাধিক ব্যক্তির ভূমিকা রয়েছে তা বোঝাতে চেয়েছেন। কিন্তু পরবর্তী লেখকগণ বিভিন্ন ব্যাখ্যা সংযোজন করে হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.)-কেই একক প্রতিষ্ঠাতা সাব্যস্ত করতে চেষ্টা করেছেন এবং প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্যদের অবদান ও কীর্তিকে শুধু অস্বীকারই করেননি বরং রীতিমতো তাঁদের অপমানও করেছেন। তা করার জন্যই মূলত বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের ব্যাখ্যা সংযোজন করতে হয়েছে। কোনো সত্য ও স্পষ্ট বিষয়কে ঢেকে রাখতে এবং ধামাচাপা দিতে এককথায় ইতিহাস বিকৃতিতে আধুনিক যুগের বিভিন্ন লেখক যেমন নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করে থাকেন, এ ক্ষেত্রেও কিছু লেখক তার ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন বলে মনে হয়নি।
আমি যদি পরবর্তী লেখকদের ওসব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বাদ দিয়ে শুধু হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর পরিষ্কার বক্তব্যগুলো একত্রিত করি তবে স্পষ্টতই বোঝা যাবে জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠায় মাওলানা আহমদ নামে ব্যক্তিটির ভ‚মিকা অপরিসীম এবং অবিস্মরণীয়। সেই বিবেচনায় তাঁকে অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, প্রতিষ্ঠাতাদের একজন বা প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বলতে কোনো বাধা থাকে না। কুতুবে আলম হযরত মুফতী আযীযুল হক (রহ.) নিজ লিখিত দস্তাবেজে স্পষ্ট ভাষায় তাঁকে অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেই চিত্রায়িত করেছেন। বরং প্রতিষ্ঠাকাজে স্বয়ং নিজ থেকেও আল্লামা আহমদ সাহেবের অবদানকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এতদসত্তে¡ও পরবর্তী কিছু লেখক হযরত ইমাম সাহেব (রহ.)-এর এই আন্তরিক দ্বীনি মহান অবদানকে বিস্মৃত করার জন্য কী কারণে অতিউৎসাহী হয়ে উঠলেন, তা আল্লাহ তা’আলাই ভালো জানেন। 
মূলত যেকোনো বিষয়ের ইতিহাসে বিকৃতি ঘটে এই কারণেই যে পরবর্তীতে প্রত্যেকে নিজের রুচি ও স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ইতিহাস রচনা করার চেষ্টা করেন। অথচ আসলাফগণ এর পক্ষে ছিলেন না। যার যেটুকু অবদান তা স্বীকার করা এবং এর সঠিক মূল্যায়নই ছিল আকাবিরে দেওবন্দের আদর্শ। কুতুবে আলম হযরত মুফতী আযীযুল হক (রহ.) জামিয়া পটিয়ার যে ইতিহাস নিজেই লিপিবদ্ধ করিয়েছেন, তাঁর সাহিত্য, আন্তরিকতা, খুলুসিয়্যাত এবং কৃতজ্ঞতাপরায়ণে আমাদের জন্য শিক্ষণীয় আছে অনেক কিছু।
আমি একজন অভাজন পাঠক হিসেবে সব বিষয় ঘাঁটাঘাঁটির পর বুঝতে পারলাম জামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এমন অপরিপূর্ণ ইতিহাস রচনা করেননি, যার ওপর অনেককে আবার তাশরীহ বা ব্যাখ্যা করতে হবে। কারণ তিনি তো গতানুগতিক ইতিহাস লেখেননি বরং যে সময় বাস্তবতা যা ঘটেছিল তাই চিত্রায়িত করেছেন। সেগুলোই মূলত পরবর্তীদের জন্য নাসসে সরীহ তথা স্পষ্ট বক্তব্য হিসেবেই পরিগণিত। নসসে সরীহের ব্যাখ্যা প্রয়োজন পড়ে না। স্পষ্ট নসের তাশরীহ করতে গেলেই বিভিন্ন বিভ্রান্তির স্বীকার হতে হয়। স্বয়ং ইতিহাসকেও বিকৃতির ঝঞ্ঝায় পড়ে খেসারত গুনতে হয়।
তাহলে দেখা যাক জামিয়া পটিয়া প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট ও ইতিহাস সম্পর্কে কুতুবে আলম হযরত আল্লামা মুফতী আযীযুুল হক (রহ.)-এর লিখিত খুলুসিয়্যাতপূর্ণ বক্তব্যের শান কি ছিল আর পরবর্তী লেখকগণের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ধরন কিরূপ।
হযরত মুফতী আযীযুল হক (রহ.)-এর লেখা থেকে এ কথা প্রতিভাত হয় যে মাওলানা আহমদ ইমাম সাহেব (রহ.) যখন তাঁর পরামর্শে সাড়া দিয়ে পটিয়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে হ্যাঁ-সূচক জবাব দিলেন, তখনই হযরত মুফতী সাহেব হুজুরের অন্তরে এ কথার একীন হলো, পটিয়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠা হবে ইনশাআল্লাহ।
হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর ভাষায়Ñ
چلتے چلتے راستہ میں علی عباس سوداگر کے مکان کے سامنے پہونچا، تو یکایک میں نے مولانا احمد صاحب سے کہا کہ کیا آپ پٹیہ میں مدرسہ قائم کرسکتے ہیں؟ انہوں نے بلاتردد جواب دیا کہ اگر آپ کا حکم ہوتو میں تیار ہوں، انکے جواب سے مجھے حیرت ہوئی اور دل میں یقین ساہو گیا کہ پٹیہ میں مدرسہ قائم ہونیکا وقت قریب آگیا
এখানে দেখার বিষয় হলো, হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.) কে কী বলেছেন? বলেছেন, আপনি কি পটিয়ায় একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন? এর জবাবেই হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.) বললেন, যদি আপনার নির্দেশ হয় তবে আমি প্রস্তুত আছি। এটি হলো পটিয়া মাদরাসা বাস্তবে রূপ নেওয়ার মূল পরামর্শ। হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) যদি বলতেন আমি পটিয়ায় একটি মাদরাসা করছি। এই পর্যন্ত অনেক আয়োজন সম্পন্নও হয়েছে। আপনাকে সেখানে উস্তাদ হিসেবে নিয়োগ দিতে চাই ইত্যাদি। এরূপ কিছু বললে তখন অন্য কিছু বিবেচনা করার সুযোগ ছিল। অথচ সেরূপ কিছু বলেননি। বরং স্বয়ং হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর লেখায় এ কথা উঠে এসেছে যে পটিয়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে এর পূর্বে আরো অনেক পরামর্শ হয়েছে, তিনি নিজেও অনেক পরামর্শ ও বৈঠক করেছেন; কিন্তু এসব পরামর্শ ও কথাবার্তায় মাদরাসা অস্তিত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছা সম্ভব হয়নি। হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.) যখন মাদরাসা প্রতিষ্ঠার আবেদনে হ্যাঁ-সূচক জবাব দিলেন তখনই হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) শোকরের ভাষায় বললেন, এখন আমার মাঝে বিশ্বাস জন্মাল যে, পটিয়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠার সময় অত্যাসন্ন।
হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর অন্তরে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা হবে মর্মে আস্থা ও পূর্ণ বিশ্বাস কি এমনিতেই জন্ম নিয়েছে? না। বরং তা থেকে বোঝা যায় হযরত ইমাম সাহেব হুজুরের যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা, আন্তরিকতা, খুলুসিয়্যাত ও লিল্লাহিয়াত সম্পর্কে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) পরিপূর্ণ জ্ঞাত ছিলেন। যেহতু উভয়ই প্রাণপ্রিয় আন্তরিক বন্ধু ছিলেন, তাই পরস্পর সম্পর্কে ভালোভাবেই জানা ছিল। পরস্পর সম্পর্কে এরূপ অবগতি প্রগাঢ় বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছাড়া হয় না। সে কারণেই হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.) মাদরাসা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেওয়া মাত্রই হযরত ইমাম সাহেব হ্যাঁ-সূচক জবাব দিতে দ্বিধা করেননি আবার এই জবাব শ্রবণে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর অন্তরে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা হওয়ার বিশ্বাস উঁকি দিতে সময় লাগেনি। তদুপরি উভয়েই ছিলেন ছাত্র জমানা থেকেই আধ্যাত্মিকতায় পরিপূর্ণ আল্লাহর ওলী। তাই আল্লাহর পক্ষ থেকে উভয়ের মাঝে ইলহাম এবং রূয়ায়ে সালেহার ধারাবাহিকতাও ছিল। হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.) এক স্থানে হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.) সম্পর্কে লেখেন, আমরা উভয়ের পীর শায়খুল মাশায়েখ হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন (রহ.) পটিয়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জন্য আমাকে এবং মাওলানা ইস্কান্দার সাহেবকে সরাসরি নির্দেশ দেন এবং মাওলানা আহমদ সাহেবকে স্বপ্নে নির্দেশ দেন। এরপর তিনি হযরত ইমাম সাহেবের স্বপ্নের বিবরণ দেন। হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.) এই কথা বলে মূলত তাঁদের আধ্যাত্মিকতা ও রূয়ায়ে সালেহার প্রতিই ইশারা করেছেন। হযরত ইমাম সাহেবের হ্যাঁ বলা এবং হযরত মুফতী সাহেব হুজুরের অন্তরে একীন হওয়ার এটিও একটি বড় কারণ ছিল।
এর পূর্বেই হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) লেখেনÑ
لیکن قصبہ پٹیہ کے ماحول کی ہدایت اور وہاں دینی درسگاہ قائم کرنے کی خدمت ان حضرات کے برگزیدہ ہاتھوں سے انجام نہ پا کر ان کے غلاموں کے ہاتھوں سے انجام پانا مقدر الہی تھا۔
এখানে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) যা বললেন তার সারমর্ম হলো, যে সকল বুজুর্গানেদ্বীন পটিয়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাঁদের হাতে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার কাজ সম্পন্ন না হয়ে আমরা (তথা স্বয়ং মুফতী সাহেব হুজুর ও অন্যান্য যাঁরা প্রতিষ্ঠার মধ্যে শরীক ছিলেন সেই) গোলামদের হাতেই পটিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠাকাজ সম্পন্ন হওয়া তাকদীরে লেখা ছিল। [এই বাক্যে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যে পটিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা একজন নন। বরং তাঁদের কয়েকজনের মেহনতেই পটিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।]
অতঃপর জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে ইতিহাসের প্রেক্ষাপট লিখে তারপর মূল ইতিহাস বর্ণনা করেছেন।
হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.) লেখেন :
لہذا ان کا نخل تمنا ان کی عملی زندگی میں بارآور نہ ہوا، جب ان حضرات میں سے اکثر واصل الی اللہ ہوچکے تو حضرت مولانا ضمیر الدین صاحب قدس سرہ نے جو ان نفوس قدسیہ میں شیخ المشائخ مانے جاتے تھے اپنی زندگی کے دور آخر میں مولانا اسکندر صاحب اور بندہ عزیز الحق کو پٹیہ میں مدرسہ قائم کرنے کی طرف متوجہ کیا۔
অর্থাৎ যে সকল আকাবির উলামা পটিয়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখছিলেন, তাঁদের হাতে তা হয়নি। তাঁদের প্রায়ই তখন দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে গেছেন। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন (রহ.), যাঁকে শায়খুল মাশায়েখ হিসেবেই সবাই জানত। হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন সাহেব (রহ.)-এর শেষ বয়সে আমাকে [মুফতী আযীযুল হক (রহ.)] এবং মাওলানা ইস্কান্দার সাহেব (রহ.)-কে পটিয়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠার প্রতি মনোযোগী করে তোলেন।
তারপর লেখেনÑ
چنانچہ اس مبارک اشارہ کی برکت سے کام کا سلسلہ اس طرح شروع ہوا کہ مولنا اسکندر صاحب بلاشرکت عملی اس خدمت کی طرف اپنی روحانی توجہ مبذول فرماتے رہے اور احقر عزیز الحق مدرسہ جیری میں مدرس تھا اور وہاں کی تدریس پر قائم رہتے ہوئے قصبہ پٹیہ میں مدرسہ قائم کرنے کی تدابیر میں مصروف رہا، اس خدمت میں عملی قدم اٹھانے والا اول شخص مولانا احمد صاحب مہروی ہیں جو فی الحال مدرسہ پٹیہ میں امام صاحب کے نام سے مشہور ہیں اور درس حدیث کا کام انجام دیتے ہیں۔
সুতরাং হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন সাহেব (রহ.)-এর মোবারক ইশারায় এই মোবারক কাজের সূচনা এভাবে হয়Ñ১. মাওলানা ইস্কান্দার সাহেব কাজে অংশ না নিয়ে এই খিদমতে নিজের রূহানি তাওয়াজ্জুহ দিতে থাকেন। ২. আহকর আযীযুল হক জিরি মাদরাসায় মুদাররিস ছিলাম, সেখানে অধ্যাপনার পাশাপাশি পটিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জন্য তদবির চালাতে থাকি। ৩। মাদরাসা প্রতিষ্ঠার এই খিদমতে কার্যত সর্বপ্রথম বাস্তব ভূমিকা রাখেন মাওলানা আহমদ সাহেব মোহরবী। যিনি বর্তমানে জামিয়া পটিয়ায় ইমাম সাহেব হিসেবে খ্যাত এবং মুহাদ্দিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) কর্তৃক হযরত ইমাম সাহেব সম্পর্কে স্পষ্টভাবে
 اس خدمت میں عملی قدم اٹھانے والا اول شخص مولانا احمد صاحب مہروی ہیں
অর্থাৎ ‘জামিয়া প্রতিষ্ঠায় কার্যত সর্বপ্রথম বাস্তব ভ‚মিকা রাখেন মাওলানা আহমদ সাহেব মোহরবী’ বলাটা হয়তো পরবর্তী প্রজন্মে কারো কারো মহাপেরেশানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সে কারণে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর ইন্তেকালের অন্তত কয়েক দশক পর তাঁর লিখিত এই বাক্যের বিভিন্ন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রকাশনা আরম্ভ হয়ে যায়। অথচ হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর এই লেখাটি এতই স্পষ্ট ও সচরাচর, যাকে ব্যাখ্যার দাবি রাখে এমন মনে করাই অজ্ঞতা বা স্বার্থান্ধতার পরিচায়ক। এই অধমের পর্যবেক্ষণে যেটা ধরা পড়েছে তা হলো হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর লেখাটি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ নয় বরং পরবর্তী লেখকগণ ব্যাখ্যার নামে যা লিখেছেন, তা-ই পুনর্বিবেচনা ও বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
একটি চটি বইয়ে দেখলাম, হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর উক্তি :
 عملی قدم اٹھانے والا اول شخص 
এর তাশরীহ করতে গিয়ে ওই কিতাবের লেখক মাকুলাতের ইলম ঝেড়েছেন ভয়াবহ আকারে। তাঁর মতে, আমলীভাবে বাস্তব কর্মসম্পাদনকারীর মধ্যে মিস্ত্রি, বাবুর্চিও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। তাদের যেমন প্রতিষ্ঠাতা বলা যায় না, তেমনি ইমাম সাহেব হুজুরকেও প্রতিষ্ঠাতাদের একজন বলা যাবে না। এই তাশরীহ দেখে আমি হতবাক না হয়ে পারলাম না। আশ্চর্যবোধ করলাম যে একজন আলেম এরূপ জঘন্য তাশরীহও করতে পারেন! ভাবলাম, হয়তো তিনি হযরত মুফতী সাহেব হুজুরের লিখিত, পরের ইবারতগুলোর প্রতি দৃষ্টি দিতে সময় পাননি বা কোনো অদৃশ্য কারণে তা এড়িয়ে গেছেন। যদি দেখতেন তবে তাঁর ওই ব্যাখ্যা যে স্বয়ং মুফতী সাহেব (রহ.)-কেই হেয়প্রতিপন্ন করার শামিল ছিল, তা নিশ্চয়ই তিনি আঁচ করতে পারতেন। কারণ যদি আল্লামা আহমদ সাহেব (রহ.)-কে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) (ওই আলেমের ভাষায়) ‘কামলা’ হিসেবেই আনতেন তবে তাঁকেই কেন জামিয়া পটিয়ার প্রথম মুহাদ্দিস বানাচ্ছেন। তাঁর পরিচয় দিতে গিয়ে কেন বলেছেন, যিনি জামিয়া পটিয়ায় ইমাম সাহেব হিসেবে খ্যাত এবং হাদীসের দরসে নিয়োজিত। তাহলে কি তিনি বলতে চান যে জামিয়া পটিয়ার হাদীসের দরসেগাহকে একজন নিচুস্তরের ব্যক্তি দ্বারাই হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) সাজিয়েছেন? এই অভাজনের মতে, ওই লেখক একজন বড় আলেম হলেও তাঁর কথাগুলো আলেমের শান অনুযায়ী হয়নি। হয়তো সেই ক্ষেত্রে নিছক স্বার্থান্ধতা কাজ করছিল অথবা কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল।
সচরাচর এরূপ কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের ক্ষেত্রে কেউ নির্দেশদাতা হলে আর কেউ কর্মসম্পাদনকারী হয়ে থাকেন। তাতে পরিভাষা অনুযায়ী একজনকে পরিচালক বা সভাপতি, অপরজনকে সম্পাদক বা সেক্রেটারি বলা হয়। অথবা একজন সম্পাদক হলে অপরজনকে নির্বাহী সম্পাদক বলা হয়। হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর ভাষ্যে ‘আমলী কদম উঠানে ওয়ালা’র এটিই সহজ অর্থ বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। অর্থাৎ হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) এই বাক্যের মাধ্যমে হযরত ইমাম সাহেবকে প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সাব্যস্ত করেছেন। কারণ, স্পষ্ট অর্থ গ্রহণের সুযোগ থাকলে মাজাযী, রূপক অর্থ কিংবা দূর অর্থ নেওয়া ভুল। আর আমলী কদম উঠানে ওয়ালার স্পষ্ট অর্থ হলো সম্পাদক বা সেক্রেটারি। এই আলেম কেন এত দূর অর্থ গ্রহণের প্রতি ঝুঁকলেন তা রহস্যজনক। এতদসংক্রান্ত বাকি বিশ্লেষণ সামনে দ্রষ্টব্য।
অতঃপর হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) লেখেন : 
اور احقر عزیز الحق نے متعدد علماء کرام سے پٹیہ میں مدرسہ قائم کرنے کا تذکرہ کیا اور اس خدمت میں مصروف ہونے کی درخواست کی لیکن کسی نے بھی ہمت نہیں کی، خود مدرسہ جیری میں مدرس تھا اور اپنے اساتذہ کے زیر سایہ مدرسہ جیری سے علیحدگی کی کوشش کی ان سے اجازت نہ ملنے کی وجہ سے خود اس خدمت کو انجام دینے میں مصروف ہونے سے معذور رہا.
আহকর আযীযুল হক বহু উলামায়ে কেরামের কাছে পটিয়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠার কথা বলেছি এবং এই খিদমতে নিয়োজিত হতে দরখাস্ত করেছি, কিন্তু কেউ সাহস করেননি। আমি নিজে জিরি মাদরাসার শিক্ষক ছিলাম। উস্তাদদের মাধ্যমে জিরি মাদরাসা থেকে পৃথক হওয়ার জন্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু অনুমতি না পাওয়ার কারণে নিজে এই খিদমাত আঞ্জাম দানে নিয়োজিত হতে সমর্থ হইনি। 
অতঃপর লেখেন :
حسن اتفاق سے مولانا احمد صاحب سے بندہ کی ملاقات ہوئی، ان سے کہا کہ آپ پٹیہ میں ایک مدرسہ قائم کیجئے بندہ بھی معین کار رہے گا
একসময় মাওলানা আহমদ সাহেবের সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো। আমি তাঁকে বললাম, আপনি পটিয়ায় একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। আমিও এর তত্ত¡াবধান করব।
অতঃপর লেখেন :
باوجودیکہ وہ پٹیہ کا باشندہ نہیں ہے، نہ باشندگان پٹیہ سے ان کی ادنی شناسائی ہے، نہ مناسبت تھی، نہ ان کو وعظ ونصیحت کی عادت تھی، نہ چندہ وغیرہ فراہم کرنے کی بظاہر کوئی معقول صورت تھی ان وجوہ سے میری گذارش بیجوڑ تھی،
মাওলানা আহমদ সাহেব পটিয়ার বাসিন্দা ছিলেন না, না পটিয়ার বাসিন্দাদের সাথে তাঁর সামান্য পরিচিতি ছিল, না তাদের সাথে সম্পর্ক ছিল, তিনি ওয়াজ-বক্তৃতায়ও অভ্যস্ত ছিলেন না, বাহ্যত চাঁদা ইত্যাদি সংগ্রহ করার কোনো যৌক্তিক পন্থাও ছিল না এসব কারণে তাঁকে (মাওলানা আহমদ সাহেবকে) পটিয়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করার আহŸান করা একপ্রকার অযৌক্তিকই ছিল।
অতঃপর লেখেন :
تاہم جبکہ میں نے یہ درخواست پیش کی انہوں نے بلا تردد کہا کہ اگر آپ کہتے ہیں تو انشاء اللہ تعالی میں اس خدمت کے لئے تیار ہوں۔
এরূপ অযৌক্তিকতা সত্তে¡ও যখন আমি পটিয়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদন পেশ করলাম তিনি (মাওলানা আহমদ সাহেব) নিঃসংকোচে বলে উঠলেন, [যদি আপনি মুফতী আযীযুল হক (রহ.)] বলেন, তবে ইনশাআল্লাহ আমি (পটিয়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠার) এই খিদমতের জন্য প্রস্তুত আছি।
এই স্পষ্ট ইবারত থেকে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক যদি হযরত মুফতী আযীযুল হক (রহ.) ছিলেন, তবে প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন হযরত মাওলানা আহমদ ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)। হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) এই দীর্ঘ বক্তব্যে এই বিষয়টিই মূলত ফুটিয়ে তুলেছেন। যদিও ওই সময় নিয়মতান্ত্রিক কমিটি করে এ কাজ সম্পাদন করা হয়নি, কিন্তু হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর ভাষ্যে উঠে আসে বাস্তবতাটা এমনই ছিল। সেই কারণে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) নিজের বেলায় শব্দ ব্যবহার করেছেন ‘মুঈনে কার’ আর ইমাম সাহেব (রহ.)-এর ব্যাপারে বলেছেন ‘আমলী কদম উঠানে ওয়ালা আওয়াল শখস’।
 
বিভিন্ন কিতাবে দেখা গেল, হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর এই স্পষ্ট বক্তব্যটা স্বার্থান্ধতার স্ট্রিম রোলারে পিষ্ট হয়েছে। যা স্বয়ং হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর উদ্দেশ্য বিরোধী এবং তাঁর বক্তব্যের সরাসরি অপব্যাখ্যা। এসব অপব্যাখ্যার মাধ্যমে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর স্পষ্ট বক্তব্যকেই বরং চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে এবং সুকৌশলে তাঁর সম্মানে আঘাত হানা হয়েছে।
কারণ যেকোনো বিষয়ে ইতিহাসের অংশ কোন কোন শ্রেণির ব্যক্তি হতে পারে তারও একটা নীতি-আদর্শ আছে। প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে কাদের নাম আসতে পারে, ঘর নির্মাণের ইতিহাসে কোন কোন শ্রেণির লোকের নাম উল্লেখ করতে হয়, কোম্পানি গঠনের ইতিহাসে কাদের নাম আসবে, কোনো বিষয়ের তদন্ত রিপোর্টে কার কার নাম উল্লেখ থাকতে হবে এর বিধিবদ্ধ কিংবা সচরাচর কিছু নিয়মনীতি আছে। ওই আলেমের ব্যাখ্যায় মনে হবে স্বয়ং মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.) ওই নিয়মনীতিও জানতেন না বা বুঝতেন না! যেমন কোনো প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস যদি এভাবে লেখা হয় যে অমুক ব্যক্তি এই ঘরটি নির্মাণের সময় অমুক অমুক মিস্ত্রি ও অমুক অমুক বাবুর্চি তাঁর সহযোগী ছিলেন। দেখুন, এই ইতিহাসটা কার ইতিহাস হলো? এই ইতিহাসটা কখনো প্রতিষ্ঠানপ্রধানের হবে না বরং তা হবে প্রধান মিস্ত্রি, কন্ট্রাক্টর বা প্রধান বাবুর্চির। তাহলে কুতুবে আলম হযরত মুফতী সাহেবের (রহ.)-এর মতো বিশ্বসেরা ওলীকুল শিরোমণি, শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক কর্তৃক লিখিত ‘আমলী কদম উঠানে ওয়ালা আওয়াল শখস’ এই বাক্যের তাশরীহ করতে গিয়ে যে লেখক মিস্ত্রি আর বাবুর্চির কথা উল্লেখ করতে দ্বিধা করেননি তিনি এই ব্যাখ্যার মাধ্যমে নিঃসন্দেহে স্বয়ং হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর বক্তব্যকেই খাটো করেছেন। এই অপব্যাখ্যা থেকেই প্রতীয়মান হয় ব্যাখ্যাকারীর মাঝে স্বয়ং মুফতী সাহেব (রহ.)-এর কী পরিমাণ বিদ্বেষ ছিল। 
হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) তো শুধু ওই একটি বাক্য বলেই জামিয়া পটিয়ার ইতিহাস শুরু বা শেষ করেননি। বরং পূর্বে দীর্ঘ প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে এসেছেন। তাতে তিনি বলেছেন, পটিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অনেকের আকাক্সক্ষা ছিল। বড় বড় বুযুর্গ ব্যক্তি এর জন্য চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাঁদের হাতে তা ওজুদে আসেনি। অতঃপর হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন (রহ.)-এর কথা বলেছেন। তাঁদের পরামর্শের কথা বলেছেন। অতঃপর এই কাজে সরাসরি কে কে শরীক হতে পারেননি তাঁদের নামও উল্লেখ করেছেন। এই দীর্ঘ আলোচনার পরই বললেন, এই কাজে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণকারী ব্যক্তি হলেন হযরত ইমাম সাহেব (রহ.)। তাহলে ওই ব্যাখ্যাকারী কি বোঝাতে চেয়েছেন যে এই দীর্ঘ ইতিহাস মিস্ত্রি আর কামলাদের ইতিহাস ছিল? নাউজুবিল্লাহ। এই ব্যাখ্যা যদিও তিনি শুধু হযরত ইমাম সাহেব (রহ.)-কেই উদ্দেশ করে লিখেছেন; কিন্তু মূলত এর মাধ্যমে সরাসরি হেয়প্রতিপন্ন করেছেন হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) ও আকাবীরদের। 
এই অভাজন অবশ্যই পরে বিভিন্ন আলেম থেকে খবর নিয়ে দেখল, সত্যিই ওই আলেম আকাবীর ও আসলাফবিদ্বেষী এবং কোনো বাতিলপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। সুতরাং তাঁর লেখায় স্বয়ং হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) ও আকাবীরদের হেয়প্রতিপন্ন হওয়া খুব একটা আশ্চর্যের বিষয় ছিল না। বরং তাঁর অন্য বহু লেখায় আকাবীরদের প্রতি তাঁর বিদ্বেষ ও শত্রæতার বাস্তব চিত্র ফুটে ওঠে।
আরেকজন ব্যাখ্যাকারী নিজের উস্তাদকে সসম্মানে অপমান করার জন্য এত নীচু শব্দ পরিহার করে সামান্য ভদ্র শব্দ ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেছেন, একটি ঘর নির্মাণের বেলায় অনেক লোক থাকেন। ইঞ্জিনিয়ার থাকেন, পরিকল্পক থাকেন, জমি হামওয়ারকারী থাকেন ইত্যাদি। সবাইকে প্রতিষ্ঠাতা বলা যায় না। [সুতরাং ইমাম সাহেবও সেরূপ কিছু ছিলেন। তাই তাঁকে প্রতিষ্ঠাতাদের একজন বলা যাবে না।]
এই জায়গাটাতে তিনি যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে পারেননি তা হলো, কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস লিখতে গেলে সেখানে শুরুতে ইঞ্জিনিয়ার প্রমুখের নাম আসে না। বরং ইঞ্জিনিয়ার, কন্ট্রাক্টরদের নাম উল্লেখ করতে হয়, এমন কিছু স্থান বা সময় আছে। যেমন ইঞ্জিনিয়ার প্রমুখের নাম তখনই আসে, যখন কোনো নির্মাণকাজে ত্রæটি দেখা দেয় এবং সে ব্যাপারে তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করতে হয়, তখন ইঞ্জিনিয়ার, কন্ট্রাক্টর প্রমুখের নাম প্রকাশ করতে হয়। এই ব্যাখ্যাকারীর ব্যাখ্যা থেকে প্রতীয়মান হবে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর এই লেখাটি যেন একটি তদন্ত রিপোর্ট। কারণ, তিনি নিজে ব্যাখ্যা এবং উপমা দিয়ে বলতে চেয়েছেন, প্রতিষ্ঠাতা তো একজনই। বাকি যাঁদের নাম লিখেছেন তাঁরা কেউ পরামর্শদাতা, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ কন্ট্রাক্টর ছিলেন। 
অথচ হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) তো জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠার ইতিহাসই লিখেছেন। আর প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে প্রতিষ্ঠাতাদের নামই উল্লেখ করা হয়ে থাকে। হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.) কত সুন্দর ভাষায় ইতিহাস লিখলেন আর ব্যাখ্যাকারীগণ কতই না হীনম্মন্যতার পরিচয় দিলেন! হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.) পরামর্শদাতার নাম লিখলেন। অতঃপর নিজের অবস্থান পরিষ্কার করলেন। অতঃপর এই কাজে সর্বপ্রথম অংশগ্রহণকারীর নাম লিখলেন। আরো পরে গিয়ে কারা এর শুরুর শিক্ষক ছিলেন তাঁদেরও নাম লিখলেন। সেখানে হযরত ইমাম সাহেব রহ. এর নাম এনেছেন শিক্ষক হিসেবে। যে স্থলে যার মর্যাদা ও অবদান যেভাবে বর্ণনা করা দরকার সেভাই তিনি উপস্থাপন করেছেন। তাহলে এই ব্যাখ্যাকারী ইঞ্জিনিয়ার-কন্ট্রাক্টরের বিষয় কোন শব্দ থেকে টেনে আনলেন, তা বোঝাই মুশকিল। যেখানে পদবি ও কাজ সম্পর্কে স্বয়ং হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.) স্পষ্ট বলেই দিচ্ছেন সেখানে উপমা টেনে উরুফ দেখিয়ে এত পাঁচসাত করার কীই-বা প্রয়োজন ব্যাখ্যাকারীদের? আবার উপমাটার সাথে হযরত মুফতী সাহেবের বক্তব্যের সাথে দূরতম সম্পর্কও নেই। বরং এটি হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর স্পষ্ট বক্তব্যকে খাটো করারই নামান্তর।
যদি হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.) কোনো ঘর নির্মাণের কথা বলতেন তখন হয়তো আর্কিটেক্ট কার মাধ্যমে করা হয়েছে, কে কন্ট্রাক্টর ছিলেন, ইঞ্জিনিয়ার কে ছিলেনÑএসবের কথা উল্লেখ করতেন। সেই ক্ষেত্রেও আবার ওই ঘরের প্রতিষ্ঠাতাদের ইতিহাসের অংশ এসব ব্যক্তি হতে পারেন না। বরং ওই ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ার প্রমুখের নাম আসবে প্রাসঙ্গিকভাবে।
এই লেখক সহজভাবে বোঝানোর জন্য যে উপমা দিয়েছেন সেটা ঘর নির্মাণের উপমা। হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) তো এখানে ঘর নির্মাণের বর্ণনা দেননি। বরং একটি প্রতিষ্ঠান তার গোড়াপত্তনের পূর্বে কিভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা, পরামর্শদাতা এবং বাস্তব পদক্ষেপগ্রহণকারী কে ছিলেন তাঁদের কথাই উল্লেখ করেছেন। ঘর নির্মাণ তো আরো অনেক পরে হয়েছে। ঘর নির্মাণের কাহিনি তো কোনো প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে মূল অংশ বিবেচিত হয় না। জামিয়া পটিয়ায় পর পর কত ঘরই নির্মিত হয়েছে। কই এসব তো ইতিহাসের অংশ হিসেবে কেউ উল্লেখ করেন না। মূলত তা উল্লেখ করা হয় উন্নয়নের ইতিহাসে। প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে এসব কথা আসে না। সুতরাং ঘর নির্মাণের উপমা দিয়ে প্রতিষ্ঠার ইতিহাসকে ভিন্নভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা আমার কাছে অহেতুকই মনে হয়েছে। 
অতঃপর মুফতী সাহেব (রহ.) লেখেন :
انکے جواب سے مجھے حیرت ہوئی اور دل میں یقین ساہو گیا کہ پٹیہ میں مدرسہ قائم ہونیکا وقت قریب آگیا۔
অর্থাৎ মাওলানা আহমদ সাহেবের এই জবাবে আমি আশ্চান্বিত হলাম এবং অন্তরে একীনের মতো হয়ে গেল যে পটিয়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠার সময় কাছিয়ে গেছে।
এটি ছিল জামিয়া পটিয়া প্রতিষ্ঠার মূল প্রেক্ষাপট। হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর এই বক্তব্যে একজন কম ইলম অজ্ঞ লোকও বলতে পারবে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) জামিয়ার প্রতিষ্ঠাকাজে হযরতুল আল্লাম আল ইমাম আহমদ (রহ.)-কেই মূল ব্যক্তি হিসেবে চিত্রায়িত করতে চাচ্ছেন।
হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.) এক স্থানে লেখেন, হযরত শায়খুল মাশায়েখ (রহ.) আমাকে জাগ্রত অবস্থায় এবং মাওলানা আহমদ সাহেবকে (ইমাম সাহেব হুজুর) স্বপ্নাবস্থায় পটিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠার প্রতি ধাবিত করেন। মাওলানা আহমদ সাহেব স্বপ্নে দেখেন, হযরত শায়খ একদা তীব্র স্বরে বলেন, তুমি পটিয়ায় গিয়ে মাদরাসার কাজ করো এবং শরফ ভাটা হতে চলে আসো।
একবার পটিয়ার কিছু লোক তাদের পক্ষ থেকে জনৈক ব্যক্তিকে মাদরাসার পরিচালক নিযুক্ত করে কিছু বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে বিলি করেন। বিজ্ঞাপন সম্পর্কে অবগত হলে হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন সাহেব (রহ.) বললেন, আমার জানা মতে পটিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠায় যাঁদের অবদান রয়েছে তাঁরা হচ্ছেন মাওলানা ইস্কান্দার সাহেব, মাওলানা আহমদ সাহেব মোহরবী (ইমাম সাহেব) ও মুফতী আযীযুল হক সাহেব (রহ.)। উক্ত ব্যক্তিবর্গ ব্যতীত আর কাউকে (প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে) আমি চিনি না। (তাযকারায়ে জমীর, ১৩৯, জামিয়া পটিয়া ১৪)
যেখানে স্বয়ং হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.) ও হযরত শায়খুল মাশায়েখ মাওলানা জমীরুদ্দীন (রহ.)-এর উপর্যুক্ত স্পষ্ট ভাষ্য পাওয়া যায় সেখানে অন্য লেখকদের তাশরীহ দ্বারা কীই-বা আসে যায়?
তাযকারায়ে জমীরসহ বিভিন্ন কিতাবের কিছু রেফারেন্স ও জামিয়া পটিয়ার সিনিয়র উস্তাদ এবং প্রখ্যাত উলামায়ে কেরামের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, একসময় জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে কিছু লোক বাড়াবাড়ি করেছিলেন। নিজেদের প্রতিষ্ঠাতা দাবি করে কাগজ ছাপিয়েও বিলি করেছিলেন তাঁরা। তাতে জামিয়ার ব্যাপারে বিভ্রান্তি সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার লক্ষ্যে এর জবাব দিতে গিয়ে হযরত মুফতী আযীযুল হক (রহ.) একটি কসিদা রচনা করে ছিলেন।
পাঠকদের পড়ার সুবিধার্থে কুতুবে আলম হযরত মাওলানা শাহ মুফতী আযীযুল হক (রহ.)-এর লিখিত পুরো কসিদাটি তাযাকারায়ে আযীয রহ. থেকে এখানে তুলে ধরা হলো :
 
از قطب عالم علامہ شاہ مفتی عزیزالحق صاحب مرقدہ
بانئ جامعہ اسلامیہ (ضمیریہ قاسم العلوم) پٹیہ چاٹگام

یہ رشیدیؒ باغ ہو اور قاسمؒی گلزارہو 
یہ ضمیریؒ فیض کا اک خوشنما دَربار ہو
پر تو افگن ہو یہاں پر فیض ِامدادِ الٰہ 
سرپرستیٔ حسینیؒ قافلہ سالار ہو
از توجُّہات اشرفؒ ہو عُروج ِمدرسہ ـ 
برکت وفیضِ سعیدیؒ دستگیر و یار ہو
حسنِِ تدبیرِ حبیبیؒ برکت ِ احمد حسؒن 
ہمتِ قلبِ ودودیؒ رونقِ گلزار ہو
سدِّ اسکندر بنے یہ فتنئہ یاجوج سے 
فیضِ امجؒد کا سما اِس پر سدا مدرا رہو
اتباعِ سنتِ احمؐد ہو اسکی رنگ و بو 
حق تعالے کے خریداروں کا یہ بازار ہو
ہو نظامِ مدرسہ زیرِ لِواۓ احمدی
حق تعالےٰ کی ہدایت پیشواۓ کار ہو
اے خدا اِس دور ِ ظلمت میں ترییہ درسگاہ 
مطلعِ انوار ہو پھر مظہرِ اسرار ہو
علمِ ربانی کا یہ غارِحرا اور طُور ہو 
اِس میں عرفانِ کلیمؑی احمؐدی انوار ہو
خوشہ چینانِ ضمیؒری اِسکے ہیں انصارِ خاص 
یا الٰہی! حشر اُنکا در صفِ انصار ہو
سیزدہ صد ہشت و پنجا ہست سالِ ابتدا
 تا قیامت اے خدا یہ مدرسہ دُربار ہو
بانیٔ ناکارہ اِسکا ہے عزیز الحؒق ضعیف
فضل سے تیرے الٰہی! بیڑا اِسکا پار ہو

এই কসিদার শেষের পঙ্ক্তি হলো :
بانی ناکارہ اس کا ہے عزیز الحق ضعیف 
এই পঙ্ক্তি সম্পর্কে একজন লেখক লেখেন :
اس میں تصریح ہے اس بات کی کہ مدرسہ ضمیریہ کے بانی حضرت مفتی صاحب قدس سرہ ہی ہیں، متعدد بانی نہیں ، یہاں ہاٹہزاری مدرسہ کی طرح کئی بزرگوں نے مل کر مدرسہ کی بنیاد نہیں رکھی ہے، ہاں کوئی مشورہ میں شریک رہا، کسی نے پہلے جگہ دی، کسی نے پہلے سبق پڑھادیا، کوئی سب سے پہلے مدرس مقرر ہوئے، ان سب کو بانی نہیں کہا جاتاہے، جیسے کوئی گھر بنائے تو اس میں بھی کوئی پہلا معمار ہوتاہے، کوئی انجینیر ہوتاہے جو سب سے پہلے پلاننگ کرتاہے، کوئی پہلے زمین ہموار کرتاہے وغیرہ،یہ سب اس گھر کے بانی نہیں ہوتے، بنا کو صاحب منزل کی طرف نسبت کیا جاتاہے، جیسے بنی الامیر المدینۃیہی عرف کی دلالت ہے اور یہاں تو خود بانی کی صراحت ہے۔
এই ইবারতটি দেশের একজন স্বনামধন্য আলেমের। এই ব্যাপারে অধমের কিছু লেখা সামাজিক রীতি অনুযায়ী আদবের বরখেলাফ। তবে মুহাদ্দিসীন ও ফকীহদের রীতি অনুযায়ী কোনো নসের ওপর বিভিন্ন তাশরীহ করে তার মূল বিষয়টি বের করে আনা একটি জরুরি বিষয়। সেই দিক থেকে এই অভাজনের কিছু আরজ করার আছে।
সংক্ষিপ্ত নসের পাশাপাশি একই বিষয়ে অন্য নস থাকলে তা ওই সংক্ষিপ্ত নসের ব্যাখ্যা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে নিজের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা করার সুযোগ থাকে না। এই পঙ্ক্তির তাশরীহ করতে গিয়ে এই লেখক বললেন, এখানে স্পষ্ট বলা আছে যে জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা একমাত্র মুফতী আযীযুল হক (রহ.)। কয়েকজন প্রতিষ্ঠাতা নন। এখানে হাটহাজারী মাদরাসার মতো কয়েকজন বুজুর্গ মিলে মাদরাসার বুনিয়াদ রাখেননি। হ্যাঁ, কেউ মাশওয়ারায় অংশ নিয়েছেন, কেউ জায়গা দিয়েছেন, কেউ প্রথম সবক পড়িয়েছেন। কেউ সর্বপ্রথম মুদাররিস নিয়োজিত হয়েছেন।
এই ব্যাখ্যায় তিনি লিখেছেন تصریح ہے। অর্থাৎ ‘স্পষ্ট বলা আছে’ দাবিটা এই পর্যন্তের জন্য ঠিক আছে যে ‘এর প্রতিষ্ঠাতা হযরত মুফতী আযীযুল হক (রহ.)’। বাকি যেসব কথা তাশরীহে তিনি বলেছেন, সেগুলোর জন্য ‘তাশরীহ হে’ শব্দ সামঞ্জস্য নয়। কারণ এই পঙ্ক্তিতে ব্যাখ্যাকারীর বাকি বক্তব্যগুলো এবং ‘একমাত্র’ শব্দটির কোনো তাশরীহ বা স্পষ্ট বক্তব্য নেই। উলামায়ে কেরামই বলে থাকেন কোনো বিষয় বুঝতে হলে তার প্রেক্ষাপট দেখতে হবে। প্রেক্ষাপট জানার পর ওই নসের ব্যাখ্যা করা যাবে। হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর এই কসিদাটার একটা প্রেক্ষাপট আছে। একটি ঘটনাকে সামনে রেখে তিনি এই পঙ্ক্তি বলেছেন। তার অনেক দিন পরে তিনি নিজে জামিয়া পটিয়ার ইতিহাসটি লিপিবদ্ধ করান। ওই ইতিহাসে যা লিপিবদ্ধ করিয়েছেন তাতে আরো অনেক তাশরীহাত ও স্পষ্ট বক্তব্য আছে। সব মিলিয়েই তো মূল বিষয়টির ব্যাপারে আলোকপাত করার দরকার ছিল। কিন্তু এই লেখক তা করেননি। বরং নিজে থেকেই প্রথমে ‘তাসরীহ হে’ লিখে বাকি ব্যাখ্যাগুলোও তার সাথে সম্পর্কযুক্ত করে দিয়েছেন। 
তিনি ‘তাসরীহ হে’ শব্দটা বলার পর যে লম্বা বক্তব্য লিখলেন, তা যদি উল্লিখিত পঙ্ক্তিতে স্পষ্ট বা তাশরীহই থাকত তবে তাঁর নিজে থেকে এত লম্বা তাশরীহ লেখার কী প্রয়োজন ছিল। তাঁর দাবি মতে তা তো স্পষ্টই আছে। তিনি এসব লেখার অর্থই হলো বিষয়গুলো তাসরীহ বা স্পষ্ট নেই। সুতরাং তাঁর ‘তাসরীহ হে’ দাবির সাথে তাঁর লেখাগুলোরও কোনো সামঞ্জস্যতা পাওয়া যায় না। 
অতঃপর তিনি একটি যুক্তি দিলেন। অর্থাৎ একটি ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে শুরুতে কেউ ইঞ্জিনিয়ার থাকেন, কন্ট্রাক্টর থাকেন, কেউ জায়গার ব্যবস্থা করেন। সবাইকে প্রতিষ্ঠাতা বলা যায় না। বরং ঘরের মালিকই প্রতিষ্ঠাতা হয়ে থাকে। এই উপমাটি কিন্তু মালিকানা ঘরের উপমা। মাদরাসায় কারো মালিকানা থাকে না। অধিকন্তু পূর্বেও উল্লেখ করেছি হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) তাঁর লিখিত দস্তাবেজে কোনো ঘর নির্মাণের বর্ণনা দেননি। বরং একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেছেন। সুতরাং এই উপমার সাথে মূল বর্ণনার সাথে কোনো সম্পর্কই নেই। 
তথাপি ঘরের ক্ষেত্রেও এই কথা প্রযোজ্য যে, যদি কেউ ঘর দান করে তাকে উক্ত ঘরের প্রতিষ্ঠাতা বলা যায়। শুধু জায়গার মালিককে প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়, তা নিতান্তই ভুল ব্যাখ্যা। মাদরাসায় যদি কেউ কোনো ভবন দান করেন, দানকারীর নাম সেখানে লাগিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ আছে। তার অর্থ হলো এই ভবনটি ওই লোকের অনুদানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সুতরাং এই লেখক যে উপমা দিয়ে জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠার অবদানের ক্ষেত্রে হযরত ইমাম সাহেব হুজুরকে বিস্মৃত করতে চাচ্ছেন তা কোনোভাবেই ওই স্থানে প্রযোজ্য হয়নি।
যেখানে একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে এই কসিদা লেখার পর হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) হযরত ইমাম সাহেব (রহ.)-কে প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে শামিল করার জন্য লম্বা ইতিহাস লেখালেন, দীর্ঘ স্পষ্ট বক্তব্য দিলেন সেখানে অন্য শারেহীনের ব্যাখ্যার কীই-বা মূল্য হতে পারে। যদি এই লেখকদের ব্যাখ্যাই সঠিক হয় তবে নিশ্চয়ই হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর লেখানো দীর্ঘ ইতিহাস ভুল প্রমাণিত হবে। কারণ এই পঙ্ক্তিও তিনি লিখেছেন আবার দীর্ঘ ইতিহাসও তিনি লিখিয়েছেন। 
মূলত এসব ব্যাখ্যাকারীর ব্যাখ্যার কারণেই উভয় লেখার মধ্যে অসামঞ্জস্যতা সৃষ্টি হচ্ছে। যদি তাদের ব্যাখ্যা গ্রহণ করা না হয় তবে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর উভয় লেখাতে কোনো প্রকার অসামঞ্জস্যতা থাকে না। মুহাদ্দিস ফকীহগণ নসের ব্যাখ্যা করেছেন একাধিক নসের মধ্যে তাজাদ দূর করে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য। সেগুলোই আসল ব্যাখ্যা। যে ব্যাখ্যার কারণে নতুন করে তাজাদ বা অসামঞ্জস্যতা সৃষ্টিই হবে তা তো প্রকৃত ব্যাখ্যা হতে পারে না। বরং ওই সময় নস বহাল রেখে সমস্ত ব্যাখ্যা-অপব্যাখ্যা ছেড়ে দিতে হয়। 
যদি হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর এই পঙ্ক্তি থেকে হাছর উদ্দেশ্য না করা হয় তবে তো এই পঙ্ক্তি ও তাঁর লিখিত ইতিহাসের মধ্যে কোনো অসামঞ্জস্যতাই পাওয়া যায় না। সুতরাং জোর করে আমি কোন উদ্দেশ্যে এককভাবে হযরত মুফতী সাহেব হুজুরকে ‘বানী’ বলে হাসর উদ্দেশ্য করতে যাব। এরূপ হাসর উদ্দেশ্য করার কারণে নতুন করে পঙ্ক্তিতেও ব্যাখ্যা সংযোজন করতে হচ্ছে, উপমা দিয়ে বোঝানোর প্রয়োজন পড়ছে অন্যদিকে স্বয়ং মুফতী সাহেব (রহ.)-এর লিখিত ইতিহাসেও বিভিন্ন অংশে অপব্যাখ্যা করতে হচ্ছে। দুনিয়ার কোনো শারেহীন, মুফাসসির কোনো বিষয়ে অহেতুক এরূপ তকল্লুফাতের আশ্রয় নিতে দেখা যায়নি।
একটি বিষয় জানা থাকা প্রয়োজন, নসের ক্ষেত্রে প্রাধান্য কার? কবিতার নাকি ইবরাতের? কবিতাতে বিভিন্ন প্রকার সীমাবদ্ধতা থাকে। তাই তাতে সব কথা স্পষ্ট বোঝা যায় না। সে কারণে প্রমাণিত সত্য হলো নসের ক্ষেত্রে কবিতার প্রাধান্য হয় না। বরং নসের ক্ষেত্রে প্রাধান্য হয় সরাসরি ইবারতের। পবিত্র কোরআন-হাদীসই এর প্রকৃত নজির ও দলিল। এই কারণে পৃথিবীর কোনো সংবিধান কবিতায় রচিত হয়নি। বরং যেখানে স্পষ্টতা প্রয়োজন সেখানে সরাসরি ইবারত লেখা হয়ে থাকে। কিন্তু কী কারণে জানি না জামিয়া পটিয়ার ইতিহাস লেখকগণের কতিপয় প্রাধান্য দিচ্ছেন এই কসিদায় উল্লিখিত পঙ্ক্তিকেই। স্বয়ং হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর লিখিত স্পষ্ট ইতিহাস বাদ দিয়ে এবং তাতে অপব্যাখ্যা করে জামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা নির্ণয়ে সব সময় দলিল হিসেবে উপস্থাপন করছেন এই কবিতাকেই। তাতে বোঝা যায়, হয়তো এই কবিতা লেখার প্রেক্ষাপট তাঁদের জানা নেই অথবা জানা থাকলেও কোনো অদৃশ্য কারণে এই কাজ করছেন।
যদি নাসেখ মনসুখের নীতির দিক থেকে বিষয়টি বিবেচনা করা হয় তবে তো এসব ব্যাখ্যাকারীর ব্যাখ্যাগুলোর অসারতা আরো প্রকট হবে। কারণ কুতুবে আলম হযরত আল্লামা মুফতী আযীযুল হক সাহেব (রহ.) প্রথমে একটি পরিস্থিতিকে শান্ত করার জন্য তাঁর কসিদায় ওই পঙ্ক্তি লিখেছেন। ওই পঙ্ক্তি দেখে পরবর্তীতে কেউ হযরত মুফতী সাহেব হুজুরকেই একক প্রতিষ্ঠাতা বলে ব্যাখ্যা করার আশঙ্কা থেকে যাবে বিধায় তিনি নিজেই স্পষ্ট ভাষায় পুরো ইতিহাসটি লেখিয়ের জবাব দিয়ে দিয়েছেন। যাতে পরের প্রজন্মকে কোনো বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যার শিকার হতে না হয়। সুতরাং বর্তমান ব্যাখ্যাকারীদের দাবি মতে যদি উক্ত পঙ্ক্তি থেকে হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.)-কেই একক প্রতিষ্ঠাতা বলা উদ্দেশ্য ধরা হয় তবে পরবর্তী লিখিত ইতিহাস এই পঙ্ক্তির জন্য নাসেখই বলতে হবে। কারণ হজরত মুফতী সাহেব হুজুর রহ. এই পঙ্ক্তি লেখেন ১৩৫৯/৬০ এর দিকে। আর ওই ইতিহাস লেখান ১৩৬৮ হি. এর দিকে। যখন মাদ্রাসায় দাও রায়ে হাদিস পর্যন্ত পড়ালেখা আরম্ভ হয়ে গিয়েছে। আর এসব ব্যাখ্যাকারীর ব্যাখ্যা বাদ দিয়ে যদি হযরত মুফতী সাহেব হুজুরের ভাষ্য ও প্রেক্ষাপটের দিকে নজর দেওয়া হয় তবে বলতে হবে লিখিত ইতিহাসটি ওই পঙ্ক্তির জন্য তাশরীহ ও ব্যাখ্যা, যা হযরত মুফতী সাহেব হুজুর নিজেই লিখে দিয়েছেন।  এই দুইয়ের বাইরে যাওয়ার আর কোনোই সুযোগ নেই। আমি মনে করি, দ্বিতীয় মতটিই সর্বোত্তম। তখন বোঝা যাবে পঙ্ক্তিটি হযরত মুফতী সাহেব হুজুরের (রহ.) ইবারত আর লিখিত দস্তাবেজ তাঁরই লিখিত শরাহ। এমতাবস্থায় আর কোনো ইশকাল বা অস্পষ্টতা থাকবে না। সাথে সাথে এর মাধ্যমে পরবর্তী শারেহীনদের যাবতীয় ব্যাখ্যার অসারতাও প্রমাণিত হয়। 
শেয়েরের সীমাবদ্ধতা থাকার পরও হযরত মুফতী সাহেব হুজুর রহ. এই কসীদাতেই ইশারা দিয়ে যাচ্ছেন যে, প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আরো কিছু সহযোগী রয়েছেন। তিনি বানী সম্পর্কে ওই পঙক্তি বলার আগে বলেছেন,
خوشہ چینان ضمیری اس کے ہیں انصار خاص
অর্থাৎ শায়খুল মাশায়েখ হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন রহ. এর খলীফাদের মধ্যে কয়েকজন জামিয়ার প্রতিষ্ঠায় বিশেষ সহযোগী রয়েছেন। এটি বলে তিনি আসলে বলে দিয়েছেন যে, আমি সামনে যে পঙক্তিটি ‘বানী’ সম্পর্কে বলব তা থেকে হাসর উদ্দেশ্য করে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্যদের অবদান অস্বীকার সুযোগ নেই। বরং প্রতিষ্ঠাসহযোগী আরো আছেন। তা থেকেও স্পষ্ট হয় হযরত মুফতী সাহেব হুজুর রহ. পরে যে ইতিহাস লিখিয়েছেন সেটি এই কসীদার ব্যাখ্যা।
হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) তো জামিয়া প্রতিষ্ঠায় যার যেটুকু অবদান ছিল সব কিছু স্পষ্ট ভাষায় লিখে দিয়েছেন। কারো অবদান অস্বীকার করার মতো কোনো প্রকার মনমানসিকতা তাঁর মাঝে লক্ষ করা যায়নি। কারণ তিনি তো কুতুবে আলম। ওলীকুল শিরোমণি। লক্ষ-কোটি উলামায়ে কেরামের সেরেতাজ। পরবর্তীতে বিভিন্ন স্বগতোক্তির আশ্রয় নিয়ে তাঁর এই খুলুসিয়্যাতকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনো অর্থ হয় না। বরং এরূপ কিছু করতে চাইলে এই মহান বুজুর্গের অভিশাপও পড়তে পারে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। 
কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য প্রতিষ্ঠাতাদের কেউ এককভাবে বলতেই পারেন এর প্রতিষ্ঠাতা আমি। হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে উক্ত পঙ্ক্তিতে তেমনই বলেছেন। এমন পরিস্থিতে এরূপ বলে প্রতিপক্ষের ছড়ানো বিভ্রান্তি ও ফেতনা প্রতিরোধ করা শুধু সমীচীনই নয় বরং আবশ্যকই ছিল। যেমন হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.) লেখেন, এ ধরনের একটি ঘটনায় হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.) আমাকে বলেছিলেন আপনি একমত থাকলে আমি ফিতনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলে তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্র গুঁড়িয়ে দিতে প্রস্তুত আছি। তখন হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.) তাঁকে সান্ত¦না দেন এবং হেকমতের সাথেই কাজ করতে বলেন। সেরূপ অসন্তোষজনক পরিস্থিতিতেই হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) উক্ত পঙ্ক্তি উল্লেখ করে পরিস্থিতি শান্ত করেছিলেন। যা ছিল একপ্রকার জরুরি অবস্থা। এই ব্যাপারে তাঁদের মধ্যে পরামর্শও ছিল। যেমন হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) এই কসিদা লিখে মাওলানা ইস্কান্দার সাহেবকে দেখান। মুফতী সাহেব (রহ.)-এর এই কসিদার প্রতিটি মিসরার শেষে ‘হে’ শব্দ যুক্ত ছিল। মাওলানা ইস্কান্দার সাহেব (রহ.) ‘হে’র স্থলে ‘হো‘ লেখার পরামর্শ দেন, যাতে তা দাবি না হয়ে দু’আতে পরিণত হয়। হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-ও তাঁর পরামর্শ মতে হে কে হোতে বদলে দেন। উদ্ভূত পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার অনেক দিন পর হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) নিজেই সবিস্তারে জামিয়া প্রতিষ্ঠার ইতিহাসটি লেখান। এখন কেউ যদি হাশিয়া সংযুক্ত করে নিজে থেকেই বলেন, এই পঙ্ক্তির মাধ্যমে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) এককভাবে আমিয়ার প্রতিষ্ঠাতার দাবি করেছেন, তিনি বোঝাতে চেয়েছেন জামিয়া প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আর কারো অবদান নেই, তাহলে তাঁরা হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর রুহানি বদদু’আ ছাড়া কীই-বা অর্জন করতে পারেন। কারণ পরবর্তীতে এই পঙ্ক্তির কারণে যাতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয় সেই জন্য তিনি নিজেই জামিয়া প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে স্পষ্ট ভাষায় অন্যদের অবদানের কথা লিখে দেন। সুতরাং আমরা কেন নিজে থেকেই এই তাশরীহ করতে যাব যে, এখানে তাসরীহ আছে, জামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা একমাত্র হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.)। জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠায় আর কেউ শরীক ছিলেন না। হাটহাজারী মাদরাসার মতো জামিয়া পটিয়ার বানী কয়েকজন নন। পঙ্ক্তিটি লেখার পর হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) কর্তৃক এত দীর্ঘ ইতিহাস লিপিবদ্ধ করানোর উদ্দেশ্য কি এটিই ছিল?
এখন মূল বিষয় বলি, হযরত ইমাম সাহেব রহ. ছিলেন মোহরা নিবাসী । তিনি পটিয়ায় এসে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করছেন। এটি অনেকের কাছে সহজে গ্রহণ করে নেওয়ার মত ছিল না। কারণ তখন পটিয়ায় কিছু বড় আলেম ও ছিলেন। হযরত মুফতী সাহেব হুজুর রহ. সে রূপ অনেক আলেমের সাথে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তখন কেউ সাড়া দেননি। ইমাম সাহেব হুজুর রহ. বাইরে থেকে এসে যখন মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেই ফেললেন তখন তাঁদের টনক নড়ে উঠে। সেই কারণেই মূলত কিছু হামাআকীদার আলেম মাদ্রাসা দখল করার চেষ্টা করে। এই বিষয় জানাতে ইমাম সাহেব হুজুর জিরি মাদ্রাসায় যান। প্রথমে জিরি মাদ্রাসার মুহতামিম সাহেব সবার মুরব্বি হযরত মাওলানা আহমদ হাসান সাহেবকে বিষয়গুলো জানান। তিনি চিন্তা করলেন মাওলানা আহমদের হাতে তো মাদ্রাসা তো প্রতিষ্ঠা হয়ে গেল কিন্তু কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে কাউকে মুহতামিম বানিয়ে না দেওয়ার কারণেই হয়ত অন্যরা নাক গলানোর চেষ্টা করছে। অন্য দিকে হযরত মুফতি সাহেব রহ. কে জিরি মাদ্রাসায় প্রয়োজন। সেই কারণে তিনি ইমাম সাহেবকে বললেন তুমি মুহতামিম এর দায়িত্ব গ্রহণ করো । কারণ এতদিন কষ্ট করে তুমি মাদ্রাসা কে আল্লাহর কৃপায় এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছ। 
হযরত ইমাম সাহেব রহ. হযরত মুহতামিম সাহেবের এই প্রস্তাব শুনে হতবিহবল হয়ে হযরত মুফতি সাহেব রহ. এর কাছে এসে যাবতীয় বিষয় বলেন। হযরত মুফতি সাহেব রহ. চিন্তা করলেন ইমাম সাহেব মোহরার বাসিন্দা। এমতাবস্থায় যদি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ইমাম সাহেব এতদিন যেভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তা আরো প্রবল রূপ ধারণ করতে পারে। হতে পারে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার যে মহত উদ্দেশ্য তাও ভেস্তে যাবে। তাই তিনি ইমাম সাহেবকে পরামর্শ দিলেন আমি যেমন দূরে আছি আপাতত আপনিও দূরে থাকেন। 
এরপর যখন দখলদাররা ব্যার্থ হতে লাগল হযরত মুফতি সাহেব রহ. নিজের ইস্তিখারা করে কিছুদিনের মধ্যে পটিয়ায় চলে আসেন। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে নেন। সেই সময় এই কসীদাটি লিখে দখলদারদের জবাব দেন। এসব 1361 হিজরী পর্যন্ত এর ঘটনা। এরই মধ্যে হযরত ইমাম সাহেব কেউ মাদ্রাসায় নিয়ে আসেন। কিছু আলেমকে ওই ঘটনার জেরে বিদায়ও করেন। 1368 হিজরী পর্যন্ত মাদরাসা দাও রায়ে হাদিস পর্যন্ত উন্নিত হয়। তাতে হযরত ইমাম সাহেবকে জামিয়ার শায়খুল হাদীস বানান। এভাবে মাদ্রাসা যখন স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছে তখন হযরত মুফতি সাহেব রহ. মাদ্রাসার বিস্তারিত ইতিহাস লেখিয়ে ওই ইতিহাস রেকর্ড ভুক্ত করেদেন। এই হলো বাস্তবতা। সুতরাং এককভাবে ওই কসিদাকে জামিয়ার ইতিহাসে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করার কোনোই সুযোগ নেই।
ইতিহাসে যে হযরত মুফতি সাহেব রহ লিখেছে ইমাম সাহেব পটিয়ার বাসিন্দা ছিলেন না পটিয়ার মানুষের সাথে পরিচিতও ছিলেন না তারপরেও তিনি বলেন দিলেন আপনি বললে আমি প্রস্তুত। এই কথাটা নুকতা বাধাল ওকু হিসেবে বলেছেন। এর মধ্যেই ইশারা আছে হযরত ইমাম সাহেব পটিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অনেক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। বহু প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন। তারপরেও হাল ছাড়েননি। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেই ছেড়েছেন। 

এই অভাজনের মতে, এসব তাশরীহাত যে উদ্দেশ্যেই হোক না কেন, কারো জন্য সুফল বয়ে আনবে না। বরং হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) যে কথা যেভাবে বলেছেন সেভাবে তার স্পষ্ট দিকটির ওপর থাকাই সকলের জন্য কল্যাণকর। এখানে তো সিফাতে বারী তা’আলার মাসআলা নয় যে, স্পষ্ট নসের ওপর বহাল থাকলে শিরক হয়ে যাবে। সে কারণে তার তাবীল বা ব্যাখ্যা করতে হবে।
হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর উক্ত কসিদায় আরেকটি পঙ্ক্তি আছে :
ہو نظام مدرسہ زیر لوائے احمدی
এই পঙ্ক্তিটি নিয়েও বিভিন্ন মসলক দেখা যায়। আবার দেখা যায়, একইজনের বিরোধপূর্ণ একাধিক তাশরীহ ও ভাষ্য।
আমরা মনে করি, সরল কথা হলো এই, হযরত মুফতী আযীযুল হক (রহ.) তাঁর লিখিত ইতিহাসে যাঁদের অবদানের কথা বলেছেন সবার ব্যাপারেই এই কসিদায় উল্লেখ করেছেন। অথবা এমনও বলা যায়, হযরত মুফতী সাহেব হুজুর রহ. এই ঐতিহাসিক কবিতায় যাদের নাম উল্লেখ করেছেন, জামিয়ার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাঁদের কার কোন অবদান ছিল সেটা স্পষ্ট করার জন্য পরে সবিস্তারে ইতিহাস আকারে লিখয়েছেন। যেহেতু হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) জামিয়া প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে হযরত মাওলানা ইস্কান্দার সাহেব ও মাওলানা আহমদ ইমাম সাহেবের কথা বলেছেন সেই হিসেবে এই কসিদাতে উল্লিখিত পঙ্ক্তি থেকে ইমাম সাহেব হুজুরই উদ্দেশ্য। কারণ তিনি ওই সময় জামিয়া পটিয়ার নাজেমে তালিমাত ছিলেন। তাই نظام مدرسہ থেকে নাজেমে তালীমাত হযরত মাওলানা আহমদ ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)-এর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
তাযকিরায়ে আজীজের একটি সংস্করণে এই পঙ্ক্তির তাশরীহে হযরতুল আল্লাম মাওলানা সুলতান যওক নদভী (দা.বা.) লেখেন :
لوائے احمدی الخ: استاذنا حضرت مولانا احمد صاحب مہروی خلیفہ شیخ المشائخ اور مدرسہ پٹیہ کے سب سے پہلے مدرس کی طرف اشارہ ہے، آپ کو حضرت مفتی صاحبؒ سے شرف تلمذ حاصل ہے، اگر چہ طالب علمی میں معاصر بھی ہے، بنائے مدرسہ کے وقت تدریسی خدمت کے لیے سب سے پہلے اقدام کرنے والے اور حضرت کی ہمت افزائی کرنے والے تھے، حضرت جن دونوں جیری رہ کر پٹیہ میں مدرسہ قائم کرنے کی کوشش فرمارہے تھے، ان دنوں حضرت امام صاحب نے حضرت سے پہلے پہنچ کر کام شروع کردیا تھا، نصف صدی سے زائد مدت تک ناظم تعلیمات ، صدر المدرسین اور شیخ الحدیث کے عہدہ پر فائز رہے اور صحیح بخاری شریف کا درس دیتے رہے، فی الحال صاحب فراش اور ضعف پیری میں مبتلا ہیں۔
لوائے احمدی الخ লেওয়ায়ে আহমদী থেকে আমার উস্তাদ মোহরা নিবাসী মাওলানা আহমদ সাহেবই (রহ.) উদ্দেশ্য। যিনি শায়খুল মাশায়েখ (রহ.)-এর খলিফা। তিনি পটিয়া মাদরাসার সর্বপ্রথম শিক্ষক। হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর ছাত্র। যদিও ছাত্র অবস্থায় সহপাঠী ছিলেন। মাদরাসা প্রতিষ্ঠার সময় তাদরীসী খিদমাত আঞ্জাম দেওয়ার জন্য সর্বপ্রথম পদক্ষেপ গ্রহণকারী এবং হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-কে সাহস দানকারী ছিলেন। যে সময় মুফতী সাহেব (রহ.) জিরি মাদরাসায় অবস্থান করে পটিয়ায় মাদরাসা স্থাপনের চেষ্টায় রত ছিলেন, সে সময় হযরত আল ইমাম আহমদ সাহেব মুফতী সাহেবের পূর্বে পটিয়াতে গিয়ে কাজ আরম্ভ করেন। তিনি অর্ধশতাব্দী থেকে বেশি, নাজেমে তালীমাত তথা শিক্ষা পরিচালক, সদরুল মুদাররিসীন এবং শায়খুল হাদীসের পদ অলংকৃত করেন। সহীহ বোখারী শরীফের দরস দিতে থাকেন। বর্তমানে বৃদ্ধাবস্থায় শয্যা শায়িত রয়েছেন। 
এখানেاحمدی  রয়েছে, কোনো কোনো কপিতে তা হুজুরে পাক (সা.)-এর কথাই উদ্দেশ্য।”
আমি এখানে প্রথমে তাযকিরায়ে আজীজ উর্দু সংস্করণ থেকে উর্দু ইবারত উল্লেখ করলাম। পরে তাযকিরায়ায়ে আজীজ বাংলা সংস্করণ থেকে বাংলা উল্লেখ করলাম। উভয়ের মধ্যে সামান্য তফাত আছে। উর্দুতে বলা হয়েছে হযরত ইমাম সাহেব হুজুর যদিও হযরত মুফতী সাহেব হুজুরের হামআসর তথা সমসাময়িক ছিলেন; কিন্তু ছাত্রও ছিলেন। বাংলাতে তা নেই। আবার বাংলাতে একটি বিষয় বর্ধিত আছে। বর্ধিত অংশে যা বলতে চেয়েছেন তা হলো, ওই পঙ্ক্তি সম্পর্কে কোনো কোনো কপিতে আছে যে, তা থেকে মাওলানা আহমদ (রহ.) উদ্দেশ্য নন বরং রাসূলুল্লাহ (সা.) উদ্দেশ্য।
মূল ঘটনা হলো, তাশরীহকারীরা প্রথমে ইমাম সাহেব হুজুরকে জামিয়া পটিয়ার প্রথম উস্তাদ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। যাতে প্রতিষ্ঠাতাদের একজন বলা না যায়। অথচ হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) কোথাও এ কথা বলেননি যে আমি তাঁকে মুদাররিস ঠিক করলাম। বরং যেখানে যেখানে ইমাম সাহেব (রহ.)-এর কথা এসেছে, সেখানে মাদরাসার প্রতিষ্ঠার কথাই বলেছেন। যেমনÑ
১। হযরত মুফতী আযীযুল হক (রহ.) লেখেনÑ
لیکن قصبہ پٹیہ کے ماحول کی ہدایت اور وہاں دینی درسگاہ قائم کرنے کی خدمت ان حضرات کے برگزیدہ ہاتھوں سے انجام نہ پا کر ان کے غلاموں کے ہاتھوں سے انجام پانا مقدر الہی تھا۔
এখানে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) কী বললেন, তার সারমর্ম হলো, যে সকল বুজুর্গানেদ্বীন পটিয়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে ছিলেন, তাঁদের হাতে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার কাজ সম্পন্ন না হয়ে আমরা (তথা স্বয়ং মুফতী সাহেব হুজুর ও অন্যান্য যাঁরা প্রতিষ্ঠার মধ্যে শরীক ছিলেন সেই) গোলামদের হাতেই পটিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠাকাজ সম্পন্ন হওয়া তাকদীরে লেখা ছিল।
২। হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) বলেনÑ
چنانچہ اس مبارک اشارہ کی برکت سے کام کا سلسلہ اس طرح شروع ہوا کہ مولنا اسکندر صاحب بلاشکرت عملی اس خدمت کی طرف اپنی روحانی توجہ مبذول فرماتے رہے اور احقر عزیز الحق مدرسہ جیری میں مدرس تھا اور وہاں کی تدریس پر قائم رہتے ہوئے قصبہ پٹیہ میں مدرسہ قائم کرنے کی تدابیر میں مصروف رہا، اس خدمت میں عملی قدم اٹھانے والا اول شخص مولانا احمد صاحب مہروی ہیں جو فی الحال مدرسہ پٹیہ میں امام صاحب کے نام سے مشہور ہیں اور درس حدیث کا کام انجام دیتے ہیں۔
সুতরাং হযরত জমীরুদ্দীন সাহেব (রহ.)-এর মোবারক ইশারায় এই মোবারক কাজের সূচনা এভাবে হয়, ১. মাওলানা ইস্কান্দার সাহেব কাজে অংশ না নিয়ে এই খিদমতে নিজের রুহানি তাওয়াজ্জুহ দিতে থাকেন। ২. আহকর আযীযুল হক জিরি মাদরাসায় মুদাররিস ছিলাম, সেখানে অধ্যাপনার পাশাপাশি পটিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জন্য তদবির চালাতে থাকি। ৩। মাদরাসা প্রতিষ্ঠার এই খিদমতে কার্যত বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণকারী সর্বপ্রথম ব্যক্তি হলেন মাওলানা আহমদ সাহেব মোহরবী, যিনি বর্তমানে জামিয়া পটিয়ায় ইমাম সাহেব হিসেবে খ্যাত এবং মুহাদ্দিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
৩। হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) লেখেনÑ
حسن اتفاق سے مولانا احمد صاحب سے بندہ کی ملاقات ہوئی، ان سے کہا کہ آپ پٹیہ میں ایک مدرسہ قائم کیجئے بندہ بھی معین کار رہے گا
একসময় মাওলানা আহমদ সাহেবের সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো। আমি তাঁকে বললাম, আপনি পটিয়ায় একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। আমিও এর তত্ত¡াবধান করব।
৪। হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) লেখেনÑ
باوجودیکہ وہ پٹیہ کا باشندہ نہیں ہے، نہ باشندگان پٹیہ سے ان کی ادنی شناسائی ہے، نہ مناسبت تھی، نہ ان کو وعظ ونصیحت کی عادت تھی، نہ چندہ وغیرہ فراہم کرنے کی بظاہر کوئی معقول صورت تھی ان وجوہ سے میری گذارش بیجوڑ تھی،
تاہم جبکہ میں نے یہ درخواست پیش کی انہوں نے بلا تردد کہا کہ اگر آپ کہتے ہیں تو انشاء اللہ تعالی میں اس خدمت کے لئے تیار ہوں۔
মাওলানা আহমদ সাহেব পটিয়ার বাসিন্দা ছিলেন না, না পটিয়ার বাসিন্দাদের সাথে তাঁর সামান্য পরিচিতি ছিল, না তাদের সাথে সম্পর্ক ছিল, তিনি ওয়াজ-বক্তৃতায়ও অভ্যস্তও ছিলেন না, বাহ্যত চাঁদা ইত্যাদি সংগ্রহ করার কোনো যৌক্তিক পন্থাও ছিল না। এসব কারণে তাঁকে (মাওলানা আহমদ সাহেবকে) পটিয়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করার আহŸান করা একপ্রকার অসমীচীনই ছিল।
এতদ অযৌক্তিকতা সত্তে¡ও যখন আমি পটিয়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদন পেশ করলাম তিনি (মাওলানা আহমদ সাহেব) নিঃসংকোচে বলে উঠলেন, যদি আপনি (মুফতী আযীযুল হক (রহ.) বলেন, তবে ইনশাআল্লাহ আমি (পটিয়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠার) এই খিদমতের জন্য প্রস্তুত আছি।)
অতঃপর মুফতী সাহেব (রহ.) লেখেনÑ
انکے جواب سے مجھے حیرت ہوئی اور دل میں یقین ساہو گیا کہ پٹیہ میں مدرسہ قائم ہونیکا وقت قریب آگیا۔
অর্থাৎ মাওলানা আহমদ সাহেবের এই জবাবে আমি আশ্চর্য হলাম এবং অন্তরে একীনের মতো হয়ে গেল যে পটিয়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠার সময় কাছিয়ে গেছে।
একজন শিক্ষক রাখার জন্য তিনি ওই জায়গার বাসিন্দা কি না, তিনি ওয়াজ করতে পারেন কি না, ওই এলাকার বাসিন্দার সাথে পরিচিত কি না এসব কি দেখা হয়? হযরত মুফতী সাহেব হুজুর রহ. এসব চিন্তা করছেন এই জন্য যে আমি যে তাঁকে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার প্রতি উৎসাহ যোগাচ্ছি এসব শূন্যতার কারণে তিনি কোনো ‘না’ করছেন কি না? সেটাই দেখার বিষয়। তিনি যখন ‘না’ করলেন না তখনই হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) চিন্তা করলেন নিশ্চয়ই তিনি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। সেই কারণেই তিনি বলেছেন, পটিয়াতে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ দিন থেকে যে খাহেশ আকাবিরদের মধ্যে বিরাজ করছিল এবং আমিও আমার শায়খের ইশারার উপর ভিত্তি করে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করছি সে আশা মাওলানা আহমদের মাধ্যমে বাস্তবে রূপ নিবে ইনশাআল্লাহ। তা থেকে বোঝা যায় যারা হযরত ইমাম সাহেবকে শুধু প্রথম শিক্ষক আখ্যা দিয়ে প্রতিষ্ঠার যাবতীয় অবদান থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চাচ্ছেন তাদের এই ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ ভুল এবং এটি পরিকল্পিত।
হযরত মুফতী আযীযুল হক (রহ.)-এর এই পুরো বয়ানে কোন জায়গাটাতে আছে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) ইমাম সাহেব হুজুরকে মুদাররিস তথা উস্তাদ ঠিক করলেন। বরং সব বক্তব্যেই তিনি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেই বলেছেন।
তাহলে তাশরীহকারীগণ এই কথা কোথা থেকে পেলেন যে ইমাম সাহেব হুজুর প্রথম মুদাররিস ছিলেন কিংবা মুদাররিস হিসেবেই তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়। মূলত এটি সাব্যস্ত করার জন্যই উর্দু সংস্করণে এ-ও লিখে দিয়েছেন যে ইমাম সাহেব হযরত মুফতী সাহেব হুজুরের ছাত্র ছিলেন। হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.)-এর ছাত্রদের তালিকায়ও ওই লেখক ইমাম সাহেব হুজুরের কথা উল্লেখ করেছেন। যাতে মানুষ মনে করে এটি তাঁরা উস্তাদ-শাগরিদের বিষয়। উস্তাদ প্রতিষ্ঠাতা হলে শাগরিদ কিভাবে প্রতিষ্ঠাতা হবে। বরং তাঁকে প্রথম উস্তাদ বলাই শ্রেয় হবে। 
এসব পরবর্তী লেখকগণের একটি কৌশল বললে অত্যুক্তি হবে না। কারণ হযরত মুফতী সাহেব হুজুরের স্পষ্ট বর্ণনায় পাওয়া যায় তাঁরা উভয়ই বন্ধু ছিলেন। অধিকন্তু জিরি মাদরাসার শিক্ষা বিভাগের রিপোর্ট দেখলেও এরূপ কোনো কথা পাওয়া যায় না যে হযরত ইমাম সাহেব হুজুর হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর কাছে নিয়মিত কোনো সবক পড়েছেন। তবে সে সময় আকাবীরদের একটা নীতি ছিল, সিনিয়র ছাত্রদের জুনিয়র ছাত্ররা উস্তাদের সম্মান দিতেন। পরস্পর থেকে কিতাব বুঝিয়ে নিতেন। যার কাছে যে বিষয়ের অভিজ্ঞতা বেশি তার কাছ থেকে উক্ত বিষয়ে ইস্তিফাদা করতেন। অনেক সময় কোনো উস্তাদ উপস্থিত না থাকলে সিনিয়ররা জুনিয়রদের পড়াতেন। যাকে সচরাচর উস্তাদ তখনও বলা হতো না, এখনো বলা হয় না। উভয়ের শায়খ হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন সাহেব (রহ.) উভয় মহাব্যক্তিকে একই সময় এক বৈঠকে খেলাফত দান করেন। তাঁদের খেলাফত দানের বিষয়টিও এক মজলিসে একে অন্যেরটি প্রকাশ করেন। তা থেকে যেকোনো সাধারণ মানুষও বুঝতে পারে তাঁদের সম্পর্কটা উস্তাদ-শাগরেদ হিসেবে ছিল না।  বরং সাথী ও সহপাঠী হিসেবেই ছিল। 
যেহেতু এসব লেখকের ব্যাখ্যা ও তাশরীহ কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনার অধীনে ছিল তাই আগে হযরত ইমাম সাহেব (রহ.)-কে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর নিয়মিত ছাত্র বানানো হলো। অতঃপর কিতাবের বিভিন্ন শিরোনামের অধীনে তাঁকে জামিয়া পটিয়ার সর্বপ্রথম উস্তাদ আখ্যা দিয়ে তিনি যে জামিয়া পটিয়ার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বা প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এই অবদান থেকে বাদ দেওয়ার একটি ক্যু উদ্দেশ্য হাসিল করার চেষ্টা করা হলো। 
হযরত ইমাম সাহেব (রহ.) হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর গোলাম হোক বা ছাত্র হোক, তা কোনো আয়বের বিষয় বলছি না। কিন্তু একটি ক্যু উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে যখন কেউ এই পথ অবলম্বন করলেন তখন সে ব্যাপারে মূল বিষয়টি উপস্থাপন করাই জরুরি মনে করেছি। তদুপরি যে কথা স্বয়ং হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) মুখেও আনেননি সে ব্যাপারে নিজেরা অতি আবেগী ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এত হীনম্মন্যতার পরিচয় দেওয়া কারো জন্য সমীচীন হয়নি। তবে এই ব্যাখ্যাকারী কী কারণে জানি না, বাংলা সংস্করণে এই পঙ্ক্তির ব্যাখ্যার অধীনে ‘তিনি মুফতী সাহেব হুজুরের ছাত্র’ ওই বাক্যটি রাখেননি।
লক্ষ করার মতো আরেকটি বিষয় :
بنائے مدرسہ کے وقت تدریسی خدمت کے لیے سب سے پہلے اقدام کرنے والے اور حضرت کی ہمت افزائی کرنے والے تھے۔
حضرت جن دونوں جیری رہ کر پٹیہ میں مدرسہ قائم کرنے کی کوشش فرمارہے تھے، ان دنوں حضرت امام صاحب نے حضرت سے پہلے پہنچ کر کام شروع کردیا تھا، 
১। মাদরাসা প্রতিষ্ঠার সময় তাদরীসী খিদমাত আঞ্জাম দেওয়ার জন্য সর্বপ্রথম পদক্ষেপ গ্রহণকারী এবং হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-কে সাহস দানকারী ছিলেন।
২। যে সময় মুফতী সাহেব (রহ.) জিরি মাদরাসায় অবস্থান করে পটিয়ায় মাদরাসা স্থাপনের চেষ্টায় রত ছিলেন, সে সময় হযরত আল ইমাম আহমদ সাহেব মুফতী সাহেবের পূর্বে পটিয়াতে গিয়ে কাজ আরম্ভ করেন।
কুয়ূদ বাড়াতে গিয়ে আগে পিছে একটু খেয়াল রাখতে হবে। শুরু শেষে সাংঘর্ষিক হয়ে গেলে পুরো এবারতটার প্রতিই সংশয় সৃষ্টি হয়। এখানে,
প্রথম লাইনে লেখক নিজে থেকে বাড়িয়ে বললেন, তাদরীসী খিদমত আঞ্জাম দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণকারী। দ্বিতীয় লাইনে বলছেন, হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) জিরি মাদরাসায় অবস্থান করে পটিয়ায় মাদরাসা স্থাপনের চেষ্টায় রত ছিলেন, সে সময় হযরত আল ইমাম আহমদ সাহেব মুফতী সাহেবের পূর্বে পটিয়াতে গিয়ে কাজ আরম্ভ করেন।
তাহলে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করল কে? এই প্রশ্নটা থেকে যায়। যদি হযরত ইমাম সাহেব (রহ.) শুধু তাদরীসী খিদমত করেছেন, আর হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) জিরিতে থেকে শুধু মাদরাসা প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছিলেন। তাহলে মাঝখানে মাদরাসাটা প্রতিষ্ঠা কে করল? তা কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়। হ্যাঁ, যদি ইমাম সাহেব কাজ শুরু করে দিয়েছেন অর্থ মাদরাসা প্রতিষ্ঠার কাজ মোরাদ হয় তখন ওই প্রশ্নটা আর থাকে না। আসলে কী দিয়ে কী প্রমাণ করবেন, তা নিয়ে ওই পাড়ে ভালোই টেনশনের কারণ ছিল। শেষ পর্যন্ত এভাবেই করতে হলো। আল্লাহ মাফ করুন।
বহুবিধ কিতাব ছেপে বিভিন্নভাবে অপব্যাখ্যা প্রকাশিত হওয়ার পরও কোনো পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে কোনো প্রতিবাদ-প্রতিধ্বনি না আসায় ক্রমান্বয়ে ইতিহাস বিকৃতির এই ধারা আরো জঘন্যরূপ ধারণ করে। তাযকিরায়ে আজীজের বাংলা সংস্করণে আলোচ্য পঙ্ক্তির তাশরীহের নিচে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে এ ক্ষেত্রে কোনো কোনো কপিতে আছে لوائے احمدی থেকে উদ্দেশ্য স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.)। 
অতঃপর আরেক ইতিহাস।
আরমগানে আজীজ (রহ.) নামে একটি উর্দু কিতাব প্রকাশিত হয়। যে কিতাবে কুতুবে আলম হযরতুল আল্লাম মুফতী আযীযুল হক (রহ.)-এর রচিত রুহানি ও ইলহামী যুগশ্রেষ্ঠ কসিদাগুলো সংকলন করা হয়েছে। তা পড়তে পড়তে নজর পড়ল ওই কসিদার ওপর, যেখানে এই পঙ্ক্তিটি রয়েছে। তাতে হাশিয়াতে দেখতে পেলাম আরেক ইতিহাস।
হাশিয়া নাম্বার ১২। তাতে লেখা হয় :
بعض نسخہ میں زیر لوائے احمدی نظر آتاہے اس بناپر حضرت امام صاحبؒ پٹیہ کی طرف اشارہ بتایا جاتاہے، یہ صحیح نہیں، میں اس خیال سے رجوع کرتاہوں اصل نسخہ زیر لوائے مصطفی ہے۔ مرتب۔
অর্থাৎ কোনো কোনো কপিতে  زیرلوائے احمدیআছে। সে ভিত্তিতে তা থেকে ইমাম সাহেব হুজুরের প্রতি ইশারা এই কথা বলা হতো। তা সহীহ নয়। আমি এই মত থেকে রুজু করছি। আসল নোসখাতে  زیرلوائے مصطفی আছে। অর্থাৎ তা থেকে রাসূলুল্লাহ (সা.) উদ্দেশ্য।
এখানে লক্ষ করার বিষয় হলো, তাযকিরায়ে আজীজের বাংলা সংস্করণে লেখা হয়েছে কোনো কোনো কপিতে আছে এই শব্দ থেকে রাসূলুল্লাহ (সা.) উদ্দেশ্য। এই ইঙ্গিত থেকে বোঝা যায় উক্ত কিতাবে উল্লিখিত পঙ্ক্তিটিই মূল। তবে কারো কারো মতে উদ্দেশ্য এটিও লেখা হয়েছে। যা শারেহীনগণ ‘কীলা’ শব্দ দ্বারা দুর্বল মসলকের দিকেই ইঙ্গিত করে থাকেন, সেভাবেই বলা হয়েছে। কিন্তু আরমগানে আজীজে এসে ওই ‘কীলা’সুলভ মতটি রাতারাতি আসল মতে রূপান্তরিত হয়ে গেল এবং তাযকিরায়ে আজীজের পঙ্ক্তিটি হয়ে গেল ভুল।
এটি পাওয়ার পর তাযকিরায়ে আজীজের বাংলা সংস্করণের বর্ধিত ইবারতটি সম্পর্কে আমার জানা হয়ে গেল যে পরবর্তীতে রাতারাতি পরিবর্তনব্য মতটি লেখার জন্যই হয়তো বাংলা সংস্করণে ওই ইবারতটি যুক্ত করা হয়েছিল। নতুন এই মত প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর উক্ত কসিদার এই নতুন সংস্করণটিই বাজারে খুব প্রচার-প্রসার করা হচ্ছে।
অথচ হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) জামিয়ার ইতিহাসে হযরত ইমাম সাহেব (রহ.) সম্পর্কে যেভাবে লিখেছেন, তা থেকে কারো বোধগম্য হওয়ার কথা নয় যে, এই কসিদায় হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.) ইমাম সাহেব হুজুরের নামই বাদ দিয়ে দেবেন। যাঁরা বলছেন যে, এই পঙ্ক্তি থেকে মাওলানা আহমদ সাহেব উদ্দেশ্য নন বরং রাসূলুল্লাহ (সা.) উদ্দেশ্য তাঁরা কি স্বয়ং হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর ওপর এই অপবাদ দিচ্ছেন না যে, হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) এই কসিদাটিতে হযরত ইমাম সাহেবের নাম ইচ্ছাকৃত বাদ দিয়েছেন। নাউজুবিল্লাহ। মূলত তাঁদের দাবির প্রেক্ষিতে এই অপবাদটি সৃষ্টি হয়। কারণ যে কসিদায় এমন ব্যক্তির নামও উল্লেখ করা হয়েছে, যার সম্পর্কে স্বয়ং হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) বলেছেন যে, তিনি সরাসরি প্রতিষ্ঠাকাজে অংশ নিতে পারেননি। এমন ব্যক্তিদের নামও এনেছেন, যাঁদের সম্পর্কে স্বয়ং মুফতী সাহেব (রহ.) বলেছেন, পটিয়ায় একটি মাদরাসা করা তাঁদের স্বপ্ন ছিল, কিন্তু তাঁদের জীবদ্দশায় তাঁরা তা করতে পারেননি। কিন্তু স্বয়ং মুফতী সাহেব (রহ.)-এর ভাষ্য মতে জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাকাজের সূত্রপাত যাঁর মাধ্যমে তথা ইমাম সাহেব হুজুর তাঁকেই এই কসিদা থেকে বাদ দেবেন! এটি বোধগম্য হওয়ার মতো নয়।
এই কাসীদাতেই যে, লেখা হলো
خوشہ چینان ضمیری اس کے ہیں انصار خاص
এই কসীদাতে হযরত ইমাম সাহেব (রহ.) কে বাদ দিলে শায়খুল মাশায়েখ হযরত মাওলানা জমিরুদ্দীন রহ. এর দুইজন খলীফার নাম বাকি থাকে। একজন মাওলানা আমজদা সাহেব রহ. আরেকজন মাওলানা ইস্কান্দার সাহেব রহ.। প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাঁদে অবদান সম্পর্কে হযরত মুফতী সাহেব রহ. ইতিহাসে স্পষ্ট লেখেছন। সেই হিসেবে শুধু তাদেরকেই আনসারে খাস বলার কোনো যৌক্তিকতা থাকে না। বরং যদি হযরত ইমাম সাহেব (রহ.) এর নাম স্বীকার করা হয় তখনই মূলত এই পঙক্তির যথার্থতা প্রকাশ পায়।
পরবর্তী লেখাগুলো যুগশ্রেষ্ঠ উলামায়ে কেরামের হওয়ায় আরো দীর্ঘ বিশ্লেষণের দিকে মনোনিবেশ করতে হৃদয় কাঁপে। অন্যথায় মনে হচ্ছে এই পঙ্ক্তির অর্থের দিকে তাকালে তা থেকে রাসূল (সা.) উদ্দেশ্য মনে করা মারাত্মক ভুল হবে। কারণ পরের মিসরার যে দু’আটি করা হয়েছে, অর্থাৎ হেদায়াতের দু’আ তা ‘যেরে লেওয়ায়ে মুস্তফা’র জন্য কোনোভাবেই প্রযোজ্য নয়। যে বিষয়টির ব্যাপারে ‘যেরে লেওয়ায়ে মুস্তফা’ হওয়ার দু’আ করা হবে তার জন্য নতুন করে হেদায়াতের দু’আ করা নবী করীম (সা.)-এর শানের পরিপন্থী। বরং যদি যেরে লেওয়ায়ে আহমদী হয়ে তা থেকে আল্লামা আহমদ (রহ.) উদ্দেশ্য হয় তবে পরের মিসরার দু’আটির ওজন অনেকখানিই বৃদ্ধি পাবে। তাই পরবর্তী লেখকগণের যে দাবি এখানে যেরে লেওয়ায়ে মুস্তফা শব্দটিই আসল তা কোনো মতেই বোধগম্য হয় না। এই লেখকগণ মূলত নিজেরদের স্বেচ্ছাচারী মনোভাবকে বিজিত করার জন্য স্বয়ং হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এরই ক্ষতি করে ফেলছেন তা এই ব্যাখ্যা থেকে আরো স্পষ্ট হয়।
এখানে বলা হয়েছে মূল কপিতে زیر لوائے مصطفی আছে। সেই ব্যাপারেও অনুসন্ধান করলাম। জামিয়ার প্রবীণ মুরব্বিদের থেকে জানতে পারলাম আগে থেকে তাঁরা ওই কবিতাতে زیرلوائے احمدی টাই দেখে আসছিলেন। নতুন বাক্য যোগ করা হচ্ছে অতি সম্প্রতি। 
এই বিষয় নিয়ে বড় ভাই মাওলানা রিজওয়ানের শরণাপন্ন হলাম। তিনি দিলেন লম্বা তত্ত¡। তিনি বললেন, যে কিতাবে বলা হয়েছে মূল কপিতে زیر لوائے مصطفی রয়েছে ওই কিতাবের মূল কপিই নাকি হযরত আল্লামা রফীক আহমদ (রহ.)-এর। তা শুনে আমার মধ্যে বিস্তারিত জানার কৌত‚হল জাগল। কিন্তু তা তিনি বিস্তারিত বলতে রাজি হচ্ছিলেন না। আরো দীর্ঘদিন পর তাঁর সাথে দেখা হলে তিনি বলেন, আসলে দীর্ঘ অর্ধশত বছরের বেশি আমার পিতাজি হযরত আল্লামা রফীক আহমদ (রহ.) জামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম কুতুবে আলম হযরতুল আল্লাম শাহ মুফতী আযীযুল হক (রহ.)-এর আরবী ও উর্দু বহু কবিতা সংরক্ষণ করে আসছিলেন। যেহেতু তিনি বহু গ্রন্থের লেখক সেই হিসেবে একসময় নিজের প্রাণপ্রিয় উস্তাদের সংরক্ষিত এই কবিতাগুলো একত্র করে কিতাব আকারে প্রকাশ করার মনস্থ করলেন। সেটিকে তিনি নিজের নাজাতের উসিলা এবং ফুয়ুজ পাওয়ার উদ্দেশ্যেই প্রকাশ করার মনস্থ করেছিলেন। সেই হিসেবে এটিকে তারতীব দিয়ে একসময় সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তির হাতে পাÐুলিপি দিয়ে বললেন, এসব হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর আরবী-উর্দু শেয়েরের একটি সংকলন। দীর্ঘদিন থেকে আমি সংরক্ষণ করেছি। এখন মনস্থ করেছি, তা প্রকাশ করব। তাই একটু দেখে দিলে ভালো হয়। পাÐুলিপি তাঁর হাতে দেওয়ার পর দীর্ঘদিন থেকে অপেক্ষা করছিলেন তা ফেরত পাওয়ার। অন্তরে কিতাবটি ছাপার আগ্রহ বারবার তাঁকে তাগাদা দিচ্ছিল। কিন্তু বেশ কিছুদিন পর জানতে পারেন তিনি পাÐুলিপিটা আর ফেরত পাবেন না। কারণ কী? কারণ হলো, কেউ কেউ নাকি তৎকালীন জামিয়া কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, এটি মাওলানা রফীক আহমদ সাহেব কর্তৃক প্রকাশ করাটা সমীচীন হবে না। সেই কারণে জামিয়া কর্তৃপক্ষ শায়খুল আদব হযরত আল্লামা সুলতান যওক সাহেব (দা.বা.)-কে ছাপার জন্য পাÐুলিপিটি তাঁকে দিয়ে দেন। বড় ভাই মাওলানা রিজওয়ানের বাবা আমার উস্তাদ মাওলানা রফীক আহমদ (রহ.) নাকি সেই কথা শুনে বড়ই মর্মাহত হয়েছেন। তবে চিন্তা করছিলেন, যেহেতু প্রকাশ পাওয়াটাই উদ্দেশ্য ছিল, প্রকাশ পেয়েছেÑসেটাই বড় কথা। কষ্টের জাযা দেনেওয়ালা তো আল্লাহ তা’আলা। সেরূপ চিন্তা করে তিনি নিজেকে সামলে নেন। কারো সাথে এসব বিষয় নিয়ে আর কিছু বলতে যাননি। বড় ভাই রিজওয়ান জমীরাবাদী বলেন, মূল কপি বলতে যেটা, সেটা ছিল আমাদের কাছে। আমরা জানি, মূল কপিতে কী ছিল। যিনি লিখেছেন মূল কপিতে এমন ছিল, তা লেখারই তো হক তিনি রাখেন না। মূল কপির সংরক্ষণ তাঁর হাতে ছিল না।
এই বক্তব্য শুনে আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়, ওই কিতাব আমার উস্তাদ হযরত মাওলানা রফীক আহমদ সাহেবকে ছাপতে না দেওয়ার উদ্দেশ্য হয়তো এটাই ছিলÑএই কবিতায় তাসাররুফ করে হযরত ইমাম সাহেব (রহ.)-এর নামটা ফেলে দেওয়া। কিন্তু তা যে সম্ভব নয়, সেটা তাঁরা চিন্তা করেননি।
এর আগেও তাঁর কাছে এটি কার সংকলনÑজানতে চাইলে বড় ভাই বলেছিলেন, তা আমি বলব না।  বরং আপনার কোনো সময় আমার প্রাণপ্রিয় মুরব্বি যুগশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হযরতুল আল্লাম মাওলানা সুলতান যওক নদভী সাহেব (দা.বা.)-এর খিদমতে যাওয়ার সুযোগ হলে সরাসরি তাঁর কাছ থেকে জেনে নিতে পারবেন। কারণ আমি বিষয়টি তাঁর কাছেও শুনে নিশ্চিত হয়েছি। তবে এই কথা আমার জানা আছে যে মূল সংকলক ও সংরক্ষণকারীর কপিতে ওই পঙ্ক্তিতে  زیرلوائے احمدی শব্দই আছে।  زیرلوائے مصطفے শব্দ নেই। তাতে সন্দেহের কোনোই অবকাশও নেই। বড় ভাই আরো বলেন, যদি হযরত আল্লামা কিতাবের ভ‚মিকায় এর সংকলনের সঠিক ইতিহাসটাও তুলে ধরতেন তবে এ বিষয়ে অনেকখানি দায় এড়িয়ে যেতে পারতেন সহজভাবে।
এক কিতাবের লেখক তাঁর কিতাবের বিভিন্ন স্থানে সংযোজন-বিয়োজন এবং ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ উল্লেখ করার পর সর্বশেষে আলোচনার ফল বের করছেন এভাবে : 
حضرت نے جیری رہتے ہوئے پٹیہ میں کام کرنےکے لئے متعدد علماء کو دعوت دی تھی ، سب سے پہلے لبیک کہنے والے حضرت مولانا احمد صاحب مہروی (امام صاحب) مدظلہ تھے، ان کے بارے میں حضرت نے بڑی وضاحت سے تحریر فرمایا کہ "اس کام کے لئے سب سے پہلے عملی قدم اٹھانے والے مولانا احمد صاحب ہیں اور آپ کے لبیک کہنے سے حضرت کو بڑی خوشی ہوئی اور دل میں اطمینان آگیایہاں کام کرنے کا وقت آیا ہے، سو حضرت امام صاحب مدرسہ پٹیہ کے پہلے استاد ہیں، جیسے دار العلوم دیوبند میں ملا محمود پہلے استاد اور حضرت شیخ الہند علامہ محمود حسن دیوبندی پہلے شاگرد تھے
এই লেখাটা আসলে এই স্থানে প্রয়োজন ছিল না। তার পরও আমি যে ওপরে বলে এসেছি ইতিহাস বিকৃতিতে আধুনিক লেখকগণ যেই কৌশল অবলম্বন করে থাকেন জামিয়া পটিয়ার ইতিহাসেও পরবর্তী লেখকগণ সেরূপ করেছেন বললে অত্যুক্তি হবে না। উল্লিখিত উদ্ধৃতি থেকেই বুঝতে পারা যাবে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) ইমাম সাহেব হুজুর সম্পর্কে যে ইবারত লিখে প্রতিষ্ঠাতা সাব্যস্ত করেছেন, সেই ইবারতকে সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন করে এই লেখক ইমাম সাহেব হুজুরকে শুধু প্রথম উস্তাদ সাব্যস্ত করলেন। আরো একটি বিষয় লক্ষ করা যায়, তা হলো ওই ইবারতটি হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) কত তাৎপর্যপূর্ণ ও ভাবগাম্ভীর্যতায় ভরপুর ইবারত হিসেবে লিখেছেন আর এই লেখক কতই সচরাচর ও সরলভাবে লিখে ইমাম সাহেব হুজুরকে শুধু প্রথম উস্তাদ সাব্যস্ত করে ফেলেছেন! এবং প্রতিষ্ঠার অবদান থেকে বাদ দিয়ে দিলেন। এই স্পষ্ট অপব্যাখ্যাকে সত্যের লেবাস পরানোর জন্য তৎক্ষণাৎ একটা উপমাও উল্লেখ করে দিলেন। অথচ এখানে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর ইবারতের সাথে ভাব সঙ্কুচিত এই ইবারতের কোনো মিল নেই, ভাবসংকোচনে যেই ইবারত তিনি নিজ থেকে বানিয়ে উল্লেখ করছেন তার সাথে হযরত ইমাম সাহেব (রহ.) শুধু প্রথম উস্তাদ হওয়ার যে সিদ্ধান্ত তিনি নিজেই দিচ্ছেন, তার সাথেও কোনো মিল নেই। উল্লিখিত উপমার সাথে তো পুরো লেখার সাথেই কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ যেই পাঠক হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর আসল ইবারত পড়বে না, সে-ই এই লেখকের ইবারত পড়ে নিশ্চয়ই প্রতারিত হবেন। আমি অভাজন হিসেবে এই ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করব না, তবে সামাজিক রীতি অনুযায়ী একেই বলা হয় অপকৌশল।
এই ব্যাখ্যার মাধ্যমে মূলত স্বয়ং মুফতী সাহেব (রহ.)-কে এমন অপমান করা হয়েছে, মনে হয় হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) জীবিত থাকলে ওই লেখককে ক্ষমাও করতেন না। বিষয়টি বলতে অন্তর খুবই বাধা দিচ্ছিল। কিন্তু বড়দের লেখার মধ্যে এরূপ দায়িত্বহীনতার ধরন দেখে না বলে পারলাম না।
এই লেখক ভাবসংকোচন করে এবং পুরো কিতাবে বিভিন্ন ব্যাখ্যা সংযোজন করে প্রমাণ করতে চেষ্টা করেছেন হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) যা-ই লিখুন না কেন, আসলে ইমাম সাহেব হুজুরকে শুধু মুদাররিস হিসেবেই রেখে ছিলেন। তাই তিনি প্রতিষ্ঠাতাদের কেউ নন। প্রতিষ্ঠাতা একজনই। এই তো।
এখন প্রশ্ন হলো, তাঁর এই দাবিটা কি হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর অন্তরে ছিল? নাকি একাকী ওই লেখককে বলেছিলেন?
এই অধমের মতে, এমন একটা চিত্র বর্তমান জমানার লোকদের ব্যাপারে চিন্তা করা গেলেও আমাদের আসলাফদের ব্যাপারে সেরূপ বিষয়ই নয় বরং তার গন্ধের অস্তিত্বও চিন্তা করা কল্পনাতীত। বর্তমান জমানা হলো অনাদর্শের যুগ। যার ক্ষীণ প্রভাব কিছু অপরিণামদর্শী আলেমের মাঝেও লক্ষ করা যায়। যেমন কোনো কোনো অযোগ্য মুহতামিম মুদাররিস ঠিক করার সময় বলেন আপনাকে হাদীসের কিতাব দেব। কিন্তু ওই উস্তাদ মাদরাসায় চলে এলে তাকে নিচের ক্লাসের উস্তাদ বানিয়ে দেওয়া হয়। বেতন নিয়েও দেখা যায় এই চিত্র।
তাহলে কি এই ব্যাখ্যাকারীগণ হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর ওপর এরূপ জঘন্য অপবাদ দিচ্ছেন? নাউজুবিল্লাহ। ওপরে উল্লিখিত হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর সব লেখা থেকে আমরা পুরোপুরি বিশ্বাস করি হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) হযরত ইমাম সাহেবকে একজন প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে এনেছেন, সেই মর্যাদায় রেখেছেন, অন্তরে সেই সম্মান ছিল, বাস্তবেও সেই মূল্যায়ন ছিল। তিনি শুধুই একজন উস্তাদ হিসেবে ছিলেন, এই কথাও কাউকে বলেননি। সেরূপ কোনো বিষয় তিনি লেখেনওনি। বরং হযরত ইমাম সাহেবের পুরো অবদান সম্পর্কে তিনি যা লিখেছেন সে মতেই তাঁর পুরোপুরি মূল্যায়ন তাঁর অন্তরেও ছিল, কাজকর্মেও ছিল। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এর মধ্যে কোনো প্রকার তফাত পড়েনি।
পরবর্তী লেখকগণ এরূপ অপরিণামদর্শী হাজার ব্যাখ্যা করলেও এ কথা আমরা বলতে পারব না যে হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.) হযরত ইমাম সাহেবকে প্রতিষ্ঠার কথা বলে এনেছেন আর আসার পর শুধু সাধারণ উস্তাদ বা প্রথম উস্তাদ হিসেবে রেখেছেন। কিংবা লেখার মধ্যে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে চিত্রায়িত করেছেন; কিন্তু অন্তরে ছিল সাধারণ উস্তাদ। এই অপবাদ আমরা কোনো মতেই গ্রহণ করতে পারি না। বরং আমি বলব, এসব অতি আবেগী বা কৌশলগত ব্যাখ্যার কারণে যদি আসলাফদের সামান্য চুলও বাঁকা হতে দেখা যায় তবে এরূপ হাজার ব্যাখ্যা ছুড়ে ফেলতে আমরা দ্বিধা করব না। 
সে কারণে বারবার বলছি হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর স্পষ্ট বক্তব্যের ওপর অটুট থাকাই সকলের জন্য কল্যাণকর। 
আমি বারবার হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর লেখাগুলো উদ্ধৃত করার লক্ষ্যই এটি যে যাতে তাশরীহ করতে গিয়ে কোনো প্রকার বিপথগামিতার শিকার হতে না হয়। 
এই উদ্ধৃতি পূর্বেও উল্লেখ করেছি, হযরত মুফতী সাহেব হজুর (রহ) লেখেনÑ
چنانچہ اس مبارک اشارہ کی برکت سے کام کا سلسلہ اس طرح شروع ہوا کہ مولنا اسکندر صاحب بلاشرکت عملی اس خدمت کی طرف اپنی روحانی توجہ مبذول فرماتے رہے اور احقر عزیز الحق مدرسہ جیری میں مدرس تھا اور وہاں کی تدریس پر قائم رہتے ہوئے قصبہ پٹیہ میں مدرسہ قائم کرنے کی تدابیر میں مصروف رہا، اس خدمت میں عملی قدم اٹھانے والا اول شخص مولانا احمد صاحب مہروی ہیں جو فی الحال مدرسہ پٹیہ میں امام صاحب کے نام سے مشہور ہیں اور درس حدیث کا کام انجام دیتے ہیں۔
সুতরাং হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন সাহেব (রহ.)-এর মোবারক ইশারায় এই মোবারক কাজের সূচনা এভাবে হয়, ১. মাওলানা ইস্কান্দার সাহেব কাজে অংশ না নিয়ে এই খিদমতে নিজের রুহানি তাওয়াজ্জুহ দিতে থাকেন। ২. আহকর আযীযুল হক জিরি মাদরাসায় মুদাররিস ছিলাম, সেখানে অধ্যাপনার পাশাপাশি পটিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জন্য তদবির চালাতে থাকি। ৩। মাদরাসা প্রতিষ্ঠার এই খিদমতে কার্যত সর্বপ্রথম বাস্তব ভ‚মিকা রাখেন মাওলানা আহমদ সাহেব মোহরবী। যিনি বর্তমানে জামিয়া পটিয়ায় ইমাম সাহেব হিসেবে খ্যাত এবং মুহাদ্দিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এখানে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর স্পষ্ট কথা হলো, জামিয়া প্রতিষ্ঠায় সর্বপ্রথম যাঁর ভ‚মিকা, তিনি হলেন মাওলানা আহমদ মোহরবী, যিনি ইমাম সাহেব নামে খ্যাত এবং মুহাদ্দিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এই স্পষ্ট বক্তব্য থেকে হযরত ইমাম সাহেব (রহ.) সম্পর্কে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর পুরো মূল্যায়নটিই পরিস্ফুট হয়। ১। তিনি প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন, ২। ইমামও ছিলেন, ৩। মুহাদ্দিস তথা উস্তাদও ছিলেন।
তাহলে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) কর্তৃক হযরত ইমাম সাহেবের জন্য একই বাক্যে ঘোষিত তিনটি পদের একটি (তথা প্রথম উস্তাদ) রেখে বাকি দুটি (তথা প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম) বাদ দেওয়ার অধিকার এসব লেখককে কে দিল? তদুপরি হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর বিভিন্ন বাক্যের অপব্যাখ্যা করে স্বয়ং হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.)-কেই অপমান ও প্রশ্নবিদ্ধ করার সাহস কে জোগালÑতা-ই এখন বিবেচনার বিষয়।
আমরা মনে করি, জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠা যেমন ইলহামী কুতুবে আলম হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর লিখিত এসব দস্তাবেজও ইলহামী। এখানে একটা শব্দও সংযোজন, বিয়োজন এবং একটা বিষয়েরও নতুন ব্যাখ্যা করতে গেলে বিপদে পড়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। এসব ইবারত এমন নয় যে কলমের খোঁচায় একটি শব্দ কাটছাঁট করে ইতিহাসকে আমি ইচ্ছামতো একদিকে ঘুরিয়ে দেব, সামান্য ব্যাখ্যা করে দিয়েই নিজের পরিকল্পিত উদ্দিষ্ট বিষয় প্রমাণ করে ফেলব! কুতুবে আলম হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর ইলহামী ইবারতসমূহকে অন্তত এই অভাজন এতই হালকা মনে করে না। বরং এই অধম মনে করে, পরবর্তী লেখকদের পুরো দস্তাবেজই হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর একটি বাক্যের সামনে ধোপে টিকবে না। 
যেমন নি¤েœাক্ত :
اس خدمت میں عملی قدم اٹھانے والا اول شخص مولانا احمد صاحب مہروی ہیں جو فی الحال مدرسہ پٹیہ میں امام صاحب کے نام سے مشہور ہیں اور درس حدیث کا کام انجام دیتے ہیں۔
এই এক বাক্যে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) হযরত ইমাম সাহেব (রহ.) সম্পর্কে সব কথাই বলে ফেলেছেন। পরবর্তী লেখকগণ হযরত ইমাম সাহেবকে প্রতিষ্ঠার অবদান থেকে বাদ দেওয়ার কৌশল হিসেবে যত মুসাবেদাই তৈরি ও প্রকাশ করেছেন, সব কিছুর অসারতা প্রমাণে এই বাক্যই যথেষ্ট। এখানে হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.) স্পষ্ট বলে দিয়েছেন হযরত ইমাম সাহেব ১। প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন, ২। ইমামও ছিলেন, ৩। মুহাদ্দিস তথা উস্তাদও ছিলেন।
এই একটি বাক্যের কারণে পরবর্তী লেখকগণের এসংক্রান্ত যাবতীয় ব্যাখ্যা ও লেখা নিস্তেজ হয়ে পড়তে বাধ্য। ধরুন, কেউ আমলী কদম উঠানে ওয়ালা শব্দের ব্যাখ্যা অপব্যাখ্যা করে দীর্ঘ মুসাবেদা তৈরির মাধ্যমে ওই শব্দকে খাটো করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর এই মুসাবেদার অসারতা প্রমাণ এবং অপব্যাখ্যার প্রতিরোধে দাঁড়িয়ে গেল পরের দুটি শব্দ তথা তিনি ইমাম এবং মুহাদ্দিস। আর কেউ সর্বশেষ শব্দ উস্তাদকে হাইলাইট করে প্রথম শব্দ (আমলী কদম উঠানে ওয়ালা আওয়াল শখস)-কে নিস্তেজ করতে দীর্ঘ মুসাবেদা তৈরি করলেন। কিন্তু প্রথম শব্দটি এতই শক্তিশালী যে সেই এক শব্দই এই লেখকের পুরো মুসাবেদাকে মুমূর্ষু বানিয়ে দিল।
এই বাক্যে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) হযরত ইমাম সাহেবকে যেমন তিন দিক থেকে মূল্যায়ন করেছেন, তেমনি প্রতিষ্ঠাতার বিষয়কেই প্রাধান্য দিয়েছেন। কারণ প্রতিষ্ঠাতার বিষয়টিকে মূল বানিয়ে তা আরো শক্তিশালী করার জন্য অন্য দুই পদের কথা বলেছেন। তাতে বোঝা যায়, তাঁকে প্রতিষ্ঠাতা প্রমাণই হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর মূল উদ্দেশ্য। এখন যদি আমি নতুন ব্যাখ্যা সংযোজন করে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর মূল মাকসাদেই আঘাত হানতে যাই, তবে এ করুণ দশা ছাড়া আর কী হবে? সুতরাং হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর মূল দস্তাবেজের হুবহু অনুসরণের কোনোই বিকল্প নেই। 
আসলাফদের লেখার মধ্যে আধুনিক লেখকগণের সংযোজন, বিয়োজন, অহেতুক তাসাররুফ করে একেই হরফে আখের মনে করা নিতান্তই ভুল। বরং আধুনিক লেখকগণের এসংক্রান্ত যাবতীয় লেখা ও ব্যাখ্যায় যদি চুলচেরা বিশ্লেষণে মনোনিবেশ করা হয় তবে পশম তুলতে গিয়ে কম্বলই জরাজীর্ণ হয়ে পড়বে। কারণ আসলাফদের যে খুলুসিয়্যাত তার নজির এখন শুধু বিরলই নয় বরং বলা যায় শূন্যের কোটায়। সুতরাং কেউ যদি আসলাফদের লেখায় তাসাররুফ করে অন্য আসলাফকে ঘায়েল করতে চায়, অপমান করতে চায় আবার ওই অন্তঃসারশূন্য লেখাকে হরফে আখের মনে করে গর্ববোধও করতে চায় আল্লাহ তা’আলাই জানেন এর পরিণতি কীরূপ ভয়াবহ হতে পারে। তবে এককথায় আমি বলব, তা নিতান্তই বোকামি। আরো বড় বিষয় হলো, এসব লেখক যদিও এই লেখাগুলো হযরত ইমাম সাহেব (রহ.)-কে উদ্দেশ করে লিখেছেন তাঁকে প্রতিষ্ঠার অবদান থেকে বাদ রাখার লক্ষ্যেই প্রকাশ করেছেন; কিন্তু তাতে তো সফল হননিই বরং এসব লেখার মাধ্যমে পদে পদে স্বয়ং কুতুবে আলম হযরত মুফতী আযীযুল হক (রহ.)-কেই অপমান করেছেন। তাঁদের লেখাগুলো গভীর দৃষ্টিতে বিবেচনা করা হলে প্রত্যেকটিতেই স্বয়ং হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর প্রতি তাঁদের বিদ্বেষ ভেসে ওঠে। তা কি কৃত্রিমভাবে অতি ভক্তি দেখাতে গিয়েই হয়েছে, নাকি মূলত তাদের উদ্দেশ্য তা-ই ছিল, বোঝা মুশকিল।
একটি চটি বইয়ের লেখক তো ইশারা-ইঙ্গিতে বলেই ফেলেছেন যে হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.) যে তাঁর ছেলে-সন্তানকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করেননি, এই সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল। তা থেকে সহজেই অনুমান করা যায় আসলাফদের দৃষ্টি কতই উঁচু ছিল আর বর্তমান আধুনিক লেখকরা কতই হীনম্মন্য। এরূপ হীনম্মন্য লেখক যদি আসলাফদের ব্যাপারে কলম ধরেই ফেলে তবে এরূপ লেজেগোবরে হওয়া ছাড়া গত্যন্তর আছে বলে মনে হয় না। এই লেখার মাধ্যমে এই লেখক হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর প্রকৃত ইখলাসের ওপর যে আঘাত হেনেছেন, তা যদি সামান্যও আঁচ করতে পারতেন তবে অন্তত তাওবা করে হলেও পার পাওয়ার চেষ্টা করতেন।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তো মানুষকে তার নিয়্যাত অনুযায়ী চালান। কোনো লেখকও তার ব্যতিক্রম হতে পারেন না। যদি তাঁদের নিয়্যাত একরকম থাকে আর লেখার ভাব প্রকাশ করতে চান অন্যভাবে তা পুরোপুরি হয়ে ওঠে না। বরং কোনো দিক থেকে হলেও আসল চরিত্র ভেসে উঠবেই। এই লেখকদের তা-ই হয়েছে। চরিত্র প্রদর্শন করতে চেয়েছেন হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর প্রতি অঢেল ভালোবাসা। কিন্তু নিয়্যাত কী ছিল, জানি না। তবে স্থানে স্থানে যেমন অন্যান্য আকাবীরের প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়েছেন, তাঁদের প্রতি অন্তরের মহা ক্ষোভ ঝেড়েছেন, তেমনি স্বয়ং হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-কেও চরম অপমান করতে ছাড়েননি। তা থেকে স্পষ্ট হয় তাঁদের অন্তরে আকাবীর ও আসলাফদের মর্যাদাই বা কতটুকু আর বাহ্যিক ভাব ও চরিত্রের রূপায়ণে কী মাধুর্যতা! এই অভাজন মনে করে, কোনো আলেমের প্রতিমূর্তি এমন নিছক প্রকৃতির হওয়া কোনো মতেই উচিত নয়। বরং আলেমদের প্রতিটি কাজে আসলাফদের সুঘ্রাণ থাকতে হবে।
এসব লেখকের মাঝে যদি খুলুসিয়্যাত থাকত এবং প্রকৃতপক্ষে কুতুবে আলম হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর সম্মান ও অনুরক্তি থাকত তবে কোনো প্রকার তাসাররুফ ছাড়া হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর হুবহু ইবারতই উল্লেখ করতেন তাঁদের কিতাবে। অথচ নির্দ্বিধায় হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর ইবারতকে আমূল বিকৃতরূপেই লিপিবদ্ধ করেছেন তাঁদের কিতাবে। নিজের ভাষাকে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর ভাষা বলতেও কোনোভাবে বাধা দেয়নি তাঁদের অন্তর। একে তো অপব্যাখ্যা, তার ওপর ভাষার বিকৃতি! তা কি এই লেখকদের মতো বড় ব্যক্তিত্বের শানের খেলাপ হয়নি? 
একটি বিষয়ের ওপর সামান্য আলোকপাত না করলে নয়, হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.) এক স্থানে লেখেনÑ
اس اثناء میں مقامی بعض ہم عقیدہ عالم مدرسہ پر چڑھائی کرکے اپنا قبضہ جما یا اور مولانا احمد صاحب کو ان کے تسلط پر مدرسہ سے علیحدہ ہونا پڑا
অর্থাৎ এর মধ্যে স্থানীয় কিছু হামআকীদার আলেম মাদরাসার ওপর চড়াও হয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। তাদের এই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ফলে মাওলানা আহমদ সাহেবকে মাদরাসা থেকে পৃথক হতে হলো।
এই ইবারত থেকে জনৈক লেখক হযরত ইমাম সাহেব (রহ.)-কে হেয় প্রতিপন্ন করে লেখেন, অন্যদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা দেখে যিনি পালিয়েছেন, তিনি কিভাবে প্রতিষ্ঠাতা হন?
তাঁর এই কথাগুলো কতই যে বৈরিতাপূর্ণ, তা চিন্তা করলেই আপনি বুঝতে পারবেন হযরত ইমাম সাহেবের সাথে যা করা হয়েছে, তা অত্যন্ত সীমালঙ্ঘন ছাড়া কিছু নয়। কারণ এর সাথেই হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.) লেখেনÑ
بندہ بھی کسی قدر کنارہ کش رہکر وقت اور موقع کا منتظر رہا، چونکہ اس تسلط کی بناء خلوص پر نہیں تھا۔ 
অর্থাৎ আমি [মুফতী আযীযুল হক (রহ.)]ও কোনোভাবে দূরে থেকে সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। কারণ এই জবরদখলের ভিত্তি খুলুসিয়্যাতের ওপর ছিল না।
এর আরেকটু পরে লেখেনÑ
مولانا احمد نے بوقت علیحدگی بندہ سے کہا کہ اگر آپ کی رائے ہو تو میں اس تسلط کرنے والا سے مقابلہ کروں گا، میں نے کہا ہرگز مناسب نہیں، آپ چلے آئیے، نتیجہ دوصورت سے خالی نہیں ہوگا، یا تو وہ مدرسہ کرنے میں کامیاب ہونگے ، وہ ہمارے لئے بڑی خوشی کی بات ہے کہ مدرسہ قائم کرنا ہمارا مقصود تھا اور وہ مقصود پورا ہوجائے ، ہمکو تکلیف نہ کرنا پڑا، یا تو وہ ناکام ہونگے ، اس وقت ہم خدمت کو ہاتھ میں لینگے ، اس میں بڑا فائدہ یہ ہو گا کہ آئندہ کبھی ان کو اس تسلط کا طمع نہیں ہوگا اور کام کرنے والا مامون ہوکر کام کر سکے گا۔
মাওলানা আহমদ মাদরাসা থেকে পৃথক হওয়ার সময় আমাকে বললেন, আপনি সহমত পোষণ করলে আমি এই দখলদারদের সাথে মোকাবেলা করব। আমি বললাম, তা কোনোভাবে উচিত হবে না। বরং আপনি চলে আসেন। ফলাফল দুটির একটি হবে। হয়তো তারা মাদরাসা পরিচালনায় সফল হবে। তা আমাদের জন্য বড়ই সুসংবাদ বয়ে আনবে। মাদরাসা করা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল। সে উদ্দেশ্য পূর্ণ হলো। আমাদের কোনো কষ্ট করতে হলো না। অথবা তারা মাদরাসা পরিচালনায় ব্যর্থ হবে। তখন আমরা ওই খিদমাত আমাদের হাতে নেব। তখন উপকার হবে এইÑআগামীতে তদের মধ্যে এরূপ জবরদখল করার বাসনাও জাগবে না। কাজ যাঁরা করবেন তাঁরাও নিরাপদ হয়ে যাবেন।
দেখুন, এটি হলো পূর্ণ ইবারত। কিন্তু ওই লেখক কেন শুরুর একটি বাক্যকে এনে হযরত ইমাম সাহেব (রহ.)-কে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করলেন, তা জানি না। যদি মাদরাসা থেকে পৃথক থাকা হযরত ইমাম সাহেব সাহেবের জন্য দোষের হয় তবে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) যে বলেছেন আমিও দূরে থেকে সুযোগের অপেক্ষা করছিলাম, তা কি হবে? ওই লেখক কি হযরত ইমাম সাহেব (রহ.)-এর কথা বলে স্বয়ং হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-কেও হেয় প্রতিপন্ন করেছেন? না হয় তাঁর উদ্দেশ্য কী? তাঁর এই সুচতুর হালকা কথাবার্তা থেকে অনুমান করা যায় যে হযরত ইমাম সাহেবকে তাঁরা সহজে জামিয়ার প্রতিষ্ঠার অবদান থেকে বাদ দেওয়ার যে নকশা এঁকেছেন, তা হচ্ছে না। সেই কারণে বিভিন্ন অজুহাতে তাঁকে হেয়প্রতিপন্ন করারই পথ বেঁচে নিয়েছেন।
দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বাস্তবতা দেখে এ কথা স্পষ্ট হয় যে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর লিখিত খুলুসিয়্যাতপূর্ণ দীর্ঘ ইতিহাস নিয়ে পরবর্তীতে ব্যাখ্যার ওপর ব্যাখ্যা এবং ইতিহাসের ওপর ইতিহাস রচনা কোনো মহলের পরিকল্পনা ও শ্যেন দৃষ্টিরই ফসল। কারণ, আমার পর্যবেক্ষণ মতে, হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর লিখিত দীর্ঘ ইতিহাসের আলোকে আমার উস্তাদ শারেহুল হাদীস হযরতুল আল্লাম মাওলানা রফীক আহমদ সাহেব একটি কিতাবে হযরত ইমাম সাহেবের ব্যাপারে লিখেছিলেন, জামিয়া পটিয়ার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর উদার লেখার আলোকে আমার উস্তাদের লেখাটিতে কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি বা অতিকথন ছিল না। যদিও অনেক বড় বড় আলেম অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অর্থ প্রধান প্রতিষ্ঠাতা বুঝেছেন। সেই সূত্র ধরে কথাও বলেছেন। তাঁদের এই শব্দটি না বোঝার খেসারত তো তাঁদেরই দেওয়া উচিত ছিল। তাঁদের নিজেদেরই লজ্জিত হওয়া উচিত ছিল। তা না হয়ে যাত্রা শুরু হয় উল্টো পথে। তাঁদের বিচরণ হয়ে ওঠে আগ্রাসী। আরম্ভ করা হয় সরাসরি ইতিহাস বিকৃতির ধারাবাহিকতা। কার বা কাদের ইশারায় খুব সূ²ভাবে ইতিহাস বিকৃতির এই কাজটি আরম্ভ করা হয়েছে, তা বলা মুশকিল। এর ফলে কয়েকটি কিতাব বের হয়েছে। যার ভেতরে স্থানে স্থানে হযরত ইমাম সাহেব (রহ.)-কে জামিয়া পটিয়া প্রতিষ্ঠার ইতিহাস থেকে বাদ দেওয়ার বিভিন্ন চেষ্টা প্রয়াস কৌশল লক্ষ করা গেছে। 
দীর্ঘ আলোচনাটি কুতুবে আলম হযরত মুফতী আযীযুল হক (রহ.)-এর লিখিত দস্তাবেজের আলোকেই লেখা হয়েছে। যেহেতু ইতিহাসের এই অধ্যায়টি তিনি অতিগুরুত্ব দিয়ে লেখিয়েছেন সেই কারণেই বিষয়গুলো স্পষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। নিজে থেকে অহেতুক কিছু লেখার প্রয়াস পাইনি। কারো ব্যক্তিগত স্বার্থকেও প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। এই লেখার পেছনে একমাত্র উদ্দেশ্য হলো আসলাফ ও আকাবীরদের ঐতিহ্য ও সম্মান সংরক্ষণ।
আমি পরবর্তী বিভিন্ন লেখকের এসব কিতাব ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে দেখতে পেলাম লেখকদের অহেতুক তাসাররুফে হযরত ইমাম সাহেবকে শুধু এই অবদান থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে তা নয় বরং কিছু কিছু কিতাবে তাঁকে রীতিমতো হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে, চরম অপমান করা হয়েছে। অথচ ওসব লেখকের কারো কারো অন্য লেখা থেকে হযরত ইমাম সাহেব (রহ.)-এর বিশাল ব্যক্তিত্বও ফুটে উঠেছে। দেশের বহু শীর্ষ আলেম থেকেও হযরত ইমাম সাহেব (রহ.)-এর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে যা জেনেছি তাতে বুঝতে পারলাম তিনি যুগের সেরা মুহাদ্দিস আদীব এবং ফকীহ ছিলেন। তাকওয়া পরহেজগারীতে ছিলেন অদ্বিতীয়। মাদরাসার ইন্তেজামী বিষয়ে ছিলেন আপসহীন। ছাত্রদের প্রতি ছিলেন অতি দয়াপ্রবণ। এককথায় তিনি ছিলেন যুগের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের অন্যতম। কিন্তু কিছু লেখক তাঁকে যেভাবে আক্রমণ এবং অপমান করার চেষ্টা করেছেন তাতে তাঁর ওপর চরমভাবে জুলুমই করা হয়েছে। এমনকি তাঁর জীবদ্দশাতেই এসব প্রচারপত্র বের করে তাঁকে অপমান করা হয়েছে। এরপর তিনি প্রায় এক দশক বেঁচে ছিলেন। জামিয়া পটিয়ায় হাদীসের দরসও দিচ্ছিলেন। কিন্তু আমার খুবই আশ্চর্য লাগল এ ব্যাপারে তাঁর একটা মন্তব্যও না লিখিত পাওয়া গেছে, না কারো মুখে শোনা গেছে। তা থেকে সহজে অনুমান করতে পারলাম এই মহাব্যক্তি কত মহৎমনা এবং কত বড় ইলমী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ইখলাস, তাকওয়া, সবর এবং ইস্তিকামতের কত প্রকাÐ পাহাড় ছিলেন। উলামায়ে কেরামের মতে, তিনি যে জামিয়ার মসজিদের ইমাম ছিলেন সে কারণেই তাঁর নাম ইমাম সাহেব হুজুর হিসেবে প্রসার লাভ করেনি। বরং তিনি প্রত্যেকটি শাস্ত্রেরই ইমাম ছিলেন। তিনি যেমন শায়খুল হাদীস ছিলেন, তেমনি শায়খুল আদবও ছিলেন। যুগশ্রেষ্ঠ ফকীহও ছিলেন। জামিয়া পটিয়ার দারুল ইফতায় দীর্ঘদিন যাবৎ উপদেষ্টা ছিলেন। রসমুল মুফতী কিতাবের দরসও তাঁর দায়িত্বে ছিল। দারুল ইফতায় কোনো মাসআলা নিয়ে জটিলতার সম্মুখীন হলে তাঁর শরণাপন্ন হওয়ারও রেওয়াজ ছিল। স্বয়ং হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) মসজিদে বলতেন, তিনি শুধু মসজিদের ইমাম হিসেবে ইমাম সাহেব নামে বিশ্রæত নন বরং তিনি এই মাদরাসার একটি স্তম্ভ। এসব আকাবীর ও আসলাফের এখন নমুনা পাওয়াও মুশকিল। তাই তাঁদের দেফা এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি মনে করেই আমার এই প্রয়াসটুকু।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো সম্মানিত করুক আকাবীরদের সুযোগ্য উত্তরসূরিদের। এই বিষয়েও আমি হতবাক হলাম, হযরত ইমাম সাহেব হুজুরের সুযোগ্য সন্তানরাও এই দীর্ঘ সময়ে এসব বিষয় নিয়ে একেবারেই নীরব নিথর থেকেছেন। তাঁদের হাতে হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.)-এর স্পষ্ট দীর্ঘ মাওয়াদ থাকার পরও তাঁরা কোনো প্রকার জবাবী লেখা প্রকাশ করেননি। আমি মনে করি, প্রকৃত আহলে ইলমের শান এমনই হওয়া উচিত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁদের জাযায়ে খায়ের দান করুন এবং তাঁদের এই মহৎমন্যতা ও ইখলাসের উত্তম বদলা দান করুন।
কালের পরিবর্তনে অনেক কিছুতেই বিবর্তন এসেছে। এখন ক্ষেত্রবিশেষে আদর্শকে মনে করা হয় দুর্বলতা। ইখলাসকে মনে করা হয় দৈন্যতা সেই কারণেই মূলত এই অধম দেফায়ে আকাবীরের উদ্দেশ্যে সামান্য প্রয়াসটুকু উৎসর্গ করতে উৎসাহী হয়েছে। এর জন্য বড়দের কাছ থেকে আদর্শিক কিছু কথা আমার শুনতেও হয়েছে। অনেক নসিহতও তাঁরা করেছেন। যা আমার কাছে পরম উপহারতুল্যই মনে হয়েছে।
আমি যখন জামিয়া পটিয়ায় শিক্ষানবিশ ছিলাম তখন বরেণ্য আলেমেদ্বীন হযরত আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী (রহ.) জামিয়া পটিয়ার মহাপরিচালক ছিলেন। তখন কেউ কেউ এই বিষয় নিয়ে তৎপর হয়ে ওঠেন। কিন্তু হযরত আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী (রহ.)ও জামিয়ার ইতিহাস সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন ছিলেন। কারো কারো অপতৎপরতার কারণে হয়তো তিনি শেষ পর্যন্ত ভাষার মধ্যে সামান্য তারতম্য এনে হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)-কে জামিয়ার ইতিহাসের অংশ হিসেবে অক্ষুণœ রাখেন। তিনি লেখেন, ‘জামিয়ার কার্যাদি সুচারুরূপে পরিচালিত হওয়ার জন্য হযরত মুফতী সাহেব হুজুর (রহ.) হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)-কে সাথে নিয়ে এসেছিলেন।’ এ সময়ও ভাষার পরিবর্তন সম্পর্কে কারো পক্ষ থেকে কিছুই বলা হয়নি। পরবর্তীতে ওই অপতৎপরতা আরো জোরালো হয়। এই সুদূর পরিকল্পনার মূল চিত্র প্রকাশিত হয় অনেক পরে। সূত্র জানিয়েছে, নিকট অতীতে মাদরাসার বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক দস্তাবেজ তথা ছাত্রদের স্মরণিকা-ডায়েরি ইত্যাদিতে জামিয়া পটিয়ার যে ইতিহাস প্রকাশিত হতো কৌশল করে তাতে হযরত ইমাম সাহেব (রহ.)-এর নাম সম্পূর্ণরূপে মুছে দেওয়া হয়েছে। এমনকি হযরত আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী (রহ.) প্রণীত অতি সচরাচর ইবারতটিও জামিয়ার ইতিহাসে আর অটুট রাখা হয়নি!
তা সত্য হলে এই কাজ কারো ভুল বা অমনযোগিতার কারণে হয়েছে তা আমি বলতে পারব না। কারণ যে দীর্ঘ অপতৎপরতা ও অপপ্রয়াসের বিষয় আমার এই গবেষণায় উঠে এসেছে তা থেকে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে হযরত ইমাম সাহেবের নাম ইতিহাস থেকে সমূলে মুছে যাওয়ার পেছনে ওই তৎপর মহলের বিশেষ নজর ও দৃষ্টি সক্রিয় ছিল। 
মোটকথা হলো, কুতুবে আলম হযরত মুফতী আযীযুল হক (রহ.) জামিয়া পটিয়ার যেই ইতিহাস লিখে গেছেন তার মধ্যে শত সংযোজন, বিয়োজন করা হলেও কিংবা এর হাজারো ব্যাখ্যা করা হলেও হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)-কে জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠার ইতিহাস থেকে বাদ দেওয়ার কোনোই পন্থা সৃষ্টি হয় না। এ কারণে ওই মহলটি প্রয়োজনে কৌশল করে হলেও হযরত ইমাম সাহেবের নামটি এই ইতিহাস থেকে বাদ দিতে মরিয়া। সেই কৌশল হিসেবেই হয়তো বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক দস্তাবেজ থেকে হযরত ইমাম সাহেব (রহ.)-এর নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে, যা মোটেও কল্যাণের বার্তাবাহক নয়।
সর্বশেষে আমি একজন অধম পাঠক হিসেবে বলতে চাই, মুরব্বিরা যে যেরূপই অবদান রেখেছেন, তার পরিপূর্ণ জাযা ও প্রতিদান আল্লাহ তা’আলার কাছে পেয়েই যাবেন। আল্লাহ তা’আলাই উত্তম প্রতিদান প্রদানকারী। সুতরাং এসব নিয়ে কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি করা বা কাউকে খাটো করা আমার উদ্দেশ্য নয়। তবে যেকোনো বিষয়ে যার যে অবদান আছে তাদের চিরতরে বিস্মৃত না করে বরং তাদের শোকর আদায় করা, তাদের জন্য দু’আ করা উত্তরসূরিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সহীহ হাদীসে আছে مَنْ لَمْ يَشْكُرِ النَّاسَ لَمْ يَشْكُرِ اللّٰهَ যারা মানুষের শোকর করবে না তারা আল্লাহ তা’আলার শোকর আদায়কারী হবে না। তা থেকে বোঝা যায়, যে কাজে যার যে অবদান আছে তা স্বীকার করা এবং তার অবদানের ব্যাপারে শোকর আদায় করা দ্বীনি দায়িত্ব। যেহেতু হযরত ইমাম সাহেব (রহ.)-এর যে অবদানের ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনা করা হলো তা একটি উত্তম ও খাঁটি দ্বীনি খিদমাত ও অবদান। সেই বিবেচনায় এসব অবদানের স্মরণ ও শোকরের দায়িত্ব এবং গুরুত্ব পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আরো বৃদ্ধি পায়।
এর বিপরীত যদি কেউ দীর্ঘকাল পরিকল্পনা করে কারো অবদানকে চিরতরে বিস্মৃত করার প্রয়াসে লিপ্ত হয়, ভাগ্যিস তারা যদি এই অভাজন থেকে অনেক অনেক বড় হয় তবে তাদের ব্যাপারে কীই-বা মন্তব্য করার আছে। এ কথা বলতে পারি, আকাবীরদের সাথে অসৌজন্য আচরণেরও একটা ভয়াবহ বদলা আছে। যা মানুষকে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জাহানেই ভোগ করতে হবে।
যাঁরা হযরত মুফতী সাহেব (রহ.)-এর লিখিত জামিয়া পটিয়ার ইতিহাসের বিভিন্ন ব্যাখ্যা করেছেন, তাঁরা কিন্তু বড় বড় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আলেমে দ্বীন। বর্তমান যুগের আকাবীরে উম্মত। তাঁদের জন্য এসব ব্যাপারে নজরে সানী করার সুযোগ এখনো আছে, যত দিন আল্লাহ তা’আলা তাঁদের মোবারক ছায়া আমাদের ওপর রাখেন। সেই সুযোগ হবে কি না, তা আল্লাহ তা’আলাই ভালো জানেন। তবে দু’আ করি, আল্লাহ তা’আলা যেন অপার কৃপায় তাঁদের জীবদ্দশায় সেই তাওফীক দান করেন।
অধমের এই লেখাটির আরেকটি উদ্দেশ্য হলো, এমন ক্ষেত্রে কিভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়ে থাকে, কেমন জঘন্য পন্থায় প্রকৃত ইতিহাসকে বদলে দেওয়া হয়ে থাকে সে ব্যাপারে কিছু বিষয় উপস্থাপন করা, যাতে নতুন প্রজন্মরা তা থেকে ইবারত হাসিল করতে পারে এবং এরূপ কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখতে আত্মপ্রত্যয়ী হতে পারে। আরেকটি বিষয় হলো, যেহেতু হযরত মুফতী সাহেব হুজুর জামিয়া পটিয়ার ইতিহাসে মূল ব্যক্তি হিসেবে হযরত ইমাম সাহেব হুজুরকেই চিত্রায়িত করেছেন সেহেতু বর্তমানেও যদি কেউ জামিয়া পটিয়ার ইতিহাস লিখতে যান তাতে হযরত মুফতী সাহেব হুজুরের মূল দস্তাবেজকে সামনে রেখে কোনো প্রকার ব্যাখ্যা-অপব্যাখ্যা ছাড়া সেই অনুকরণেই ইতিহাস রচনা করতে হবে। অর্থাৎ তিনি প্রথম উস্তাদ, প্রথম শায়খুল হাদীস, সদরুল মুদাররিসীন সব তো আছেনই সাথে প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বা প্রতিষ্ঠাতা সহকারী বা প্রতিষ্ঠাতাদের একজন কিংবা অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ইত্যাদি শব্দ থেকে যেটা প্রযোজ্য মনে হয় তা লিখতে হবে। এরূপ না করা হলে বরং হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)-কে প্রতিষ্ঠাতার ইতিহাস থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হলে স্বয়ং বানিয়ে মাদরাসা কুতুবে আলম হযরত মুফতী আযীযুল হক (রহ.)-এর দস্তাবেজ, তাঁর চিন্তাধারা ও ইখলাসের ওপর আঘাত হানার নামান্তর হবে।
সংক্ষিপ্ত আকারে বিষয়টি উপস্থাপন করতে গিয়ে অনেক দীর্ঘ হয়ে গেছে এবং বেশ অগোছালো শব্দমালাও সংযুক্ত হয়ে গেছে হয়তো। আবার একই কথার বেশ তাকরারও হয়েছে। তবে এই কথা বুকে হাত রেখে বলতে পারি, পুরো লেখাটা তৈরির সময় কারো প্রতি অধমের সামান্যতমও বিদ্বেষ, বৈরিতা, হিংসা ছিল না। বরং আসল বিষয়টি বের করে আনার চেষ্টাই নিবেদিত ছিল এই দীর্ঘ প্রয়াসে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের আকাবীরদের উত্তরোত্তর বুলন্দ মর্তবা দান করুন, যাঁরা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে গেছেন তাঁদের জান্নাতুল ফিরদাউসে উচ্চ মর্যাদায় ভ‚ষিত করুন। আমীন।
উল্লেখ্য, এই লেখাটি তৈরির পর আমি বড় ভাই মাওলানা রিজওয়ান রফীক জমীরাবাদীকে পড়তে দিয়ে বললামÑবিষয়টি সম্পর্কে আপনি একটা মতামত দিলে ভালো হয়। তিনি বলেন, মূলত এসব আকাবীরের বিষয়, এরূপ ক্ষেত্রে যতই চুপ থাকা যায়, ততই নিরাপদ। হযরত মুফতী আযীযুল হক (রহ.), হযরত ইমাম সাহেব (রহ.)Ñএই দুই আকাবীরের পরস্পরে যে আন্তরিকতা ছিল তা থেকেই কেউ যদি শিক্ষা নিতে চান বিশাল অধ্যায় শিখতে পারেন। কাকে প্রতিষ্ঠাতা লেখা হবে, কাকে হবে নাÑএমন নেশা নিয়ে তাঁরা কাজ করেননি। তাঁরা তো প্রতিযোগী ছিলেন কার আমল আল্লাহর কাছে বেশি কবুল হচ্ছে তা নিয়ে। আপনি যে নিষ্ঠুরতা দেখেছেন, তা পরের তৈরি। এখনো কতজন জামিয়া পটিয়ার ইতিহাস কতভাবে লিখছেন। কেউ যদি নিজের আকাবীরকে অপমান করে দুনিয়াবিভাবে লাভবান হতে চান, হোক। তাতে আমাদের আপত্তি করে কী লাভ। আল্লাহ তা’আলার খাতায় যাঁর নাম যেভাবে থাকবে, সেটাই আসল বিষয়। জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা হযরত মুফতী আযীযুল হক রহ.। এটার ব্যাপারে সন্দেহ নেই। তবে তিনি যেভাবে দাদাজিকে প্রতিষ্ঠার অবদানে রেখেছেন এবং প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দাদাজির যে মেহনত ও পরিশ্রম এটিকে আপন স্থলে রাখলে অন্যদের সমস্যা কি? তিনি বলেন, হযরত মুফতী সাহেব রহ. এই ইবারতে যেভাবে বলেছেন, আমরা আমাদের দাদাজিকে সেভাবেই জানি। এতদভিন্ন কল্পনা করার সুযোগ আছে বলে মনি করি না।
’’جن حضرات اکابر قدست اسرارھم کو حق تعالی نے بنگلہ کے لئے عموما اور چاٹگام کے لئے خصوصا احیاء سنت واماتت شرک وبدعت ونشر علوم دینیہ واشاعت تصوف صحیح کے لئے پیدا فرمایا تھا ، جن نفوس قدسیہ نے اپنی خلوص وللہیت وانتھک کو شش ومال وجاہ کو قربان کرکے سیلاب کی طرح ہدایت کو جاری کیا ان حضرات کی انتہائی آرزو تھی کہ قصبہ پٹیہ پر کوئی دینی تعلیم کا مرکز قائم کیا جائے، اس میں شک نہیں کہ ان نفوس قدسیہ سے بہت ان حل عقدہ  حل ہوگیا، اور ان کے خدمات مشابہ کرامات وخوارق عادات کے ہے کہ عادۃ انسان پورے مخالف ماحول میں عین بے سروسامانی میں ایسی خدمت انجام نہیں دے سکتے ہیں  اور اسقدر فتح مندی حاصل نہیں کرسکتے ہیں، لیکن قصبۂ پٹیہ کے ماحول کی ہدایت اور وہاں  دینی درسگاہ قائم کرنے کی خدمت ان حضرات کے برگزیدہ ہاتھ سے انجام نہ پاکر ان کے غلاموں کے ہاتھوں سے انجام پانا مقدر الہی تھا، لہذا ان کی نخل تمنا  ان کی عملی زندگی میں بارآور نہوا، جب ان حضرات میں سے اکثر واصل الی اللہ ہوچکے تو حضرت مولانا ضمیر الدین قدس سرہ جو ان نفوس قدسیہ میں شیخ المشائخ مانا جاتے تھے اپنی زندگی کے دور آخر میں مولانا اسکندر صاحب وبندہ عزیز الحق کو پٹیہ میں مدرسہ قائم کرنے کی طرف توجہ دلایا ۔ چنانچہ اس مبارک اشارہ کی برکت سے کام کا سلسلہ اس طرح شروع ہوا کہ مولانا اسکندر صاحب بلا شرکت عملی اس خدمت کی طرف اپنی روحانی توجہ مبذول فرماتے رہے ، اور احقر عزیز الحق مدرسہ جیری میں مدرس تھا اور وہاں کی تدریس پر قائم رہتے ہوئے قصبہ پٹیہ میں مدرسہ قائم کرنے کی تدابیر میں مصروف رہے، اس خدمت کے لیے عملی قدم اٹھانے والا اول شخص مولانا احمد صاحب مہروی ہیں، جو فی الحال مدرسہ پٹیہ میں امام صاحب کے نام سے مشہور ہیں اور درس حدیث کے کام انجام دیتے ہیں۔احقر عزیز الحق نے متعدد علماء کرام سے پٹیہ میں مدرسہ قائم کرنے کا تذکرہ کیا اور اس خدمت میں مصروف ہونے کی درخواست کی، لیکن کسی نے بھی ہمت افزائی نہیں کی، خود مدرسہ جیری میں مدرس تھا اور اپنے اساتذہ کے زیر سایہ مدرسہ جیری سے علیحدگی کی کوشش کی، ان سے اجازت نہ ملنے کی وجہ سے خود اس خدمت کو انجام دینے میں مصروف ہونے سے معذور رہا۔ حسن اتفاق سے مولانا احمد صاحب سے بندہ کی ملاقات ہوئی، ان سے کہا کہ آپ پٹیہ میں ایک مدرسہ قائم کیجئے، بندہ بھی معین کار رہیگا، باوجودیکہ وہ پٹیہ کا باشندہ نہیں ہے، نہ باشندگان پٹیہ سے ان کی ادنی شناسائی ومناسبت تھی نہ ان کو وعظ ونصیحت کا ملکہ ہے، نہ چندہ وغیرہ فراہم کرنے کی بظاہر کوئی معقول صورت ہے، ان وجوہ سے میری گذارش  بے جوڑ تھی، تاہم جبکہ میں نے یہ درخواست پیش کی ، بلا تردد کہا کہ اگر تو کہتا ہے تو انشاء اللہ تعالی میں اس خدمت کے لئے تیار ہوں۔‘‘
আমরা তো সব সময় দু’আ করি, মুরব্বিগণ যেভাবে খুলুসিয়্যাতপূর্ণ মেহনতের স্বাক্ষর রেখে গেছেন আল্লাহ তা’আলা পরবর্তী প্রজন্মদেরও সেই পথ ধরে চলার তাওফীক দান করেন এবং মুরব্বিদের উত্তরোত্তর মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। তাঁদের ফয়জ আমাদের, আমাদের ধারাবাহিক বংশপরম্পরা এবং যাঁরাই তাঁদের ফয়জ থেকে উপকৃত হতে আগ্রহী সকলের প্রতি জারি রাখেন। আমীন।
নিজামুদ্দীন
১২.০৩.২০১৯ ইং



ইন্তেকালের কিছুকাল পূর্বে লিখিত 

হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)-এর 

মোনাজাতমূলক ফার্সি কসিদা

مناجات قبل از موت

از صاحب سوانح الامام علامہ احمد قدس اللہ سرہ


احمد تو بکن حمد خدا شکر الہی

 پس صل علی ختم رسل سید عالی

گرنور خدا جلوہ گرت کور نباشی

یک چشم زدن غافل ازاں نور نباشی

ہم حب خدا خشیت او حبل نجاست

از ذکر خدا نفس کشی اصل حیاست

برسنت محبوب خدا سید کونین

دائم توعمل کن کہ شوی فائز دارین

قرآن مجید ست پُراز وحی الہی

ہر حرف ازاں نور فشاں نور خدائی

ہر کس کہ تلاوت کندش بادل صادق 

محبوب شود نزد خدا رب خلائق

دروقت نمازت نظرت سوئے خدا داد 

مقبول شود آں بدر خالق وغفار

ایں عمر گرانمایۂ من رفت بغفلت 

پس رحم کن اے خالق من مالک رحمت

کن خاتمہ بالخیر بداں وقت مماتم 

دہ کلمۂ توحید بلب حال وفاتم

بس رحمت حق مایۂ من بہر نجاتم 

ہر ہر عملم در نظرم قابل ماتم

گلزار جناں کن قبرم را بعنایت

در ذکر مرا دار بدہ نور ہدایت

ایں نامۂ اعمال من از جرم و معاصی

تو پاک کن اے خالق من بخش خلاصی

تو عفو بکن مادر بندہ پدرم را 

از فضل دراں جنت فردوس بکن جا

ہم رحم بکن مرشد و استاد کرامم 

کن مسکن او شاں ہمہ فردوس معظم

جزہستیٔ کس نشود قاضی حاجات 

اہلم را نگہدار تواز فتنہ و آفات

جملہ را بدہ راحت دارین بہ ایماں

کس نیست بجز تو کہ بود رازق اوشاں

تو سلسلۂ علم دریں نسل رواں دار 

ہر فرد را از خوف توماند دل بیدار

ختم ست سخن ہدیۂ تسلیم و درودم 

از بہر نبی سید کونین شفیعم


তাঁর লিখিত আরেকটি মোনাজাত

مناجات احمد ببارگاہ رب صمد

الہی تیرے درکی جسہہ سائی کا میں عادی ہوں

گناہوں میں ہوں ڈوبا رات ودن رحمت کا راجی ہوں

سہارا کچھ نہیں میرا بجز تیری عنایت کے

الہی رحم کر مجھ پر گنہگاری کا شاکی ہوں

ہوئی ہے عمر ضائع بس کسالت اور حماقت میں

عبادت ہے نہ طاعت بلکہ خواہش کا پجاری ہوں

سمندر میں چلی کشتییہ موجوں کا تلاطم ہے

نہ ساحل رونما ہے توشۂ رہ سے بھی عاری ہوں

تڑپتا ہوں ہلاکت سے نہ ساحل ہے نہ یاراں ہے

خدایا میرے رہبر ہو ہدایت کا بھکاری ہوں

خدا توفیق دے مجھکو عبادت با حلاوت کی

زبان و قلب پر ہر دم ترے اذکار جاری ہو

جھلک ہے نور کی تیرے جدھر دیکھوں جہاں دیکھوں

تہی دستان قسمت میں نہ گن مجھکو کہ ساعی ہوں

بزرگی کی نہیں خواہش یہی ہے آرزو دل کی

نہ کمترجانوں میں مجھ سے کسی کو سب سے خاکی ہوں

تری رحمت سے لاہوتی عجائب مجھکو دکھلا دے

مٹوں ان میں خودی نہ رہے فنائیت میں باقی ہوں

لطائف کو منور کر جلاکر نور عرفاں یو

جلا دل کو محبت میں کہ میں تو اس سے عاری ہوں

دو گیتی میں رضا تیری ہی مقصود و امانی ہے

ہے جنت اسلئے مطلب کہ واں تجھ سے ملاقی ہوں

تو خالق ہے تو مالک ہے تورب العالمیں بھی ہے

سدا مجھکو تمنا ہے ہے ترے در کا مناجی ہوں

بزرگی کی سجاوٹ تو بزرگوں کوہی زیبا ہے

مجھے ڈر ہے مخاوف سے کہ کیوں کران سے ناجی ہوں

خدایا بخش دے میری غباوت کے قصوروں کو

منزہ کرلے مجھکو سب گناہوں سے کہ عاصی ہوں

مرے ماں باپ و استاذو مشائخ پر کرم فرما

مرےیاروں کو تو بخشے طلبگار معافی ہوں

بہت امید ہے سالار امت کی شفاعت کی

عنایات خصوصی کا ہوں سائل گرچہ عامی ہوں

درود بے عدد ان پر سلام بیکراں میرا

ہوراضی آل او ر اصحاب سے وہ تجھ سے راضی ہوں

(مطبوعۂ انوار احمدی)


হযরত ইমাম সাহেব হুজুর (রহ.)-এর জীবনী গ্রন্থের ওপর অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার বর্তমান মহাপরিচালক হযরতুল আল্লাম মুফতী আব্দুল হালীম বোখারী সাহেব (দা.বা.)-এর লিখিত নুকতাবিহীন উর্দু কসিদা।


کلام معری در سلسلۂ رسالۂ محلّٰی

مسطورہ در رحلۂ ہادی کامل، سرور اکامل، علامۂ دہر، 

ہمہام عصر امام احمد رحمہ اللہ الصمد، واوصلہ دار السلام مع الصلحاء الکرام


(از علامہ، مولانا محمد عبد الحلیم عبد الغنی البخاری دامت برکاتہم)


کمال احمدی کا ہے رسالہ 

لکھائی اسکی کار لامحالہ

ہوا درد و الم کا اس سے درماں 

سرور روح کا ہے عمدہ ساماں

امام کاملاں علامہ احمد 

ہواہے راہیٔ درگاہ سرمد

ملے اس دم کہاں ممدوح اکرم 

رسالہ ہے مداوا دل کا ہردم

مساعی عمر کی آدھی صدی کی

کہ لوگوں کو ملے علم سماوی

ہٹاہے دار والا سے مکرم 

ہوا معمار معہد کا وہ ہمدم

ہوا معمورۂ گمراہ معمور 

ہوئے اعداد لا محدود مسحور

مسلم اک ولی ہردم رہاہے 

گروہ واصلاں سے وہ سواہے

علوم وحی کا اعلی محاور 

رہا علم مسائل کا وہ ماہر

وہ اسرار کلام اللہ کا حاوی

علوم احمدیؑ کا وہ طحاوی

حِکم کا وہ ولی اللہ دوراں 

وہ عطار دلوک راہ رحماں

اسی کی سادگی کس سے ادا ہو

کلام محکم اس کا کس سے واہو

رسالہ ہے اسی کے سارے احوال 

لکھائی اسکی ہے مدرار و سلسال

ولد مرحوم کا اس کا محرر 

وہ والد کی محامد کا مصور

اسی کے دوسرے سارے رسائل 

علوم لوح اطہر کے وسائل

ہو سہم کل ملاحد اس کا مرسام 

لکھائی رد کل اعدائے اسلام

دعا مملوک مولی الحلم کی ہے 

محرر کو الہی حوصلہ دے

عطا کر اس کو اک عمر مطول 

ادا اس سے ہو کردار اور اکمل



(আল্লামা আহমদ রহ. স্মারকগ্রন্থ অনুসরণে)

تاریخ جامعہ پٹیہ بزبان بانی جامعہ حضرت   علامہ مولانا مفتی عزیز الحق صاحب نور اللہ مرقدہ

وجہ بنیاد مدرسہ

چاٹگام کے درمیانی حصہ میں  پٹیہ ایک مشہور قصبہ ہے، اپنے وسعت اور کثرت آبادی اور محکمۂ سرکاری کے اعتبار سے چاٹگام کے دوسرے قصبات سے اسکی امتیازی شان ہے، انگریزی تعلیم یافتوں کی زیادہ اقتدار ہے، بالخصوص عین قصبہ پر  دو ہائی سکول دوش بدوش باشان شوکت چل رہا ہے، قصبہ سے تقریبا چار میل فاصلہ پر بی اے کالج موجود ہے، تعلیم دین کا برائے نام بھی کوئی مرکز قائم نہیں ہے، علماء کی نہایت قلت اگر برائے نام دو ایک ہے بھی تو انگریزی تعلیم کے اثر ات سے متاثر اور اس کے رنگ سے رنگین ہے، اور ان کے زیر اقتدار کالحذف ہے، انگریزی تعلیم یافتوں کو اس بات پر فخر تھا کہ قصبہ پٹیہ میں ہم علماء کے اقتدار کو ختم کرچکے ہیں، لوگ صحیح اسلام سے ناآشنا رسوم وبدعات کا شکار، سنت نبویہ سے ناواقف، باطل فرقۂ متصوفہ عوام الناس پر اپنا پوار سکہ جمائے ہوئے ہیں، کفر و شرک اور مخالفت شریعت غراء کو درویشی کے ساتھ نامز کررکھے ہیں، ہوش وحواس  درست، اور خانہ داری میں پوری حذاقت سے مشغول ، برہنہ ، وپورا مکشوف العورۃ چلتے پھرتے ہیں ، اور اس کو درویشی سمجھتے ہیں، قصبہ کے شرقی جانب میں تین قبر ایسے موجود  ہیں کہ اس میں مردہ مشرق کی طرف سر اوندھا ، بےکفن ، بےجنازہ مع رقص و سرور وآلات مزامیر دفن کئے گئے ہیں، اکثر لوگ قبر پرستی میں حد سے متجاوز ہے،

 جن حضرات اکابر قدست اسرارھم کو حق تعالی نے بنگلہ کے لئے عموما اور چاٹگام کے لئے خصوصا احیاء سنت واماتت شرک وبدعت ونشر علوم دینیہ واشاعت تصوف صحیح کے لئے پیدا فرمایا تھا ، جن نفوس قدسیہ نے اپنی خلوص وللہیت وانتھک کو شش ومال وجاہ کو قربان کرکے سیلاب کی طرح ہدایت کو جاری کیا ان حضرات کی انتہائی آرزو تھی کہ قصبہ پٹیہ پر کوئی دینی تعلیم کا مرکز قائم کیا جائے، اس میں شک نہیں کہ ان نفوس قدسیہ سے بہت ان حل عقدہ  حل ہوگیا، اور ان کے خدمات مشابہ کرامات وخوارق عادات کے ہے کہ عادۃ انسان پورے مخالف ماحول میں عین بے سروسامانی میں ایسی خدمت انجام نہیں دے سکتے ہیں  اور اسقدر فتح مندی حاصل نہیں کرسکتے ہیں، لیکن قصبۂ پٹیہ کے ماحول کی ہدایت اور وہاں  دینی درسگاہ قائم کرنے کی خدمت ان حضرات کے برگزیدہ ہاتھ سے انجام نہ پاکر ان کے غلاموں کے ہاتھوں سے انجام پانا مقدر الہی تھا، لہذا ان کی نخل تمنا  ان کی عملی زندگی میں بارآور نہوا، جب ان حضرات میں سے اکثر واصل الی اللہ ہوچکے تو حضرت مولانا ضمیر الدین قدس سرہ جو ان نفوس قدسیہ میں شیخ المشائخ مانا جاتے تھے اپنی زندگی کے دور آخر میں مولانا اسکندر صاحب وبندہ عزیز الحق کو پٹیہ میں مدرسہ قائم کرنے کی طرف توجہ دلایا ۔ چنانچہ اس مبارک اشارہ کی برکت سے کام کا سلسلہ اس طرح شروع ہوا کہ مولانا اسکندر صاحب بلا شرکت عملی اس خدمت کی طرف اپنی روحانی توجہ مبذول فرماتے رہے ، اور احقر عزیز الحق مدرسہ جیری میں مدرس تھا اور وہاں کی تدریس پر قائم رہتے ہوئے قصبہ پٹیہ میں مدرسہ قائم کرنے کی تدابیر میں مصروف رہے، اس خدمت کے لیے عملی قدم اٹھانے والا اول شخص مولانا احمد صاحب مہروی ہیں، جو فی الحال مدرسہ پٹیہ میں امام صاحب کے نام سے مشہور ہیں اور درس حدیث کے کام انجام دیتے ہیں۔

احقر عزیز الحق نے متعدد علماء کرام سے پٹیہ میں مدرسہ قائم کرنے کا تذکرہ کیا اور اس خدمت میں مصروف ہونے کی درخواست کی، لیکن کسی نے بھی ہمت افزائی نہیں کی، خود مدرسہ جیری میں مدرس تھا اور اپنے اساتذہ کے زیر سایہ مدرسہ جیری سے علیحدگی کی کوشش کی، ان سے اجازت نہ ملنے کی وجہ سے خود اس خدمت کو انجام دینے میں مصروف ہونے سے معذور رہا۔ حسن اتفاق سے مولانا احمد صاحب سے بندہ کی ملاقات ہوئی، ان سے کہا کہ آپ پٹیہ میں ایک مدرسہ قائم کیجئے، بندہ بھی معین کار رہیگا، باوجودیکہ وہ پٹیہ کا باشندہ نہیں ہے، نہ باشندگان پٹیہ سے ان کی ادنی شناسائی ومناسبت تھی نہ ان کو وعظ ونصیحت کا ملکہ ہے، نہ چندہ وغیرہ فراہم کرنے کی بظاہر کوئی معقول صورت ہے، ان وجوہ سے میری گذارش  بے جوڑ تھی، تاہم جبکہ میں نے یہ درخواست پیش کی ، بلا تردد کہا کہ اگر تو کہتا ہے تو انشاء اللہ تعالی میں اس خدمت کے لئے تیار ہوں۔

قصبہ پٹیہ سے ڈھائی میل فاصلہ پر مغربی جانب میں مولوی عیسی صاحب نامی ایک شریف النسب وصحیح العقیدہ وفارغ التحصیل نوجوان جو ایک بااثر خاندان کا نونہال تھا اس خدمت کا سلسلہ شروع کرنے کیلئے ان کو بلایا گیا، انہوں نے بھی فراغ دلی سے کہا کہ میں بھی اس خدمت کیلئے تیار ہوں، اور ایک سال بلا تنخواہ کام کروں گا۔ اور میرے گھر میں مولانا احمد صاحب کے خورد نوش کا بندوبست کروں گا۔  مولانا احمد صاحب نے فرمایا کہ اگر میری خورد نوش کا انتظام ہوگیا تو میں تنخواہ کی فکر نہیں کروں گا۔

ہم تینوں ملکر قصبہ پٹیہ پہنچکر مرحوم  مولانا حمید الرحمن صاحب نامی ایک سالخوردہ متبع سنت عالم سے مشورہ کیلئے ملاقات کیا، مرحوم امزو منشی نامی ایک محب عالم وعلماء اور زندہ دل شخص کو بھی  مشورہ میں شریک کیا، منشی صاحب مذکور نے  کوشش کرکے موجودہ مدرسہ دکھن جانب میں پری دیگی  پار ایک مشہور جگہ ہے اور طوفان علی منشی صاحب کے بااثر خاندان وہاں مقیم ہیں، اس جگہ میں اس خاندان کے تعاون سے مدرسہ قائم ہونا قرار پایا ، اور آئندہ جمعہ کو طوفان علی منشی صاحب کی مسجد میں علماء وصلحاء کا ایک اجتماع ہونا اور بعد نماز جمعہ مدرسہ کا ابتدائی کارروائی عمل میں آنا قرار پایا۔

حسب قرار داد علماء کی ایک جماعت جسمیں حضرت مولانا احمد حسن صاحب  مہتمم جیری اور مرحوم مولانا محمد یعقوب صاحب، محدث مدرسۂ ہاٹہزاری بھی شریک تھے پری  دیگی پار طوفان علی منشی کے مسجد میں حاضر ہوئے، طوفان علی منشی صاحب کے  باڑی  والانے اپنے وعدہ سے پیچھے ہٹ گئے، اور کہنے لگے کہ ہم پری دیگی پا ر میں کسی مدرسہ کو قائم ہونے نہیں دے سکتے۔ مخالف جماعت ہم سے عداوت کرینگے۔ ان کے پیچھے ہٹنے کے باوجود حسب قرار داد سابق بعد نماز جمعہ اسی مسجد میں مدرسہ کا ابتدا ہوگیا، جس کی صورت  اس طرح ہوئی کہ مولوی  مسلم نامی ایک نواکھالی کے عالم جیری کے فارغ التحصیل قصبۂ پٹیہ کے مشرقی جانب مقام گبندر گھیل میں کچھ بچوں کو قرآن مجید ناظرہ پڑھاتے تھے،  مرحوم منو میاں دفعدار صاحب اس مکتب کے منتظم تھا،  مولوی صاحب مذکور مع منومیاں دفعدار اپنے لڑکوں کو لیکر ہمارے اجتماع میں شریک ہوئے،  حضرت مولانا احمد حسن صاحب مدظلہ نے مرحوم مولانا یعقوب صاحب کو فرمایا کہ آپ توکلا علی اللہ تعالی ان بچوں کو سورہ فاتحہ پڑھا دیجئے، مولانا مرحوم نے خطبۂ مسنون ادا فرماکر بچوں کو سورۂ فاتحہ پڑھادی، اور باتفاق آراء مدرسہ کو قاسم العلوم  کے نام سے موسوم کیا گیا، بعد  مناجات مجلس برخاست ہوئی۔ لیکن سب کے دلمیں مدرسہ کی جگہ کے متعلق سخت حیرانی رہی، رات کو مرحوم مولانا حمید الرحمن صاحب کے مکان پر سب جمع ہوگئے،  اورسب حسرت وافسوس میں غرق تھے، رات کو نیند کسی کو نہیں ہوئی، اخیر شب تک مدرسہ کی جگہ کے متعلق تذکرہ جاری رہا، مولوی مسلم نواکھالوی نے کہا کہ منو میاں دفعدار صاحب بھی ایک بااثر آدمی ہے ، اگر ان کو بلا کر ان سے گفتگو کیجائے تو امید ہے یہ عقد ہ حل ہوجائیگا، چنانچہ ان کو بلایا گیا اور ماجرا سنایا گیا، وہ تو خود بھی بعد الجمعہ والا اجتماع میں شریک تھا ،  واقعہ کا علم ان کو پہلے ہی سے تھا ، مدرسہ کی جگہ کے متعلق انہوں نے کہا کہ میں میری مسجد میں آپ حضرات کو جگہ دے سکتا ہوں،  فی الحال آپ اس میں مدرسہ قائم کریں اور بتوفیق خداوندی آئندہ دوسری تدبیر کیجائیگی، لیکن شرط یہ ہے کہ مدرسہ کو کبھی میرے احاطہ سے منتقل نکرے۔  اس ہمت افزا کلمہ سے علماء حاضرین کی جان میں جان آگئی اور شب ماتم روز عید سے بدل گیا،  اور ان کے شرط کو سب نے منظور کر لیا،  صبح کو اجتماع منتشر ہوگیا، مولانا احمد صاحب، اور مولوی عیسی صاحب، اور مولوی مسلم صاحب، اور مولوی امجد صاحب جیروی سردست  مدرسہ کے ملاز م مقرر ہوئے، کچھ روز مدرسہ مسجد ہی میں جاری رہا۔

فی الحال مدرسہ کے شمالی جانب میں جو دکانیں موجود ہیں اس وقت دکان کے گھر خالی تھی، مدرسہ کو مسجد سے اس دکان میں منتقل کردیا گیا، وہاں کچھ دن ٹھرنے کے بعد منومیاں دفعدار صاحب کے سسرال سے ڈھائی گنڈہ زمین لیا گیا، جسکی قیمت بندہ پٹیہ حاضر ہونے کے بعد مالک زمین کو ادا کیا۔ پھر اس  زمین میں مختصر بانس کا ایک گھر تیار کیا گیا اور مدرسہ اس میں منتقل کیا گیا، اس کے بعد مٹی کے ایک کچی عمارت  ۲۷ ستائس ہاتھ طولانی میں تیار کیا گیا، لیکن اس گھر کی اخراجات ادھار پر انجام پائے تھے ، جس کو بندہ نے پٹیہ کی حاضری کے بعد ادا کیا،  یہاں تک کام میری غیر حاضری میں ہوا،  لیکن بندہ مدرسہ جیری میں رہکر یہاں آتا جاتا تھا،  اور جزئی و کلی  مشوروں میں شریک رہتا تھا، اس اثنا میں مقامی بعض  ہم عقیدہ عالم مدرسہ پر چڑھائی کرکے اپنا قبضہ جما یا اور  مولانا احمد صاحب کو ان کے تسلط پر مدرسہ سے علیحدہ ہونا پڑا، بندہ بھی کسی قدر کنارہ کش رہکر وقت اور موقع کا منتظر رہا۔ چونکہ اس  تسلط کی بناء خلوص پر نہیں تھا اس کا اساس بہت جلد منہدم  اور وہ شخص مدرسہ سے نکل گیا،  اس اثناء میں مرحوم مولانا عبد الجلیل صاحب جیروی کو مدرسین کے سلسلہ میں مقرر ہوا، جسوقت  میں مدرسہ میں حاضر ہوا یہ حضرات موجود تھے۔   مولانا عبد الجلیل صاحب ، مولوی امجد اور مولوی مسلم، مولوی عیسی صاحب بھی اسوقت  کنارہ کش ہوگئے تھے، اور دوسرے حضرات بھی مدرسہ سے علیحدہ ہونیکی فکر میں تھے، اور دوسری جگہ ملازمت کی تلاش میں تھے۔

مولانا احمد صاحب  نے بوقت علیحدگی بندہ سے کہا کہ اگر آپ کی رائے ہو تو میں اس تسلط کرنے والا  سے مقابلہ کروں گا، میں نے کہا ہرگز مناسب  نہیں،  آپ چلے آئیے، نتیجہ دو صور ت سے خالی نہیں ہوگا، یاتو وہ مدرسہ کرنے میں کامیاب ہونگے، وہ ہمارے لئے بڑی خوشی کی بات ہے کہ مدرسہ قائم کرنا ہمارا مقصود تھا اور وہ مقصود پورا ہو جائے، ہمکو تکلیف نہ کرنا پڑا، یا تو وہ ناکام ہونگے ، اس وقت ہم خدمت کو ہاتھ میں لینگے، اس میں بڑا فائدہ یہ ہو گا کہ آئندہ کبھی ان کو اس تسلط کا طمع نہیں ہوگا اور کام کرنے والا مامون ہوکر کام کرسکے گا۔

جیری سے پٹیہ میں حاضری

قطب الاقطاب حضرت مولانا ضمیر الدین قدس سرہ نے شہر چاٹگام میں احقر عزیز الحق سے فرمایا کیا تم مدرسہ جیری سے علیحدہ ہوسکتے ہو، بندہ نے اس کو قبول کرلیا، تعطیل رمضان سے اٹھارہ روز پہلے استخارہ کرکے استعفاء نامہ پیش کیا ، استعفاء نامہ پیش کرنے سے پہلے جیری سے علیحدگی پر دلمیں نہایت طمانینت وسکون محسوس ہوتا تھا ، اپنی ساری زندگی میں  کسی امر استقبال کے متعلق ایسا سکون وطمانینت شاید دوچار دفعہ بھی نصیب نہیں ہوا، علیحدگی کے متعلق دل میں تردد کی بو بھی نہیں تھی، اس کا مستقبل بالکل روشن معلوم ہوتا تھا، تاہم بندہ نے عمل بالسنۃ کے خیال سے استخارہ کرلیا اور استخارہ کرتے وقت جیری سے علیحدگی اور پٹیہ میں مدرسہ قائم کرنیکی طرف دل کو متوجہ کیا، جب استخارہ کرکے سو گیا خواب میں کوئی شخص مجھکو آیت پڑھکر سنایا وعلی اللہ فلیتوکل المؤمنون، آنکھ کھلی تو دل میں بشاشت بہت زیادہ تھی،  ۱۳۵۷ھ کے رمضان شریف میں شہر چاٹگام میں حضرت قدس سرہ اور مولانا اسکندر صاحب اور بندہ کے درمیان پٹیہ میں مدرسہ کے متعلق تذکرہ ہوا، اسدن کا تذکرہ کسی نتیجہ پر نہیں پہنچا ، پھر ۱۷ رمضان میں اجتماع کی تاریخ مقرر ہوئی، حسب قرار داد بندہ شہر میں حاضر ہوا بارش زور کی تھی، دونوں حضرت تشریف فرما نہیں ہوئے، بندہ دو ایک روز شہر میں ٹہر کر اعتکاف مسنون ادا کرنے کی نیت سے گھر چلا آیا،  بعد اعتکاف وادائے نماز عید پدر روحانی ومربی لاثانی حضرت مولانا احمد حسن صاحب مہتمم مدرسہ جیری میرے گھر تشریف لائے اور مدرسہ جیری کی خدمت پر مجھکو مجبور کیا، استعفاء نامہ بیکار گیا  اور دو سال مجبورا جیر ی میں رہنا پڑا ، ۱۳۵۷ھ کو پورا کیا ، ۱۳۵۸ کے آخر میں حضرت اقدس کے حجۃ الوداع میں شریک سفر رہا، حج سے واپسی کے بعد کچھ دنوں تک حضرت قدس سرہ کے سایہ ہمارے  سروں پر رہا اور ۱۳۵۹ ہجری میں فقط ہم کو نہیں دنیا کو یتیم بنا کر حضرت قدس سرہ جوار رحمت خداوندی میں جاگزیں ہوئے،  ۱۳۵۷ کے آخر میں مدرسہ پٹیہ کے جو بنیاد رکھی گئی تھی وہ جوں کے توں رہ گئی ترقی تو درکنار  رکھی ہوئی بنیاد بھی بے بنیاد ہونے کے خطرہ میں پڑھ گئی تھی ، بس ۱۳۵۹ھ میں بندہ کو جیری سے  علیحدگی اور پٹیہ کی حاضری کا پھر قصد ہوا ، ۲۳ رات مسلسل استخارہ کیا، اس طویل استخارہ کا اکثر حصہ مقام مہشکہالی میں گذرا،  تیسویں رات کو کوئی مجھکو خواب میں یوں کہہ رہا تھا  کہ تردد کیوں کرتاہے ، جاو راستہ کھلے گا، کسی کا نام لیکر کہا جو اسوقت مجھکو یاد نہیں ہے  کیا نہیں دیکھتا ہے  فلاں نے کام شروع کیا اور راستہ کھل گیا،  بس تیسویں کے صبح کو احقر نے پٹیہ کی حاضری کا پورا قصد کرلیا، اسوقت  مدرسہ پٹیہ میں جو علماء موجود تھے ان کے پاس ایک طالب علم بھیجدیا کہ توکلا علی اللہ تعالی بندہ نے جیری سے علیحدہ ہو کر پٹیہ میں حاضر ہونے کا قصد کر لیا، آپ حضرات میں سے جو باختیار خود رہیگا رہ سکتا ہے جو جانا چاہتاہے جاسکتا ہے، بندہ نہ کسی کو رہنے کے لئے کہتا ہے اور نہ جانیکے لئے، نہ کسی کے ذمہ دار ہے جو رہیگا اپنی ذمہ داری پر رہیگا۔

بندہ مدرسہ پٹیہ میں حاضر ہوکر  لفظ ضمیریہ کو نام میں اضافہ  کردیا اور اس نسبت کو باعث برکت سمجھا، اور تجربہ نے بتلادیا کہ واقعی باعث برکت تھی، کچھ دنوں کے بعد مولوی۔۔۔ کو مدرسہ سے علیحدہ کرنا پڑا، پھر کچھ دنوں کے بعد مولوی۔۔۔ کو علیحدہ کرنا پڑا،  اس کے علیحدگی کے وقت مدرسہ میں بڑا فتنہ برپا ہوا، مدرسہ کے اندر وباہر دونوں مخدوش ہوگیا، اس کے ساتھ چار مدرس مدرسہ سے نکل گیا، بندہ معاملہ خداوندی  کو دیکھتا رہا اور رحمت خدواندی کا منتظر رہا، نکلنے والے مدرسین کی جگہ پورا کرنے کے لئے میری سعی وکوشش کے  بغیر محض رحمت خدوندی سے حضرت قدس سرہ کا خلیفۂ خاص حاذق استاد مرحوم مولانا حافظ الرحمن صاحب اور حضرت کا دوسرا خلیفہ مولانا عبید الرحمن صاحب شریک خدمت ہوئے، پہلے مالیات کی تنگی رہتی تھی تنخواہ مدرسین ادا نہو تی تھی، ان حضرات کے تقرر کے بعد تنگی رفع ہوگئی، مدرسین کو پوری تنخواہ ملتی رہی بایں معنی یہ مدرسہ ترقی کا دور ثانی ہے۔

مدرسہ کا سرپرست

حضرت قدس سرہ کے اشارہ سے اس دینی خدمت کا سلسلہ شروع ہوا لہذا حضرت قدس سرہ اس کا سرپرست  اور مربی تھے، ۱۳۵۹ھ میں جب حضرت کا وصال ہوگیا اور اس سال کے شوال میں احقر مدرسہ  جیری سے مدرسہ پٹیہ کی طرف منتقل ہونے کا قصد کیا تو اسی سال کے رمضان المبارک میں سلہٹ حضرت مولانا مدنی مدظلہ کے ساتھ معتکف رہنے کے خیا ل سے سفر سلہٹ اختیار کیا، اور مدرسہ پٹیہ کو حضرت مولانا مدنی مدظلہ کے سرپرستی سے شرف کرنے کا خیا ہوا ، چنانچہ یہ درخواست ان کی خدمت میں پیش کی گئی، آں حضرت نے مختصر گفتگو کے بعد درخواست کو منظور فرمایا، سرپرستی  کا حاصل فقط اس قدر ہے کہ مدرسہ اور خدام مدرسہ کو حضرت کی ذات گرامی کی طرف انتساب کی برکت ملتے رہے، عملی شرکت سے بوجہ عدیم الفرصتی کے حضرت والا نے انکار فرمادیا تھا، بحمد اللہ تعالی ابتک مدرسہ حضرت والا کی زیر سرپرستی جاری ہے اور دنیا دیکھ رہا ہے کہ برکات کا کیا تماشا ہے، عملی شرکت کے اعتبار سے حضرت مولانا حبیب اللہ صاحب  رحمۃ اللہ علیہ ، حضرت مولانا سعید احمد صاحب سابق محدث مدرسہ ہاٹہرزاری رحمۃ اللہ عکہ ، حضرت مولانا احمد حسن صاحب مدظلہ مہتمم مدرسہ جیریری مدرسہ کا بڑا خیر اندیش مربی ومحسن ومشیر رہے جزاہم اللہ احسن الجزاء۔

بنیادی جلسہ

احقر کے حاضری کے بعد غالبا ۱۳۶۰ھ میں علماء وصلحاء کا ایک خاص بنیادی جلسہ منعقد ہوا جس میں حضرت مولانا حبیب اللہ صاحب رحمۃ اللہ علیہ  اور مولانا احمد حسن صاحب مدظلہ، حاجی عبد اللطیف صاحب  ، حاجی نور الزمان سوداگر صاحب مع دوسرے علماء وصلحاء   کے شریک تھے، جن کے تعداد غالبا چالیس پچاس تک ہوگی۔ بندہ مدرسہ میں حاضر ہو کر مولانا عبد الجلیل صاحب کو مہتمم بنایا تھا ، اور بندہ نے مدرسی اختیار کیا تھا، اس بنیادی جلسہ میں جب اہتمام کا تذکرہ اٹھا  تو مولانا حبیب اللہ صاحب ودیگر حاضرین نے خدمت اہتمام کو میرے سپرد کیا، اہتمام سے مجھکو طبعی وحشت تھی اور ماضی زندگی کے اعتبار سے اہتمام سے کچھ بھی مناسبت نہیں تھی، بندہ نے اہتمام سے بچنے کے لئے بہت کچھ معذرت کی لیکن انہوں نے ایک بھی نہ سنے اور خدمت کو بزور میرے سرپر تھوپ دی،  میرے ناقابلیت کی وجہ سے دلی انقباض اور طبعی وحشت تھی  کبھی تنہائی میں اور کبھی لوگوں کے سامنے بے اختیار رویا کہ یہ عظیم الشان خدمت کے میں اہل نہیں ہوں اور اسکے حقوق ادا کرنے کی قابلیت مجھ میں نظر نہیں آتا، آخرت میں  اضاعت حقوق کے مواخذہ کا مجھکو سخت اندیشہ ہے، ایک دفعہ کسی سفر میں مرحوم حضرت مولانا اسکندر صاحب سے خدمت اہتمام پر حسرت آمیز تذکرہ ہورہا تھا اور میں میری بربادی کا اندیشہ ظاہر کر رہا تھا ، اس کے بعد جب  رات کو سو گیا تو خواب میں دیکھتا ہوں کہ کوئی مجھ سے کہہ رہا مدرسہ چلتا ہے تیرے حکم سے اور تو چلتا ہے خدا کے حکم سے ، صبح کو یہ خواب مولانا موصوف سے بیان کیا ، تو فرمایا کہ  من جانب  اللہ تمہاری تسکین وتسلی ہے، حضرت مولانا عبید الرحمن صاحب اور مولانا حافظ الرحمن   صاحب جب مدرسہ میں مقرر ہوئے  اورباتفاق مدرسین مولانا عبید الرحمن صاحب کو نائب مہتمم قرار دیا گیا، کئے سال تک انہوں نے نہایت جاں فشانی سے بخوبی انجام دیا، مدرسہ کے بہت سے امور ان کی خوش تدبیری سے اچھا انجام پایا، پختہ تعمیر کا سلسلہ ان کی  زیر نیابت شروع ہوا، مدرسہ کے کچی عمارت کو جب سیلاب نے منہدم کردیا تھا تو  بندہ خواب میں دیکھتا ہے کہ مولانا عبید الرحمن صاحب نے ستون کے لکڑی اور بانس جمع کیا ان کے ہاتھ میں  ہتیار ہے اور خود گھر بنانے کے کام کررہا ہے اور مجھکو کہ رہا ہے کہ مدرسہ بانس سے بناوں گا، ابتدائی پختہ تعمیر کی خدمت جب وہ انجام دیرہے تھے تو ایک دفعہ ایسا اتفاق ہوا کہ تعمیر کا سامان باوجود کوشش کے دستیاب نہیں ہوتا تھا، کام بند رہا اور ہم پریشان رہے تو مولانا موصوف نے خواب میں دیکھا کہ حضرت مولانا یعقوب صاحب رحمۃ اللہ علیہ سابق صدر مدرس مدرسہ دار العلوم دیوبند  مدرسہ میں تشریف لائے اور ان سے کہہ رہا ہے کہ میاں گھبراؤ نہیں، انشاء اللہ سامان موجود ہوجائیگا، اس کے بعد بفضلہ تعالی کشائش ہوگئی اور کام شروع ہوگیا ، غرض مولانا موصوف نے نہایت دل سوزی سے نیابت کا کام انجام دیا ، اس طرح کئے سال نیابت کا کام انجام دینے کے بعد ان کے کچھ علائق بڑ گئے اور کام میں فتور واقع ہونے لگا ، لہذا باتفاق مدرسین حضرت مولانا حاجی محمد یونس صاحب کو نائب مہتمم بنایا گیا، یہ صاحب میرے شیخ حضرت قدس سرہ کے داماد بھی ہیں اور خلیفہ خاص بھی ہیں ، حافظ قرآن اور عالم باعمل ہیں، تین دفعہ حج بیت اللہ سے مشرف ہوا اور ایک سال مدینہ منورہ  میں اقامت پذیر رہے۔

اس وقت مدرسہ میں جو مدرسین تھے ان کو جمع کرکے حضرت مولانا حبیب اللہ صاحب رحمۃ اللہ علیہ نے فرمایا تم کیسے کام کرنے والے ہو اگر تمہارے دل کا منصوبہ اس طرح ہو کہ پٹیہ میں کام کی ضرورت  ہے اس لئے ہم جمع ہوگئے، اگر من جانب اللہ اسباب سہولت جمع ہوجائے اور تنخواہ وغیرہ ملتی رہے تو کام میں لگے رہینگے۔ نہیں تو مجبورا کام چھوڑ کر چلے جائینگے، اگر تمہارا یہی منصوبہ ہے کہ تو میں آج سے مدرسہ بند کردیتا ہوں ، اپنا اپنا گھر چلا جاؤ، مسلمانوں کے روپئے پیسے برباد نکرو، اور اگر یہ خیا ل ہے کہ مرتے دم تک کام میں لگے رہینگے ، لوہے چبائیں گے، تنخواہ ملے یا نہ ملے اس کا کچھ پروا نہیں کرینگے ، فاقہ کشی کے ساتھ کام میں لگے رہینگے  تو بسم اللہ کام شروع کرو ہم بھی بجان ودل تمہاری معین ومدد گار رہینگے،  اس کے بعد حضرت والا نے  قویت ہمت کے لئے مدرسہ ہاٹہزاری کے کچھ ابتدائی احوال  مشکلہ سنایا ، پھر فرمایا کہ  ہر مہینہ میں جسقدر تنخواہ تمہاری  وصول ہوجائے وہی تمہاری تنخواہ ہے، نا وصول مقدار مدرسہ کے  ذمہ قرض نہیں ہے، مہتمم کو شش کے ذمہ دار ہے نہ ادائے تنخواہ کا، اس جلسہ میں  مدرسہ کے لئے جگہ خرید نے کے بارے میں حاضرین سے کچھ چندہ کا وعدہ لیا گیا اور میری تنخواہ بیس روپئے مقرر ہوئی، خوارکی میرے ذمہ مدرسہ کے ذمہ نہیں۔

مدرسہ کا کتبخانہ

کتبخانہ کے لئے سب سے پہلے حضرت مولانا اسکندر صاحب مرحوم نے اپنی ساری کتابیں دیدی تھی، ان کی کتابوں سے کتبخانہ کا ابتدا ء ہوا، دوسرا نمبر میں مولانا احمد اللہ  صاحب ہولوی نے اپنی ساری کتابیں دیدی، اس طرح دوسرے علماء نے بھی اپنے اپنے پرانی کتابیں مدرسہ میں بھیجتے رہے اور آہستہ آہستہ ایک کافی ذخیرہ ہوگیا، کتبخانہ کیلئے سب سے پہلے الماری کا  انتظام حاجی عبد اللطیف  صاحب (پسر جناب  حاجی چاندمیاں سوداگر صاحب) نے کیا، اس وقت مدرسہ میں کوئی کتاب نہیں تھی، جب انہوں نے الماری دیا تو احقر نے کہا کہ جب کتاب نہیں تو الماری سے کیا کروں گا، انہوں نے کہا الماری لیجائے اللہ تعالی کتاب بھی پہنچا دیگا، اس طرح آہستہ آہستہ کتبخانہ کی ترقی ہوتا گیا۔

مدرسہ کا حفظ خانہ:

بندہ کی پست ہمتی کی بناء پر  کام کے دائرہ کو وسیع کرنے کی زیادہ فکر نہیں تھی اور یہ خیال آتا تھا کہ اگر کام پھیل گیا اور دائرہ وسیع ہوگیا تو مدرسہ کے جملہ امور  میں مجھ جیسے ناقص العقل وناقص الدین کے لئے حدود شرعیہ کی  بجالانا  دشوار  وبعید ہوگا،  دل یہی چاہتا تھا کہ خدمات مدرسہ  مطابق شرع شریف ہو، اور مدرسہ مختصر رہے، توکیا حرج ہے،    ؎ فکر ہر کس بقدر ہمت اوست‘ اس نظریہ کی بنا پر حفظ خانہ سے پہلو تہی کرنے کا خیال تھا تا کہ کام نہ بڑھے، دوسری جگہ حفظ خانہ موجود ہے ،و ہاں جاکر طلبہ حفظ کرینگے، کچھ زمانہ اسی حالت میں گذرا کہ مدرسہ  میں حفظ خانہ نہیں تھا اور کوشش بھی نہیں تھی،  یکایک حافظ نور الحق  مدرسہ میں آیا اور کہا کہ  میری انتہائی آرزو ہے کہ آپ حضرات کی جماعت میں رہوں، مدرسہ کی کسی خدمت کا  تو میں اہل نہیں ہوں، تو یہ سوچا ہوں کہ پٹیہ  میں کوئی تجارت کرونگا اور آپ حضرات کے ساتھ رہوں گا، ان کے اس کلام سے میرے دل میں حرکت ہوئی کہ شاید حق تعالی کو حفظ خانہ کا انتظام کرانا منظور ہے، بندہ نے ان سے کہا کہ آپ تو حافظ ہے، حفظ خانہ کی خدمت  انجام دے سکتے ہیں، شاید اللہ تعالی کو یہ منظور ہے اس لئے آپ کو یہاں بھیجد یا، حافظ صاحب موصوف نے بخوشی اس کو منظور کرلیا، اور حفظ خانہ کا سلسلہ شروع ہوا، رحمت خداوندی سے حفظ خانہ ہمیشہ اچھا کام دیتا رہا، ہر سال چھ سات طلبہ حفظ کلام اللہ سے فارغ ہو کر دستار فضیلت حاصل کرتے رہے، ایک  ممتد زمانہ کام کرنے کے بعد حافظ نور الحق صاحب حفظ خانہ سے الگ ہوگیا ، ان کی بجائے حافط عبد الباعث صاحب اس خدمت کو انجام دیرہا ہے، سبق پڑھنے والے اور دور کرنے والوں کو الگ کرنے کے خیال سے حافظ فرخ صاحب کو کچھ دن حفظ خانہ میں دیا گیا تھا، لیکن تجربہ سے وہ مفید ثابت نہیں ہوا، اور  اس کو بند کردیا گیا، اب سبق پڑھنے والے اور دور کرنے والے دونوں ایک حافظ کے زیر تعلیم ہے۔

دورۂ حدیث :  ۱۳۶۸ھ

اپنی ناقابلیت اور ہر جہتی کمزوری کی وجہ سے اس عظیم الشان خدمت کی طرف کبھی ہمت نہیں ہوئی، کئے سال تک طلبہ مشکوٰۃ شریف، جلالین شریف ، ہدایہ وغیرہ پڑھکر رخصت ہوجاتے تھے، بعض احباب نے مجھ سے کہا بھی کہ دورۂ حدیث کا انتظام کرنا چاہئے ، چونکہ کافی تعداد میں ہر سال مشکوٰۃ شریف وجلالین شریف سے طلبہ فارغ ہوتے رہے ، اگر ان کو لیکر دورہ شریف کھل دیا جائے تو غیر موزون نہیں ہوگا،  بندہ صحاح ستہ کی نسخے اور ان کے شروح کی کمی اور اپنی ناقابلیت کی معذرت کرتا رہا، سب سے اول شخص کہ مدرسہ  میں بخاری شریف کا نسخہ عطا کیا  وہ شوبھندنڈی کے غالبا مرحوم حاجی امز و صاحب ہے، انہوں نے اس مبارک کتاب کو پیش کیا تو بندہ نے عرض کیا کہ میرے مدرسہ میں حدیث شریف کا  درس نہیں ہے، لہذا اس بخاری شریف کو ایسے مدرسہ میں دینا اچھا ہے کہ  حدیث کا درس جاری ہے، اس نے نہیں مانا اور کہنے لگا کہ تمہارے مدرسہ میں دینے کی مجھے بہت  آرزو ہے، اس کے بعد صحاح کے نسخے جمع ہونے لگے، جب کچھ نسخے جمع ہوگئے ، بندہ نے مدرسین سے کہا کہ ان نسخوں کو کام میں لانے کی ایک صورت ہوسکتی ہے، کہ عصر کے بعد ہم مدرسین بیٹھ جائیں اور ہم میں سے کوئی حدیث شریف کی تفسیر کرے اور ہم سنے، اس سے دینے والوں کو ثواب ملیگا اور ہمکو فائدہ اور مدرسہ کو برکت پہنچے گا، یہ سلسلہ کچھ دن جاری رہا پھر بند ہوگیا، بندہ نے خواب میں دیکھا کہ وضوء کرنے میں میرا زمانہ زیادہ صرف ہورہا ، نماز میں شریک ہونے میں بہت دیر لگ رہی،  خواب کی تعبیر میرے ذہن میں یوں آئی کہ نحو وصرف ودیگر علوم مبادی ووسائل میں زمانہ صرف ہورہا ، اور حدیث شریف کی خدمت سے محرومی پر یہ تنبیہ ہے، حضرت علامہ بلیاوی، مولانا ابراہیم صاحب مدظلہ اس زمانہ میں ہاٹہزاری مقیم تھے، ان سے یہ خواب بیان کیا، انہوں نے فرمایا کہ حدیث شریف کا دورہ شروع کردینا چاہئے، میں نے اپنی ناقابلیت کی وجہ سے پست ہمتی ظاہر کی، انہوں نے فرمایا کہ بے ہمتی کی کوئی بات نہیں ہے، میں خود مدرسہ میں حاضر ہوکردورہ حدیث کا سبق شروع کرادونگا، چنانچہ ایسا ہوا، اور دس بارہ طلبہ کی شرکت میں دورہ شریف  درس جاری ہوا، مولانا احمد مہروی  اور امیر حسین رودروی  اس خدمت کیلئے منتخب ہوئے، بفضلہ تعالی ابتک یہ عظیم الشان خدمت ان کی ذات گرامی سے انجام پارہی ہے، اور طلبہ کی تعداد میں ترقی ہوتا گیا ،  مدرسہ کے بنیاد کے کچھ دن بعد ایک شخص نے خواب میں دیکھا تھا کہ مولانا  محمد اسماعیل صاحب مہتمم صاحب مدرسہ مظاہر علوم ، مدرسہ پٹیہ میں حاضر ہوا ور یہ کہہ رہا کہ یہاں حضرت نبی کریم ﷺ نے حدیث پڑھایا ہم بھی یہاں حدیث پڑھائنگے، دورہ شریف کی سبق جاری ہونے کے بعد رحمت خداوندی سے بسہولت وعجلت صحاح کے کافی نسخے اور شروحات مدرسہ میں جمع ہوگئے، سال کے اخیر میں شرکاء  دورہ کو دستار فضیلت حضرت مولانا سعید احمد رحمۃ اللہ علیہ کے دست مبارک سے دیا جاتا تھا ، ان کے انتقال کے بعد استاد بزرگوار حضرت مولانا عبد الودود صاحب مدظلہ محدث مدرسۂ جیری کے دست مبارک سے دیا جاتاہے۔

 এটি কুতবে আলম হযরত মুফতী আযীযুল হক রহমতুল্লাহি আলাইহি সরাসরি নিজ তত্ত্বাবধানে তৈরিকৃত মুল পান্ডুলিপির এবারতো। এখানে যেসব কাজ তাঁর নিজের হাতে হয়েছে সেসব জায়গায় মুতাকাল্লিমের সীগাল ব্যাবহার করেছেন। যেসব কাজ ইমাম সাহেবের হাতে হয়েছে সেসব জায়গায় গায়েবের সীগাল ব্যাবহার করেছেন। ওসব জায়গায় ইমাম সাহেব হুজুর মুতাকাল্লিমের সীগা ব্যাবহার করেছেন। 

হযরত মুফতী সাহেব রহ. এর সর্বোচ্চ আমানতদারি দেখেন। তিনি জিরি থেকে পটিয়া আসার ব্যাপারে যখন দীর্ঘমেয়াদি ইস্তিখারায় মশগুল ছিলেন তখন একদিন স্বপ্নে দেখলেন কেউ বলছেন আপনি পটিয়া গিয়ে কাজ করেন। কঠিন হবে না। দেখছেন না অমুক আগে গিয়ে কাজ আরম্ভ করে দিয়েছেন। 

হযরত মুফতী সাহেব হুজুর রহ. এই স্বপ্ন তো নাও লেখাতে পারতেন। কিন্তু যেহেতু তিনি সব বাস্তব বিষয় গুলোই লেখিয়েছেন সেহেতু তিনি এই বাস্তব স্বপ্নটাও এড়িয়ে যাননি। আল্লাহ প্রদত্ত এমন গুণে গুণান্বিত ছিলেন বলেই তিনি কুতবে আলম হয়েছিলেন। এমন আমনতদার ব্যক্তির বক্তব্যকে সামান্য ব্যাখ্যা করে দিয়ে বিকৃত করে ফেলবেন তা কীভাবে সম্ভব? 

আরেকটা বিষয় সবার জানা থাকা আবশ্যক হযরত মুফতী সাহেব হুজুর রহ. এই ইতিহাস দেখিয়ে জামিয়ার বাস্তব  ইতিহাস হিসেবে মাদ্রাসায় রেকর্ড ভুক্ত করে গেছেন এই লেখাটিই। যারা হযরত মুফতী সাহেব হুজুরের শেয়ের কে জামিয়ার ইতিহাসের মুল হিসেবে দেখাতে চাচ্ছেন ওই মেয়ের জামিয়ার রেকর্ডবুকে সংরক্ষণ করে যাননি। যার কারণে উক্ত শেয়েরকে পরবর্তী লেখকগণ নতুন নতুন বিকৃতি সাধন করে উপস্থাপনের সুযোগ পাচ্ছেন। যদি এটি জামিয়ার ইতিহাসের মূল প্রামাণ্য হত নিশ্চয়ই হযরত মুফতী সাহেব হুজুর রহ. এই ইতিহাসের পাশাপাশি রেকর্ডবুকে উক্ত শেয়েরকেও সংরক্ষণ করে যেতেন। যেহেতু তা একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে লিখিত মেয়ের সেই কারণে এটিকে মূল দস্তাবেজে সংরক্ষণ করেননি। সুতরাং জামিয়া পটিয়া প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে জামিয়ার ইতিহাস লেখতে গেলে ওই দস্তাবেজকেই অনুসরণ করতে হবে যা স্বয়ং হযরত মুফতী সাহেব রহ. সংরক্ষণ করে গেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। 

নতুন করে ওই শেয়েরকে সংরক্ষিত আছে বলে সাজাতেও পারবেন না। কারণ যারা এই সংরক্ষিত কপি থেকে ইতিহাস কপি করেছেন তাদের হাতে শেয়েরটির ইবারতে বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা গিয়েছে সময়ের ব্যবধানে। আর ওই দস্তাবেজের পুরো কপি যেহেতু আমাদের হাতেও আছে সুতরাং তা নিয়ে বিরূপ কিছু সাজানোর কোনো সুযোগ নেই ইনশাআল্লাহ।

 একসময় দেওবন্দী মাদ্রাসা সমূহে সবচেয়ে বড় পদ মনে করা হতো শায়খুল হাদীসের পদকে। সেই কারণে হযরত আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ. হযরত আল্লামা সাইয়্যিদ হোসাইন আহমদ মাদানী রহ. হযরত শাখুল হাদীস যাকারিয়া রহ. নিজ নিজ যুগে সবচেয়ে বড় ব্যক্তিত্ব হিসেবে খ্যাত হয়েছেন। হযরত মুফতী সাহেব রহ. এর ইখলাস আর আন্তরিকতার উপর কোরবান হোক আমার প্রাণ তিনি জামিয়ার মুহতামিম হয়েও শায়খুল হাদীসের পদ দিচ্ছেন নিজ পীর ভাই হযরত ইমাম সাহেব রহ. কে। নিজ থেকেই সম্মানের সর্বোচ্চ আসনে বসাচ্ছেন নিজ পীর ভাইকে। এসব থেকে কি আমাদের শিক্ষা নেওয়ার কিছুই নেই? 

হযরত মুফতী সাহেব রহ. এর এই উপমহীন আন্তরিকতাও কারো কারো চোখে ভালো ঠেকেনি। এক ইতিহাস লেখকের একটি আচরণ আমাকে খুবই মর্মাহত করেছে। ইতিহাসে তো বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটিয়েছেন কিন্তু এই জায়গায় এসে যে কাজটি করেছেন তা অন্য কারো কাছে ছোট মনে হলেও আমি নিজেকে কোনোভাবেই বোঝাতে পারিনি। একটি মাত্র শব্দ যার মাধ্যমে হযরত ইমাম সাহেবের সম্মান হচ্ছে সেটিও ওই লেখকের সহ্য হলো না। অথচ তা লেখছেন স্বয়ং মুফতী সাহেব হুজুর রহ.। কিন্তু এই লেখক হযরত ইমাম সাহেবের বেলায় হযরত মুফতি সাহেব রহ. এর মুখে ওই শব্দ শুনতে বা শুনাতে নারাজ। 

হযরত মুফতী সাহেব হুজুর রহ. লেখাচ্ছেন:

بفضلہ تعالی ابتک یہ عظیم الشان خدمت ان کی ذات گرامی سے انجام پارہی ہے

ওই লেখক হযরত মুফতি সাহেব রহ. এর ভাষাকে উপস্থাপন করেছেন এভাবে

بفضلہ تعالی ابتک یہ عظیم خدمت ان کے ذریعہ انجام پارہی ہے۔

এই থেকে কি বোঝলেন তা নিজেই চিন্তা করতে পারেন। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। 





تاریخ جامعہ پٹیہ حضرت امام صاحبؒ کی زبانی

صاحب الدار ادری بما فیہ کی بنا پر بطور اختصار مدرسہ ضمیریہ قاسم العلوم پٹیہ کے ابتدائی حالات سے کچھ قلمزد کرتا ہوں

۱۳۵۷ھ مطابق ۱۹۳۸ء کا واقعہ ہے کہ ایک دن بندہ شرفباٹہ سے جیری آیا اور وہاں حضرت  مفتی عزیز الحق صاحب قدس سرہ سے ملاقات ہوئی، تو حضرت نے فرمایا کہ جا چاہتاہے پٹیہ میں ایک دینی درسگاہ کی بنیاد رکھی جائے ، کیونکہ وہ جگہ جیری سے زیادہ مناسب ہے اور صدر مقام ہونیکی وجہ سے وہاں کی آواز ہمہ گیر ہوسکتی ہے، اگر آپ کو میر ی رایٔ پسند ہو تو میں حضرت مولانا احمد حسن صاحب رحمۃ اللہ علیہ مہتمم مدرسۂ جیری کے پاس جاکر اس بات کو پیش کرونگا ، تو بندہ خداوند کریم ورحیم کی رحمت پر بھروسہ کرتے ہوئے بے فکر کہد یا کہ انشاء اللہ تعالی میں اسی کیلئے حضرات اساتذۂ کرام کی دعا سے تیار ہوں اور آج سے کمربستہ ہوں، بندہ کا یہ ارادہ سنکر مفتی صاحبؒ بہت خوش ہوئے، فورا بندہ کو لیکر حضرات اساتذۂ کرام کی خدمت میں حاضر ہوئے اور ان سے اس بارے میں مشورہ لیا، تو انہوں نے بخوشی اجازت دی اور ایک دن طیٔ شدہ بات کو عمل میں لانے کیلئے  مناسب زمین کی تلاشی کے واسطے حضرت مولانا احمد حسن صاحب موصوفؒ اور حضرت مولانا یعقوب صاحبؒ شیخ الحدیث مدرسہ معین الاسلام ہاٹہزاری اور مفتی صاحب موصوف وغیرہم بند ہ کو لیکر پٹیہ تشریف لائے اور مدرسہ کیلئے جگہ کی تلاشی ہوئی، کہیں جگہ نہ ملی، آخر جناب منو میاں دفعدار مرحوم متوطن گوبندرکھیل  (محل وقوع مدرسہ) کو بلایا گیا، اور ا ن سے مدرسہ کیلئے کچھ جگہ طلب کی گئی، انہوں نے حضرت مہتمم صاحبؒ کو کہا کہ حضرت آپ کا ہاتھ دراز فرمائے، جب حضرت نے ہاتھ دراز فرمایا تو دفعدار صاحب مرحوم نے آپ کے ہاتھ پکڑ کر کہا کہ میں مدرسہ کیلئے جگہ دے سکتا ہوں، بشرطیکہ آپ مجھکو ہمراہ جنت میں لے جانیکا وعدہ کریں، حضرت مہتمم صاحبؒ نے اس خیرت انگیز شرط کے متعلق جواب دیا کہ بھائی! میں خود نہیں جانتا کہ جنت میری قسمت میں ہے یا نہیں، میں کس طرح آپ سے وعدہ کرسکتا ہوں کہ میں آپکو ہمراہ جنت میں لے جاؤں، ہاں البتہ یہ وعدہ کرسکتا ہوں کہ حق سبحانہ تعالی اگر اپنے فضل وعنایت سے مجھکو جنت عطا فرمائیں تو انشاء اللہ آپ کے لیے بھی سفارش کروں گا ، تو دفعدار صاحب مرحوم بولے، حضور!  صرف اتنا ہی کافی ہے، انشاء اللہ تعالی ضرور جگہ دونگا ، یہ بات طیٔ ہوجانے کے بعد حضرات اساتذۂ کرام بندہ کو اکیلا چھوڑ کر چلے گئے ، اس کے بعد میں اور قاری مسلم صاحب جو پہلے سے یہاں مکتب میں پڑھاتے تھے اسکو اور مجھ سے کہا کہ آپ لوگ لڑکوں کو جمع کرکے اس وقت ہماری مسجد میں پڑھائیں، ہم نے مسجد میں چند دن پڑھایا، اس کے بعد چند روز کسی شخص کے مکان کے برآمدہ میں اس طرح اور چند دن مختلف جگہوں میں پڑھاتے رہے، اس اثنا میں بندہ نے دفعدار کیساتھ ملکر مدرسہ کیلئے جگہ ٹھیک کی، لیکن وہ جگہ دفعدار صاحب کی ملکی نہیں تھی، انہوں نے جگہ کے مالک کو بلا کر کہا کہ اب اس جگہ کو مجھے دے دو، میں اپنی جگہ سے اس کے بدلہ میں جگہ آپ کو دونگا ، اس عوض نامہ کا قبالہ پر ستخط ہوا، پھر اس جگہ پر بندہ نے مرحوم منو میاں دفعدار کے ذریعہ ایک بھوس کا گھر بیس ہاتھ طولانی اور آٹھ ہاتھ چوڑائی میں مدرسہ کے نام سے تیار کیا، وہ گھر مسجد جامعہ کی دکھن جانب میں تھا اور بندہ مقام نیخان سے یہاں آکر پڑھاتاتھا ، کچھ دنوں کے بعد میرے جاگیر والے مولانا عیسی صاحبؒ نے بھی میرے ساتھ اس کا ر خیر میں شرکت فرمائی اور چند دن کے بعد جناب مولانا امجد صاحبؒ اور مولانا مسعود الحق صاحبؒ  ابن مولانا حمید الرحمن صاحبؒ بھی مدرسہ میں آکر پڑھانے لگے،  لیکن مدرسہ میں چندہ صدقہ کی آمدنی کا کوئی سبیل نہ تھا، اس لیے ہم بہت تکلیف میں زندگی بسر کر رہے تھے۔

اس اثنا میں بندہ خواب میں دیکھ رہا تھا کہ میں بہ معیت مولانا عیسی صاحب کسی چیز کے پارسل کرنے کے ارادہ سے پٹیہ پوسٹ آفیس میں آئے ہیں، پوسٹ ماسٹر صاحب نے ہم دونوں کی آنکھ کی پتلی لے لی اور کہنے لگا تمہاری آنکھوں کی پتلیاں اللہ تعالی کے نزدیک بھیج دونگا ، یہ خواب دیکھنے کے بعد نیند سے بیدار ہوگیا، تو میں نے تعجب کیا یہ کیا خواب دیکھا۔ دل میں یہ تعبیر آئی کہ ہ مدرسہ اللہ تعالی کے دربار میں یقینا مقبول ہوگیا۔ تھوڑی مدت میں انشاء اللہ تعالی اسکا فروغ ورونق ہوگی، چنانچہ اس کے بعد تقریبا اسی طلبہ جمع ہوئے، جماعت ہشتم تک درس وتدریس جاری ہوئی ، ایک روز میرے دل میں آیا کہ سالانہ جلسہ کا انتظام ہونا چاہئے ، بندہ نے حضرت مولانا احمد حسن صاحب اور حضرت مولانا مفتی عزیز الحق صاحبؒ کے پاس جاکر اس کے بارے میں گفتگو کی اور ان سے مشورہ کرکے ایک تاریخ مقرر کی ، اور انہوں اشتہار کے مضامین متعین کردئے، میں نے مدرسہ میں آکر تمام مدرسین کرام کو بلا یا اور جلسہ کے امور کے بارے میں مشورہ کیا، جس کو جس کام کا ذمہ دیا سب سر تسلیم خم کرے انتظام میں مصروف ہوئے، طلبہ کو جمع کرکے چندہ کے بارے میں ترغیبی مضمون بیان کیا، میں نے ان سے تقریبا پنچ سو روپیہ وصول کیا، یکایک ایک مدرس نے ایک اشتہار میرے ہاتھ میں دیا، جس میں مدرسہ کی بنیاد اور اہتمام کی ذمہ داری مدرسہ کے بیرونی ایک شخص کیطرف منسوب تھی، آخر اس اختلاف کی بنا پر بندہ مدرسہ جیری میں گیا اور استاتذہ ٔ کرام سے مشورہ کیا، اور مولانا حبیب اللہ صاحبؒ بانیٔ مدرسہ ہاٹہزاری اور شیخ مولانا ضمیر الدین صاحبؒ سے بھی مشورہ لیا گیا، میرے شیخ نے فرمایا کہ چند علماء کرام کی ایک کمیٹی بنالو، آخر دیگر مربیان کرام کے مشورے سے یہ طیٔ ہوا کہ مجھکو  مدرسہ سے کچھ دنوں کیلئے الگ رہنا چاہئے، چار پانچ روز کے بعد مدرسہ میں ایک فتنہ واقع ہوا ، اس لیے حضرت مولانا احمد حسن صاحبؒ نے  وہاں بلوایا اور فرمایا اب تجھے اس مدرسہ کا مہتمم بنادیتا ہوں، اس کے بعد میں نے مفتی صاحبؒ مشورہ لیا ، لیکن انہوں نے اجازت نہ دی، لہذا میں حضرت مہتمم صاحبؒ کے پاس معذرت پیش کی، اس اثنا میں مولانا عبد الجلیل صاحبؒ مدرس اعلی مدرسہ جیری کو پٹیہ کی خدمت کیلئے بھیجا گیا، لیکن ان سے بھی یہ کام نہ بن سکا، اس کے بعد ۱۳۵۹ھ شوال میں حضرت مفتی صاحبؒ تشریف لائے اور ۱۳۶۰ھ میں حضرت مولانا حبیب اللہ صاحبؒ کے حکم سے مہتمم بنے، کچھ دن کے بعد میں بھی آپ کے زیر اہتمام خدمت میں شریک ہوا۔

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন